১০:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০২৪

ঋণ সহায়তা চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আইএমএফের ডিএমডি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:৫৫:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪২০৭ বার দেখা হয়েছে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ পাঁচ দিনের সফরে আজ ১৪ জানুয়ারি, শনিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। আইএমএফের  ডিএমডি এর সফরে বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাবের চূড়ান্ত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ- এর ঢাকা সফর নিয়ে আইএমএফের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সহনশীল রাখতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করে আইএমএফ। এজন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ঢাকা সফর করছেন মনসিও সায়েহ।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে বিশেষ তদারকি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইএমএফ ৪২ মাসে সাত কিস্তিতে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বাংলাদেশকে। ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের প্রস্তাব আইএমএফের পর্ষদে উঠবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। ঋণের প্রথম কিস্তির ৩৬ কোটি ডলার বাংলাদেশ পাবে আগামী মার্চে। পরের প্রতিটি কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখবে আইএমএফ।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে যে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে রাজি আইএমএফ- তাতে অর্থনীতির সংস্কারে কিছু শর্ত পালনের কথা বলা হয়েছে। আইএমএফের শর্ত পূরণ যাতে ঠিকঠাক হয়, তার জন্য বিশেষ তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সমন্বয়ে ২২ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন: বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বেসরকারি খাতের জন্য চ্যালেঞ্জিং: সামীর সাত্তার

অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং একই বিভাগের একজন উপসচিবকে এর সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিতে অর্থ বিভাগ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

আইএমএফের ঋণের জন্য যেসব সংস্কার করবে সরকার

কমিটির কার্যপরিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় নীতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করবে। কোনো নীতি কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা সঙ্গে সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাবে। কমিটি প্রতি দুই মাসে একটি সভার আয়োজন করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঋণ দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে মোটাদাগে তিন ধরনের শর্ত দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধরন গুণগত মান উন্নয়ন-সংক্রান্ত শর্ত (কিউপিসি), দ্বিতীয় ধরন অবকাঠামোগত মান উন্নয়ন-সংক্রান্ত শর্ত (এসপিসি) ও তৃতীয়টি সাধারণ প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যে কিউপিসি হচ্ছে বাধ্যতামূলক শর্ত। আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি ঠিক নেই। এটি সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এটি ঠিক করার কাজে হাত দিয়েছে। সরকারের বাজেট ঘাটতি একটি নির্দিষ্ট হারের বেশি যেতে পারবে না- এমন শর্তও দিয়েছে। যখনই কিস্তি দেওয়ার সময় হবে, আইএমএফ এগুলো মিলিয়ে দেখবে। এসপিসির মধ্যে রয়েছে জ্বালানির দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পদ্ধতি কার্যকর, নতুন আয়কর আইন কার্যকর, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা, আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ বিষয়ে আলাদা কোম্পানি গঠন করা, আর্থিক খাতে তদারকি বাড়ানো, করছাড়ের ওপর বিশদ নিরীক্ষা, বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য রাখা। অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে ভর্তুকি কমানো, বাজেট থেকে সঞ্চয়পত্রকে আলাদা করা, ব্যাংক ঋণের সুদহারে ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমানো ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

শর্ত মেনে নিতে হবে আইএমএফের ঋণ

এদিকে রাজস্ব বাড়ানোসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আর্থিক খাত পরিচালনায় নীতিমালা এবং তদারকিতে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে সহায়তার আগ্রহ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি লিখেছে আইএমএফ কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

x

ঋণ সহায়তা চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আইএমএফের ডিএমডি

আপডেট: ০৭:৫৫:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ পাঁচ দিনের সফরে আজ ১৪ জানুয়ারি, শনিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। আইএমএফের  ডিএমডি এর সফরে বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাবের চূড়ান্ত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ- এর ঢাকা সফর নিয়ে আইএমএফের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সহনশীল রাখতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করে আইএমএফ। এজন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ঢাকা সফর করছেন মনসিও সায়েহ।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে বিশেষ তদারকি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইএমএফ ৪২ মাসে সাত কিস্তিতে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বাংলাদেশকে। ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের প্রস্তাব আইএমএফের পর্ষদে উঠবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। ঋণের প্রথম কিস্তির ৩৬ কোটি ডলার বাংলাদেশ পাবে আগামী মার্চে। পরের প্রতিটি কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখবে আইএমএফ।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে যে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে রাজি আইএমএফ- তাতে অর্থনীতির সংস্কারে কিছু শর্ত পালনের কথা বলা হয়েছে। আইএমএফের শর্ত পূরণ যাতে ঠিকঠাক হয়, তার জন্য বিশেষ তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সমন্বয়ে ২২ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন: বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বেসরকারি খাতের জন্য চ্যালেঞ্জিং: সামীর সাত্তার

অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং একই বিভাগের একজন উপসচিবকে এর সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিতে অর্থ বিভাগ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

আইএমএফের ঋণের জন্য যেসব সংস্কার করবে সরকার

কমিটির কার্যপরিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় নীতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করবে। কোনো নীতি কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা সঙ্গে সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাবে। কমিটি প্রতি দুই মাসে একটি সভার আয়োজন করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঋণ দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে মোটাদাগে তিন ধরনের শর্ত দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধরন গুণগত মান উন্নয়ন-সংক্রান্ত শর্ত (কিউপিসি), দ্বিতীয় ধরন অবকাঠামোগত মান উন্নয়ন-সংক্রান্ত শর্ত (এসপিসি) ও তৃতীয়টি সাধারণ প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যে কিউপিসি হচ্ছে বাধ্যতামূলক শর্ত। আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি ঠিক নেই। এটি সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এটি ঠিক করার কাজে হাত দিয়েছে। সরকারের বাজেট ঘাটতি একটি নির্দিষ্ট হারের বেশি যেতে পারবে না- এমন শর্তও দিয়েছে। যখনই কিস্তি দেওয়ার সময় হবে, আইএমএফ এগুলো মিলিয়ে দেখবে। এসপিসির মধ্যে রয়েছে জ্বালানির দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পদ্ধতি কার্যকর, নতুন আয়কর আইন কার্যকর, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা, আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ বিষয়ে আলাদা কোম্পানি গঠন করা, আর্থিক খাতে তদারকি বাড়ানো, করছাড়ের ওপর বিশদ নিরীক্ষা, বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য রাখা। অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে ভর্তুকি কমানো, বাজেট থেকে সঞ্চয়পত্রকে আলাদা করা, ব্যাংক ঋণের সুদহারে ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমানো ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

শর্ত মেনে নিতে হবে আইএমএফের ঋণ

এদিকে রাজস্ব বাড়ানোসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আর্থিক খাত পরিচালনায় নীতিমালা এবং তদারকিতে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে সহায়তার আগ্রহ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি লিখেছে আইএমএফ কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা/টিএ