এবার পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধা!
- আপডেট: ১২:২৫:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুন ২০২১
- / ৪২৮১ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতকে চাঙা করতে কালোটাকা বিনিয়োগের বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আগে দশ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকলেও এবার জরিমানার পরিমাণ আরও কমছে। এর জন্য নতুন বিধান করা হচ্ছে। এ টাকা বিনিয়োগের ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না। এ জন্য আয়কর অধ্যাদেশে সংশোধনী আনা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সূত্রমতে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিশেষ সুবিধা বাতিল হচ্ছে, কিন্তু আগের ৩ পদ্ধতিতে টাকা সাদা করা যাবে। এ জন্য কোনো সংস্থা যাতে আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে না পারে সে জন্য আয়কর অধ্যাদেশে প্রভিশন রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে।
এদিকে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনা করে আসছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সরকার কালো টাকার মালিকদের প্রণোদনামূলক সুবিধা দিয়েছে। এসে সৎ করদাতারা কর দিতে নিরুৎসাহিত হন। আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কোনো কিছু বলেননি। এমনকি অর্থবিল-২০২১-এ কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
মূলধারার অর্থনীতিতে কালোটাকা আনতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে এ টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়, যা চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুযোগের মেয়াদ না বাড়ানোয় আইনগতভাবে তা বাতিল হচ্ছে। এ সুযোগ বাতিল করার কারণ হচ্ছে- দেশে ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ। কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখলে করদাতারা নিয়মিত কর না দিয়ে তা পরে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে টাকা বৈধ করার চেষ্টা করতে পারেন। এতে রাজস্ব আদায় কমার পাশাপাশি সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের নিরুৎসাহিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
তাই শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে কেউ কালোটাকা সাদা করতে চাইলে স্বাভাবিক যে হারে কর দিতে হয়, তাকে এর অতিরিক্ত আরও ৫ অথবা ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। তবে একটি সুত্র বলছে ৫ শতাংশ ই চুড়ান্ত হতে যাচ্ছে। এতে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। এজন্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করা হয়। ১৯এএএএ ধারায় ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ রিটার্নে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্টক, শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও অন্য সিকিউরিটিজ এবং শেয়ারবাজারে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য সব সরকারি সিকিউরিটিজ ও বন্ডে এ সুযোগ থাকবে।
এক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়, ঘোষণা দেওয়ার পর এক বছর বিনিয়োগকৃত অর্থ শেয়ারবাজার থেকে ওঠানো যাবে না। একইভাবে একই হারে কর দিয়ে ১৯এএএএএ ধারায় জমি-ফ্ল্যাট ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় একে ‘বিশেষ সুবিধা’বলা হচ্ছে।
এর বাইরেও আরও ৩ পদ্ধতিতে কালোটাকা সাদা করা যায়। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতেই কালোটাকা বিনিয়োগ করা যায়। শুধুমাত্র আবাসন খাতের জন্য ১৯বিবিবিবিবি নামে আয়কর অধ্যাদেশে আলাদা একটি ধারা আছে। এ ধারা মতে, এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা যায়। ১৯ডিডি ধারা অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করা যায়।
কালোটাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে স্বাধীনতার পর থেকে নানাভাবেই এই টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একাংশ এর বিরোধিতা করে আসছে। ’৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছে। তৎকালীন সময়ে এ থেকে সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়। পরে এ সুবিধা বহাল থাকায় প্রতি বছরই কালোটাকা সাদা করার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ’৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়, সরকার আয়কর পায় ৮১ লাখ টাকা। ’৮১-৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা সাদা হয়, সরকার আয়কর পায় ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ’৯১-৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ কালো টাকা সাদা হয়েছে তার মধ্যে পুঁজিবাজারে ২৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও আবাসন খাতে দুই হাজার ৫১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা সাদা হয়েছে। বাকি ১১ হাজার ৬৬৩ কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা সাদা হয়েছে।
পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে কালোটাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ১৯৯৭-২০০০ সাল পর্যন্ত এক লাফে ৯৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। পরের ৭ বছর অর্থাৎ ২০০১-০৭ পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা, ২০০৭-০৯ পর্যন্ত এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০০৯-১৩ পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও ২০১৩-২০ পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় যথাক্রমে ১০২ কোটি, ৯১১ কোটি, ২৩০ কোটি ও এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা প্রধানত নগদ টাকা সাদা করেছেন। এসব টাকা সাদা করায় এনবিআর এক হাজার ৪৪৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে। বিপুল পরিমাণে কালো টাকা সাদা হওয়াকে এনবিআর করদাতাদের ‘অভূতপূর্ব’ সাড়া হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ঢাকা/এনইউ
আরও পড়ুন:
- ঋণখেলাপিরা পেল আরও সুবিধা
- সর্বোচ্চ দরেও মিলছে না ১৫ কোম্পানির শেয়ার
- কাল স্পট মার্কেটে যাচ্ছে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স
- উত্থানে ফিরেছে মূল্য সূচক
- ৩ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন
- আজ বিকেলে ২ কোম্পানির বোর্ড সভা
- আল-আরাফাহ ব্যাংকের বন্ড ইস্যুর প্রস্তাবে পরিবর্তন
- মগবাজারে বিস্ফোরণে নিহত ৭: ডিএমপি কমিশনার
- নিউজ প্রেজেন্টার নেবে সময় টিভি
- নতুন সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলেছেন ট্রাম্প
- জাম খাবেন কেন?
- শ্রীলেখার পরকীয়া ‘১২ সেকেন্ডস’ এ ধরে ফেলেন শিলাজিৎ!
- সাকিবকে নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না!
- তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবে ব্র্যাক ব্যাংক