০৮:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

অস্তিত্ব সংকটে থাকা মিথুন নিটিংয়ের লাগামহীন শেয়ার দর!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০২:৪৭:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অগাস্ট ২০২১
  • / ১০২৭৭ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দেনার দায়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া পুঁজিবাজারের বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের যন্ত্রপাতিসহ পুরো কারখানা নিলামে তুলেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। কিন্তু গত ৫ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৭১ শতাংশ। কোম্পানিটির এমন দর বৃদ্ধিকে আস্বাভাবিক বলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) চার নম্বর সেক্টরে অবস্থিত মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের কারখানা। ২০১৭ সাল থেকে লোকসানে থাকা কোম্পানিটির কাছে সিইপিজেডের পাওনা কয়েক কোটি টাকা। তাই পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির যন্ত্রপাতিসহ পুরো কারখানা নিলামে তুলেছে। নিলামে কোম্পানিটির যন্ত্রপাতি, স্থাপনা, মজুদকৃত পণ্যসহ সব ধরনের স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পত্তি কিনতে আগ্রহীদের কাছে গত ২১ জানুয়ারি থেকে দরপত্র আহ্বান করেছিল সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ। এটি ১ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাই করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বিদেশি ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সংস্কারকাজ করতে না পারায় মিথুন নিটিংকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বন্ধ করে দেন।

এতে ক্রমাগত লোকসানে পড়ে কোম্পানিটি। এরই ধারাবাহিকতায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল এবং প্লটের লিজ বাবদ বকেয়া কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় গত ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরের বেপজা মিথুন নিটিংয়ের সব ধরনের সেবা সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ডিএসই ও সিএসইতে নোটিস দিয়ে মিথুন নিটিং তাদের উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মফিজউদ্দিন বিন মেজবা বলেন, ‘কোভিডের কারণে এখনও নিলামের কার্যক্রম থমকে আছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিলামের কার্যক্রম অতিদ্রুত সম্পন্ন করা হবে। ইতোমধ্যে ক্রেতারা দরপত্র জমা দিয়েছেন।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাস থেকে বেড়েই চলেছে উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিটির শেয়ার দর। ২ মে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৮.১ টাকা। বুধবার (২৫ আগস্ট) এই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৫ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৩.৯ টাকা । মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) কোম্পানিটির শেয়ার গত ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে।

মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা কর পরবর্তী মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকা লোকসান করে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালেও লোকসান গুনেছে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির ৭ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকার লোকসান হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চে তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে কোম্পানিটি। সেই সময় কোম্পানিটির লোকসান হয়েছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এ বিষয় জানতে চাইলে মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ সোহেলের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম সংবাদকে বলেন, ‘এ কোম্পানি সম্পর্কে আমার বিস্তারিত কিছু জানা নাই। যদি কোন কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বাড়ে সেক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ারে কোন কারসাজি হচ্ছে কি-না তা সার্ভেইল্যান্স বিভাগ খুঁজে দেখবে।’

১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড। ৮০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা এই কোম্পানি সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়। এরপর আর লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x

অস্তিত্ব সংকটে থাকা মিথুন নিটিংয়ের লাগামহীন শেয়ার দর!

আপডেট: ০২:৪৭:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অগাস্ট ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দেনার দায়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া পুঁজিবাজারের বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের যন্ত্রপাতিসহ পুরো কারখানা নিলামে তুলেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। কিন্তু গত ৫ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৭১ শতাংশ। কোম্পানিটির এমন দর বৃদ্ধিকে আস্বাভাবিক বলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) চার নম্বর সেক্টরে অবস্থিত মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের কারখানা। ২০১৭ সাল থেকে লোকসানে থাকা কোম্পানিটির কাছে সিইপিজেডের পাওনা কয়েক কোটি টাকা। তাই পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির যন্ত্রপাতিসহ পুরো কারখানা নিলামে তুলেছে। নিলামে কোম্পানিটির যন্ত্রপাতি, স্থাপনা, মজুদকৃত পণ্যসহ সব ধরনের স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পত্তি কিনতে আগ্রহীদের কাছে গত ২১ জানুয়ারি থেকে দরপত্র আহ্বান করেছিল সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ। এটি ১ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাই করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বিদেশি ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সংস্কারকাজ করতে না পারায় মিথুন নিটিংকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বন্ধ করে দেন।

এতে ক্রমাগত লোকসানে পড়ে কোম্পানিটি। এরই ধারাবাহিকতায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল এবং প্লটের লিজ বাবদ বকেয়া কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় গত ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরের বেপজা মিথুন নিটিংয়ের সব ধরনের সেবা সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ডিএসই ও সিএসইতে নোটিস দিয়ে মিথুন নিটিং তাদের উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মফিজউদ্দিন বিন মেজবা বলেন, ‘কোভিডের কারণে এখনও নিলামের কার্যক্রম থমকে আছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিলামের কার্যক্রম অতিদ্রুত সম্পন্ন করা হবে। ইতোমধ্যে ক্রেতারা দরপত্র জমা দিয়েছেন।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাস থেকে বেড়েই চলেছে উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিটির শেয়ার দর। ২ মে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৮.১ টাকা। বুধবার (২৫ আগস্ট) এই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৫ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৩.৯ টাকা । মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) কোম্পানিটির শেয়ার গত ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে।

মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা কর পরবর্তী মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকা লোকসান করে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালেও লোকসান গুনেছে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির ৭ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকার লোকসান হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চে তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে কোম্পানিটি। সেই সময় কোম্পানিটির লোকসান হয়েছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এ বিষয় জানতে চাইলে মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ সোহেলের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম সংবাদকে বলেন, ‘এ কোম্পানি সম্পর্কে আমার বিস্তারিত কিছু জানা নাই। যদি কোন কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বাড়ে সেক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ারে কোন কারসাজি হচ্ছে কি-না তা সার্ভেইল্যান্স বিভাগ খুঁজে দেখবে।’

১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড। ৮০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা এই কোম্পানি সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়। এরপর আর লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: