০৫:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

হিটস্ট্রোকে ঢাকা বারের আইনজীবীর হৃদয়বিদারক মৃত্যু

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:১৫:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
  • / ৪২১২ বার দেখা হয়েছে

পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্যেই প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক করে ঢাকা বারের আইনজীবী শফিকুল আলমের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মামলার শুনানি শেষে চেম্বারে ফেরার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

এ আইনজীবীর মৃত্যুর বর্ণনা দিয়ে ঢাকা বারের আইনজীবী মো. ওসমান গণি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, আমার কোলেই হিট স্ট্রোক করে মারা গেছেন, এর থেকে যন্ত্রণার কষ্টের আর কি হতে পারে?

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি লিখেন, শুনানি শেষ করে মেট্রো বারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ এক আইনজীবী মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলেন আমার সঙ্গে আরেক আইনজীবী ধরে আছেন আমি সঙ্গে নিয়ে দাড়িয়ে থেকে মুখে মাথায় হালকা পানি দিয়ে মুখে হালকা চিনি দিয়ে অনেক কষ্টে রিকশায় উঠালাম ঢাকা বারের হসপিটালে আনলাম ডাক্তারকে ডাকলাম। ডাক্তার দেখে বললেন, হিট স্ট্রোক করেছেন। তখন আইনজীবী হালকা কথা বললেন, মনে হলো স্বাভাবিক হচ্ছেন, উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ওনার ফাইল গাউন কোট কোথায়? আমি বললাম সব আছে আপনি চিন্তা করবেন না। উনি বললেন, আমি জামিন করিয়েছি বেইল বন্ড জমা দেয়া হয়নি, আমি বললাম, সমস্যা নাই দিতে পারবেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ বললাম ভাবলাম সুস্থ হয়েছেন। ডাক্তার বললেন স্যালাইন খাওয়ান গরমে এমন হইছে আর আপনারা যে পোশাক পরেন!!! আমি স্যালাইন আনতে দিলাম এক ভাইকে। তখন উনি বললেন, ওয়াশরুমে যাবে।

ডাক্তার বললেন ওয়াশরুমে নিয়ে যান, আমি অনেক কষ্টে সঙ্গে এক আইনজীবীকে নিয়ে ওয়াশরুমে বসালাম কিন্তু উনি প্যান্ট খুলতে পারছিলেন না। আমি নিজ হাতে জামাকাপড় সব খুললাম, লজ্জা শরম সব বাদ দিয়ে উনাকে বাথরুমে বসালাম পিছনে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছি তারপর দেখি কথা বলছেন না হাত পা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে তারপর ভিতরে আরেক আইনজীবী কে ডেকে আনলাম উনি ধরে ছিলেন আমি নিজ হাতে উনাকে পরিষ্কার করলাম। কিন্তু তারপর উনার আর কোনো কথা নাই আমি দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম ডেকে আনলাম ডাক্তার দেখে বললেন উনার অবস্থা খারাপ আপনারা তাড়াতাড়ি ন্যাশনালে নিন আমি গামছা এনে কোনো রকম লজ্জাস্থান ডেকে রিকশায় ন্যাশনালে নিলাম কর্মরত ডাক্তার দেখে বললেন উনি আর নেই। আমার শরীরটা কিছুক্ষণের জন্য হিম হয়ে গেলো এতো কষ্ট করেও বাঁচাতে পারলাম না। এর থেকে কষ্টের আমার জীবনে আর কিছু নাই।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা: নিহত ৮ ও আটক ১৯০০

এদিকে হঠাৎ এই আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা বারের আইনজীবীরা প্রচন্ড গরমে আদালতের পোষাকের পরিবর্তনের দাবি করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড্রেসকোড পরিবর্তনের দাবি করে স্টেটাস দিয়েছেন অনেক আইনজীবী।

গত ১৯ এপ্রিল কোলকাতা হাইকোর্টে গরমের মধ্যে ড্রেসকোড শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে দেশটি।এ আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছেন ঢাকা বারের সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন।

তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমে আইনজীবীদের চিরায়ত ড্রেস কোড পরিবর্তনের জন্য এরই মধ্যে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছি। আমরা প্রত্যাশা করছি এই গরমে তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। এর আগে করোনার সময়ে আমাদের ড্রেসকোডের পরিবর্তন করে আমরা শুনানি করেছি। এখন যে প্রচণ্ড গরম পড়েছে এই অবস্থায়ও আমাদের আবেদনে প্রধান বিচারপতি সাড়া দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

x

হিটস্ট্রোকে ঢাকা বারের আইনজীবীর হৃদয়বিদারক মৃত্যু

আপডেট: ০৮:১৫:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩

পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্যেই প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক করে ঢাকা বারের আইনজীবী শফিকুল আলমের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মামলার শুনানি শেষে চেম্বারে ফেরার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

এ আইনজীবীর মৃত্যুর বর্ণনা দিয়ে ঢাকা বারের আইনজীবী মো. ওসমান গণি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, আমার কোলেই হিট স্ট্রোক করে মারা গেছেন, এর থেকে যন্ত্রণার কষ্টের আর কি হতে পারে?

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি লিখেন, শুনানি শেষ করে মেট্রো বারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ এক আইনজীবী মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলেন আমার সঙ্গে আরেক আইনজীবী ধরে আছেন আমি সঙ্গে নিয়ে দাড়িয়ে থেকে মুখে মাথায় হালকা পানি দিয়ে মুখে হালকা চিনি দিয়ে অনেক কষ্টে রিকশায় উঠালাম ঢাকা বারের হসপিটালে আনলাম ডাক্তারকে ডাকলাম। ডাক্তার দেখে বললেন, হিট স্ট্রোক করেছেন। তখন আইনজীবী হালকা কথা বললেন, মনে হলো স্বাভাবিক হচ্ছেন, উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ওনার ফাইল গাউন কোট কোথায়? আমি বললাম সব আছে আপনি চিন্তা করবেন না। উনি বললেন, আমি জামিন করিয়েছি বেইল বন্ড জমা দেয়া হয়নি, আমি বললাম, সমস্যা নাই দিতে পারবেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ বললাম ভাবলাম সুস্থ হয়েছেন। ডাক্তার বললেন স্যালাইন খাওয়ান গরমে এমন হইছে আর আপনারা যে পোশাক পরেন!!! আমি স্যালাইন আনতে দিলাম এক ভাইকে। তখন উনি বললেন, ওয়াশরুমে যাবে।

ডাক্তার বললেন ওয়াশরুমে নিয়ে যান, আমি অনেক কষ্টে সঙ্গে এক আইনজীবীকে নিয়ে ওয়াশরুমে বসালাম কিন্তু উনি প্যান্ট খুলতে পারছিলেন না। আমি নিজ হাতে জামাকাপড় সব খুললাম, লজ্জা শরম সব বাদ দিয়ে উনাকে বাথরুমে বসালাম পিছনে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছি তারপর দেখি কথা বলছেন না হাত পা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে তারপর ভিতরে আরেক আইনজীবী কে ডেকে আনলাম উনি ধরে ছিলেন আমি নিজ হাতে উনাকে পরিষ্কার করলাম। কিন্তু তারপর উনার আর কোনো কথা নাই আমি দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম ডেকে আনলাম ডাক্তার দেখে বললেন উনার অবস্থা খারাপ আপনারা তাড়াতাড়ি ন্যাশনালে নিন আমি গামছা এনে কোনো রকম লজ্জাস্থান ডেকে রিকশায় ন্যাশনালে নিলাম কর্মরত ডাক্তার দেখে বললেন উনি আর নেই। আমার শরীরটা কিছুক্ষণের জন্য হিম হয়ে গেলো এতো কষ্ট করেও বাঁচাতে পারলাম না। এর থেকে কষ্টের আমার জীবনে আর কিছু নাই।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা: নিহত ৮ ও আটক ১৯০০

এদিকে হঠাৎ এই আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা বারের আইনজীবীরা প্রচন্ড গরমে আদালতের পোষাকের পরিবর্তনের দাবি করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড্রেসকোড পরিবর্তনের দাবি করে স্টেটাস দিয়েছেন অনেক আইনজীবী।

গত ১৯ এপ্রিল কোলকাতা হাইকোর্টে গরমের মধ্যে ড্রেসকোড শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে দেশটি।এ আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছেন ঢাকা বারের সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন।

তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমে আইনজীবীদের চিরায়ত ড্রেস কোড পরিবর্তনের জন্য এরই মধ্যে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছি। আমরা প্রত্যাশা করছি এই গরমে তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। এর আগে করোনার সময়ে আমাদের ড্রেসকোডের পরিবর্তন করে আমরা শুনানি করেছি। এখন যে প্রচণ্ড গরম পড়েছে এই অবস্থায়ও আমাদের আবেদনে প্রধান বিচারপতি সাড়া দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।

ঢাকা/এসএম