০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

ফের শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:৩৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০২৩
  • / ৫০৪১ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। স্বভাবতই তিনি খেলা ও বিভিন্ন কোম্পানির প্রচার প্রচারণা মূলক কর্ম কান্ডের জন্য মিডিয়ায় চর্চায় থাকেন। কিন্তু এ সব ছাড়াও বেশ কয়েক বার শেয়ার কারসাজির তদন্তে নাম উঠার কারণে তিনি পুঁজিবাজারেও বেশ চর্চিত। কিন্তু শেয়ার কারসাজির তদন্তে নাম থাকলেও কোন বারেই হননি দন্ডিত। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনেও রয়েছে সাকিবের নাম।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির তদন্ত করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির শেয়ার ক্রেতার তালিকার চার নম্বরে আছেন সাকিব। এক্ষেত্রে তিনি ১২০১৯৫০০৬৪৯৭৬২৩৭ নম্বর বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন। এর আগেও অন্তত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম উঠে আসলেও প্রতিবারেই সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বিএসইসি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

উল্লেখ্য, বারবার একই কারসাজি চক্রের সঙ্গে সাকিবের নাম উঠে আসছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এই চক্রের মূল হোতা আবুল খায়ের হিরু। শেয়ার কারসাজির যে কয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিবের নাম জড়িয়েছে তার সবগুলোতেই রয়েছে আবুল খায়ের হিরু এবং হিরুর বাবা, বোন ও স্ত্রীর নাম।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ক্রেতার তালিকায় চার নম্বরে রয়েছেন সাকিব। এই তারকা ক্রিকেটার ইবিএল সিকিউরিটিজে থাকা তার বিও হিসাবের মাধ্যমে ৯ লাখ ৯০ হাজার ৭৪৩টি শেয়ার লেনদেন করেছেন সাকিব। যা কোম্পানির লেনদেনকৃত মোট শেয়ারের ১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ২ মাসে তারা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ৭২ শতাংশ বাড়িয়েছে। আর এই প্রক্রিয়ায় চক্রটি ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এসব তথ্য উঠে এসেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্ত প্রতিবেদনে। এটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) পাঠানো হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যে চক্রটিকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করে কমিশন। এরমধ্যে কাজী সাদিয়া হাসান চক্র ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, সাইফ উল্লাহ মিজানকে ৫০ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৩৫ লাখ টাকা এবং এজি মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে জরিমানার ক্ষেত্রে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান (ম খা) আলমগীর ও সাকিব আল হাসানের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ে ৬১ দশমিক ৫০ শতাংশ। চক্রটি নিয়মিত ও ব্লক মার্কেট মিলিয়ে দুই মাসে ২৫ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করেছে। ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে বর্তমানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির ৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানিটির বেশিরভাগ শেয়ার কিনে তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোম্পানিটির দাম বাড়িয়েছে। এভাবে ২১ টাকা থেকে ২ মাসেই ৭১ টাকায় নিয়ে আসে কোম্পানির শেয়ারের দাম। তবে তদন্তে যে সময়কাল উল্লেখ করা হয়েছে, তারপরেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শেয়ারটির দাম ১৬৩ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আর কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের সর্বশেষ মূল্য ৫৭ টাকা।

এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান। সাদিয়া ২৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮টি শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেন ২৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০টি।এভাবে দাম বাড়িয়ে আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তার সহযোগীরা এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৩ টাকা মুনাফা তুলে নেন। এছাড়া তাদের কাছে থাকা শেয়ারে আরও ৫৬ লাখ ৭ হাজার ৯৬৩ টাকা মুনাফা রয়েছে।

কোম্পনিটির শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে আরও নাম এসেছে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আলমগীরের। এছাড়া সাইফ উল্লাহ, এজি মাহমুদ, হোসাম মো. সিরাজ, মো. সাইদুর রহমান মনির, কবির আহমেদ, নওয়াফেল বিন রেজা, মো. হাবিবুর রহমান (বাশার), আলহাজ সাঈদ আহমেদ, সাইফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, মাকসুদা বেগম, মো. আবদুল কাদির, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেডের নাম উঠে এসেছে কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম বাড়ান। গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম বাড়ানো হয় ৬০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ সময়ে ৩৪ টাকা থেকে বেড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে।

আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীরা এ সময়ের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার বিক্রি করে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭ টাকা মুনাফা তুলে নেন। এছাড়া তাদের কাছে থাকা শেয়ারে আরও ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩৬ টাকা মুনাফা ছিল।

আরও পড়ুন: লাফার্জ হোলসিমের চূড়ান্ত ডিভিডেন্ড ঘোষণা

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শেয়ার বিক্রির তালিকায় রয়েছেন সাকিব। এই ক্রিকেটার ইবিএল সিকিউরিটিজে থাকা তার বিও হিসাবের মাধ্যমে ১১ লাখ শেয়ার কিনে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৩টি শেয়ার বিক্রি করেন।

অপরদিকে এই সময়ের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় আবুল খায়ের হিরু। তিনি এক কোটি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ২৯২টি শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেন এক কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৮৪টি।

আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার লেনদেন করার প্রমাণ পাওয়ায় আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের এক কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। তবে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।

এছাড়া বিএসইসির তদন্তে গত ২ বছরে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির জন্য মোনার্ক হোল্ডিংসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়। মোনার্ক হোল্ডিংস ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর ব্রোকারেজ হাউস হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাকিব আল হাসান। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী সাদিয়া হাসান।

বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে, আবুল খায়ের ২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত তার সহযোগীদের মধ্যে শেয়ার বেচাকেনা করে ফরচুন সুজের শেয়ারের মূল্যকে প্রভাবিত করেন। এতে ২০ দিনে ফরচুনের শেয়ারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়। ওই সময় ফরচুনের শেয়ারের শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে সাকিবের নাম ছিল। তিনি তার বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার কিনেছিলেন। একই সময়ে ৩ লাখ ৮৩ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন।

এছাড়া, ২০২১ সালের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেন করে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম প্রভাবিত করেন। সে সময় সাকিব ওয়ান ব্যাংকের ৭৫ লাখ শেয়ার কেনেন এবং ১০ লাখ ২০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন। ওই ১৫ দিনে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়ে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিএসইসির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ৫ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১৭২ শতাংশ বেড়েছিল। সাকিব ওই ব্যাংকের ২৭ লাখ শেয়ার কেনেন এবং এক লাখ শেয়ার বিক্রি করেন। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য কারসাজিতে ভূমিকা রেখেছিল ডিআইটি কো-অপারেটিভ। আবুল খায়ের ডিআইটি কো-অপারেটিভের চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার কারসাজির তদন্তে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের নাম!

এছাড়া বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের মূল্য কারসাজিতে সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংসের নাম জড়ায়। বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে, গত বছরের মার্চে মাত্র চার দিনে বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম ৪৫ শতাংশ বাড়ে। এ কোম্পানির ২৫ লাখ শেয়ার কিনে সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংস, যা শীর্ষ ক্রেতার তালিকায় পঞ্চম। মোনার্ক হোল্ডিংস ওই ৪ দিনে ৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ‘আনরিয়েলাইজড গেইন’ করে। এভাবে বার বার শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম আসলেও তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এছাড়া আরও ৬টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে সাকিব আল হাসানের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এগুলো হলো-এশিয়া ইস্যুরেন্স, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন সুজ, বিডি কম, আইপিডিসি এবং এনআরবিসি ব্যাংক।

শেয়ার কারসাজিতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু হাইপ্রোফাইল লোকের নাম এলেও এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পোর্টফোলিও ম্যানেজ করছে এ চক্র। ইতোমধ্যে ২০টির বেশি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে হিরু, এজি মাহমুদ এবং সাইফ উল্লাহ মিজানের নাম এসেছে।

সূত্র: জাগো নিউজ

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

ফের শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম

আপডেট: ০৩:৩৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। স্বভাবতই তিনি খেলা ও বিভিন্ন কোম্পানির প্রচার প্রচারণা মূলক কর্ম কান্ডের জন্য মিডিয়ায় চর্চায় থাকেন। কিন্তু এ সব ছাড়াও বেশ কয়েক বার শেয়ার কারসাজির তদন্তে নাম উঠার কারণে তিনি পুঁজিবাজারেও বেশ চর্চিত। কিন্তু শেয়ার কারসাজির তদন্তে নাম থাকলেও কোন বারেই হননি দন্ডিত। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনেও রয়েছে সাকিবের নাম।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির তদন্ত করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির শেয়ার ক্রেতার তালিকার চার নম্বরে আছেন সাকিব। এক্ষেত্রে তিনি ১২০১৯৫০০৬৪৯৭৬২৩৭ নম্বর বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন। এর আগেও অন্তত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম উঠে আসলেও প্রতিবারেই সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বিএসইসি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

উল্লেখ্য, বারবার একই কারসাজি চক্রের সঙ্গে সাকিবের নাম উঠে আসছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এই চক্রের মূল হোতা আবুল খায়ের হিরু। শেয়ার কারসাজির যে কয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিবের নাম জড়িয়েছে তার সবগুলোতেই রয়েছে আবুল খায়ের হিরু এবং হিরুর বাবা, বোন ও স্ত্রীর নাম।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ক্রেতার তালিকায় চার নম্বরে রয়েছেন সাকিব। এই তারকা ক্রিকেটার ইবিএল সিকিউরিটিজে থাকা তার বিও হিসাবের মাধ্যমে ৯ লাখ ৯০ হাজার ৭৪৩টি শেয়ার লেনদেন করেছেন সাকিব। যা কোম্পানির লেনদেনকৃত মোট শেয়ারের ১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ২ মাসে তারা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ৭২ শতাংশ বাড়িয়েছে। আর এই প্রক্রিয়ায় চক্রটি ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এসব তথ্য উঠে এসেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্ত প্রতিবেদনে। এটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) পাঠানো হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যে চক্রটিকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করে কমিশন। এরমধ্যে কাজী সাদিয়া হাসান চক্র ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, সাইফ উল্লাহ মিজানকে ৫০ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৩৫ লাখ টাকা এবং এজি মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে জরিমানার ক্ষেত্রে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান (ম খা) আলমগীর ও সাকিব আল হাসানের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ে ৬১ দশমিক ৫০ শতাংশ। চক্রটি নিয়মিত ও ব্লক মার্কেট মিলিয়ে দুই মাসে ২৫ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করেছে। ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে বর্তমানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির ৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানিটির বেশিরভাগ শেয়ার কিনে তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোম্পানিটির দাম বাড়িয়েছে। এভাবে ২১ টাকা থেকে ২ মাসেই ৭১ টাকায় নিয়ে আসে কোম্পানির শেয়ারের দাম। তবে তদন্তে যে সময়কাল উল্লেখ করা হয়েছে, তারপরেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শেয়ারটির দাম ১৬৩ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আর কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের সর্বশেষ মূল্য ৫৭ টাকা।

এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান। সাদিয়া ২৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮টি শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেন ২৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০টি।এভাবে দাম বাড়িয়ে আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তার সহযোগীরা এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৩ টাকা মুনাফা তুলে নেন। এছাড়া তাদের কাছে থাকা শেয়ারে আরও ৫৬ লাখ ৭ হাজার ৯৬৩ টাকা মুনাফা রয়েছে।

কোম্পনিটির শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে আরও নাম এসেছে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আলমগীরের। এছাড়া সাইফ উল্লাহ, এজি মাহমুদ, হোসাম মো. সিরাজ, মো. সাইদুর রহমান মনির, কবির আহমেদ, নওয়াফেল বিন রেজা, মো. হাবিবুর রহমান (বাশার), আলহাজ সাঈদ আহমেদ, সাইফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, মাকসুদা বেগম, মো. আবদুল কাদির, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেডের নাম উঠে এসেছে কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম বাড়ান। গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম বাড়ানো হয় ৬০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ সময়ে ৩৪ টাকা থেকে বেড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে।

আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীরা এ সময়ের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার বিক্রি করে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭ টাকা মুনাফা তুলে নেন। এছাড়া তাদের কাছে থাকা শেয়ারে আরও ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩৬ টাকা মুনাফা ছিল।

আরও পড়ুন: লাফার্জ হোলসিমের চূড়ান্ত ডিভিডেন্ড ঘোষণা

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শেয়ার বিক্রির তালিকায় রয়েছেন সাকিব। এই ক্রিকেটার ইবিএল সিকিউরিটিজে থাকা তার বিও হিসাবের মাধ্যমে ১১ লাখ শেয়ার কিনে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৩টি শেয়ার বিক্রি করেন।

অপরদিকে এই সময়ের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় আবুল খায়ের হিরু। তিনি এক কোটি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ২৯২টি শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেন এক কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৮৪টি।

আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার লেনদেন করার প্রমাণ পাওয়ায় আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের এক কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। তবে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।

এছাড়া বিএসইসির তদন্তে গত ২ বছরে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির জন্য মোনার্ক হোল্ডিংসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়। মোনার্ক হোল্ডিংস ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর ব্রোকারেজ হাউস হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাকিব আল হাসান। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী সাদিয়া হাসান।

বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে, আবুল খায়ের ২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত তার সহযোগীদের মধ্যে শেয়ার বেচাকেনা করে ফরচুন সুজের শেয়ারের মূল্যকে প্রভাবিত করেন। এতে ২০ দিনে ফরচুনের শেয়ারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়। ওই সময় ফরচুনের শেয়ারের শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে সাকিবের নাম ছিল। তিনি তার বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার কিনেছিলেন। একই সময়ে ৩ লাখ ৮৩ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন।

এছাড়া, ২০২১ সালের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেন করে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম প্রভাবিত করেন। সে সময় সাকিব ওয়ান ব্যাংকের ৭৫ লাখ শেয়ার কেনেন এবং ১০ লাখ ২০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন। ওই ১৫ দিনে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়ে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিএসইসির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ৫ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১৭২ শতাংশ বেড়েছিল। সাকিব ওই ব্যাংকের ২৭ লাখ শেয়ার কেনেন এবং এক লাখ শেয়ার বিক্রি করেন। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য কারসাজিতে ভূমিকা রেখেছিল ডিআইটি কো-অপারেটিভ। আবুল খায়ের ডিআইটি কো-অপারেটিভের চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার কারসাজির তদন্তে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের নাম!

এছাড়া বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের মূল্য কারসাজিতে সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংসের নাম জড়ায়। বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে, গত বছরের মার্চে মাত্র চার দিনে বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম ৪৫ শতাংশ বাড়ে। এ কোম্পানির ২৫ লাখ শেয়ার কিনে সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংস, যা শীর্ষ ক্রেতার তালিকায় পঞ্চম। মোনার্ক হোল্ডিংস ওই ৪ দিনে ৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ‘আনরিয়েলাইজড গেইন’ করে। এভাবে বার বার শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম আসলেও তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এছাড়া আরও ৬টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে সাকিব আল হাসানের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এগুলো হলো-এশিয়া ইস্যুরেন্স, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন সুজ, বিডি কম, আইপিডিসি এবং এনআরবিসি ব্যাংক।

শেয়ার কারসাজিতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু হাইপ্রোফাইল লোকের নাম এলেও এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পোর্টফোলিও ম্যানেজ করছে এ চক্র। ইতোমধ্যে ২০টির বেশি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে হিরু, এজি মাহমুদ এবং সাইফ উল্লাহ মিজানের নাম এসেছে।

সূত্র: জাগো নিউজ

ঢাকা/এসএ