০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

মাত্রাতিরিক্ত সুদে কলমানি মার্কেটে ছুটছে ব্যাংকগুলো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:০০:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪২৩১ বার দেখা হয়েছে

দেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি) মাত্রাতিরিক্ত সুদে ছুটছে ব্যাংকগুলো। গতকাল সাতদিন মেয়াদি আমানতের সুদহার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। আর একদিন মেয়াদি আমানতের সুদহার উঠেছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে। অতীতে কলমানি মার্কেটে অর্থের এমন তেজ দেখা যায়নি। কলমানি মার্কেটে সুদহার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও দেশে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশেই নির্ধারিত আছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের জন্য সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ কলমানি বাজারেই ৯ শতাংশ সুদে সাতদিন মেয়াদি আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো নিজেদের নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে উচ্চসুদ দিয়ে হলেও তারল্য ধার করতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, তাতে মুদ্রাবাজারের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

কলমানি বাজারের সুদহার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও ব্যাংকগুলোয় সাধারণ গ্রাহকদের মেয়াদি আমানতের সুদহার এখনো অনেক কম। দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য ৪ থেকে ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। মেয়াদ ও অর্থের পরিমাণ বেশি হলে আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: তিন মাসে বিদেশি ঋণ কমেছে ২৫৪ কোটি ডলার

কিছু ব্যাংক বাধ্য হয়ে কলমানি বাজার থেকে উচ্চসুদে অর্থ ধার করছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে এখনো ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নেই। তবে কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এ কারণে তারা সিআরআর-এসএলআর সংরক্ষণ করতে উচ্চসুদে হলেও কলমানি বাজার থেকে ধার নিচ্ছে। এর প্রভাবে কলমানি বাজারের সুদহার বেড়েছে। দেশের কলমানি বাজারের সুদহার ১২৮ শতাংশ পর্যন্ত ওঠার রেকর্ড আছে। সে হিসেবে বর্তমান সুদহার খুব বেশি নয়। তবে দেখতে হবে, এ সংকট কতদিন থাকে। যদি ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকগুলো উচ্চসুদে কলমানি বাজার থেকে অর্থ ধার করতে বাধ্য হয়, সেটি বিপদের কারণ হবে।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো রেকর্ড রেমিট্যান্স

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গতকাল কলমানি বাজার থেকে একদিন মেয়াদি অর্থ ধার করা হয়েছে ৪ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। মোট ৯০টি ডিলে এ পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে। আর সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে একদিন মেয়াদি অর্থ লেনদেন হয়েছে। দুদিন মেয়াদি অর্থ লেনদেন হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তিনদিন মেয়াদি ৩২৫ কোটি টাকাও লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে। ছয়দিন মেয়াদি ১৭৫ কোটি টাকা সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছে। আর সাতদিন মেয়াদি আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। সাত থেকে ৯০ দিন মেয়াদি আমানত লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে। তবে ৩ জানুয়ারি সাতদিন মেয়াদি আমানতের সুদহার ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। একই দিন পাঁচদিন মেয়াদি আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার উঠে গিয়েছিল ১২ শতাংশে।

ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, ব্যাংকগুলোয় আমানতের প্রবৃদ্ধি খুবই কম। অনেক ব্যাংকের আমানত আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও কমে গেছে। কিছু ব্যাংক নিজেদের সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তি থেকে বাঁচতে ওই ব্যাংকগুলো যেকোনো মূল্যে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে অর্থ ধার করছে। এতে দেশের মুদ্রাবাজার আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠেছে। কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আকুর দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ নামল ৩২ বিলিয়ন ডলারে

কলমানির সুদহার ব্যাংকঋণের চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়াকে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এ শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ব্যাংকঋণের সুদহার বাধ্যতামূলকভাবে ৯ শতাংশের নিচে রাখতে হচ্ছে। অথচ এখন কলমানি বাজারে সাতদিন মেয়াদি আমানতের সুদহারও ৯ শতাংশের বেশি। বেশি সুদ দিয়ে নেয়া আমানত ব্যাংকগুলো কম সুদে কীভাবে বিনিয়োগ করবে? এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যাংক খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

x

মাত্রাতিরিক্ত সুদে কলমানি মার্কেটে ছুটছে ব্যাংকগুলো

আপডেট: ১১:০০:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৩

দেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি) মাত্রাতিরিক্ত সুদে ছুটছে ব্যাংকগুলো। গতকাল সাতদিন মেয়াদি আমানতের সুদহার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। আর একদিন মেয়াদি আমানতের সুদহার উঠেছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে। অতীতে কলমানি মার্কেটে অর্থের এমন তেজ দেখা যায়নি। কলমানি মার্কেটে সুদহার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও দেশে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশেই নির্ধারিত আছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের জন্য সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ কলমানি বাজারেই ৯ শতাংশ সুদে সাতদিন মেয়াদি আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো নিজেদের নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে উচ্চসুদ দিয়ে হলেও তারল্য ধার করতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, তাতে মুদ্রাবাজারের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

কলমানি বাজারের সুদহার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও ব্যাংকগুলোয় সাধারণ গ্রাহকদের মেয়াদি আমানতের সুদহার এখনো অনেক কম। দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য ৪ থেকে ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। মেয়াদ ও অর্থের পরিমাণ বেশি হলে আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: তিন মাসে বিদেশি ঋণ কমেছে ২৫৪ কোটি ডলার

কিছু ব্যাংক বাধ্য হয়ে কলমানি বাজার থেকে উচ্চসুদে অর্থ ধার করছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে এখনো ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নেই। তবে কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এ কারণে তারা সিআরআর-এসএলআর সংরক্ষণ করতে উচ্চসুদে হলেও কলমানি বাজার থেকে ধার নিচ্ছে। এর প্রভাবে কলমানি বাজারের সুদহার বেড়েছে। দেশের কলমানি বাজারের সুদহার ১২৮ শতাংশ পর্যন্ত ওঠার রেকর্ড আছে। সে হিসেবে বর্তমান সুদহার খুব বেশি নয়। তবে দেখতে হবে, এ সংকট কতদিন থাকে। যদি ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকগুলো উচ্চসুদে কলমানি বাজার থেকে অর্থ ধার করতে বাধ্য হয়, সেটি বিপদের কারণ হবে।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো রেকর্ড রেমিট্যান্স

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গতকাল কলমানি বাজার থেকে একদিন মেয়াদি অর্থ ধার করা হয়েছে ৪ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। মোট ৯০টি ডিলে এ পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে। আর সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে একদিন মেয়াদি অর্থ লেনদেন হয়েছে। দুদিন মেয়াদি অর্থ লেনদেন হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তিনদিন মেয়াদি ৩২৫ কোটি টাকাও লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে। ছয়দিন মেয়াদি ১৭৫ কোটি টাকা সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছে। আর সাতদিন মেয়াদি আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। সাত থেকে ৯০ দিন মেয়াদি আমানত লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে। তবে ৩ জানুয়ারি সাতদিন মেয়াদি আমানতের সুদহার ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। একই দিন পাঁচদিন মেয়াদি আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার উঠে গিয়েছিল ১২ শতাংশে।

ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, ব্যাংকগুলোয় আমানতের প্রবৃদ্ধি খুবই কম। অনেক ব্যাংকের আমানত আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও কমে গেছে। কিছু ব্যাংক নিজেদের সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তি থেকে বাঁচতে ওই ব্যাংকগুলো যেকোনো মূল্যে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে অর্থ ধার করছে। এতে দেশের মুদ্রাবাজার আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠেছে। কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আকুর দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ নামল ৩২ বিলিয়ন ডলারে

কলমানির সুদহার ব্যাংকঋণের চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়াকে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এ শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ব্যাংকঋণের সুদহার বাধ্যতামূলকভাবে ৯ শতাংশের নিচে রাখতে হচ্ছে। অথচ এখন কলমানি বাজারে সাতদিন মেয়াদি আমানতের সুদহারও ৯ শতাংশের বেশি। বেশি সুদ দিয়ে নেয়া আমানত ব্যাংকগুলো কম সুদে কীভাবে বিনিয়োগ করবে? এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যাংক খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে।

ঢাকা/টিএ