০২:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

৬৬০ চিকিৎসক-নার্স আক্রান্ত : করোনা চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:৫৫:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০
  • / ৪৩২৯ বার দেখা হয়েছে

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করতে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনােলজিস্টসহ সেবাদানকারীরা আশঙ্কাজনকভাবে করােনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুসারে, সোমবার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২৯৫ জন চিকিৎসক, ১১৬ জন নার্স ও ২৪৯ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ চিকিংসাপেশায় নিয়ােজিত মােট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন হেল্প বুলেটিনে ব্রিফিংকালে সোমবার অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করানোভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট পাঁচ হাজার ৯১৩ জন আক্রান্ত এবং ১৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ হাজার ৪০১টি।

বিএমএ মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী জানান, তাদের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে মোট আক্রান্তের ১১ শতাংশই চিকিৎসক-নার্স টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী।

তিনি বলেন, চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবাদানকারীরা এ হারে আক্রান্ত হতে থাকলে আগামীতে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএমএর তিন দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।

দাবিগুলো হচ্ছে- দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোভিড হাসপাতালে নিয়ােজিত চিকিৎসক-নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সঠিক মানের পিপিই, এন-৯৫ বা এর সমমানের মাস্ক প্রদান, নন কোভিড হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে ট্রায়াজ সিস্টেম চালু করে সেখানে কর্মরত সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য উপযুক্ত পিপিই, এন-৯৫ বা সমমানের মাস্ক প্রদান নিশ্চিত করা এবং সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন, প্রয়ােজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ২৯৫ উল্লেখ করলেও বেসরকারি সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রেসপন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর) সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেশে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ৩৮৭ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজধানীসহ ৩১৭ জন ঢাকা বিভাগের। এছাড়া বরিশালে ৯ জন, চট্টগ্রামে ১৫ জন, সিলেটে ৫ জন, খুলনায় ১০ জন, রংপুরে ৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮ জন রয়েছেন বলে তারা জানায়।

এছাড়া সোসাইটি ফর নার্সের সেফটি অ্যান্ড রাইটস নামক একটি বেসরকারি সংগঠনের ২৪ এপ্রিলের তথ্য অনুসারে রাজধানীসহ সারাদেশে ১৭৮ নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১১৪ জন ও বেসরকারি হাসপাতালের ৬৪ জন। ওই সময় পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৫৬ জন, বরিশাল ৪ জন, সিলেটে ১ জন, ময়মনসিংহ ১৪ জন ও রংপুরে ৩ জন আক্রান্ত হন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের আক্রান্ত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনও পর্যন্ত ভালো থাকলেও জনগণ সচেতন না হলে ভবিষ্যতে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা দুরূহ হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, মানুষ সচেতন হলে এ পর্যন্ত তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সারাদেশে হাসপাতালে যে পরিমাণ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে তাই যথেষ্ট। তবে জনগণ সচেতন না হলে, স্বাস্থ্যনির্দেশনা মেনে না চললে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সেক্ষেত্রে সারাদেশে হাসপাতালের শয্যা দিয়েও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা যাবে না। কারণ রোগীরা বেশি আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্স টেকনোলজিসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাখতে হবে। ফলে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার জন্য জনগণ খুঁজে পাবে না।

তিনি দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যনির্দেশনা মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া, বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।

শেয়ার করুন

x
English Version

৬৬০ চিকিৎসক-নার্স আক্রান্ত : করোনা চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কা

আপডেট: ০১:৫৫:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করতে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনােলজিস্টসহ সেবাদানকারীরা আশঙ্কাজনকভাবে করােনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুসারে, সোমবার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২৯৫ জন চিকিৎসক, ১১৬ জন নার্স ও ২৪৯ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ চিকিংসাপেশায় নিয়ােজিত মােট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন হেল্প বুলেটিনে ব্রিফিংকালে সোমবার অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করানোভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট পাঁচ হাজার ৯১৩ জন আক্রান্ত এবং ১৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ হাজার ৪০১টি।

বিএমএ মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী জানান, তাদের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে মোট আক্রান্তের ১১ শতাংশই চিকিৎসক-নার্স টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী।

তিনি বলেন, চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবাদানকারীরা এ হারে আক্রান্ত হতে থাকলে আগামীতে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএমএর তিন দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।

দাবিগুলো হচ্ছে- দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোভিড হাসপাতালে নিয়ােজিত চিকিৎসক-নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সঠিক মানের পিপিই, এন-৯৫ বা এর সমমানের মাস্ক প্রদান, নন কোভিড হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে ট্রায়াজ সিস্টেম চালু করে সেখানে কর্মরত সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য উপযুক্ত পিপিই, এন-৯৫ বা সমমানের মাস্ক প্রদান নিশ্চিত করা এবং সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন, প্রয়ােজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ২৯৫ উল্লেখ করলেও বেসরকারি সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রেসপন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর) সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেশে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ৩৮৭ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজধানীসহ ৩১৭ জন ঢাকা বিভাগের। এছাড়া বরিশালে ৯ জন, চট্টগ্রামে ১৫ জন, সিলেটে ৫ জন, খুলনায় ১০ জন, রংপুরে ৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮ জন রয়েছেন বলে তারা জানায়।

এছাড়া সোসাইটি ফর নার্সের সেফটি অ্যান্ড রাইটস নামক একটি বেসরকারি সংগঠনের ২৪ এপ্রিলের তথ্য অনুসারে রাজধানীসহ সারাদেশে ১৭৮ নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১১৪ জন ও বেসরকারি হাসপাতালের ৬৪ জন। ওই সময় পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৫৬ জন, বরিশাল ৪ জন, সিলেটে ১ জন, ময়মনসিংহ ১৪ জন ও রংপুরে ৩ জন আক্রান্ত হন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের আক্রান্ত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনও পর্যন্ত ভালো থাকলেও জনগণ সচেতন না হলে ভবিষ্যতে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা দুরূহ হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, মানুষ সচেতন হলে এ পর্যন্ত তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সারাদেশে হাসপাতালে যে পরিমাণ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে তাই যথেষ্ট। তবে জনগণ সচেতন না হলে, স্বাস্থ্যনির্দেশনা মেনে না চললে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সেক্ষেত্রে সারাদেশে হাসপাতালের শয্যা দিয়েও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা যাবে না। কারণ রোগীরা বেশি আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্স টেকনোলজিসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাখতে হবে। ফলে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার জন্য জনগণ খুঁজে পাবে না।

তিনি দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যনির্দেশনা মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া, বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।