০৮:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

পুষ্টিহীনতায় দেশের অধিকাংশ মা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:২২:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪১৩২ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ছয় সন্তানের মা জাহানারা। বয়স চুয়ান্ন ছুঁই ছুঁই। পায়ের গোড়ালির ব্যথায় দাঁড়াতে কষ্ট হয়। মাথা ঘোরে যখন-তখন। গাদা গাদা ওষুধ খাওয়ার ভয়ে হাসপাতালে যেতেও নারাজ। হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে নানা পরীক্ষার পর জানা গেল, তিনি ভুগছেন অপুষ্টিতে। তিনি জানালেন, গেল ছয় মাসে একটি ডিমও খাননি তিনি। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘সন্তানদের খাইতে দেখলে ভালো লাগে। ছয় সন্তানের মধ্যে ছোট দুইজন ডিম ভাজা পছন্দ করে। নিজে খেলে যদি কম পড়ে, তাই ডিম খাই না।’ শুধু ডিম নয়, নিত্যদিনের খাবার খুব কমই খান তিনি। আজকাল শুধু আটার রুটি দিয়ে দুই বেলা আহার সারেন।

হাড় ক্ষয়ের প্রধান কারণ ভিটামিন-ডি আর ক্যালসিয়ামের অভাব। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিত খেতে হয় মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম। পাশাপাশি খেতে হবে সামুদ্রিক মাছ। অথচ সেই কবে সিদ্ধ ডিম খেয়েছেন, ভুলেই গেছেন রাজধানীর আরেক মা মনোয়ারা ইসলাম। তাঁর স্বামী অনেক আগেই চলে গেছেন অনন্তলোকে। ২৮ বছর ধরে দুই সন্তানকে লালন-পালন করেছেন একাই। এখন প্রায় সময়ই মনোয়ারা পিঠের ব্যথায় ভোগেন, মাথাও ঘোরায়। এর কারণ হিসেবে চিকিৎসক জানিয়েছেন- পুষ্টিহীনতা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

জাহানারা, মনোয়ারার মতো বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের অধিকাংশ মা ভুগছেন অপুষ্টিতে। সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যায়, সংসারের প্রত্যেকের যত্ন নিতে গিয়ে নিজের প্রতি তাঁরা করছেন অবহেলা। সন্তানের সকালের নাশতার পাতে সিদ্ধ ডিম উঠলেও নিজেরা খাচ্ছেন না। তবে কোনো কোনো মায়ের অপুষ্টির কারণ দরিদ্রতা নয়। তাঁদেরই একজন তৌহিদা। সংসারের কর্মক্ষম ব্যক্তি তৌহিদা হলেও ছোট তিন ভাই-বোন ও মা-বাবার আলাদা যত্ন নেন তিনি। মাছ বা মাংস রান্না করা হলে নিজে তরকারির ঝোল দিয়েই খাবার সারেন। এমনকি বয়ঃসন্ধির পর ডিম খাওয়াও বারণ ছিল তাঁর। বর্তমানে পা ও মেরুদণ্ডের জটিলতায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক দেখালে বিভিন্ন পরীক্ষার পর জানলাম, ছোটবেলা থেকেই আমি অপুষ্টিতে ভুগেছি। তাই বয়স ত্রিশের ঘর পার হতেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ধরা পড়েছে।’

গবেষণায় ঘাটতি :২০১১ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মায়েদের এক-তৃতীয়াংশ অপুষ্টির শিকার বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অপুষ্টির শিকার নারী উচ্চতার চেয়ে অনেক কম ওজনের হয়। ওই বছরই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পুষ্টি জরিপে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নারীর পুষ্টিহীনতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশে ৫০ শতাংশের বেশি নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। অথচ পরবর্তী বছরে বিশেষ করে করোনা এবং এর পরবর্তী সময়গুলোতে ‘পুষ্টিবিষয়ক’ সরকারিভাবে কোনো গবেষণা কিংবা জরিপ করা হয়নি। এমনকি কোনো এনজিও সংস্থারও এ বিষয়ে কোনো কাজ নেই।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস সাভারের আশুলিয়া, জিরাবো ও জামগড়ায় পথশিশু, বস্তিবাসী এবং গার্মেন্টের নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। এই সংস্থার এমসিএমপিপি প্রকল্পের মেডিকেল অফিসার ডা. তানিয়া হাফিজ বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৮০ জন নারী আসেন সেবা নিতে। এর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বারাও আসেন। তবে সাধারণ নারীদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন নারী আসেন, যারা অপুষ্টিতে ভোগেন। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে ভুল ধারণার কারণে অনেক অন্তঃসত্ত্বাকে ছয়-সাত মাস পর্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার দেওয়া হয় না, সন্তান বড় হবে বলে। শিশুর যখন জন্ম হয়, তখন তার ওজন অনেক কম হয়। অপুষ্টির কারণে খর্বকায় হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এরপর কিশোরী বয়সে সে নারী-পুরুষের বৈষম্য ও অজ্ঞানতার জন্য অপুষ্টিতে ভোগে। সেই সঙ্গে নিত্যপণ্যের দর বেড়ে যাওয়াও অন্যতম কারণ। ডা. তানিয়া আরও বলেন, খাবারের দাম দরিদ্র মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে না বলেই দরিদ্র পরিবার সুষম খাবার খেতে পারে না। আবার সেই পরিবারে নারীরা খাবার পান আরও কম। দরিদ্রতার কারণে অনেক কিশোরী বয়ঃসন্ধি, যৌবনকালসহ সব বয়সে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার পান না। এ জন্য সরকারকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।

ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিডেন্ট সার্ভেতে (২০১১-১২) বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে শিশু ও প্রজননক্ষম নারীর মধ্যে অনুপুষ্টি কণার ঘাটতি এখনও একটি চ্যালেঞ্জ। প্রাক-বিদ্যালয়ের শিশুদের ২০.৫ শতাংশ ভিটামিন-এ এবং ৪৪.৬ শতাংশ জিঙ্ক স্বল্পতায় ভুগছে। প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যালয়গামী শিশু এবং ৪২ শতাংশ নারী (যারা অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধদানকারী নয়) আয়োডিন স্বল্পতায় ভুগছে। প্রাক-বিদ্যালয়, বিদ্যালয়-বয়সী ও অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধদানকারী নয়- এমন নারীর মধ্যে আয়রনস্বল্পতার হার যথাক্রমে ১০.৭ শতাংশ, ৯.৫ শতাংশ ও ৭.১ শতাংশ। ৩৩ শতাংশ প্রাক-বিদ্যালয় শিশু এবং ৫০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তস্বল্পতা আছে। জিঙ্কের অভাব আছে প্রাক-বিদ্যালয়ের ৪৪.৬ শতাংশ শিশু এবং যাঁরা অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধদানকারী নন- এমন ৫৭.৩ শতাংশ নারী। ৩৯.৬ শতাংশ প্রাক-বিদ্যালয়ের শিশু, ৪৫.৫ শতাংশ বিদ্যালয়-বয়সী শিশু এবং ৭১.৫ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধদানকারী নয়- এমন নারীর মধ্যে ভিটামিন-ডির কমতি রয়েছে।

আরও পড়ুন: ৩ হাজার গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে তিতাস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, দেশে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরালো হয়। এর সঙ্গে পরিবারের উপার্জন বাড়ে, যা পুষ্টি উন্নয়নের পথ আরও সুগম করে। অথচ গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি নগরেও মায়েরা অপুষ্টিতে ভুগছেন। তিনি বলেন, পুষ্টিহীনতার কারণে অধিকাংশ নারী খর্বাকৃতির হয়। এ ছাড়া অপুষ্টির শিকার নারীরা রক্তস্বল্পতা, পিঠে ও কোমরে ব্যথাসহ নানা ধরনের অসংক্রামক রোগে ভুগছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বড় ধরনের একাধিক পুষ্টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর একটি বাংলাদেশ সমন্বিত পুষ্টি প্রকল্প এবং অন্যটি জাতীয় পুষ্টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কার্যক্রম সফলতা পেলেও, এখনও আমাদের দেশের বহু নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। বর্তমানে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) অনুযায়ী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

পুষ্টিহীনতায় দেশের অধিকাংশ মা

আপডেট: ১২:২২:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ছয় সন্তানের মা জাহানারা। বয়স চুয়ান্ন ছুঁই ছুঁই। পায়ের গোড়ালির ব্যথায় দাঁড়াতে কষ্ট হয়। মাথা ঘোরে যখন-তখন। গাদা গাদা ওষুধ খাওয়ার ভয়ে হাসপাতালে যেতেও নারাজ। হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে নানা পরীক্ষার পর জানা গেল, তিনি ভুগছেন অপুষ্টিতে। তিনি জানালেন, গেল ছয় মাসে একটি ডিমও খাননি তিনি। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘সন্তানদের খাইতে দেখলে ভালো লাগে। ছয় সন্তানের মধ্যে ছোট দুইজন ডিম ভাজা পছন্দ করে। নিজে খেলে যদি কম পড়ে, তাই ডিম খাই না।’ শুধু ডিম নয়, নিত্যদিনের খাবার খুব কমই খান তিনি। আজকাল শুধু আটার রুটি দিয়ে দুই বেলা আহার সারেন।

হাড় ক্ষয়ের প্রধান কারণ ভিটামিন-ডি আর ক্যালসিয়ামের অভাব। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিত খেতে হয় মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম। পাশাপাশি খেতে হবে সামুদ্রিক মাছ। অথচ সেই কবে সিদ্ধ ডিম খেয়েছেন, ভুলেই গেছেন রাজধানীর আরেক মা মনোয়ারা ইসলাম। তাঁর স্বামী অনেক আগেই চলে গেছেন অনন্তলোকে। ২৮ বছর ধরে দুই সন্তানকে লালন-পালন করেছেন একাই। এখন প্রায় সময়ই মনোয়ারা পিঠের ব্যথায় ভোগেন, মাথাও ঘোরায়। এর কারণ হিসেবে চিকিৎসক জানিয়েছেন- পুষ্টিহীনতা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

জাহানারা, মনোয়ারার মতো বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের অধিকাংশ মা ভুগছেন অপুষ্টিতে। সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যায়, সংসারের প্রত্যেকের যত্ন নিতে গিয়ে নিজের প্রতি তাঁরা করছেন অবহেলা। সন্তানের সকালের নাশতার পাতে সিদ্ধ ডিম উঠলেও নিজেরা খাচ্ছেন না। তবে কোনো কোনো মায়ের অপুষ্টির কারণ দরিদ্রতা নয়। তাঁদেরই একজন তৌহিদা। সংসারের কর্মক্ষম ব্যক্তি তৌহিদা হলেও ছোট তিন ভাই-বোন ও মা-বাবার আলাদা যত্ন নেন তিনি। মাছ বা মাংস রান্না করা হলে নিজে তরকারির ঝোল দিয়েই খাবার সারেন। এমনকি বয়ঃসন্ধির পর ডিম খাওয়াও বারণ ছিল তাঁর। বর্তমানে পা ও মেরুদণ্ডের জটিলতায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক দেখালে বিভিন্ন পরীক্ষার পর জানলাম, ছোটবেলা থেকেই আমি অপুষ্টিতে ভুগেছি। তাই বয়স ত্রিশের ঘর পার হতেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ধরা পড়েছে।’

গবেষণায় ঘাটতি :২০১১ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মায়েদের এক-তৃতীয়াংশ অপুষ্টির শিকার বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অপুষ্টির শিকার নারী উচ্চতার চেয়ে অনেক কম ওজনের হয়। ওই বছরই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পুষ্টি জরিপে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নারীর পুষ্টিহীনতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশে ৫০ শতাংশের বেশি নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। অথচ পরবর্তী বছরে বিশেষ করে করোনা এবং এর পরবর্তী সময়গুলোতে ‘পুষ্টিবিষয়ক’ সরকারিভাবে কোনো গবেষণা কিংবা জরিপ করা হয়নি। এমনকি কোনো এনজিও সংস্থারও এ বিষয়ে কোনো কাজ নেই।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস সাভারের আশুলিয়া, জিরাবো ও জামগড়ায় পথশিশু, বস্তিবাসী এবং গার্মেন্টের নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। এই সংস্থার এমসিএমপিপি প্রকল্পের মেডিকেল অফিসার ডা. তানিয়া হাফিজ বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৮০ জন নারী আসেন সেবা নিতে। এর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বারাও আসেন। তবে সাধারণ নারীদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন নারী আসেন, যারা অপুষ্টিতে ভোগেন। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে ভুল ধারণার কারণে অনেক অন্তঃসত্ত্বাকে ছয়-সাত মাস পর্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার দেওয়া হয় না, সন্তান বড় হবে বলে। শিশুর যখন জন্ম হয়, তখন তার ওজন অনেক কম হয়। অপুষ্টির কারণে খর্বকায় হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এরপর কিশোরী বয়সে সে নারী-পুরুষের বৈষম্য ও অজ্ঞানতার জন্য অপুষ্টিতে ভোগে। সেই সঙ্গে নিত্যপণ্যের দর বেড়ে যাওয়াও অন্যতম কারণ। ডা. তানিয়া আরও বলেন, খাবারের দাম দরিদ্র মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে না বলেই দরিদ্র পরিবার সুষম খাবার খেতে পারে না। আবার সেই পরিবারে নারীরা খাবার পান আরও কম। দরিদ্রতার কারণে অনেক কিশোরী বয়ঃসন্ধি, যৌবনকালসহ সব বয়সে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার পান না। এ জন্য সরকারকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।

ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিডেন্ট সার্ভেতে (২০১১-১২) বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে শিশু ও প্রজননক্ষম নারীর মধ্যে অনুপুষ্টি কণার ঘাটতি এখনও একটি চ্যালেঞ্জ। প্রাক-বিদ্যালয়ের শিশুদের ২০.৫ শতাংশ ভিটামিন-এ এবং ৪৪.৬ শতাংশ জিঙ্ক স্বল্পতায় ভুগছে। প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যালয়গামী শিশু এবং ৪২ শতাংশ নারী (যারা অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধদানকারী নয়) আয়োডিন স্বল্পতায় ভুগছে। প্রাক-বিদ্যালয়, বিদ্যালয়-বয়সী ও অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধদানকারী নয়- এমন নারীর মধ্যে আয়রনস্বল্পতার হার যথাক্রমে ১০.৭ শতাংশ, ৯.৫ শতাংশ ও ৭.১ শতাংশ। ৩৩ শতাংশ প্রাক-বিদ্যালয় শিশু এবং ৫০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তস্বল্পতা আছে। জিঙ্কের অভাব আছে প্রাক-বিদ্যালয়ের ৪৪.৬ শতাংশ শিশু এবং যাঁরা অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধদানকারী নন- এমন ৫৭.৩ শতাংশ নারী। ৩৯.৬ শতাংশ প্রাক-বিদ্যালয়ের শিশু, ৪৫.৫ শতাংশ বিদ্যালয়-বয়সী শিশু এবং ৭১.৫ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধদানকারী নয়- এমন নারীর মধ্যে ভিটামিন-ডির কমতি রয়েছে।

আরও পড়ুন: ৩ হাজার গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে তিতাস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, দেশে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরালো হয়। এর সঙ্গে পরিবারের উপার্জন বাড়ে, যা পুষ্টি উন্নয়নের পথ আরও সুগম করে। অথচ গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি নগরেও মায়েরা অপুষ্টিতে ভুগছেন। তিনি বলেন, পুষ্টিহীনতার কারণে অধিকাংশ নারী খর্বাকৃতির হয়। এ ছাড়া অপুষ্টির শিকার নারীরা রক্তস্বল্পতা, পিঠে ও কোমরে ব্যথাসহ নানা ধরনের অসংক্রামক রোগে ভুগছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বড় ধরনের একাধিক পুষ্টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর একটি বাংলাদেশ সমন্বিত পুষ্টি প্রকল্প এবং অন্যটি জাতীয় পুষ্টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কার্যক্রম সফলতা পেলেও, এখনও আমাদের দেশের বহু নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। বর্তমানে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) অনুযায়ী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ঢাকা/এসএ