০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

গভীর রাতে বাড়ি ছাড়লেন হাবিপ্রবির উপাচার্য

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:৫৮:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৪১২৪ বার দেখা হয়েছে

নিয়োগ নিয়ে চাপের মুখে মঙ্গলবার গভীর রাতে ক্যাম্পাসের বাসভবন ছেড়েছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেম।

১৮ দিনের মধ্যে ২২ কর্মকর্তা ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের দাবিতে দিনভর স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। এ সময় তার বাসার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সূত্রমতে, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর হাবিপ্রবিতে ৬২ জন শিক্ষক এবং গত বছরের ২৬ ও ২৮ জানুয়ারি ২২ কর্মকর্তা ও ৫০ কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে বন্ধ ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়া। ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য পদে ড. আবুল কাশেমের মেয়াদ শেষ হবে। এর আগেই এসব নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য তার ওপর চাপ ছিল।

এ নিয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিরোধ চরমে পৌঁছে। এ অবস্থায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে অচলাবস্থা সৃষ্টির অভিযোগ এনে ৭ অক্টোবর নিবন্ধকসহ ১৭ শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে কর্মবিরতি শুরু করেন। এরই মধ্যে নিবন্ধক প্রফেসর ডা. মো. ফজলুল হককে অপসারণ করেন উপাচার্য। পরে দুপক্ষের সমঝোতায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন ওই শিক্ষকেরা, পুনবর্হাল করা হয় ড. ফজলুল হককে।

চাকরি প্রার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে প্রাচীর টপকে বাসভবন এলাকায় ঢুকে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রশাসনকে খবর দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিকালে নিবন্ধকসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষকরাও ভিসির বাসভবনে আসেন।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম মাগফুরুল আব্বাসী ও সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকারও সেখানে আসেন। বাইরে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। রাতে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। তখন চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষককরা ভিসির বাসভবন ছাড়েন। ভোর ৩টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপাচার্য নিজ গাড়িতে ঢাকার পথে রওয়ানা হন। কোষাধ্যক্ষ ড. বিধান চন্দ্র হালদারকে দায়িত্ব দিয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. বিধান চন্দ্র হালদার জানান, সকালে (বুধবার) অফিসে এসে জানতে পারি, স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কাউকে না জানিয়েই ঢাকায় চলে গেছেন ভিসি। তিনি জানান, বুধবার শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে বোর্ড মিটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি গভীর রাতে ঢাকা চলে যাওয়ায় শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মু. আবুল কাশেম বুধবার দুপুরে মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, চাকরিপ্রার্থীরা প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে কলাপসিবল গেট ধাক্কাধাক্কি করে, অকথ্য ভাষায় চেঁচামেচি করে। বাসভবনের বিদ্যুৎ ও পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থায় থাকতে হয়ে। রাতে নিবন্ধক ডা. ফজলুল হকসহ অন্য শিক্ষকরা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। তারা রাতেই অ্যাডহক ভিত্তিতে বেশকিছু কর্মকর্তা নিয়োগ ও ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ২২ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং রিজেন্টবোর্ড করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য চাপ দেয়া হয়।

এ সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই নিয়োগ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। উপাচার্য বলেন, আমি কখনোই অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, আগামীতেও করব না। তিনি বলেন, সারা দিন এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নিরাপত্তার অভাবে ও স্ত্রীর অসুস্থতাজনিত কারণে রাতেই সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হই।

এ বিষয়ে নিবন্ধক প্রফেসর ফজলুল হক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বল্পতা আছে বলেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে উপাচার্য দীর্ঘদিন থেকেই এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছেন। চাকরিসহ বিভিন্ন দাবিতে চাকরিপ্রার্থী ও অন্য ছাত্ররা মঙ্গলবার উপাচার্যের বাসভবনে গিয়েছিল। তারা চাপ দিলেও শিক্ষকরা নিয়োগের জন্য কোনো চাপ দেয়নি।

 
 

শেয়ার করুন

x
English Version

গভীর রাতে বাড়ি ছাড়লেন হাবিপ্রবির উপাচার্য

আপডেট: ০১:৫৮:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২১

নিয়োগ নিয়ে চাপের মুখে মঙ্গলবার গভীর রাতে ক্যাম্পাসের বাসভবন ছেড়েছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেম।

১৮ দিনের মধ্যে ২২ কর্মকর্তা ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের দাবিতে দিনভর স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। এ সময় তার বাসার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সূত্রমতে, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর হাবিপ্রবিতে ৬২ জন শিক্ষক এবং গত বছরের ২৬ ও ২৮ জানুয়ারি ২২ কর্মকর্তা ও ৫০ কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে বন্ধ ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়া। ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য পদে ড. আবুল কাশেমের মেয়াদ শেষ হবে। এর আগেই এসব নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য তার ওপর চাপ ছিল।

এ নিয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিরোধ চরমে পৌঁছে। এ অবস্থায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে অচলাবস্থা সৃষ্টির অভিযোগ এনে ৭ অক্টোবর নিবন্ধকসহ ১৭ শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে কর্মবিরতি শুরু করেন। এরই মধ্যে নিবন্ধক প্রফেসর ডা. মো. ফজলুল হককে অপসারণ করেন উপাচার্য। পরে দুপক্ষের সমঝোতায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন ওই শিক্ষকেরা, পুনবর্হাল করা হয় ড. ফজলুল হককে।

চাকরি প্রার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে প্রাচীর টপকে বাসভবন এলাকায় ঢুকে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রশাসনকে খবর দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিকালে নিবন্ধকসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষকরাও ভিসির বাসভবনে আসেন।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম মাগফুরুল আব্বাসী ও সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকারও সেখানে আসেন। বাইরে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। রাতে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। তখন চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষককরা ভিসির বাসভবন ছাড়েন। ভোর ৩টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপাচার্য নিজ গাড়িতে ঢাকার পথে রওয়ানা হন। কোষাধ্যক্ষ ড. বিধান চন্দ্র হালদারকে দায়িত্ব দিয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. বিধান চন্দ্র হালদার জানান, সকালে (বুধবার) অফিসে এসে জানতে পারি, স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কাউকে না জানিয়েই ঢাকায় চলে গেছেন ভিসি। তিনি জানান, বুধবার শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে বোর্ড মিটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি গভীর রাতে ঢাকা চলে যাওয়ায় শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মু. আবুল কাশেম বুধবার দুপুরে মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, চাকরিপ্রার্থীরা প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে কলাপসিবল গেট ধাক্কাধাক্কি করে, অকথ্য ভাষায় চেঁচামেচি করে। বাসভবনের বিদ্যুৎ ও পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থায় থাকতে হয়ে। রাতে নিবন্ধক ডা. ফজলুল হকসহ অন্য শিক্ষকরা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। তারা রাতেই অ্যাডহক ভিত্তিতে বেশকিছু কর্মকর্তা নিয়োগ ও ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ২২ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং রিজেন্টবোর্ড করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য চাপ দেয়া হয়।

এ সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই নিয়োগ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। উপাচার্য বলেন, আমি কখনোই অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, আগামীতেও করব না। তিনি বলেন, সারা দিন এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নিরাপত্তার অভাবে ও স্ত্রীর অসুস্থতাজনিত কারণে রাতেই সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হই।

এ বিষয়ে নিবন্ধক প্রফেসর ফজলুল হক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বল্পতা আছে বলেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে উপাচার্য দীর্ঘদিন থেকেই এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছেন। চাকরিসহ বিভিন্ন দাবিতে চাকরিপ্রার্থী ও অন্য ছাত্ররা মঙ্গলবার উপাচার্যের বাসভবনে গিয়েছিল। তারা চাপ দিলেও শিক্ষকরা নিয়োগের জন্য কোনো চাপ দেয়নি।