১২:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪

ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:১৪:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১
  • / ১০৩৪১ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ছবি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে ব্যাংকঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল ব্যাংকগুলো। বেশ কয়েকটি ব্যাংক সাড়ে ৬ শতাংশ সুদেও ঋণ দিচ্ছিল। কিন্তু এখন আর এত কম সুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারবে না কোনো ব্যাংক।

আমানতকারীদের স্বস্তি দিতে আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ফীতির কম সুদ দিতে পারবে না কোনো ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা পরিপালন করতে গিয়ে বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলোকে আমানতে সুদহার বাড়াতে হবে। আর আমানতে সুদহার বাড়ালে ঋণের সুদহার বাড়ানো ছাড়া ব্যাংকগুলোর কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সাড়ে ৬ শতাংশ সুদেও ঋণ দিচ্ছে। যদিও ঋণের সুদের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ পর্যন্ত।

২০২০ সালের এপ্রিলে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সর্বোচ্চ সুদহারে ৯ শতাংশের সীমা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও শুরু হয়। ফলে ব্যাংকঋণের চাহিদা কমে যায়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সাধারণ মানুষের বাইরে চলাফেরা, বিদেশ ভ্রমণ ও মানুষের কেনাকাটাও কমে যায়। তবে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হয়। এ কারণে ব্যাংকে আমানত বাড়তে শুরু করে।

ঋণের চাহিদা না থাকায় বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক আমানতের সুদহার ২ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনে। এ সময়ে আমানতের সুদ কমায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। আর বেসরকারি খাতের কিছু দুর্বল ব্যাংক আমানত পেতে সুদহার বাড়িয়ে রেখেছে।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানত ও ঋণে সুদহার যেভাবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সেটা আমাদের পরিপালন করতে হবে। আর এটা বাস্তবায়ন করতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এতে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

‘সুদহার বেঁধে দেয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক ৯ শতাংশের কম সুদে ঋণ দিচ্ছিল, সেটা হয়তো আর সম্ভব হবে না।’

ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আমানতকারীরা লাভবান হবেন। ঋণের সুদ বেঁধে দেয়াতে এতদিন ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেয়েছেন। তবে ঋণে ৯ শতাংশ সুদ বেঁধে দেয়া হলেও বিনিয়োগ কম থাকায় করপোরেট ঋণে গড়ে ৭ শতাংশের বেশি সুদ পাচ্ছি না। সে ক্ষেত্রে প্রথমে ব্যাংক কিছুটা চাপের মুখে পড়বে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমানতকারীরা ব্যাংকে টাকা রেখে যা পাচ্ছে সেটা দিয়ে মূল্যস্ফীতিও সামাল দিতে পারছে না। আসল টাকাই কমে যাচ্ছে।

‘এ জন্য উদ্যোগী হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে তা মানতে হবে।’

ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদ বলেন, ঋণের সুদহার বেড়ে গেলে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। আর বর্তমানে দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চড়া সুদ আর সময়ও লাগে বেশি। সে ক্ষেত্রে অনেকে বিদেশি ঋণে ঝুঁকতে পারেন। কারণ বিদেশি বিভিন্ন ফান্ড থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নেয়া যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে একমাত্র ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঋণে গড় সুদহার ৯ শতাংশের ওপরে অর্থাৎ ৯ দশমিক ১২ শতাংশ।

যেসব ব্যাংকের ঋণের সুদ ৮ শতাংশের বেশি

গত জুন শেষে ১৬টি ব্যাংকের গড় ঋণ সুদহার ৮ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংক।

কমিউনিটি ব্যাংক ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংক ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ, এনআরবি ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ইউনিয়ন ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, মিডল্যান্ড ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ, প্রবাসীকল্যাণ ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, মধুমতি ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, আইএফআইসি ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, মেঘনা ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, পূবালী ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, ট্রাস্ট ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ, ব্র্যাক ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

এ ১৬ ব্যাংকের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতে গড় সুদহার ২ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া সীমান্ত ও ট্রাস্ট ব্যাংকের আমানতে গড়ে ৩ শতাংশের ওপরে সুদ দিচ্ছে। আর বাকিগুলোর গড় সুদহার সাড়ে ৪ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে।

৭ থেকে ৮ শতাংশ ঋণের সুদ যেসব ব্যাংকে

ডাচবাংলা ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, উত্তরা ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, প্রিমিয়ার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়া ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ওয়ান ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, সিটি ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ইস্টার্ন ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যমুনা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, অগ্রণী ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ঢাকা ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ, এক্সিম ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ, শাহজালাল ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, আল-আরাফাহ ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, প্রাইম ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, রূপালী ও এবি ব্যাংক ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ, ন্যাশনাল ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

এসব ব্যাংকের মধ্যে ডাচবাংলায় আমানতে সুদহার মাত্র ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া সিটি ব্যাংকের আমানতে গড় সুদহার আড়াই শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং প্রাইম ব্যাংকের ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে।

অন্য ব্যাংকগুলো আমানতে গড় সুদ সাড়ে ৩ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

ঋণের সুদ ৬ শতাংশ যেসব ব্যাংকে

কৃষি ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, এনসিসি ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, সাউথইস্ট ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ইসলামী ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ, জনতা ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ, সোনালী গড়ে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

একইভাবে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোতেও সুদ কম। তবে এসব ব্যাংক তাদের আমানতের বেশির ভাগ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে থাকে।

এসব ব্যাংককে এখন সুদহার বাড়াতে হবে। এতে বাড়তে পারে ঋণের সুদহারও। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে।

এ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের তিন মাস বা তার বেশি মেয়াদি আমানতের সুদহার তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না। গত তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) দেশে মূল্যস্ফীতির গড় ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সর্বশেষ তিন মাসের এ গড়কে বিবেচনায় নিলে এসব ব্যাংককে আমানতের সুদ কমপক্ষে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে হবে। তবে সব ধরনের আমানতে বেঁধে দেয়া এ সুদহার কার্যকর হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, ব্যক্তিপর্যায়ের মেয়াদি আমানত এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড বা তহবিল হিসেবে রাখা মেয়াদি আমানতে এ সুবিধা মিলবে। এর বাইরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যেসব আমানত ব্যাংকে থাকে সেগুলোর বিপরীতে বাড়তি সুদ মিলবে না।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x

ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা

আপডেট: ০৮:১৪:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে ব্যাংকঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল ব্যাংকগুলো। বেশ কয়েকটি ব্যাংক সাড়ে ৬ শতাংশ সুদেও ঋণ দিচ্ছিল। কিন্তু এখন আর এত কম সুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারবে না কোনো ব্যাংক।

আমানতকারীদের স্বস্তি দিতে আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ফীতির কম সুদ দিতে পারবে না কোনো ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা পরিপালন করতে গিয়ে বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলোকে আমানতে সুদহার বাড়াতে হবে। আর আমানতে সুদহার বাড়ালে ঋণের সুদহার বাড়ানো ছাড়া ব্যাংকগুলোর কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সাড়ে ৬ শতাংশ সুদেও ঋণ দিচ্ছে। যদিও ঋণের সুদের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ পর্যন্ত।

২০২০ সালের এপ্রিলে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সর্বোচ্চ সুদহারে ৯ শতাংশের সীমা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও শুরু হয়। ফলে ব্যাংকঋণের চাহিদা কমে যায়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সাধারণ মানুষের বাইরে চলাফেরা, বিদেশ ভ্রমণ ও মানুষের কেনাকাটাও কমে যায়। তবে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হয়। এ কারণে ব্যাংকে আমানত বাড়তে শুরু করে।

ঋণের চাহিদা না থাকায় বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক আমানতের সুদহার ২ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনে। এ সময়ে আমানতের সুদ কমায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। আর বেসরকারি খাতের কিছু দুর্বল ব্যাংক আমানত পেতে সুদহার বাড়িয়ে রেখেছে।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানত ও ঋণে সুদহার যেভাবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সেটা আমাদের পরিপালন করতে হবে। আর এটা বাস্তবায়ন করতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এতে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

‘সুদহার বেঁধে দেয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক ৯ শতাংশের কম সুদে ঋণ দিচ্ছিল, সেটা হয়তো আর সম্ভব হবে না।’

ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আমানতকারীরা লাভবান হবেন। ঋণের সুদ বেঁধে দেয়াতে এতদিন ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেয়েছেন। তবে ঋণে ৯ শতাংশ সুদ বেঁধে দেয়া হলেও বিনিয়োগ কম থাকায় করপোরেট ঋণে গড়ে ৭ শতাংশের বেশি সুদ পাচ্ছি না। সে ক্ষেত্রে প্রথমে ব্যাংক কিছুটা চাপের মুখে পড়বে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমানতকারীরা ব্যাংকে টাকা রেখে যা পাচ্ছে সেটা দিয়ে মূল্যস্ফীতিও সামাল দিতে পারছে না। আসল টাকাই কমে যাচ্ছে।

‘এ জন্য উদ্যোগী হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে তা মানতে হবে।’

ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদ বলেন, ঋণের সুদহার বেড়ে গেলে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। আর বর্তমানে দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চড়া সুদ আর সময়ও লাগে বেশি। সে ক্ষেত্রে অনেকে বিদেশি ঋণে ঝুঁকতে পারেন। কারণ বিদেশি বিভিন্ন ফান্ড থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নেয়া যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে একমাত্র ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঋণে গড় সুদহার ৯ শতাংশের ওপরে অর্থাৎ ৯ দশমিক ১২ শতাংশ।

যেসব ব্যাংকের ঋণের সুদ ৮ শতাংশের বেশি

গত জুন শেষে ১৬টি ব্যাংকের গড় ঋণ সুদহার ৮ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংক।

কমিউনিটি ব্যাংক ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংক ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ, এনআরবি ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ইউনিয়ন ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, মিডল্যান্ড ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ, প্রবাসীকল্যাণ ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, মধুমতি ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, আইএফআইসি ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, মেঘনা ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, পূবালী ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, ট্রাস্ট ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ, ব্র্যাক ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

এ ১৬ ব্যাংকের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতে গড় সুদহার ২ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া সীমান্ত ও ট্রাস্ট ব্যাংকের আমানতে গড়ে ৩ শতাংশের ওপরে সুদ দিচ্ছে। আর বাকিগুলোর গড় সুদহার সাড়ে ৪ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে।

৭ থেকে ৮ শতাংশ ঋণের সুদ যেসব ব্যাংকে

ডাচবাংলা ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, উত্তরা ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, প্রিমিয়ার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়া ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ওয়ান ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, সিটি ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ইস্টার্ন ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যমুনা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, অগ্রণী ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ঢাকা ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ, এক্সিম ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ, শাহজালাল ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, আল-আরাফাহ ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, প্রাইম ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, রূপালী ও এবি ব্যাংক ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ, ন্যাশনাল ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

এসব ব্যাংকের মধ্যে ডাচবাংলায় আমানতে সুদহার মাত্র ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া সিটি ব্যাংকের আমানতে গড় সুদহার আড়াই শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং প্রাইম ব্যাংকের ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে।

অন্য ব্যাংকগুলো আমানতে গড় সুদ সাড়ে ৩ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

ঋণের সুদ ৬ শতাংশ যেসব ব্যাংকে

কৃষি ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, এনসিসি ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, সাউথইস্ট ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ইসলামী ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ, জনতা ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ, সোনালী গড়ে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

একইভাবে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোতেও সুদ কম। তবে এসব ব্যাংক তাদের আমানতের বেশির ভাগ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে থাকে।

এসব ব্যাংককে এখন সুদহার বাড়াতে হবে। এতে বাড়তে পারে ঋণের সুদহারও। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে।

এ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের তিন মাস বা তার বেশি মেয়াদি আমানতের সুদহার তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না। গত তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) দেশে মূল্যস্ফীতির গড় ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সর্বশেষ তিন মাসের এ গড়কে বিবেচনায় নিলে এসব ব্যাংককে আমানতের সুদ কমপক্ষে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে হবে। তবে সব ধরনের আমানতে বেঁধে দেয়া এ সুদহার কার্যকর হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, ব্যক্তিপর্যায়ের মেয়াদি আমানত এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড বা তহবিল হিসেবে রাখা মেয়াদি আমানতে এ সুবিধা মিলবে। এর বাইরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যেসব আমানত ব্যাংকে থাকে সেগুলোর বিপরীতে বাড়তি সুদ মিলবে না।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: