১০:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

তবে কি বাংলাদেশই হচ্ছে করোনার পরবর্তী হটস্পট?

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:৩১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১
  • / ৪১৭৪ বার দেখা হয়েছে

করোনা মহামারি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বর্তমান কেন্দ্রস্থল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়েছে।

সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে ধনী দেশগুলো তাদের নাগরিকদের টিকা দিয়েছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত মজুদ করে রেখেছে।

আর গরিব দেশগুলো পর্যাপ্ত টিকা দিতে না পারায় কোভিড-১৯ রোগের কেন্দ্রস্থল দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে সরে এসেছে। এ নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় লিখেছেন ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) চিকিৎসক ডা. আমির খান। এই নিবন্ধে তিনি করোনার পরবর্তী হটস্পটগুলো কোথায় হতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ভারত:
দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ছিল খুবই দ্রুত ও ব্যাপক বিস্তারি। ২০২০ সালজুড়ে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করে দেওয়ার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহামারির শেষ ধাপ ঘোষণা করেছিলেন। এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতির পর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বিপুল মানুষের জমায়েতের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এমনকি মহামারি প্রতিরোধে ‘অপরিহার্য’ সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধানে ন্যূনতম পরোয়া করা হয়নি। এতে সংক্রমণ বাড়তে থাকে, পরে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ৩ মে ভারত এক ভয়াবহ মাইলফলক স্পর্শ করে, এদিন দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দুই কোটি ছুঁয়েছে। যদিও সত্যিকারের সংক্রমণের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল দেশটিতে করোনার এই বড় ধকলের জন্য বি১.১.৭ ধরনকে দায়ী করা হচ্ছে। এই ধরনটির উৎস ব্রিটেনে। এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অতিসংক্রামক। কিন্তু মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে ভাইরাসটিকে সুযোগ করে দিয়েছে এবং এটি ফের রূপান্তরিত হতে পেরেছে।

এতে ‘ডাবল রূপান্তরিত’ ভারতীয় ধরনটি বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এটি আরও বেশি সংক্রামক, এমনকি টিকার সুরক্ষা সক্ষমতাকেও এড়িয়ে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। আগের সংক্রমণে গড়ে ওঠা অ্যান্টিবডিও তাকে রুখতে পারে না।

ভারতের এসব দুর্দশার সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে দেশটির কিছু অংশের মানুষের মধ্যে টিকাগ্রহণের দোদুল্যমানতা। যদিও দ্রুত টিকা কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

টিকা তৈরিতে কাঁচামাল সরবরাহে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে আহ্বানের পাশাপাশি টিকা চাহিদা পূরণেও ভারতকে লড়তে হচ্ছে। এতে বিপুল মানুষ করোনা থেকে অরক্ষিত থেকে গেছেন। হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী উপচে পড়েছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হওয়ায় একটি হুলস্থুল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রোগের তীব্রতা কমাতে আবশ্যক অক্সিজেন ও ওষুধ সরবরাহ সীমিত থাকায় মানুষের হাহাকার বেড়েছে। এগুলো যেন বিলাসী পণ্যের চেয়েও দামি বস্তু বলে মনে হচ্ছে। এই সুযোগে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কালোবাজারিরা।

ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতে সহায়তা আসতে শুরু করলেও তাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

পাকিস্তান:
ভারতের এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানেও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। এটির সীমান্তের পরিস্থিতি ব্যাপক খারাপের দিকে যাচ্ছে। কেবল এপ্রিলেই পাকিস্তানে এক লাখ ৪০ হাজার আক্রান্ত এবং তিন হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

২১ কোটি ৭০ লাখ লোকের দেশটিতে গত ২৮ এপ্রিল ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিলে পাকিস্তানের ভাগ্য প্রতিবেশী ভারতের মতো হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

মহামারির প্রথম দুটি ঢেউ পাকিস্তানকে খুব একটা কাবু করতে পারেনি। ২০২০ সালে জনবহুল ও ব্যাপক দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে কোভিড-১৯ বড় আঘাত কেন হানেনি, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভ্রান্তিতে আছেন।

বিশেষ করে পাকিস্তানে করোনার ব্রিটিশ ধরন শনাক্ত হওয়া ও মানুষের উদাসীনতায় সম্প্রতি সংক্রমণ বাড়ছে। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সাম্প্রতিক সামাজিক দূরত্বের প্রতি জোর দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানতে আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ভারত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আমারা যেন তা নিতে বাধ্য না হই, বিশেষ করে লকডাউন আরোপের ক্ষেত্রে।’

ঠিকমতো মাস্ক ব্যবহার করলে অর্ধেক সমস্যা থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা।

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কেনাকাটা ও সামাজিক অনুষ্ঠান উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের উৎসব স্বল্প-পরিসরে আয়োজনের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানে টিকাদান কর্মসূচিও ধীর গতিতে এগোচ্ছে। সেখানে টিকা নিতে স্বাধারণ মানুষের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ভয় থেকেও তারা এগিয়ে আসছেন না টিকা নিতে।

যদিও মহামারির প্রাথমিক ঢেউগুলোতে পাকিস্তানে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম। এখন পর্যন্ত সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য দেশটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যক্স কর্মসূচির অধীন কয়েক লাখ অক্সফোর্ড-অস্ট্রাজেনেকা টিকা তাদের পাওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারি বিনামূল্য প্রকল্প ও প্রাইভেটখাতের মাধ্যমে পাকিস্তানে জনসংখ্যার এক শতাংশকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে।

রমজানে মানুষ বারবার বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন। কেনাকাটাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের বের হতে হচ্ছে। কাজেই এই মাসটি পাকিস্তানের জন্য পরীক্ষার। লোকজনকে যদি সরকার সামাজিক দূরত্ব মানতে বাধ্য করতে না পারে, তবে তাদের পরিণতিও প্রতিবেশী ভারতের মতো হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ:
ভারতের পাশেই বাংলাদেশ। ২০২০ সালের মহামারির ঢেউয়ে এখানে বড় কোনো ধকল আসেনি। এতে ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আত্মতুষ্টি তৈরি হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতাও কম দেখা যাচ্ছে।

ফলে মার্চ ও এপ্রিলে করোনার সংক্রমণ বাড়লে সরকার নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করে। করোনায় ৯ এপ্রিল বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

টিকাদান কর্মসূচি চললেও এগোচ্ছে ধীরগতিতে। এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৮০ লাখ লোক। এর মধ্যে উভয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ২৮ লাখ ১০ হাজার জনকে।

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— ভারতীয় সংকট সীমান্ত ছাপিয়ে যাতে এখানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যাতে বিপর্যয় নেমে না আসে। এখন ভাইরাসের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে মানুষকে বোঝাতে সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

এছাড়া ঈদে রাজধানী থেকে ঘরমুখো মানুষের ঢল সংক্রমণের নতুন শঙ্কা বাড়িয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

নেপাল, আফগানিস্তান ও শ্রীলংকা:
এই তিন দেশে মার্চে করোনা সংক্রমণ ছিল মাঝারি মাত্রায়। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা টিকা সংগ্রহ করেছে। এখন দেখার বিষয়– ভারতে যা ঘটেছে, এখানেও তার পুনরাবৃত্তি হয় কিনা।

বহু দেশ ভারতে সহায়তা পাঠাচ্ছে এবং আগ্রহের সঙ্গে দেশটির পরিস্থিতিতে নজর রাখছে। বিশ্বের কোনো একটি অংশে মহামারি ধরে রাখা অসম্ভব। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মানুষ ও পণ্য চলাচল করে, করোনায় আক্রান্ত হওয়া প্রতি তিনজনের একজনের কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। এর অর্থ হচ্ছে–ভাইরাস সহজেই সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে।

করোনার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকারগুলো যা করছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য। এটি একটি বৈশ্বিক মহামারি। কাজেই বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে রোগটি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত বিপদ কাটছে না। এখন নিজেদের স্বার্থগুলো শিকেয় তুলে অন্যদের সহায়তায় এগিয়ে যেতে হবে দেশগুলোকে।

লেখক: ডা. আমির খান, ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) চিকিৎসক, ইউনিভার্সিটি অব লিডস স্কুল অব মেডিসিন ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রাডফোর্ডের সিনিয়র লেকচারার। লেখাটি অনুবাদ করেছেন আতাউর রহমান রাইহান।

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

তবে কি বাংলাদেশই হচ্ছে করোনার পরবর্তী হটস্পট?

আপডেট: ০৬:৩১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১

করোনা মহামারি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বর্তমান কেন্দ্রস্থল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়েছে।

সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে ধনী দেশগুলো তাদের নাগরিকদের টিকা দিয়েছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত মজুদ করে রেখেছে।

আর গরিব দেশগুলো পর্যাপ্ত টিকা দিতে না পারায় কোভিড-১৯ রোগের কেন্দ্রস্থল দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে সরে এসেছে। এ নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় লিখেছেন ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) চিকিৎসক ডা. আমির খান। এই নিবন্ধে তিনি করোনার পরবর্তী হটস্পটগুলো কোথায় হতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ভারত:
দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ছিল খুবই দ্রুত ও ব্যাপক বিস্তারি। ২০২০ সালজুড়ে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করে দেওয়ার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহামারির শেষ ধাপ ঘোষণা করেছিলেন। এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতির পর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বিপুল মানুষের জমায়েতের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এমনকি মহামারি প্রতিরোধে ‘অপরিহার্য’ সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধানে ন্যূনতম পরোয়া করা হয়নি। এতে সংক্রমণ বাড়তে থাকে, পরে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ৩ মে ভারত এক ভয়াবহ মাইলফলক স্পর্শ করে, এদিন দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দুই কোটি ছুঁয়েছে। যদিও সত্যিকারের সংক্রমণের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল দেশটিতে করোনার এই বড় ধকলের জন্য বি১.১.৭ ধরনকে দায়ী করা হচ্ছে। এই ধরনটির উৎস ব্রিটেনে। এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অতিসংক্রামক। কিন্তু মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে ভাইরাসটিকে সুযোগ করে দিয়েছে এবং এটি ফের রূপান্তরিত হতে পেরেছে।

এতে ‘ডাবল রূপান্তরিত’ ভারতীয় ধরনটি বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এটি আরও বেশি সংক্রামক, এমনকি টিকার সুরক্ষা সক্ষমতাকেও এড়িয়ে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। আগের সংক্রমণে গড়ে ওঠা অ্যান্টিবডিও তাকে রুখতে পারে না।

ভারতের এসব দুর্দশার সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে দেশটির কিছু অংশের মানুষের মধ্যে টিকাগ্রহণের দোদুল্যমানতা। যদিও দ্রুত টিকা কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

টিকা তৈরিতে কাঁচামাল সরবরাহে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে আহ্বানের পাশাপাশি টিকা চাহিদা পূরণেও ভারতকে লড়তে হচ্ছে। এতে বিপুল মানুষ করোনা থেকে অরক্ষিত থেকে গেছেন। হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী উপচে পড়েছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হওয়ায় একটি হুলস্থুল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রোগের তীব্রতা কমাতে আবশ্যক অক্সিজেন ও ওষুধ সরবরাহ সীমিত থাকায় মানুষের হাহাকার বেড়েছে। এগুলো যেন বিলাসী পণ্যের চেয়েও দামি বস্তু বলে মনে হচ্ছে। এই সুযোগে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কালোবাজারিরা।

ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতে সহায়তা আসতে শুরু করলেও তাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

পাকিস্তান:
ভারতের এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানেও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। এটির সীমান্তের পরিস্থিতি ব্যাপক খারাপের দিকে যাচ্ছে। কেবল এপ্রিলেই পাকিস্তানে এক লাখ ৪০ হাজার আক্রান্ত এবং তিন হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

২১ কোটি ৭০ লাখ লোকের দেশটিতে গত ২৮ এপ্রিল ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিলে পাকিস্তানের ভাগ্য প্রতিবেশী ভারতের মতো হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

মহামারির প্রথম দুটি ঢেউ পাকিস্তানকে খুব একটা কাবু করতে পারেনি। ২০২০ সালে জনবহুল ও ব্যাপক দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে কোভিড-১৯ বড় আঘাত কেন হানেনি, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভ্রান্তিতে আছেন।

বিশেষ করে পাকিস্তানে করোনার ব্রিটিশ ধরন শনাক্ত হওয়া ও মানুষের উদাসীনতায় সম্প্রতি সংক্রমণ বাড়ছে। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সাম্প্রতিক সামাজিক দূরত্বের প্রতি জোর দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানতে আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ভারত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আমারা যেন তা নিতে বাধ্য না হই, বিশেষ করে লকডাউন আরোপের ক্ষেত্রে।’

ঠিকমতো মাস্ক ব্যবহার করলে অর্ধেক সমস্যা থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা।

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কেনাকাটা ও সামাজিক অনুষ্ঠান উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের উৎসব স্বল্প-পরিসরে আয়োজনের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানে টিকাদান কর্মসূচিও ধীর গতিতে এগোচ্ছে। সেখানে টিকা নিতে স্বাধারণ মানুষের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ভয় থেকেও তারা এগিয়ে আসছেন না টিকা নিতে।

যদিও মহামারির প্রাথমিক ঢেউগুলোতে পাকিস্তানে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম। এখন পর্যন্ত সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য দেশটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যক্স কর্মসূচির অধীন কয়েক লাখ অক্সফোর্ড-অস্ট্রাজেনেকা টিকা তাদের পাওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারি বিনামূল্য প্রকল্প ও প্রাইভেটখাতের মাধ্যমে পাকিস্তানে জনসংখ্যার এক শতাংশকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে।

রমজানে মানুষ বারবার বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন। কেনাকাটাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের বের হতে হচ্ছে। কাজেই এই মাসটি পাকিস্তানের জন্য পরীক্ষার। লোকজনকে যদি সরকার সামাজিক দূরত্ব মানতে বাধ্য করতে না পারে, তবে তাদের পরিণতিও প্রতিবেশী ভারতের মতো হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ:
ভারতের পাশেই বাংলাদেশ। ২০২০ সালের মহামারির ঢেউয়ে এখানে বড় কোনো ধকল আসেনি। এতে ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আত্মতুষ্টি তৈরি হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতাও কম দেখা যাচ্ছে।

ফলে মার্চ ও এপ্রিলে করোনার সংক্রমণ বাড়লে সরকার নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করে। করোনায় ৯ এপ্রিল বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

টিকাদান কর্মসূচি চললেও এগোচ্ছে ধীরগতিতে। এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৮০ লাখ লোক। এর মধ্যে উভয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ২৮ লাখ ১০ হাজার জনকে।

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— ভারতীয় সংকট সীমান্ত ছাপিয়ে যাতে এখানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যাতে বিপর্যয় নেমে না আসে। এখন ভাইরাসের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে মানুষকে বোঝাতে সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

এছাড়া ঈদে রাজধানী থেকে ঘরমুখো মানুষের ঢল সংক্রমণের নতুন শঙ্কা বাড়িয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

নেপাল, আফগানিস্তান ও শ্রীলংকা:
এই তিন দেশে মার্চে করোনা সংক্রমণ ছিল মাঝারি মাত্রায়। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা টিকা সংগ্রহ করেছে। এখন দেখার বিষয়– ভারতে যা ঘটেছে, এখানেও তার পুনরাবৃত্তি হয় কিনা।

বহু দেশ ভারতে সহায়তা পাঠাচ্ছে এবং আগ্রহের সঙ্গে দেশটির পরিস্থিতিতে নজর রাখছে। বিশ্বের কোনো একটি অংশে মহামারি ধরে রাখা অসম্ভব। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মানুষ ও পণ্য চলাচল করে, করোনায় আক্রান্ত হওয়া প্রতি তিনজনের একজনের কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। এর অর্থ হচ্ছে–ভাইরাস সহজেই সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে।

করোনার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকারগুলো যা করছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য। এটি একটি বৈশ্বিক মহামারি। কাজেই বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে রোগটি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত বিপদ কাটছে না। এখন নিজেদের স্বার্থগুলো শিকেয় তুলে অন্যদের সহায়তায় এগিয়ে যেতে হবে দেশগুলোকে।

লেখক: ডা. আমির খান, ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) চিকিৎসক, ইউনিভার্সিটি অব লিডস স্কুল অব মেডিসিন ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রাডফোর্ডের সিনিয়র লেকচারার। লেখাটি অনুবাদ করেছেন আতাউর রহমান রাইহান।

আরও পড়ুন: