আগামী মাস থেকে জনপ্রতি বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড পোগ্রাম- ডাব্লিউএফপি৷ তহবিল ঘাটতির কারণে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা কমানোর যে পরিকল্পনা করেছে সেটা বিশ্বের বৃহৎ শরণার্থীদের শিবিরে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট ও পুষ্টিহীনতা আরো ঘনীভূত করবে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে৷

বিশ্বব্যাপী মহামারি অর্থনৈতিক মন্দা এবং সংকটের কারণে দাতাদের বাজেট কমিয়ে দেয়ায় আগামী মাস থেকে খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ কমিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছে ডাব্লিউএফপি৷

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব

আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীর কাছে সাড়ে ১২ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চেয়ে ডাব্লিউএফপি বলেছে, ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের এক তৃতীয়াংশই শিশু৷ পুষ্টির অভাবে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ বেশিরভাগেরই ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম৷ এই অবস্থায় তাদের খাদ্যের জন্য জরুরি তহবিল না পেলে তার প্রভাব হবে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী৷

বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দাতারা যদি ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু এবং তাদের পরিবারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এই জনগোষ্ঠীর প্রতি প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ৷’

জাতিসংঘের দুই বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি ও টম অ্যান্ড্রুজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার তহবিলে ঘাটতি হলে তার ফল হবে বিপর্যয়কর৷ তাদের ভাষায়, ‘রোজার মাসের আগে এভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের রেশন কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না৷’

কক্সবাজারে বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলছেন, এই পর্যায়ে এসে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে শরণার্থীরা কাজের খোঁজে আরো মরিয়া হয়ে উঠবে৷ তাতে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা আরো কঠিন হয়ে পড়বে৷

আইনগতভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ নেই৷ ক্যাম্পের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই তাদের থাকার কথা৷ কিন্তু ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অনেকেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে চেপে সাগরপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে৷ তাতে অনেকের সলিল সমাধি হচ্ছে৷ ক্যাম্পে শিক্ষা ও কাজের সুযোগ না থাকায় এবং মিয়ানমারে মাতৃভূমিতে ফেরা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গারা মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে৷

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ৬৯ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে একটি নৌকা বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে পৌঁছেছে৷

আরও পড়ুন: হিলি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক নিহত

ডাব্লিউএফপির এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জনি আইলিয়েফ বলেন, ‘যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এই জনগোষ্ঠীকে যেতে হয়েছে, যেখানে খুব বেশি সুযোগও তাদের সামনে নেই, সেখানে এভাবে তাদের রেশন কমিয়ে দেওয়া আমার কাছে অচিন্ত্যনীয়৷’

কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা ১৮ বছর বয়সি আরিফ উল্লাহ বলেন, যে রেশন তাদের আগে দেওয়া হতো, তাতে তাদের কোনোক্রমে চলতো৷ এখন যদি আরো কমিয়ে দেয়, আমরা তাহলে বাঁচব কীভাবে?

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ গণহত্যার উদ্দেশ্যে সেই দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল বলে মনে করে জাতিসংঘ৷ তার আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা৷ বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স

ঢাকা/এসএ