১০:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

অভিভাবকরা তুলছে না উপবৃত্তির ১৪৪ কোটি টাকা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৫৫:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৬৯ বার দেখা হয়েছে

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তাদের অভিভাবকদের কাছে পাঠানোর পর অনেকেই সেই টাকা তুলছেন না। কয়েক বছর ধরে না তোলায় এ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৪ কোটি। এ টাকা এখন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। বাকি ৫৩ কোটি টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

অভিভাবকরা কেন টাকা তুলছেন না, তা খুঁজে বের না করে এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক অভিভাবক এ টাকা সঞ্চয় করতে পারেন। তাই প্রকৃত কারণ না জেনে অভিভাবকদের টাকা গণহারে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া ঠিক হচ্ছে না বলেও অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ শিশুকে নিয়মিত উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) আওতায় এক কোটি ২১ লাখ পরিবার এ সুবিধা পাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাসে ১০০ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকে মাসে ৫০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি তিন মাসে এক কিস্তি হিসেবে বছরে চার কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল ফোনে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু অনেক অভিভাবক উপবৃত্তির এ টাকা তুলছেন না। এতেই ১৪৪ কোটি টাকা জমা হয়েছে।

দীর্ঘদিন মায়েদের অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকার পর সে টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় ২০২০ সালের জুন মাসে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিওর ক্যাশের মূল ব্যাংক রূপালী ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয় যেন এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়। এরপর রূপালী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ১৪৪ কোটি টাকার মধ্যে ৯১ কোটি টাকা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে। বাকি ৫৩ কোটি মার্চ মাসের মধ্যে জমা হবে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ’প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পে’র (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রচুর টাকা মায়েদের অ্যাকাউন্টে পড়ে আছে, এটা জানার পর অলস এ টাকাগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য রূপালী ব্যাংককে এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার তাগাদা দেই। এরমধ্যে ৯১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। বাকি ৫৩ কোটি খুব শিগগিরই জমা হবে।

অভিভাবকরা কেন এ টাকা তোলেননি তার কারণ খুজঁতে গিয়ে জানা গেছে, নানা কারণে এ টাকা পড়ে ছিল। এর মধ্যে অন্যতম কারণ অনেক অভিভাবক প্রথমে যে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল পরে তিনি সেটি ব্যবহার করছেন না। অনেক অভিভাবক এ টাকা তুলতেই আগ্রহী না। কিছু ক্ষেত্রে ভূতুড়ে অভিভাবকের নাম পাঠিয়েছে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস। যাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাম পর্যায়ে উপবৃত্তির সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের তালিকা মাঠ পর্যায়ে উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা তৈরি করে থাকেন। তারা এ তালিকা করতে গিয়ে খামখেয়ালি করেন। অভিভাবকদের নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন হয়েছে কি না তা না জেনেই আগেরটা দিয়ে দেন। ফলে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরে (২০২০ সাল) ১৬ জুন প্রকল্প পরিচালক ইউসুফ আলী দেশের সব থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, অভিভাবকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন কিস্তিতে উপবৃত্তির অর্থ পাঠানো হলেও কিছু সংখ্যক অভিভাবক এ টাকা তুলছেন না। ফলে এসব টাকা অলসভাবে পড়ে রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট প্রকৃত সুবিধাভোগী অভিভাবকদের নয় বলে মনে হয়। চিঠিতে ২৫ জুনের (২০২০ সাল) মধ্যে এ টাকা উত্তোলনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নয়তো অনুত্তোলিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। এরপর অভিভাবক কর্তৃক অনুত্তোলিত অর্থের আর কোনো দাবিনামা গ্রহণ করা হবে না। জুলাই মাসের পর এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার প্রক্রিয়া শুরু করে রূপালী ব্যাংক।

এদিকে চলতি বছর থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণে রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’র মাধ্যমে বিতরণ করার চুক্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে এক কিস্তির টাকা নগদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন অনুত্তোলিত টাকা ফেরত নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কারণ নগদে বিতরণ হওয়ার পর অনুত্তোলিত টাকা কীভাবে চিহ্নিত হবে, হলেও এত টাকা কীভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। কারণ নগদ কোনো ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নয়। এত টাকা যদি এ মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস জমা না দেয়, এক্ষেত্রে প্রকল্পের কিছু করার থাকবে না।

জানা গেছে, উপবৃত্তি প্রকল্পের ডিপিপিতে স্পষ্ট বলা আছে, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণে রাষ্ট্রায়ত্ত যেসব ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং রয়েছে তারাই যোগ্য হিসেবে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন এবং তাদের মধ্যে থেকে কাজ দেওয়া হবে। এভাবে এতদিন রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশ উপবৃত্তি বিতরণ করলেও হঠাৎ নগদ এ কাজ নিয়েছে। অথচ নগদের নিজস্ব কোনো ব্যাংক নেই, বরং কোনো সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি পর্যন্ত নেই। এ অবস্থায় নগদ যদি টাকা বিতরণে কোনো অনিয়ম করে তবে তাদের ধরার মতো জায়গা নেই।

ডিপিপির শর্তের বাইরে নগদকে কীভাবে কাজ দেওয়া হলো জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে উপবৃত্তি প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায় শেষ হয়েছে। এর মধ্যে শিওর ক্যাশের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়। নগদের সঙ্গে চুক্তি বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রতি কিস্তি (তিন মাস অন্তর) উপবৃত্তি বিতরণ করতে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে প্রতি বছরে চার কিস্তিতে টাকার প্রয়োজন হয় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রাথমিকের সব শিক্ষার্থীরা জামা, জুতা কেনার জন্য এককালীয়ন এক হাজার করে দেওয়া হবে। এতে আরও ১১শ’ কোটি টাকা লাগবে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ খাতে টাকা ছাড় করেছে বলে জানা গেছে। বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা নগদের মাধ্যমে বিতরণ করা হলেও তাদের নিজস্ব কোনো ব্যাংক নেই।

 

আরও পড়ুন্:

শেয়ার করুন

x
English Version

অভিভাবকরা তুলছে না উপবৃত্তির ১৪৪ কোটি টাকা

আপডেট: ১২:৫৫:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ মার্চ ২০২১

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তাদের অভিভাবকদের কাছে পাঠানোর পর অনেকেই সেই টাকা তুলছেন না। কয়েক বছর ধরে না তোলায় এ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৪ কোটি। এ টাকা এখন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। বাকি ৫৩ কোটি টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

অভিভাবকরা কেন টাকা তুলছেন না, তা খুঁজে বের না করে এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক অভিভাবক এ টাকা সঞ্চয় করতে পারেন। তাই প্রকৃত কারণ না জেনে অভিভাবকদের টাকা গণহারে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া ঠিক হচ্ছে না বলেও অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ শিশুকে নিয়মিত উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) আওতায় এক কোটি ২১ লাখ পরিবার এ সুবিধা পাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাসে ১০০ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকে মাসে ৫০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি তিন মাসে এক কিস্তি হিসেবে বছরে চার কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল ফোনে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু অনেক অভিভাবক উপবৃত্তির এ টাকা তুলছেন না। এতেই ১৪৪ কোটি টাকা জমা হয়েছে।

দীর্ঘদিন মায়েদের অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকার পর সে টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় ২০২০ সালের জুন মাসে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিওর ক্যাশের মূল ব্যাংক রূপালী ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয় যেন এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়। এরপর রূপালী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ১৪৪ কোটি টাকার মধ্যে ৯১ কোটি টাকা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে। বাকি ৫৩ কোটি মার্চ মাসের মধ্যে জমা হবে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ’প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পে’র (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রচুর টাকা মায়েদের অ্যাকাউন্টে পড়ে আছে, এটা জানার পর অলস এ টাকাগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য রূপালী ব্যাংককে এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার তাগাদা দেই। এরমধ্যে ৯১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। বাকি ৫৩ কোটি খুব শিগগিরই জমা হবে।

অভিভাবকরা কেন এ টাকা তোলেননি তার কারণ খুজঁতে গিয়ে জানা গেছে, নানা কারণে এ টাকা পড়ে ছিল। এর মধ্যে অন্যতম কারণ অনেক অভিভাবক প্রথমে যে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল পরে তিনি সেটি ব্যবহার করছেন না। অনেক অভিভাবক এ টাকা তুলতেই আগ্রহী না। কিছু ক্ষেত্রে ভূতুড়ে অভিভাবকের নাম পাঠিয়েছে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস। যাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাম পর্যায়ে উপবৃত্তির সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের তালিকা মাঠ পর্যায়ে উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা তৈরি করে থাকেন। তারা এ তালিকা করতে গিয়ে খামখেয়ালি করেন। অভিভাবকদের নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন হয়েছে কি না তা না জেনেই আগেরটা দিয়ে দেন। ফলে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরে (২০২০ সাল) ১৬ জুন প্রকল্প পরিচালক ইউসুফ আলী দেশের সব থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, অভিভাবকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন কিস্তিতে উপবৃত্তির অর্থ পাঠানো হলেও কিছু সংখ্যক অভিভাবক এ টাকা তুলছেন না। ফলে এসব টাকা অলসভাবে পড়ে রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট প্রকৃত সুবিধাভোগী অভিভাবকদের নয় বলে মনে হয়। চিঠিতে ২৫ জুনের (২০২০ সাল) মধ্যে এ টাকা উত্তোলনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নয়তো অনুত্তোলিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। এরপর অভিভাবক কর্তৃক অনুত্তোলিত অর্থের আর কোনো দাবিনামা গ্রহণ করা হবে না। জুলাই মাসের পর এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার প্রক্রিয়া শুরু করে রূপালী ব্যাংক।

এদিকে চলতি বছর থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণে রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’র মাধ্যমে বিতরণ করার চুক্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে এক কিস্তির টাকা নগদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন অনুত্তোলিত টাকা ফেরত নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কারণ নগদে বিতরণ হওয়ার পর অনুত্তোলিত টাকা কীভাবে চিহ্নিত হবে, হলেও এত টাকা কীভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। কারণ নগদ কোনো ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নয়। এত টাকা যদি এ মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস জমা না দেয়, এক্ষেত্রে প্রকল্পের কিছু করার থাকবে না।

জানা গেছে, উপবৃত্তি প্রকল্পের ডিপিপিতে স্পষ্ট বলা আছে, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণে রাষ্ট্রায়ত্ত যেসব ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং রয়েছে তারাই যোগ্য হিসেবে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন এবং তাদের মধ্যে থেকে কাজ দেওয়া হবে। এভাবে এতদিন রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশ উপবৃত্তি বিতরণ করলেও হঠাৎ নগদ এ কাজ নিয়েছে। অথচ নগদের নিজস্ব কোনো ব্যাংক নেই, বরং কোনো সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি পর্যন্ত নেই। এ অবস্থায় নগদ যদি টাকা বিতরণে কোনো অনিয়ম করে তবে তাদের ধরার মতো জায়গা নেই।

ডিপিপির শর্তের বাইরে নগদকে কীভাবে কাজ দেওয়া হলো জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে উপবৃত্তি প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায় শেষ হয়েছে। এর মধ্যে শিওর ক্যাশের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়। নগদের সঙ্গে চুক্তি বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রতি কিস্তি (তিন মাস অন্তর) উপবৃত্তি বিতরণ করতে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে প্রতি বছরে চার কিস্তিতে টাকার প্রয়োজন হয় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রাথমিকের সব শিক্ষার্থীরা জামা, জুতা কেনার জন্য এককালীয়ন এক হাজার করে দেওয়া হবে। এতে আরও ১১শ’ কোটি টাকা লাগবে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ খাতে টাকা ছাড় করেছে বলে জানা গেছে। বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা নগদের মাধ্যমে বিতরণ করা হলেও তাদের নিজস্ব কোনো ব্যাংক নেই।

 

আরও পড়ুন্: