১০:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:৫৪:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুন ২০২১
  • / ৪১৬৩ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল ব্যাংক খাত। এবারও ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। 

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা মহামারির মধ্যে এবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। 

আসন্ন বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। 

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এ বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করা হয়েছে। ছক অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে সরকার প্রধানত বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করবে, অংকে যা ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। 

অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে সবচেয়ে বেশি টাকা নেওয়া নিতে চায় ব্যাংক খাত থেকে। এ খাত থেকে মোট ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে । চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। তবে পরে সংশোধন করে কমিয়ে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা করা হয়। 

২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নেয়। ফলে গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। করোনার প্রভাবে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কাসহ নানা কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে। 

মূলত করোনার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) কাজের গতি কমায় উন্নয়ন ব্যয়ও কম হয়েছে। অন্যদিকে, বিদেশি ঋণ, অনুদান ও সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ব্যাংক ঋণ করতে হচ্ছে না। উল্টো ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করছে সরকার। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, অর্থবছরের শুরু থেকে গত ৫ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৩০ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের ২৮ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা শোধ করেছে। এতে চলতি অর্থবছরের ৫ মে পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। যেখানে পুরো অর্থবছরে সরকারের প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার কথা ছিল। 

এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার ৩২ হাজার কোটি টাকা ও  অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার টাকাসহ মোট ৩৭ হাজার কোটি টাকা নিতে চায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে (সংশোধিত) যা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এদিকে অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সুদহার না কমিয়ে চলতি অর্থবছরে নানা শর্ত জু‌ড়ে দি‌য়ে‌ছিল সরকার। তারপরও ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সুদ পাওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে। 

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। সেই হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে সরকারের সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা। 

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা

আপডেট: ০৩:৫৪:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুন ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল ব্যাংক খাত। এবারও ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। 

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা মহামারির মধ্যে এবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। 

আসন্ন বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। 

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এ বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করা হয়েছে। ছক অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে সরকার প্রধানত বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করবে, অংকে যা ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। 

অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে সবচেয়ে বেশি টাকা নেওয়া নিতে চায় ব্যাংক খাত থেকে। এ খাত থেকে মোট ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে । চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। তবে পরে সংশোধন করে কমিয়ে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা করা হয়। 

২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নেয়। ফলে গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। করোনার প্রভাবে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কাসহ নানা কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে। 

মূলত করোনার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) কাজের গতি কমায় উন্নয়ন ব্যয়ও কম হয়েছে। অন্যদিকে, বিদেশি ঋণ, অনুদান ও সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ব্যাংক ঋণ করতে হচ্ছে না। উল্টো ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করছে সরকার। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, অর্থবছরের শুরু থেকে গত ৫ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৩০ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের ২৮ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা শোধ করেছে। এতে চলতি অর্থবছরের ৫ মে পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। যেখানে পুরো অর্থবছরে সরকারের প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার কথা ছিল। 

এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার ৩২ হাজার কোটি টাকা ও  অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার টাকাসহ মোট ৩৭ হাজার কোটি টাকা নিতে চায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে (সংশোধিত) যা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এদিকে অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সুদহার না কমিয়ে চলতি অর্থবছরে নানা শর্ত জু‌ড়ে দি‌য়ে‌ছিল সরকার। তারপরও ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সুদ পাওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে। 

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। সেই হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে সরকারের সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা। 

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: