১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪

‘ডলার সংকটে স্টিলের কাঁচামালের এলসি খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো’

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
  • / ৪১১৬ বার দেখা হয়েছে

বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে স্টিলের কাঁচামাল আমদানির জন্য দেশের ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় ঋনপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। এতে স্টিলের কাঁচামাল কম আসছে এবং কাঁচামালের সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।

আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ‘ডলার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্টিল শিল্পের চরম সংকট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যাংকে আমাদের মোট ঋণ সীমা একই অবস্থানে থাকলেও ক্রয়ক্ষমতা ১০০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। ডলারের মূল্য ৮৫ টাকা দরে যখন আমরা ১০০ কোটি টাকার আমদানি করেছি, তখন আমরা ১২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এলসি পেতাম। কিন্তু একই টাকা দিয়ে বর্তমানে ১২৫ টাকা মুদ্রার হারের বিনিময়ে আমরা ৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এলসি পাচ্ছি। এর ফলে স্থানীয় মুদ্রার ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য হ্রাস হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ডেফার্ড এলসি’র মাধ্যমে সমস্ত আমদানি সম্পন্ন করি। বিলম্বিত ঋণপত্র সর্বোচ্চ ৩৬০ দিনের জন্য হয়ে থাকে। বিলম্বিত ঋণপত্রের বিপরীতে আমদানি করা কাঁচামালের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়সহ এর লাভ-লোকসানের হিসাব পূর্বেই সম্পন্ন হয় বিধায় আমাদের পক্ষে ডলারের অতিরিক্ত বিনিময় মূল্য ১ বছর পরে সমন্বয়ের কোন সুযোগ থাকে না। ফলে আমাদের জন্য অতিরিক্ত বিনিময় মূল্য সম্পূর্ণ লোকসানে পরিণত হয়। পাশাপাশি ব্যবসার দায় পরিশোধ করতে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়। এই ক্ষতি বা অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ মোট আমদানি ব্যয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ। এক্ষেত্রে আমাদের মূলধনের যে ঘাটতি হয়েছে তা আর কখনো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, স্টিল শিল্পে কাঁচামাল, কেমিক্যাল ও যন্ত্রাংশের ৮৫ শতাংশ আমদানি নির্ভর। বর্তমানে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ৮৫ টাকা থেকে প্রায় ১২৫ টাকায় উঠেছে। এতে আমাদের চলতি মূলধনে ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে এবং অধিক চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, এলসি কমিশন বৃদ্ধি, এলসি মার্জিন বৃদ্ধি, ডিসকাউন্টিং ব্যাংকের মাধ্যমে ডিসকাউন্টিং রেইট বৃদ্ধি, এস ও এফ আর প্লাস রেইট বৃদ্ধি, কাস্টম ডিউটি, ভ্যাট, ট্যাক্স এবং অন্যান্য চার্জ বৃদ্ধির কারণেও চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুন: রমজানে জালনোট প্রতিরোধে ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের নির্দেশ

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডলার মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে স্টিল উৎপাদনকারীদের চলতি মূলধন ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত চলতি মূলধনের প্রয়োজন হওয়ায় ব্যাংকে গ্রাহক ঋণসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গত বছর বিদ্যুতের মূল্য প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে এবং এবার বাড়িয়েছে ১০ শতাংশ। ডিমান্ড চার্জের উপরও মূল্য ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য ধাপে ধাপে আরো বাড়ানো হবে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয় থেকে জানা যায়। বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধি স্টিল সেক্টরে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অপরদিকে গত বছরে গ্যাসের দাম প্রায় ৩ গুণ হয়েছে। প্রতি কিউবিক ঘনমিটার গ্যাস ১০ টাকা থেকে ৩০টাকা হয়েছে, যার ফলে স্টিল উৎপাদনে প্রতিটনে প্রায় ৩ টাকা অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে।

এতে আরও বলা হয়, আয়কর আইনের মৌলিক-নীতি হচ্ছে প্রকৃত আয়ের উপর আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মূল্যায়নের ভিত্তিতে আয়কর নির্ধারণ করা। বর্তমানে বাজেটে ২ শতাংশ উৎসে কর কর্তন মাত্রাতিরিক্ত এবং স্টিল সেক্টরের প্রকৃত মুনাফার সঙ্গে এর কোন সামাঞ্জস্য নেই। এই ২ শতাংশ কোন মূল্যায়িত কর নয়। এটি হলো ন্যূনতম কর। কোন প্রকার আয় বা মুনাফা ব্যতীত উৎপাদনকারীকে আয়কর প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদনকারীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের জন্য আমদানি পর্যায়ে টন প্রতি ৫০০ টাকা ন্যূনতম অগ্রিম আয়কর প্রদান করতে হয়। ন্যূনতম শর্তের কারণে এই আয়কর সমন্বয় বা ফেরতযোগ্য নয়।

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

x

‘ডলার সংকটে স্টিলের কাঁচামালের এলসি খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো’

আপডেট: ১২:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে স্টিলের কাঁচামাল আমদানির জন্য দেশের ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় ঋনপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। এতে স্টিলের কাঁচামাল কম আসছে এবং কাঁচামালের সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।

আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ‘ডলার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্টিল শিল্পের চরম সংকট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যাংকে আমাদের মোট ঋণ সীমা একই অবস্থানে থাকলেও ক্রয়ক্ষমতা ১০০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। ডলারের মূল্য ৮৫ টাকা দরে যখন আমরা ১০০ কোটি টাকার আমদানি করেছি, তখন আমরা ১২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এলসি পেতাম। কিন্তু একই টাকা দিয়ে বর্তমানে ১২৫ টাকা মুদ্রার হারের বিনিময়ে আমরা ৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এলসি পাচ্ছি। এর ফলে স্থানীয় মুদ্রার ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য হ্রাস হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ডেফার্ড এলসি’র মাধ্যমে সমস্ত আমদানি সম্পন্ন করি। বিলম্বিত ঋণপত্র সর্বোচ্চ ৩৬০ দিনের জন্য হয়ে থাকে। বিলম্বিত ঋণপত্রের বিপরীতে আমদানি করা কাঁচামালের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়সহ এর লাভ-লোকসানের হিসাব পূর্বেই সম্পন্ন হয় বিধায় আমাদের পক্ষে ডলারের অতিরিক্ত বিনিময় মূল্য ১ বছর পরে সমন্বয়ের কোন সুযোগ থাকে না। ফলে আমাদের জন্য অতিরিক্ত বিনিময় মূল্য সম্পূর্ণ লোকসানে পরিণত হয়। পাশাপাশি ব্যবসার দায় পরিশোধ করতে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়। এই ক্ষতি বা অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ মোট আমদানি ব্যয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ। এক্ষেত্রে আমাদের মূলধনের যে ঘাটতি হয়েছে তা আর কখনো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, স্টিল শিল্পে কাঁচামাল, কেমিক্যাল ও যন্ত্রাংশের ৮৫ শতাংশ আমদানি নির্ভর। বর্তমানে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ৮৫ টাকা থেকে প্রায় ১২৫ টাকায় উঠেছে। এতে আমাদের চলতি মূলধনে ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে এবং অধিক চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, এলসি কমিশন বৃদ্ধি, এলসি মার্জিন বৃদ্ধি, ডিসকাউন্টিং ব্যাংকের মাধ্যমে ডিসকাউন্টিং রেইট বৃদ্ধি, এস ও এফ আর প্লাস রেইট বৃদ্ধি, কাস্টম ডিউটি, ভ্যাট, ট্যাক্স এবং অন্যান্য চার্জ বৃদ্ধির কারণেও চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুন: রমজানে জালনোট প্রতিরোধে ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের নির্দেশ

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডলার মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে স্টিল উৎপাদনকারীদের চলতি মূলধন ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত চলতি মূলধনের প্রয়োজন হওয়ায় ব্যাংকে গ্রাহক ঋণসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গত বছর বিদ্যুতের মূল্য প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে এবং এবার বাড়িয়েছে ১০ শতাংশ। ডিমান্ড চার্জের উপরও মূল্য ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য ধাপে ধাপে আরো বাড়ানো হবে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয় থেকে জানা যায়। বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধি স্টিল সেক্টরে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অপরদিকে গত বছরে গ্যাসের দাম প্রায় ৩ গুণ হয়েছে। প্রতি কিউবিক ঘনমিটার গ্যাস ১০ টাকা থেকে ৩০টাকা হয়েছে, যার ফলে স্টিল উৎপাদনে প্রতিটনে প্রায় ৩ টাকা অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে।

এতে আরও বলা হয়, আয়কর আইনের মৌলিক-নীতি হচ্ছে প্রকৃত আয়ের উপর আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মূল্যায়নের ভিত্তিতে আয়কর নির্ধারণ করা। বর্তমানে বাজেটে ২ শতাংশ উৎসে কর কর্তন মাত্রাতিরিক্ত এবং স্টিল সেক্টরের প্রকৃত মুনাফার সঙ্গে এর কোন সামাঞ্জস্য নেই। এই ২ শতাংশ কোন মূল্যায়িত কর নয়। এটি হলো ন্যূনতম কর। কোন প্রকার আয় বা মুনাফা ব্যতীত উৎপাদনকারীকে আয়কর প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদনকারীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের জন্য আমদানি পর্যায়ে টন প্রতি ৫০০ টাকা ন্যূনতম অগ্রিম আয়কর প্রদান করতে হয়। ন্যূনতম শর্তের কারণে এই আয়কর সমন্বয় বা ফেরতযোগ্য নয়।

ঢাকা/এসএম