০১:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪

বিএসইসির নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ ২১ কোম্পানি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
  • / ৪৪৬৫ বার দেখা হয়েছে

এইচ কে জনি: একাধিকবার সময় বেধে দিলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২১ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন। অবশ্য বিষয়টিকে ব্যর্থতা নয়, বরং বিএসইসির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের নির্দেশনা পরিপালনে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। যদিও এর মধ্যে ৪ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে নিয়ন্ত্র সংস্থার পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব কোম্পানির পর্ষদ চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেনি, তাদের পর্ষদ পুনর্গঠনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে (বিএসইসি। তবে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে শেয়ারধারণে ব্যর্থ হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৭ কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন বাকি রয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ২১টি কোম্পানির পর্ষদ সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে চারটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বিএসইসি।

পর্ষদ পুনর্গঠন না হওয়া বাকি ১৭টি কোম্পানি হচ্ছে- অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস (এএফসি), অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ডেল্টা স্পিনার্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফাইন ফুডস, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুডস, জেনারেশন নেক্সট, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, নর্দার্ণ জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, ফার্মা এইডস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ও সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজ।

পর্ষদ পুনর্গঠন হওয়া চারটি কোম্পানি হচ্ছে অগ্নি সিস্টেমস, আলহাজ টেক্সটাইল মিলস, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও ফ্যামিলিটেক্স (বিডি)। তিনটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেই কোম্পানিগুলো হচ্ছে জেনারেশন নেক্সট, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক ও ডেল্টা স্পিনার্স।

জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত যারা আইনটি পরিপালন করবে না, সেসব কোম্পানিতে নতুন পরিচালক নিয়োগ করাসহ আইনগত অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাধারণ শেয়ারধারীদের মধ্যে যাদের ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার রয়েছে, তাদের মধ্য থেকেই আইন অনুযায়ী নতুন পরিচালক নিয়োগ করা হতে পারে।

এদিকে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলো নতুন করে কোনোভাবেই মূলধন বাড়াতে পারবে না বলে বিধান দিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি ন্যূনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সব ধরনের শেয়ার কেনাবেচা ও স্থানান্তরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিএসইসি এখন ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সব ধরনের আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়ে এগোচ্ছে।

এদিকে, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ২০১১ সালে ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত বিধান করে বিএসইসি। সেই অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। আর পরিচালকদের হাতে এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০১১ সালে এমন আইন করা হলেও সেটি পরিপালনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ কারণে আইন করার পরও তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত মেনে আসছিল না।

আবার অনেক পরিচালক হাতে থাকা সব শেয়ার ঘোষণা ছাড়াই বিক্রি করে দিয়ে আসছিল। কিন্তু কমিশনের এ নির্দেশনার বিরুদ্ধে কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকেরা উচ্চ আদালতে রিট করে। যদিও শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত থেকে কমিশনের অনুকূলে রায় আসে।

এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের মে মাসে বিএসইসির পুনর্গঠিত কমিশন ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত আইনটি পরিপালন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ ৪৩ কোম্পানিকে আইন পরিপালনের জন্য ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে গত বছর ২৯ জুলাই চিঠি দেয় বিএসইসি। এরপর এক দফা সময় বাড়িয়ে তা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

এ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৫ কোম্পানি নতুন করে শেয়ার কিনে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ করেছে। আর সাতটি কোম্পানি শর্ত পূরণে আরো কিছুদিন সময় চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন করেছে। আর বাকি ২১টি কোম্পানির পক্ষ থেকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। এ কারণে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাইব্যাকের (বাজারে শেয়ার ছাড়ার পর উদ্যোক্তাদের আবার শেয়ার কিনে নেওয়া) পদ্ধতি রয়েছে। তাই শেয়ারের দাম অনেক কমে গেলে পরিচালকরা বাজার থেকে শেয়ার কিনে নেন। বিষয়টি কোম্পানির প্রতি পরিচালকদের টান ও দায়িত্ববোধ প্রকাশ করে। আমাদের দেশে এ পদ্ধতি দেখা যায় না। বরং অনেক কোম্পানিই বাজারে তালিকাভুক্তির পর সেখানে তাদের দায়িত্ববোধ কমে যেতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ নিশ্চিত করা হলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ ব্যাপারে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। যে কোম্পানির পরিচালকরা বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানির ন্যূনতম শেয়ার হাতে রাখেন না, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পরিচালকদের কাছে শেয়ার না থাকলে কোম্পানির প্রতি তাদের কাজের উদ্যম কমে যায়। দায়িত্ববোধ কমে যায়। ফলে কোম্পানি ভালো মুনাফা করতে পারে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে কঠোর হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা উপকৃত হবেন।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির আগে ব্যবসা ভালো দেখিয়ে শেয়ার ছেড়ে টাকা সংগ্রহ করে। পরে নিজেদের কাছেই ৩০ শতাংশের কম শেয়ার থাকায় কোম্পানির প্রতি তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং কোম্পনির ব্যবসা খারাপ হতে থাকে। তাই সব কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়টি কঠোরভাবে পরিপালনের দিকে নজর দিতে হবে এবং যেসব কোম্পানি শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হবে তাদের পর্ষদ পুনর্গঠনে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের আইন পরিপালনের জন্য সময় দেয়ার পরও যেসব কোম্পানি ব্যর্থ হয়েছে সেসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনে কাজ করছে বিএসইসি। এরই মধ্যে চারটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে।

তিনি জানান, একাধিক কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হওয়া সব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। তবে যেসব কোম্পানির পর্ষদ পরবর্তী সময়ে এসে পুনর্গঠনের আগেই ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবে, তাদের বিষয়ে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

বিজনেসজার্নাল/ঢাকা

শেয়ার করুন

x

বিএসইসির নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ ২১ কোম্পানি

আপডেট: ০১:০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১

এইচ কে জনি: একাধিকবার সময় বেধে দিলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২১ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন। অবশ্য বিষয়টিকে ব্যর্থতা নয়, বরং বিএসইসির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের নির্দেশনা পরিপালনে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। যদিও এর মধ্যে ৪ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে নিয়ন্ত্র সংস্থার পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব কোম্পানির পর্ষদ চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেনি, তাদের পর্ষদ পুনর্গঠনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে (বিএসইসি। তবে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে শেয়ারধারণে ব্যর্থ হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৭ কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন বাকি রয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ২১টি কোম্পানির পর্ষদ সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে চারটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বিএসইসি।

পর্ষদ পুনর্গঠন না হওয়া বাকি ১৭টি কোম্পানি হচ্ছে- অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস (এএফসি), অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ডেল্টা স্পিনার্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফাইন ফুডস, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুডস, জেনারেশন নেক্সট, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, নর্দার্ণ জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, ফার্মা এইডস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ও সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজ।

পর্ষদ পুনর্গঠন হওয়া চারটি কোম্পানি হচ্ছে অগ্নি সিস্টেমস, আলহাজ টেক্সটাইল মিলস, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও ফ্যামিলিটেক্স (বিডি)। তিনটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেই কোম্পানিগুলো হচ্ছে জেনারেশন নেক্সট, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক ও ডেল্টা স্পিনার্স।

জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত যারা আইনটি পরিপালন করবে না, সেসব কোম্পানিতে নতুন পরিচালক নিয়োগ করাসহ আইনগত অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাধারণ শেয়ারধারীদের মধ্যে যাদের ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার রয়েছে, তাদের মধ্য থেকেই আইন অনুযায়ী নতুন পরিচালক নিয়োগ করা হতে পারে।

এদিকে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলো নতুন করে কোনোভাবেই মূলধন বাড়াতে পারবে না বলে বিধান দিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি ন্যূনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সব ধরনের শেয়ার কেনাবেচা ও স্থানান্তরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিএসইসি এখন ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সব ধরনের আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়ে এগোচ্ছে।

এদিকে, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ২০১১ সালে ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত বিধান করে বিএসইসি। সেই অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। আর পরিচালকদের হাতে এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০১১ সালে এমন আইন করা হলেও সেটি পরিপালনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ কারণে আইন করার পরও তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত মেনে আসছিল না।

আবার অনেক পরিচালক হাতে থাকা সব শেয়ার ঘোষণা ছাড়াই বিক্রি করে দিয়ে আসছিল। কিন্তু কমিশনের এ নির্দেশনার বিরুদ্ধে কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকেরা উচ্চ আদালতে রিট করে। যদিও শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত থেকে কমিশনের অনুকূলে রায় আসে।

এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের মে মাসে বিএসইসির পুনর্গঠিত কমিশন ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত আইনটি পরিপালন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ ৪৩ কোম্পানিকে আইন পরিপালনের জন্য ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে গত বছর ২৯ জুলাই চিঠি দেয় বিএসইসি। এরপর এক দফা সময় বাড়িয়ে তা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

এ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৫ কোম্পানি নতুন করে শেয়ার কিনে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ করেছে। আর সাতটি কোম্পানি শর্ত পূরণে আরো কিছুদিন সময় চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন করেছে। আর বাকি ২১টি কোম্পানির পক্ষ থেকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। এ কারণে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাইব্যাকের (বাজারে শেয়ার ছাড়ার পর উদ্যোক্তাদের আবার শেয়ার কিনে নেওয়া) পদ্ধতি রয়েছে। তাই শেয়ারের দাম অনেক কমে গেলে পরিচালকরা বাজার থেকে শেয়ার কিনে নেন। বিষয়টি কোম্পানির প্রতি পরিচালকদের টান ও দায়িত্ববোধ প্রকাশ করে। আমাদের দেশে এ পদ্ধতি দেখা যায় না। বরং অনেক কোম্পানিই বাজারে তালিকাভুক্তির পর সেখানে তাদের দায়িত্ববোধ কমে যেতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ নিশ্চিত করা হলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ ব্যাপারে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। যে কোম্পানির পরিচালকরা বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানির ন্যূনতম শেয়ার হাতে রাখেন না, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পরিচালকদের কাছে শেয়ার না থাকলে কোম্পানির প্রতি তাদের কাজের উদ্যম কমে যায়। দায়িত্ববোধ কমে যায়। ফলে কোম্পানি ভালো মুনাফা করতে পারে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে কঠোর হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা উপকৃত হবেন।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির আগে ব্যবসা ভালো দেখিয়ে শেয়ার ছেড়ে টাকা সংগ্রহ করে। পরে নিজেদের কাছেই ৩০ শতাংশের কম শেয়ার থাকায় কোম্পানির প্রতি তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং কোম্পনির ব্যবসা খারাপ হতে থাকে। তাই সব কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়টি কঠোরভাবে পরিপালনের দিকে নজর দিতে হবে এবং যেসব কোম্পানি শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হবে তাদের পর্ষদ পুনর্গঠনে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের আইন পরিপালনের জন্য সময় দেয়ার পরও যেসব কোম্পানি ব্যর্থ হয়েছে সেসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনে কাজ করছে বিএসইসি। এরই মধ্যে চারটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে।

তিনি জানান, একাধিক কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হওয়া সব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। তবে যেসব কোম্পানির পর্ষদ পরবর্তী সময়ে এসে পুনর্গঠনের আগেই ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবে, তাদের বিষয়ে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

বিজনেসজার্নাল/ঢাকা