০৭:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে ‘বিশেষ ছাড়’

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:৫৫:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১
  • / ৪১৫৮ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে নানা বাধার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে পড়ছেন নারীরা। এদিকে কভিড-১৯ মহামারীতে নারী উদ্যোক্তাদের অনেকেরই ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। কারো কারো ব্যবসায়িক কার্যক্রম হয়ে পড়েছে সীমিত। এ পরিস্থিতিতে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চায় সরকার। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা (টার্নওভার) বাড়িয়ে ৭০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে নারী উদ্যোক্তাদের করমুক্ত আয়সীমা ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোনো নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় ৫০ লাখ টাকা হলেই নির্দিষ্ট হারে কর দিতে হয়। নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করতেই করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে এনবিআর। সেখানে আয়সীমা সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা হতে পারে। ফলে বছরে ৭০ লাখ টাকার নিচে আয় হলে কোনো ধরনের কর দিতে হবে না নারী উদ্যোক্তাদের। এছাড়া একক মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য করছাড়ের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান ৫ শতাংশ কম ছাড় পাবে। আগামী বাজেটে এমন সব প্রস্তাব থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

আইএফসির সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, করোনায় বাংলাদেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন। নারীদের দ্বারা পরিচালিত ৩৭ শতাংশ এমএসএমই প্রতিষ্ঠান এ মহামারীতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ৯৪ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন খাতটির প্রায় ৭০ শতাংশ উদ্যোক্তা ও কর্মী। আবার নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে এখনো কার্যকর উদ্যোগে পিছিয়ে রয়েছে ব্যাংক খাত। নারীদের উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যাংকের অবদান মাত্র ২৩ শতাংশ। সেখানে অর্ধেকের বেশি আসছে উচ্চসুদের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ঋণ। এছাড়া পরিবার ও ব্যক্তিনির্ভরতার মাধ্যমে আসছে অর্থায়নের বড় অংশ।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শুমারির তথ্যমতে, এক দশকের ব্যবধানে নারীপ্রধান অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৩ সালে মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের মাত্র ৩ শতাংশ নারী প্রতিষ্ঠানপ্রধান হলেও ২০১৩ সালে তা ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে তা ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। সুযোগ-সুবিধা ও নীতি সহায়তা পেলে নারীপ্রধান অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা আরো বাড়বে। বাজেটে করমুক্ত লেনদেন বা আয়ের এ সীমা বাড়ানোর ফলে নারীদের জন্য তা কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। তবে নারীদের জন্য আরো বেশি সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন নারী উদ্যোক্তারা।

এ বিষয়ে উইমেন অন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওয়েব) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল বলেন, বাজেটে নারীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি নারী

উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হবে। দেশের নারী উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। ফলে বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে ও সেই অর্থ উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। তবে আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের পরিচালনাগত অসুবিধাগুলো অপসারণ করতে হবে। কেননা ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। লাইসেন্স জটিলতার কারণে অনেক নারী ব্যাংকের ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য নারীদের ঋণ ও ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ করা দরকার। নারীদের ঋণপত্র (এলসি) খোলা, নগদ সুবিধা ও সনদ পেতে নারী উদ্যোক্তাদের সাধারণত পুরুষের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। এ ধরনের বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন।

জানা গেছে, নারী উদ্যোক্তাদের মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হিসেবে কৃষি ও মত্স্য খাত ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, খুচরা বিক্রি, পর্যটন, ফ্যাশন ও সৌন্দর্য পণ্য, স্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্য এবং অনলাইন ব্যবসায় বেশি আগ্রহ রয়েছে। পাশাপাশি গার্মেন্টস ও অ্যাকসেসরিজ, বিউটি পার্লার, টেইলারিং, রিটেইল শপ, আইটি, ইলেকট্রনিকস, সফটওয়্যার, পাটজাত পণ্য ও হ্যান্ডিক্রাফটস খাতে নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

x
English Version

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে ‘বিশেষ ছাড়’

আপডেট: ০১:৫৫:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে নানা বাধার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে পড়ছেন নারীরা। এদিকে কভিড-১৯ মহামারীতে নারী উদ্যোক্তাদের অনেকেরই ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। কারো কারো ব্যবসায়িক কার্যক্রম হয়ে পড়েছে সীমিত। এ পরিস্থিতিতে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চায় সরকার। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা (টার্নওভার) বাড়িয়ে ৭০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে নারী উদ্যোক্তাদের করমুক্ত আয়সীমা ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোনো নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় ৫০ লাখ টাকা হলেই নির্দিষ্ট হারে কর দিতে হয়। নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করতেই করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে এনবিআর। সেখানে আয়সীমা সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা হতে পারে। ফলে বছরে ৭০ লাখ টাকার নিচে আয় হলে কোনো ধরনের কর দিতে হবে না নারী উদ্যোক্তাদের। এছাড়া একক মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য করছাড়ের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান ৫ শতাংশ কম ছাড় পাবে। আগামী বাজেটে এমন সব প্রস্তাব থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

আইএফসির সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, করোনায় বাংলাদেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন। নারীদের দ্বারা পরিচালিত ৩৭ শতাংশ এমএসএমই প্রতিষ্ঠান এ মহামারীতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ৯৪ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন খাতটির প্রায় ৭০ শতাংশ উদ্যোক্তা ও কর্মী। আবার নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে এখনো কার্যকর উদ্যোগে পিছিয়ে রয়েছে ব্যাংক খাত। নারীদের উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যাংকের অবদান মাত্র ২৩ শতাংশ। সেখানে অর্ধেকের বেশি আসছে উচ্চসুদের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ঋণ। এছাড়া পরিবার ও ব্যক্তিনির্ভরতার মাধ্যমে আসছে অর্থায়নের বড় অংশ।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শুমারির তথ্যমতে, এক দশকের ব্যবধানে নারীপ্রধান অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৩ সালে মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের মাত্র ৩ শতাংশ নারী প্রতিষ্ঠানপ্রধান হলেও ২০১৩ সালে তা ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে তা ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। সুযোগ-সুবিধা ও নীতি সহায়তা পেলে নারীপ্রধান অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা আরো বাড়বে। বাজেটে করমুক্ত লেনদেন বা আয়ের এ সীমা বাড়ানোর ফলে নারীদের জন্য তা কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। তবে নারীদের জন্য আরো বেশি সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন নারী উদ্যোক্তারা।

এ বিষয়ে উইমেন অন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওয়েব) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল বলেন, বাজেটে নারীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি নারী

উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হবে। দেশের নারী উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। ফলে বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে ও সেই অর্থ উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। তবে আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের পরিচালনাগত অসুবিধাগুলো অপসারণ করতে হবে। কেননা ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। লাইসেন্স জটিলতার কারণে অনেক নারী ব্যাংকের ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য নারীদের ঋণ ও ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ করা দরকার। নারীদের ঋণপত্র (এলসি) খোলা, নগদ সুবিধা ও সনদ পেতে নারী উদ্যোক্তাদের সাধারণত পুরুষের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। এ ধরনের বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন।

জানা গেছে, নারী উদ্যোক্তাদের মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হিসেবে কৃষি ও মত্স্য খাত ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, খুচরা বিক্রি, পর্যটন, ফ্যাশন ও সৌন্দর্য পণ্য, স্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্য এবং অনলাইন ব্যবসায় বেশি আগ্রহ রয়েছে। পাশাপাশি গার্মেন্টস ও অ্যাকসেসরিজ, বিউটি পার্লার, টেইলারিং, রিটেইল শপ, আইটি, ইলেকট্রনিকস, সফটওয়্যার, পাটজাত পণ্য ও হ্যান্ডিক্রাফটস খাতে নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে

ঢাকা/এসআর