১২:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সারাদেশে দৃষ্টিনন্দন ৫৬০ মডেল মসজিদ, বছরে ১৪ হাজার হাফেজ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৪৯ বার দেখা হয়েছে

শুধু নামাজ আদায় নয়, ইসলামি গবেষণা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মসজিদ ব্যবহার করা মুসলিমদের ঐতিহ্য। যদিও আগের সে ঐতিহ্য এখন আর নেই। মসজিদগুলো এখন ব্যবহার হয় শুধু নামাজের জন্যই। 

হারিয়ে যাওয়া সে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবার দেশের প্রতি জেলা ও উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে করছে সরকার। এর মধ্যে মুজিববর্ষে ১৭০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে।

জানা গেছে, বিশ্বে এই প্রথম কোনো সরকার একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করছে।

মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ ও রংপুর জেলায় দুটি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নজিবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সারাদেশে মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন। সেপ্টেম্বরে ৬০টি এবং মুজিববর্ষের শেষ ভাগে ডিসেম্বর মাসে আরো ৬০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। প্রকল্পগুলোর মোট কাজের ৩২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

জানা গেছে ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। 

এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন হচ্ছে ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।

বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।

সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন হচ্ছে ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফাঁকা থাকবে।

একেকটি মসজিদ নির্মাণ করতে ব্যয় হচ্ছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা; উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অপরপক্ষে উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। 

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষদের আলাদা ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে।

এ ছাড়া ইমাম-মোয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে।

মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম ও ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

লাইব্রেরি সুবিধার আওতায় প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক একসঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।

মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরো থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। এ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার।

শেয়ার করুন

x
English Version

সারাদেশে দৃষ্টিনন্দন ৫৬০ মডেল মসজিদ, বছরে ১৪ হাজার হাফেজ

আপডেট: ০৫:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

শুধু নামাজ আদায় নয়, ইসলামি গবেষণা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মসজিদ ব্যবহার করা মুসলিমদের ঐতিহ্য। যদিও আগের সে ঐতিহ্য এখন আর নেই। মসজিদগুলো এখন ব্যবহার হয় শুধু নামাজের জন্যই। 

হারিয়ে যাওয়া সে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবার দেশের প্রতি জেলা ও উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে করছে সরকার। এর মধ্যে মুজিববর্ষে ১৭০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে।

জানা গেছে, বিশ্বে এই প্রথম কোনো সরকার একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করছে।

মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ ও রংপুর জেলায় দুটি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নজিবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সারাদেশে মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন। সেপ্টেম্বরে ৬০টি এবং মুজিববর্ষের শেষ ভাগে ডিসেম্বর মাসে আরো ৬০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। প্রকল্পগুলোর মোট কাজের ৩২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

জানা গেছে ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। 

এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন হচ্ছে ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।

বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।

সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন হচ্ছে ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফাঁকা থাকবে।

একেকটি মসজিদ নির্মাণ করতে ব্যয় হচ্ছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা; উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অপরপক্ষে উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। 

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষদের আলাদা ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে।

এ ছাড়া ইমাম-মোয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে।

মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম ও ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

লাইব্রেরি সুবিধার আওতায় প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক একসঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।

মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরো থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। এ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার।