১০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪

‘ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন রোডম্যাপ কাজে আসবে না’

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:৫২:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪১৫৫ বার দেখা হয়েছে

ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। তবে এর আগেও এরকম রোডম্যাপ ছিলো। আগের রোডম্যাপ থেকে কেনো সরে আসলাম, তা না জেনে নতুন রোডম্যাপ করে কোনো কাজে আসবে না বলে জানিয়েছেন তত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

আজ শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যাংক খাত অর্থনীতির হৃদপিণ্ডের মতো কাজ করে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। তবে এর আগেও এরকম রোডম্যাপ ছিলো। আগের রোডম্যাপ থেকে কেনো সরে আসলাম, তা না জেনে নতুন রোডম্যাপ করে কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, প্রথম ব্যাংক রিফর্ম কমিটি গঠন করা হয় ১৯৯৭ সালে। তখন ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে একটি মিটিং করেছিলাম। সেই সময় তাঁরা নিজেদের ব্যাংক থেকে ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়েছিলো। এসব ঋণের অধিকাংশ ছিলো খেলাপি। তখন এসব ব্যাংক মালিকেরা বলেছিলো- ‘অনেক কষ্ট করে ও অর্থ ব্যয় করে ব্যাংক চালু করেছি, এখন আমরা ঋণ নিতেও পারবো না। কষ্ট করেছি তাই ঋণ নিচ্ছি আমরা।’ তবে সেখান থেকে ব্যাংক খাত বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এখন ৩ শতাংশ ঋণ নিতে পারছে ব্যাংক মালিকেরা। তাও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক মিলিয়ে ৩ শতাংশ ঋণ নিচ্ছে।

তিনি আরও  বলেন, বর্তমানে আর্থিক খাতের অবস্থা ভালো নেই। পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক লেনদেনের তথ্য আরও ডিসক্লোজার হওয়া দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবিধানগুলো খুবই জরুরি। এসব বিধিবিধানে অনেক সংশোধন হয়েছে। এগুলোর ইতিহাস জানা খুবই জরুরী। স্পন্সর ডিরেক্টরেরা অনেক শক্তিশালী হয়। স্পন্সর ডিরেক্টর কী পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে, এক পরিবার থেকে কতজন পরিচালক থাকবে এবং তাদের মেয়াদে কত বছর হবে সে সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ এসব বিষয়ে বিস্তারিত না জানলে বোঝা যাবে না বলেও জানান এ অর্থনীতিবিদ।

আরও পড়ুন: গোল্ডকে ফরমাল ইকোনমিতে আনতে হবে: সালমান এফ রহমান

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বর্তমানে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সাথে মার্জ করে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর দায় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক নেবে না। যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর উপর দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেটি সম্ভব হতে পারে। কয়েকটি কেলেঙ্কারি হওয়া বড় ব্যাংকে আমানতে ভাটা পড়েনি। কারণ কোনো ব্যাংকে বড় ধরনের কেলঙ্কারি হলে সেদিকে আমানতকারীরা খেয়াল রাখে না। তবে যেসব ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না, তাদের দরকার নেই।

একই অনুষ্ঠানে সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে আগে ঋণ অবলোপন করা হতো তিন বছরে। এখন সময় আরও কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছে। সুযোগ থাকলে ৬ মাসের মধ্যে ঋণ অবলোপন করে ফেলবে। কারণ অবলোপন করলে ব্যালেন্স শিট থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা বের হয়ে যাবে। তখন ব্যালেন্স শিট দেখতে একটু ভালো দেখাবে। এজন্য এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক দেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকও এর অধীনে। দেশের নতুন ব্যাংকগুলো যদি সৃজনশীল কাজ করে তাহলে ভালো। গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে। আর যদি শুধু ঢাকায় শাখা খুলে বসে থাকে, সেরকম ব্যাংক দরকার নেই।

এছাড়াও তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্তে অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে। ইপিবির তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা রপ্তানির তথ্যে মিল থাকে না। আবর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ এক, অপরদিকে আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভ আরও কম। এত বিভ্রাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে ভবিষ্যতে।

ঢাকা/কেএ

শেয়ার করুন

x

‘ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন রোডম্যাপ কাজে আসবে না’

আপডেট: ০৩:৫২:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। তবে এর আগেও এরকম রোডম্যাপ ছিলো। আগের রোডম্যাপ থেকে কেনো সরে আসলাম, তা না জেনে নতুন রোডম্যাপ করে কোনো কাজে আসবে না বলে জানিয়েছেন তত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

আজ শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যাংক খাত অর্থনীতির হৃদপিণ্ডের মতো কাজ করে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। তবে এর আগেও এরকম রোডম্যাপ ছিলো। আগের রোডম্যাপ থেকে কেনো সরে আসলাম, তা না জেনে নতুন রোডম্যাপ করে কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, প্রথম ব্যাংক রিফর্ম কমিটি গঠন করা হয় ১৯৯৭ সালে। তখন ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে একটি মিটিং করেছিলাম। সেই সময় তাঁরা নিজেদের ব্যাংক থেকে ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়েছিলো। এসব ঋণের অধিকাংশ ছিলো খেলাপি। তখন এসব ব্যাংক মালিকেরা বলেছিলো- ‘অনেক কষ্ট করে ও অর্থ ব্যয় করে ব্যাংক চালু করেছি, এখন আমরা ঋণ নিতেও পারবো না। কষ্ট করেছি তাই ঋণ নিচ্ছি আমরা।’ তবে সেখান থেকে ব্যাংক খাত বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এখন ৩ শতাংশ ঋণ নিতে পারছে ব্যাংক মালিকেরা। তাও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক মিলিয়ে ৩ শতাংশ ঋণ নিচ্ছে।

তিনি আরও  বলেন, বর্তমানে আর্থিক খাতের অবস্থা ভালো নেই। পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক লেনদেনের তথ্য আরও ডিসক্লোজার হওয়া দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবিধানগুলো খুবই জরুরি। এসব বিধিবিধানে অনেক সংশোধন হয়েছে। এগুলোর ইতিহাস জানা খুবই জরুরী। স্পন্সর ডিরেক্টরেরা অনেক শক্তিশালী হয়। স্পন্সর ডিরেক্টর কী পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে, এক পরিবার থেকে কতজন পরিচালক থাকবে এবং তাদের মেয়াদে কত বছর হবে সে সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ এসব বিষয়ে বিস্তারিত না জানলে বোঝা যাবে না বলেও জানান এ অর্থনীতিবিদ।

আরও পড়ুন: গোল্ডকে ফরমাল ইকোনমিতে আনতে হবে: সালমান এফ রহমান

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বর্তমানে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সাথে মার্জ করে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর দায় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক নেবে না। যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর উপর দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেটি সম্ভব হতে পারে। কয়েকটি কেলেঙ্কারি হওয়া বড় ব্যাংকে আমানতে ভাটা পড়েনি। কারণ কোনো ব্যাংকে বড় ধরনের কেলঙ্কারি হলে সেদিকে আমানতকারীরা খেয়াল রাখে না। তবে যেসব ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না, তাদের দরকার নেই।

একই অনুষ্ঠানে সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে আগে ঋণ অবলোপন করা হতো তিন বছরে। এখন সময় আরও কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছে। সুযোগ থাকলে ৬ মাসের মধ্যে ঋণ অবলোপন করে ফেলবে। কারণ অবলোপন করলে ব্যালেন্স শিট থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা বের হয়ে যাবে। তখন ব্যালেন্স শিট দেখতে একটু ভালো দেখাবে। এজন্য এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক দেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকও এর অধীনে। দেশের নতুন ব্যাংকগুলো যদি সৃজনশীল কাজ করে তাহলে ভালো। গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে। আর যদি শুধু ঢাকায় শাখা খুলে বসে থাকে, সেরকম ব্যাংক দরকার নেই।

এছাড়াও তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্তে অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে। ইপিবির তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা রপ্তানির তথ্যে মিল থাকে না। আবর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ এক, অপরদিকে আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভ আরও কম। এত বিভ্রাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে ভবিষ্যতে।

ঢাকা/কেএ