১১:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

ভারতের বিমানবন্দরে নিলামে উঠছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজ!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:২০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মে ২০২১
  • / ৪৩৫৯ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: অবশেষে ভারতে নিলামে উঠছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিমান। ২০১৫ সাল থেকে ১৭০ আসনের ম্যাকডনেল ডগলাসের এমডি-৮৩ মডেলের উড়োজাহাজটি রায়পুরে স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দরে পড়ে রয়েছে। এ সময়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের বকেয়া পরিশোধ করাতো দূরের কথা, বিমানটি আকাশে উড়ার উপযোগী হওয়া সত্বেও দেশে ফিরিয়ে আনেন নি। অবশেষে দীর্ঘদিন চিঠি দিয়েও উড়োজাহাজটি বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেনি রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অবশেষে নিলামে উঠিয়ে নিজেদের টাকা আদায়ের কৌশল অবলম্বন করেছে স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে ওমানের মাস্কাট থেকে ঢাকায় ফিরছিল ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজ। পথে ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে ভারতের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। দুদিন পর যাত্রীদের ফেরানো হয় ঢাকায়। তবে নড়চড় হয়নি উড়োজাহাজটির অবস্থান। ছয় বছর ধরে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রায়পুর বিমানবন্দরে।

২০১৫ সালে ১৭০ আসনের ম্যাকডনেল ডগলাসের এমডি-৮৩ মডেলের উড়োজাহাজটি রায়পুরে অবতরণ করে। ক্রু-পাইলটসহ যাত্রী ছিল মোট ১৭৩ জন। ঘটনার ২০ দিন পর ইঞ্জিনের সমস্যা দূর করতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ থেকে ইঞ্জিনিয়ার পাঠানো হয়। তারা উড়োজাহাজটি চলার উপযুক্ত করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উড়োজাহাজটি না নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসেন তারা। এরপর তিন বছর পার্কিং বে’তে পড়েছিল সেটি। ২০১৮ সালে বিমানবন্দরের সীমানার ভেতরে পরিত্যক্ত একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজটি।

২০১৫ সাল থেকেই শুরু হয় চিঠি চালাচালি। রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানে উল্লেখ করে, রায়পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি এমনিতেই অনেক ছোট। এখানে একসঙ্গে ছয়টি উড়োজাহাজ রাখার ব্যবস্থা আছে। ইউনাইটেডের পাইলট যখন উড়োজাহাজটি অবতরণের কথা বলেন তখন রানওয়েসহ আশপাশের স্থান খালি করে জরুরি অবতরণের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রতিদান হিসেবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিমানবন্দরের ‘অবাঞ্ছিত অতিথি’ (আন ওয়েলকাম গেস্ট) হিসেবে কোনো চার্জ না দিয়ে জায়গা দখল করে রেখেছে।

রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথম বছর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে ১২টি চিঠি দেওয়া হয়। একটি চিঠির প্রতিউত্তরে ইউনাইটেড ‘দু-তিন মাসের মধ্যে সুরাহা’র কথা বললেও সেটি এখনো হয়নি। 

রায়পুর বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ অবস্থান করলে প্রতি ঘণ্টার জন্য পার্কিং চার্জ দিতে হয় ৩২০ ভারতীয় রূপি। বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে তাদের পাওনা এক কোটি ৫৪ লাখ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা)। এখন তারা নিলামের মাধ্যমে উড়োজাহাজটি বিক্রি করে সমুদয় টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি তারা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছে।

রায়পুর বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ অবস্থান করলে প্রতি ঘণ্টার জন্য পার্কিং চার্জ দিতে হয় ৩২০ ভারতীয় রূপি। বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে তাদের পাওনা এক কোটি ৫৪ লাখ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা)। এখন তারা নিলামের মাধ্যমে উড়োজাহাজটি বিক্রি করে সমুদয় টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি তারা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছে

রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, সর্বশেষ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চিঠির মাধ্যমে তারা ‘নিলাম প্রক্রিয়ার দিকে এগোনোর’ বিষয়টি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে জানায়। পাশাপাশি এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই) ও রিজিওনাল হেডকোয়ার্টারের (আরএইচকিউ) মাধ্যমে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করে। তবে ওই চিঠিরও জবাব দেয়নি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।

উড়োজাহাজ নিলামের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নবগঠিত পরিচালনাপর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা গত পাঁচ বছর ধরে অনেকবার যোগাযোগ করেছে সাবেক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা কোনো উত্তর দেয়নি। কোনো সাড়াশব্দও দেয়নি। ফলে রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিলামের উদ্যোগ নেয়।’

‘আমরা আসার পর তাদের চিঠি দিয়েছি, অকশন (নিলাম) যাতে না হয়। আমরা তাদের (রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ) কাছ থেকে ছয় মাস সময় চেয়েছি। চিঠিতে বলেছি, উড়োজাহাজটি নিলামে না তুলে আমাদের যেন ছয় মাসের সময় দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে তাদের জানিয়েছি। তবে তারা এখনো আমাদের চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি।’

ঢাকা/এইচকে

শেয়ার করুন

x
English Version

ভারতের বিমানবন্দরে নিলামে উঠছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজ!

আপডেট: ১২:২০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: অবশেষে ভারতে নিলামে উঠছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিমান। ২০১৫ সাল থেকে ১৭০ আসনের ম্যাকডনেল ডগলাসের এমডি-৮৩ মডেলের উড়োজাহাজটি রায়পুরে স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দরে পড়ে রয়েছে। এ সময়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের বকেয়া পরিশোধ করাতো দূরের কথা, বিমানটি আকাশে উড়ার উপযোগী হওয়া সত্বেও দেশে ফিরিয়ে আনেন নি। অবশেষে দীর্ঘদিন চিঠি দিয়েও উড়োজাহাজটি বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেনি রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অবশেষে নিলামে উঠিয়ে নিজেদের টাকা আদায়ের কৌশল অবলম্বন করেছে স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে ওমানের মাস্কাট থেকে ঢাকায় ফিরছিল ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজ। পথে ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে ভারতের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। দুদিন পর যাত্রীদের ফেরানো হয় ঢাকায়। তবে নড়চড় হয়নি উড়োজাহাজটির অবস্থান। ছয় বছর ধরে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রায়পুর বিমানবন্দরে।

২০১৫ সালে ১৭০ আসনের ম্যাকডনেল ডগলাসের এমডি-৮৩ মডেলের উড়োজাহাজটি রায়পুরে অবতরণ করে। ক্রু-পাইলটসহ যাত্রী ছিল মোট ১৭৩ জন। ঘটনার ২০ দিন পর ইঞ্জিনের সমস্যা দূর করতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ থেকে ইঞ্জিনিয়ার পাঠানো হয়। তারা উড়োজাহাজটি চলার উপযুক্ত করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উড়োজাহাজটি না নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসেন তারা। এরপর তিন বছর পার্কিং বে’তে পড়েছিল সেটি। ২০১৮ সালে বিমানবন্দরের সীমানার ভেতরে পরিত্যক্ত একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজটি।

২০১৫ সাল থেকেই শুরু হয় চিঠি চালাচালি। রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানে উল্লেখ করে, রায়পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি এমনিতেই অনেক ছোট। এখানে একসঙ্গে ছয়টি উড়োজাহাজ রাখার ব্যবস্থা আছে। ইউনাইটেডের পাইলট যখন উড়োজাহাজটি অবতরণের কথা বলেন তখন রানওয়েসহ আশপাশের স্থান খালি করে জরুরি অবতরণের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রতিদান হিসেবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিমানবন্দরের ‘অবাঞ্ছিত অতিথি’ (আন ওয়েলকাম গেস্ট) হিসেবে কোনো চার্জ না দিয়ে জায়গা দখল করে রেখেছে।

রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথম বছর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে ১২টি চিঠি দেওয়া হয়। একটি চিঠির প্রতিউত্তরে ইউনাইটেড ‘দু-তিন মাসের মধ্যে সুরাহা’র কথা বললেও সেটি এখনো হয়নি। 

রায়পুর বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ অবস্থান করলে প্রতি ঘণ্টার জন্য পার্কিং চার্জ দিতে হয় ৩২০ ভারতীয় রূপি। বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে তাদের পাওনা এক কোটি ৫৪ লাখ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা)। এখন তারা নিলামের মাধ্যমে উড়োজাহাজটি বিক্রি করে সমুদয় টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি তারা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছে।

রায়পুর বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ অবস্থান করলে প্রতি ঘণ্টার জন্য পার্কিং চার্জ দিতে হয় ৩২০ ভারতীয় রূপি। বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে তাদের পাওনা এক কোটি ৫৪ লাখ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা)। এখন তারা নিলামের মাধ্যমে উড়োজাহাজটি বিক্রি করে সমুদয় টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি তারা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছে

রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, সর্বশেষ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চিঠির মাধ্যমে তারা ‘নিলাম প্রক্রিয়ার দিকে এগোনোর’ বিষয়টি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে জানায়। পাশাপাশি এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই) ও রিজিওনাল হেডকোয়ার্টারের (আরএইচকিউ) মাধ্যমে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করে। তবে ওই চিঠিরও জবাব দেয়নি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।

উড়োজাহাজ নিলামের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নবগঠিত পরিচালনাপর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা গত পাঁচ বছর ধরে অনেকবার যোগাযোগ করেছে সাবেক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা কোনো উত্তর দেয়নি। কোনো সাড়াশব্দও দেয়নি। ফলে রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিলামের উদ্যোগ নেয়।’

‘আমরা আসার পর তাদের চিঠি দিয়েছি, অকশন (নিলাম) যাতে না হয়। আমরা তাদের (রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ) কাছ থেকে ছয় মাস সময় চেয়েছি। চিঠিতে বলেছি, উড়োজাহাজটি নিলামে না তুলে আমাদের যেন ছয় মাসের সময় দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে তাদের জানিয়েছি। তবে তারা এখনো আমাদের চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি।’

ঢাকা/এইচকে