০৬:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

পেলোসির সম্ভাব্য সফর: তাইওয়ানের বিমানবন্দর উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:২৩:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২
  • / ৪২১১ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফরে রাজধানী তাইপের যে বিমানবন্দরে নামবেন, সেই তাওইউয়ান বিমানবন্দর বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি এসেছে।

কে বা কারা এ হুমকি দিয়েছে, সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মঙ্গলবার সকালে চিঠি পাওয়ার পর তাওইউয়ান বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ। তাইওয়ানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি নেটওয়ার্ক।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তাইয়ানের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে একটি চিঠি আসে তাইইউয়ান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। সে চিঠিতে বলা হয়, বিমানবন্দরের তিনটি স্থানে বোমা পেতে রাখা হয়েছে এবং ন্যান্সি পেলোসি যদি তাইওয়ানের এই বিমানবন্দরে নামেন— সেক্ষেত্রে তিনটি বোমা একসঙ্গে বিস্ফোরিত হবে।

এই চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ তাইওয়ানের এভিয়েশন পুলিশ ব্যুরোকে বিষয়টি অবহিত করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়।

মার্কিন সরকারে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সফরের উদ্দেশে সোমবার ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন ন্যান্সি পেলোসি। সফরসূচি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন থেকে প্রথমে সিঙ্গাপুর যাবেন তিনি; দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সেইন ও প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকোবের সঙ্গে বৈঠকের পর মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সফরেরও কথা রয়েছে তার।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, চলতি এই সফরে তাইওয়ানে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকারের। সেখানে স্বশাসিত এই দ্বীপভূখণ্ডের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে বৈঠকও করবেন তিনি।

এদিকে, ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানের আসতে পারেন— আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রচারিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দিয়েছে চীনের সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সোমবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যদি পেলোসি সত্যিই তাইওয়ান সফরে আসেন, তাহলে তার পরিণতি খুবই গুরুতর হবে।

চীনের সেনাবাহিনী এক্ষেত্রে ‘চুপচাপ অলসভাবে বসে থাকবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লিজিয়ান।

চীনের এই হুঁশিয়ারির জবাবে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পেলোসির (তাইওয়ানে) যাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র চীনের হুমকিকে ভয় পায় না। যদিও পেলোসি তাইওয়ানে যাবেন কিনা তা নিশ্চিত করেননি তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘স্পিকার তাইওয়ানে সফর করবেন কিনা তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর।’

তবে মার্কিন প্রশাসন ও তাইওয়ান সরকারের অন্তত দুই জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সিএনএনকে নিশ্চিত করেছেন, চলতি সফরে তাইওয়ানে যাবেন পেলোসি।

১৯৪০ সালের গৃহযুদ্ধে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তাইওয়ান। তারপর থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করলেও চীন এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে এখনও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।

৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং প্রায় ৩ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্যের একটি সেনাবাহিনী।

এখন পর্যন্ত অবশ্য খুবই অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো দূতাবাস খোলেনি দেশটি।

তবে তাইওয়ান বিষয়ক একটি আইনের আওতায় এই স্বাধীনতাকামী দ্বীপভূখণ্ডকে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

যেসব ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে কূটনৈতিক তিক্ততা চলছে, সেসবের মধ্যে প্রধানতম ইস্যু তাইওয়ান।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

x

পেলোসির সম্ভাব্য সফর: তাইওয়ানের বিমানবন্দর উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

আপডেট: ০৭:২৩:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফরে রাজধানী তাইপের যে বিমানবন্দরে নামবেন, সেই তাওইউয়ান বিমানবন্দর বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি এসেছে।

কে বা কারা এ হুমকি দিয়েছে, সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মঙ্গলবার সকালে চিঠি পাওয়ার পর তাওইউয়ান বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ। তাইওয়ানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি নেটওয়ার্ক।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তাইয়ানের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে একটি চিঠি আসে তাইইউয়ান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। সে চিঠিতে বলা হয়, বিমানবন্দরের তিনটি স্থানে বোমা পেতে রাখা হয়েছে এবং ন্যান্সি পেলোসি যদি তাইওয়ানের এই বিমানবন্দরে নামেন— সেক্ষেত্রে তিনটি বোমা একসঙ্গে বিস্ফোরিত হবে।

এই চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ তাইওয়ানের এভিয়েশন পুলিশ ব্যুরোকে বিষয়টি অবহিত করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়।

মার্কিন সরকারে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সফরের উদ্দেশে সোমবার ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন ন্যান্সি পেলোসি। সফরসূচি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন থেকে প্রথমে সিঙ্গাপুর যাবেন তিনি; দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সেইন ও প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকোবের সঙ্গে বৈঠকের পর মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সফরেরও কথা রয়েছে তার।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, চলতি এই সফরে তাইওয়ানে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকারের। সেখানে স্বশাসিত এই দ্বীপভূখণ্ডের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে বৈঠকও করবেন তিনি।

এদিকে, ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানের আসতে পারেন— আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রচারিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দিয়েছে চীনের সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সোমবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যদি পেলোসি সত্যিই তাইওয়ান সফরে আসেন, তাহলে তার পরিণতি খুবই গুরুতর হবে।

চীনের সেনাবাহিনী এক্ষেত্রে ‘চুপচাপ অলসভাবে বসে থাকবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লিজিয়ান।

চীনের এই হুঁশিয়ারির জবাবে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পেলোসির (তাইওয়ানে) যাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র চীনের হুমকিকে ভয় পায় না। যদিও পেলোসি তাইওয়ানে যাবেন কিনা তা নিশ্চিত করেননি তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘স্পিকার তাইওয়ানে সফর করবেন কিনা তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর।’

তবে মার্কিন প্রশাসন ও তাইওয়ান সরকারের অন্তত দুই জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সিএনএনকে নিশ্চিত করেছেন, চলতি সফরে তাইওয়ানে যাবেন পেলোসি।

১৯৪০ সালের গৃহযুদ্ধে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তাইওয়ান। তারপর থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করলেও চীন এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে এখনও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।

৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং প্রায় ৩ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্যের একটি সেনাবাহিনী।

এখন পর্যন্ত অবশ্য খুবই অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো দূতাবাস খোলেনি দেশটি।

তবে তাইওয়ান বিষয়ক একটি আইনের আওতায় এই স্বাধীনতাকামী দ্বীপভূখণ্ডকে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

যেসব ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে কূটনৈতিক তিক্ততা চলছে, সেসবের মধ্যে প্রধানতম ইস্যু তাইওয়ান।

ঢাকা/টিএ