১০:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘আর্থিক খাতে পরিকল্পিত ডাকাতির প্রভাব পুঁজিবাজার ও অর্থনীতিতে পড়েছে’

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১০৬৪১ বার দেখা হয়েছে

দেশের আর্থিক খাতে পরিকল্পিত ডাকাতি হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজার ও বৃহত্তর অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এক বা দুই দিনের মধ্যেই সুদের হার ৮ দশমিক ৫ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী মাসেই ১০ শতাংশ বা তার বেশি হারে সুদ বৃদ্ধি করা হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সম্প্রতি প্রবাসি আয় কমে যাওয়া এবং পোশাক রপ্তানি খারাপভাবে প্রভাবিত হওয়ায় অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া চলতি মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং কারফিউ জারি করার কারণেও আর্থিক চাপ বেড়েছে।

যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশে ঋণ সহায়তার সময় মুদ্রানীতি কঠোর করতে এবং বিনিময় হার নমনীয় রাখার পরামর্শ দেয়। এই বিষয়ে তিনি জানান, দেশের অর্থনীতিতে গতি আনতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির কাছে ১ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে।

দেশের ব্যাংকিং খাত পরিষ্কার করা তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার জানিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিগত সরকারের আমলে আর্থিক ব্যবস্থায় পরিকল্পিত ডাকাতি হয়েছে যা দেশের সবগুলো ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে এবং পুঁজিবাজারেও গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।

তিনি জানান, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে জড়িত কিছু ব্যবসায়িক গ্রুপের ঋণ খেলাপির কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আমানতের সংকটে ভুগছে। ঋণ খেলাপিরা অর্থ নিয়ে সিঙ্গাপুর, দুবাই, লন্ডনসহ অন্যান্য দেশে পাচার করেছে। তাই প্রথম কাজ হচ্ছে এসব অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করা। পাচার করা অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে। তাই আমরা একটি ব্যাংকিং কমিশন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। এই কমিশনের কাজ হবে ব্যাংকগুলোর বোর্ড পরিবর্তন, ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন, মূলধন জমা করা এবং কিছু ছোট ব্যাংকের ক্ষেত্রে একীভূতকরণ করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এই গভর্নরও আশা রাখেন, বাংলাদেশের নতুন সরকার মুদ্রানীতিতে সংস্কারের পাশাপাশি চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ব্যয়ে তীব্র হ্রাস ঘোষণা করবে। যদিও এর আগে শেখ হাসিনার সরকার ব্যয় কমিয়েছিল এবং দেশের রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, যা ২০১৫ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন ব্যয়। তবে বাজেটের ব্যয়ে আরও ৯ থেকে ১০ শতাংশ কমাতে হবে বলে জানান আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সরকারি ব্যয় কমাতে হবে যাতে বেসরকারি খাতের জন্য আরও বেশি ঋণ পাওয়া যায়।

প্রবীণ অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে গত সপ্তাহে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনোনীত করেন। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

‘আর্থিক খাতে পরিকল্পিত ডাকাতির প্রভাব পুঁজিবাজার ও অর্থনীতিতে পড়েছে’

আপডেট: ০৩:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

দেশের আর্থিক খাতে পরিকল্পিত ডাকাতি হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজার ও বৃহত্তর অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এক বা দুই দিনের মধ্যেই সুদের হার ৮ দশমিক ৫ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী মাসেই ১০ শতাংশ বা তার বেশি হারে সুদ বৃদ্ধি করা হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সম্প্রতি প্রবাসি আয় কমে যাওয়া এবং পোশাক রপ্তানি খারাপভাবে প্রভাবিত হওয়ায় অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া চলতি মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং কারফিউ জারি করার কারণেও আর্থিক চাপ বেড়েছে।

যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশে ঋণ সহায়তার সময় মুদ্রানীতি কঠোর করতে এবং বিনিময় হার নমনীয় রাখার পরামর্শ দেয়। এই বিষয়ে তিনি জানান, দেশের অর্থনীতিতে গতি আনতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির কাছে ১ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে।

দেশের ব্যাংকিং খাত পরিষ্কার করা তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার জানিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিগত সরকারের আমলে আর্থিক ব্যবস্থায় পরিকল্পিত ডাকাতি হয়েছে যা দেশের সবগুলো ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে এবং পুঁজিবাজারেও গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।

তিনি জানান, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে জড়িত কিছু ব্যবসায়িক গ্রুপের ঋণ খেলাপির কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আমানতের সংকটে ভুগছে। ঋণ খেলাপিরা অর্থ নিয়ে সিঙ্গাপুর, দুবাই, লন্ডনসহ অন্যান্য দেশে পাচার করেছে। তাই প্রথম কাজ হচ্ছে এসব অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করা। পাচার করা অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে। তাই আমরা একটি ব্যাংকিং কমিশন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। এই কমিশনের কাজ হবে ব্যাংকগুলোর বোর্ড পরিবর্তন, ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন, মূলধন জমা করা এবং কিছু ছোট ব্যাংকের ক্ষেত্রে একীভূতকরণ করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এই গভর্নরও আশা রাখেন, বাংলাদেশের নতুন সরকার মুদ্রানীতিতে সংস্কারের পাশাপাশি চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ব্যয়ে তীব্র হ্রাস ঘোষণা করবে। যদিও এর আগে শেখ হাসিনার সরকার ব্যয় কমিয়েছিল এবং দেশের রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, যা ২০১৫ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন ব্যয়। তবে বাজেটের ব্যয়ে আরও ৯ থেকে ১০ শতাংশ কমাতে হবে বলে জানান আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সরকারি ব্যয় কমাতে হবে যাতে বেসরকারি খাতের জন্য আরও বেশি ঋণ পাওয়া যায়।

প্রবীণ অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে গত সপ্তাহে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনোনীত করেন। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা/এসআর