০৭:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

শিমু হত্যা: স্বামীসহ দুজনের বিচার শুরু

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৪৫:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪১৯৮ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও নোবেলের বাল্যবন্ধু এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হলো।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এ অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

আজ দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের নির্দোষ দাবি করে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠন করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, চিত্রনায়িকা শিমু তার মা-বাবাসহ নোবেলদের পাশের বাসায় থাকতেন এবং অভিনয় করতেন। নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নোবেল তার মা-বাবার মতের বিরুদ্ধে শিমুকে বিয়ে করেছিলেন। প্রথম প্রথম নোবেলের বাবা-মা তাদের সঙ্গে থাকলেও পরে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য হয়। এরপর নোবেলের মা-বাবা আলাদাভাবে বসবাস করতে থাকেন এবং নোবেল গ্রিন রোডে স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস শুরু করেন। বিয়ের পর শিমুকে সিনেমায় অভিনয় করতে নিষেধ করেন নোবেল। শিমু নোবেলের কথায় সিনেমায় অভিনয় করা বন্ধ করলেও এটিএন বাংলায় চাকরি করতেন। শিমুর এ চাকরি নোবেল ভালোভাবে নেননি। এ নিয়ে তাদের সংসারে কলহ চলে। নিজেদের দাম্পত্য জীবনের কলহের সব কথা নোবেল তার বন্ধু ফরহাদকে বলতেন।

অভিযোগপত্র আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি সকাল সোয়া ৮টায় নোবেলের বাসায় যান ফরহাদ। কলিংবেলের শব্দ শুনে শিমু দরজা খোলার পর ফরহাদকে ড্রইংরুমে বসতে দেন। এরপর বেডরুমে গিয়ে নোবেলকে ফরহাদের আসার সংবাদ জানান। নোবেল ড্রইংরুমে গিয়ে ফরহাদের সঙ্গে দেখা করে তাকে চা খাওয়ার কথা বলেন। এরপর তিনি রান্নাঘরে চা বানাতে যান। এর মধ্যে শিমু বেডরুমে বসে মোবাইল চালাতে থাকেন। এরপর নোবেল শিমুর মোবাইল দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি এবং একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়।

শব্দ শুনে ফরহাদ তাদের বেডরুমে ঢোকেন। নোবেল ফরহাদকে বলেন, ‘শিমুকে ধর, ওকে আজ মেরেই ফেলব।’ ফরহাদ ধরতে গেলে তাকে ফেলে দেন শিমু। এরপর নোবেল শিমুর গলা ধরতে গেলে শিমু তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে নোবেল ফরহাদকে শিমুর গলা ধরতে বলেন। এরপর ফরহাদ শিমুর গলা এবং নোবেল দুই হাত চেপে ধরেন। একপর্যায়ে শিমু মেঝেতে পড়ে যান এবং নোবেল তার গলার ওপর পা দিয়ে দাঁড়ান। একপর্যায়ে শিমু নিস্তেজ হয়ে পড়েন। নোবেল ফরহাদকে দেখতে বলেন, শিমু বেঁচে আছেন কিনা। ফরহাদ শিমুর হাত দেখে বলেন, বেঁচে নেই।

এরপর শিমুর মরদেহ লুকোনোর পরিকল্পনা করতে থাকেন নোবেল ও ফরহাদ। নোবেল রান্নাঘর থেকে দুটি বস্তা এবং ফ্রিজের ওপর থেকে মিষ্টির প্যাকেট বাঁধার প্লাস্টিকের রশি আনেন। পরে ফরহাদ শিমুর মাথা উঁচু করে ধরলে নোবেল একটি বস্তার ভেতর শিমুর মরদেহের মাথার অংশ ঢোকান। এবং পা উঁচু করে ধরলে নোবেল পায়ের অংশ আরেকটি বস্তার ভেতর ঢোকান। এরপর নোবেল প্লাস্টিকের রশি দিয়ে দুটি বস্তা এক সঙ্গে সেলাই করেন। পরে ফরহাদ শিমুর মরদেহ নোবেলের গাড়ির পেছনের সিটে ওঠান। এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আলিপুর ব্রিজ এলাকার ঝোঁপে ফেলে দেন।

গত ১৭ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার পরিচয় মিলছিল না। পরে ওই রাতে তার আঙুলের ছাপ নিয়ে নাম-পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পরদিন ১৮ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নোবেল ও তার বাল্যবন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা করেন শিমুর ভাই হারুনুর রশীদ। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ওইদিন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পরে এ মামলার দুই আসামি গত ২০ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।

আরও পড়ুনঃএইচএসসি পাসে চাকরি দেবে আনোয়ার গ্রুপ

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

x
English Version

শিমু হত্যা: স্বামীসহ দুজনের বিচার শুরু

আপডেট: ০৪:৪৫:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও নোবেলের বাল্যবন্ধু এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হলো।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এ অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

আজ দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের নির্দোষ দাবি করে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠন করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, চিত্রনায়িকা শিমু তার মা-বাবাসহ নোবেলদের পাশের বাসায় থাকতেন এবং অভিনয় করতেন। নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নোবেল তার মা-বাবার মতের বিরুদ্ধে শিমুকে বিয়ে করেছিলেন। প্রথম প্রথম নোবেলের বাবা-মা তাদের সঙ্গে থাকলেও পরে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য হয়। এরপর নোবেলের মা-বাবা আলাদাভাবে বসবাস করতে থাকেন এবং নোবেল গ্রিন রোডে স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস শুরু করেন। বিয়ের পর শিমুকে সিনেমায় অভিনয় করতে নিষেধ করেন নোবেল। শিমু নোবেলের কথায় সিনেমায় অভিনয় করা বন্ধ করলেও এটিএন বাংলায় চাকরি করতেন। শিমুর এ চাকরি নোবেল ভালোভাবে নেননি। এ নিয়ে তাদের সংসারে কলহ চলে। নিজেদের দাম্পত্য জীবনের কলহের সব কথা নোবেল তার বন্ধু ফরহাদকে বলতেন।

অভিযোগপত্র আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি সকাল সোয়া ৮টায় নোবেলের বাসায় যান ফরহাদ। কলিংবেলের শব্দ শুনে শিমু দরজা খোলার পর ফরহাদকে ড্রইংরুমে বসতে দেন। এরপর বেডরুমে গিয়ে নোবেলকে ফরহাদের আসার সংবাদ জানান। নোবেল ড্রইংরুমে গিয়ে ফরহাদের সঙ্গে দেখা করে তাকে চা খাওয়ার কথা বলেন। এরপর তিনি রান্নাঘরে চা বানাতে যান। এর মধ্যে শিমু বেডরুমে বসে মোবাইল চালাতে থাকেন। এরপর নোবেল শিমুর মোবাইল দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি এবং একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়।

শব্দ শুনে ফরহাদ তাদের বেডরুমে ঢোকেন। নোবেল ফরহাদকে বলেন, ‘শিমুকে ধর, ওকে আজ মেরেই ফেলব।’ ফরহাদ ধরতে গেলে তাকে ফেলে দেন শিমু। এরপর নোবেল শিমুর গলা ধরতে গেলে শিমু তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে নোবেল ফরহাদকে শিমুর গলা ধরতে বলেন। এরপর ফরহাদ শিমুর গলা এবং নোবেল দুই হাত চেপে ধরেন। একপর্যায়ে শিমু মেঝেতে পড়ে যান এবং নোবেল তার গলার ওপর পা দিয়ে দাঁড়ান। একপর্যায়ে শিমু নিস্তেজ হয়ে পড়েন। নোবেল ফরহাদকে দেখতে বলেন, শিমু বেঁচে আছেন কিনা। ফরহাদ শিমুর হাত দেখে বলেন, বেঁচে নেই।

এরপর শিমুর মরদেহ লুকোনোর পরিকল্পনা করতে থাকেন নোবেল ও ফরহাদ। নোবেল রান্নাঘর থেকে দুটি বস্তা এবং ফ্রিজের ওপর থেকে মিষ্টির প্যাকেট বাঁধার প্লাস্টিকের রশি আনেন। পরে ফরহাদ শিমুর মাথা উঁচু করে ধরলে নোবেল একটি বস্তার ভেতর শিমুর মরদেহের মাথার অংশ ঢোকান। এবং পা উঁচু করে ধরলে নোবেল পায়ের অংশ আরেকটি বস্তার ভেতর ঢোকান। এরপর নোবেল প্লাস্টিকের রশি দিয়ে দুটি বস্তা এক সঙ্গে সেলাই করেন। পরে ফরহাদ শিমুর মরদেহ নোবেলের গাড়ির পেছনের সিটে ওঠান। এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আলিপুর ব্রিজ এলাকার ঝোঁপে ফেলে দেন।

গত ১৭ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার পরিচয় মিলছিল না। পরে ওই রাতে তার আঙুলের ছাপ নিয়ে নাম-পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পরদিন ১৮ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নোবেল ও তার বাল্যবন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা করেন শিমুর ভাই হারুনুর রশীদ। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ওইদিন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পরে এ মামলার দুই আসামি গত ২০ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।

আরও পড়ুনঃএইচএসসি পাসে চাকরি দেবে আনোয়ার গ্রুপ

ঢাকা/এসএম