০২:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

শ্রীলঙ্কা বেইজিংকে এড়িয়ে দিল্লির ছায়াতলে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৫৬:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২
  • / ৪১৪৬ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। দীর্ঘদিন ধরে ঋণ করে চলতে হচ্ছে দেশটিকে। এর মধ্যে কলম্বো বেশিরভাগই ঋণ পেয়েছে চীনের কাছ থেকে। ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বহুদিন আগে থেকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। যাকে ঋণ-ফাঁদ বলে সমালোচনা করে আসছে পশ্চিমারা। তবে কলম্বোর সংকট গভীর হতে থাকায় মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে চীন। এ পরিস্থিতিতে দেশটিকে ঋণ দিয়ে আঞ্চলিক আধিপত্য ধরে রাখতে চেষ্টা করছে ভারত। সম্প্রতি তাদের মধ্যে সহায়তা চুক্তিও হয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কলম্বো বেইজিংকে এড়িয়ে দিল্লির ছায়াতলে যাচ্ছে!

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এএফপি জানায়, চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে ভারত। এরই মধ্যে ২০১৯ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অবস্থিত পক প্রণালিতে তিনটি ছোট দ্বীপে এক কোটি ২০ লাখ ডলারের বায়ুবিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছিল চীনকে। এতে অর্থায়ন করার কথা ছিল এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিপি)। কিন্তু ভারতের খুব নিকটবর্তী উপকূলে চীনের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে থাকে ভারত। ফলে ওই প্রকল্পের কাজ কখনও শুরুই হয়নি। এক পর্যায়ে নাইনাতিভু, আনালাইতিভু এবং ডেলটা দ্বীপে এই প্রকল্প বাতিল করা হয়।

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কলম্বো সফর করে চুক্তি করেন। এর ফলে ওই তিন প্রকল্পে এডিপির পরিবর্তে ভারত অর্থায়ন করবে। তবে এতে প্রতিবাদ জানিয়েছে বেইজিং। এই কাজ পাওয়াকে ভারতের জন্য একটি বড় বিজয় হিসেবে দেখছেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্নেষক লিন ওকারজ। শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প নিয়ে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে চীন ও ভারত। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন সবচেয়ে বাজেভাবে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে শ্রীলঙ্কা। উভয় দেশের কাছে আরও ঋণ চেয়েছে কলম্বো, যাতে তাদের বৈদেশিক রিজার্ভকে গড়ে তোলা যায়। খাদ্য, জ্বালানি এবং ফার্মাসিউটিক্যালসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের নভেম্বরে সেটি এক বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে এবং এখন সেটি এক বিলিয়ন ডলারেরও নিচে নেমে আসায় অনেক অর্থনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন- দেশটি ঋণখেলাপি হওয়ার পথে।

গত প্রায় এক দশক ধরে সড়কপথ, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরসহ শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ দেয় চীন। সমালোচকরা বলছেন, ঋণের অর্থ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে, যেখান থেকে নেহায়েতই সামান্য পরিমাণ আয় হচ্ছে। বর্তমানে বহুলপ্রচলিত চীনা ঋণের ফাঁদ কথাটির বাস্তব উদাহরণ দিতে অনেকেই শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ টানেন।

কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক উমেশ মোরামুদালি বলেন, যারা বলছেন, শ্রীলঙ্কায় এ সংকটের মূলে আছে চীনা ঋণ-ফাঁদে দেশটির জড়িয়ে পড়া, তারা ঠিক বলছেন না। সমস্যার কারণ আরও গভীরে। দেশটির সরকারি ঋণের মাত্র ১৪ ভাগ হলো চীনের কাছ থেকে নেওয়া আর ৩৬ ভাগ নেওয়া হয়েছে বিশ্ববাজারে সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে। আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান সমস্যা হলো- দশকের পর দশক ধরে আর্থিক খাতে সংস্কারের ব্যাপারে সরকারগুলোর উদাসীনতার পুঞ্জীভূত রূপ, করোনার কারণে যা আরও জটিল রূপ নিয়েছে। তবে এটা পরিস্কার, শ্রীলঙ্কাকে অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে ভূরাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে চীন।

চীনা ও আন্তর্জাতিক ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা একদিকে বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না, অন্যদিকে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হচ্ছে। চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে চীনের ঋণের কিস্তি শোধ করতে না পারা শ্রীলঙ্কা ভারতের দিকে ঝুঁকছে। ঋণ নিয়ে বেইজিং-কলম্বোর সম্পর্ক যখন কিছুটা শীতল হচ্ছে, তখন শ্রীলঙ্কাকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে ভারত। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দেয় তারা। ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় দ্রুত ৪০ হাজার টন চালের একটি চালান পাঠাতে কাজ শুরু করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এসব পদক্ষেপে দিল্লির প্রতি ঝুঁকে পড়ছে কলম্বো। সূত্র :দ্য ডিপ্লোম্যাট, এএফপি ও দ্য প্রিন্ট।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

x
English Version

শ্রীলঙ্কা বেইজিংকে এড়িয়ে দিল্লির ছায়াতলে

আপডেট: ১১:৫৬:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। দীর্ঘদিন ধরে ঋণ করে চলতে হচ্ছে দেশটিকে। এর মধ্যে কলম্বো বেশিরভাগই ঋণ পেয়েছে চীনের কাছ থেকে। ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বহুদিন আগে থেকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। যাকে ঋণ-ফাঁদ বলে সমালোচনা করে আসছে পশ্চিমারা। তবে কলম্বোর সংকট গভীর হতে থাকায় মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে চীন। এ পরিস্থিতিতে দেশটিকে ঋণ দিয়ে আঞ্চলিক আধিপত্য ধরে রাখতে চেষ্টা করছে ভারত। সম্প্রতি তাদের মধ্যে সহায়তা চুক্তিও হয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কলম্বো বেইজিংকে এড়িয়ে দিল্লির ছায়াতলে যাচ্ছে!

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এএফপি জানায়, চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে ভারত। এরই মধ্যে ২০১৯ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অবস্থিত পক প্রণালিতে তিনটি ছোট দ্বীপে এক কোটি ২০ লাখ ডলারের বায়ুবিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছিল চীনকে। এতে অর্থায়ন করার কথা ছিল এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিপি)। কিন্তু ভারতের খুব নিকটবর্তী উপকূলে চীনের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে থাকে ভারত। ফলে ওই প্রকল্পের কাজ কখনও শুরুই হয়নি। এক পর্যায়ে নাইনাতিভু, আনালাইতিভু এবং ডেলটা দ্বীপে এই প্রকল্প বাতিল করা হয়।

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কলম্বো সফর করে চুক্তি করেন। এর ফলে ওই তিন প্রকল্পে এডিপির পরিবর্তে ভারত অর্থায়ন করবে। তবে এতে প্রতিবাদ জানিয়েছে বেইজিং। এই কাজ পাওয়াকে ভারতের জন্য একটি বড় বিজয় হিসেবে দেখছেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্নেষক লিন ওকারজ। শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প নিয়ে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে চীন ও ভারত। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন সবচেয়ে বাজেভাবে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে শ্রীলঙ্কা। উভয় দেশের কাছে আরও ঋণ চেয়েছে কলম্বো, যাতে তাদের বৈদেশিক রিজার্ভকে গড়ে তোলা যায়। খাদ্য, জ্বালানি এবং ফার্মাসিউটিক্যালসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের নভেম্বরে সেটি এক বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে এবং এখন সেটি এক বিলিয়ন ডলারেরও নিচে নেমে আসায় অনেক অর্থনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন- দেশটি ঋণখেলাপি হওয়ার পথে।

গত প্রায় এক দশক ধরে সড়কপথ, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরসহ শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ দেয় চীন। সমালোচকরা বলছেন, ঋণের অর্থ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে, যেখান থেকে নেহায়েতই সামান্য পরিমাণ আয় হচ্ছে। বর্তমানে বহুলপ্রচলিত চীনা ঋণের ফাঁদ কথাটির বাস্তব উদাহরণ দিতে অনেকেই শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ টানেন।

কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক উমেশ মোরামুদালি বলেন, যারা বলছেন, শ্রীলঙ্কায় এ সংকটের মূলে আছে চীনা ঋণ-ফাঁদে দেশটির জড়িয়ে পড়া, তারা ঠিক বলছেন না। সমস্যার কারণ আরও গভীরে। দেশটির সরকারি ঋণের মাত্র ১৪ ভাগ হলো চীনের কাছ থেকে নেওয়া আর ৩৬ ভাগ নেওয়া হয়েছে বিশ্ববাজারে সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে। আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান সমস্যা হলো- দশকের পর দশক ধরে আর্থিক খাতে সংস্কারের ব্যাপারে সরকারগুলোর উদাসীনতার পুঞ্জীভূত রূপ, করোনার কারণে যা আরও জটিল রূপ নিয়েছে। তবে এটা পরিস্কার, শ্রীলঙ্কাকে অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে ভূরাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে চীন।

চীনা ও আন্তর্জাতিক ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা একদিকে বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না, অন্যদিকে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হচ্ছে। চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে চীনের ঋণের কিস্তি শোধ করতে না পারা শ্রীলঙ্কা ভারতের দিকে ঝুঁকছে। ঋণ নিয়ে বেইজিং-কলম্বোর সম্পর্ক যখন কিছুটা শীতল হচ্ছে, তখন শ্রীলঙ্কাকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে ভারত। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দেয় তারা। ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় দ্রুত ৪০ হাজার টন চালের একটি চালান পাঠাতে কাজ শুরু করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এসব পদক্ষেপে দিল্লির প্রতি ঝুঁকে পড়ছে কলম্বো। সূত্র :দ্য ডিপ্লোম্যাট, এএফপি ও দ্য প্রিন্ট।

ঢাকা/টিএ