১১:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

বিনিয়োগের পূর্বে শেয়ারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা জরুরি: সায়েদুর রহমান

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:২৮:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১০৫১৭ বার দেখা হয়েছে

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডার স্কাইলাইন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বর্তমানে শীর্ষ ব্রোকার্স হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরামের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজারের নানা বিষয় নিয়ে তাঁর মতামত তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিজনেস জার্নালের স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিজনেস জার্নাল: পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

মো. সায়েদুর রহমান: সরকার পতনের পর প্রথম চারদিন পুঁজিবাজার কিছুটা ভালো অবস্থায় গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবারও আগের মতো পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। সূচক ভালো অবস্থায় নেই। লেনদেন ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকায় আটকে আছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা ভালো নেই। বাজার মধ্যস্থতাকারীরাও ভালো অবস্থায় নেই। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজার বর্তমানে ডাউন ট্রেন্ডে আছে।

তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে, যার নেতবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে। যদিও এখন কিছুটা কমেছে এসব অস্থিরতা। ডলারের রেট আনস্ট্যাবল (অস্থিতিশীল) পর্যায়ে ছিল। সেটিও স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) হতে শুরু করেছে। সুদের হার কমতে শুরু করেছে। আশা করি আগামী দিনে পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।

বিজনেস জার্নাল: সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে আস্থার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

মো. সায়েদুর রহমান: আস্থা শব্দটি আপেক্ষিক শব্দ। এটা প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তার বহি:প্রকাশ। পুঁজিবাজার ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ঝুঁকি নিয়ে কেউ লাভবান হন, আবার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন কোনো বিনিয়োগকারী দেখেন যে, বাজারে বিনিয়োগ করলে ক্যাপিটাল গেইন অথবা ডিভিডেন্ড পাওয়ার সম্ভাবনা সন্দেহজনক, তখনই তাদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। তবে এই সংকটকে অনেক বড় পরিসরে দেখার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যখন মনে করবে তারা লাভোবান হবেন, তখন তারা বিনিয়োগ করবেন। যখন মনে করবেন লাভোবান হবেন না, তখন বিনিয়োগ করবেন না। আমরা প্রত্যাশা করি, বিনিয়োগকারীরা ইমোশোনালি (আবেগপ্রবণ) বিনিয়োগ করবেন না। জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করবেন।

বিজনেস জার্নাল: বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থা কেমন? ইদানিং শোনা যাচ্ছে বেশ কিছু সিকিউরিটিজ হাউজে কর্মী ছাটাই হচ্ছে, এর কারণ কী?

মো. সায়েদুর রহমান: দেখুন, আমি মনে করি প্রত্যেকদিন পুঁজিবাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার যদি টার্নওভার (লেনদেন) হতো, তাহলে স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক, সিকিউরিটিজ হাউজ ও বিনিয়োগকারীসহ সকলেই মোটামুটি ভালো অবস্থায় থাকতো। কিন্তু বর্তমানে যে-পরিমাণ টার্নওভার হচ্ছে, তা দিয়ে কেউই ভালো অবস্থায় নেই। গত ৭-৮ মাস ধরে সিকিউরিটিজ হাউজসহ প্রায় সবাই লোকসানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, একটা প্রতিষ্ঠান তার অপারেটিং কস্ট কমানোর জন্য কর্মী ছাটাই করতেই পারে। এটা একেবারেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

বিজনেস জার্নাল: নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এই বাজারে প্রবেশের উপযুক্ত সময় কখন? তাদের কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

মো. সায়েদুর রহমান: সারাবছর জুড়েই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে তাকে ভালো মানের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। যে শেয়ারটি লুক্রেটিভ, সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। শুধু মৌল ভিত্তির শেয়ার দেখলেই হবে না, শেয়ারটির প্রিভিয়াস (পূর্বের) রেকর্ড দেখে বিনিয়োগ করতে হবে। বাজার যখন খুব ভালো থাকে, তখনও কেউ কেউ লোকসান করেন। আবার বাজার যখন খুব খারাপ থাকে, তখনও কেউ কেউ লাভোবান হন। বিনিয়োগকারীদের ইনডেক্স দেখে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। শেয়ারের দাম দেখে বিনিয়োগ করা উচিত। যারা বড় বিনিয়োগকারী তারা ইনডেক্স দেখে বিনিয়োগ করতে পারে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির পারফর্মেন্স দেখতে হবে। গত তিন থেকে চার বছরের ডিভিডেন্ডের রেকর্ডটা দেখতে হবে। ব্যবসায়িক স্ট্রেনথ দেখতে হবে। আবার কোনো কোম্পানি বেশি ডিভিডেন্ড দিলেই যে, সে কোম্পানি ভালো হবে, তা বলা যাবে না। কারণ অনেক সময় কোনো কোনো কোম্পানি তার রিটার্ন আর্নিংস থেকে সিগনিফিকেন্ট ডিভিডেন্ড দেয়, এই ডিভিডেন্ড দেওয়ার ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে। প্রফিট বা মুনাফা থেকে কোনো কোম্পানি কি পরিমাণ ডিভিডেন্ড দেয়, সেটি মূল কথা। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও তা বিনিয়োগকারীদের দেয় না। এর ফলে রেগুলেটরি বডি সেই কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে পাঠায়। এতে করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। কারণ ‘জেড’ গ্রুপে যাওয়ার ফলে, সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যায়। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কমে যায়। রেগুলেটরি বডির উচিত, যেসমস্ত কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও তা দেয় না, সেগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা। ‘জেড’ গ্রুপে না পাঠিয়ে তাদের ম্যানেজমেন্টকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

আরও পড়ুন: এখনই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়: মিনহাজ মান্নান ইমন

বিজনেস জার্নাল: দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বর্তমান বাজারে কী সম্ভাবনা রয়েছে? বিনিয়োগকারীরা কীভাবে একটি স্থায়ী কৌশল তৈরি করতে পারে?

মো. সায়েদুর রহমান: দীর্ঘ মেয়াদের জন্য মৌল ভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। এতো খারাপ অবস্থার মধ্যেও কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ারের প্রাইস (দাম) প্রায় একই অবস্থায় রয়েছে। আবার অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত এতো খারাপ অবস্থার মধ্যেও যে-সমস্ত শেয়ারের দাম প্রায় একই অবস্থায় রয়েছে বা মোটামুটি ভালো অবস্থায় রয়েছে, ডিভিডেন্ড ঠিকভাবে দিয়ে যাচ্ছে, সেসমস্ত শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা।

বিনিয়োগে স্থায়ী কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, কোন কোম্পানির পণ্য দীর্ঘ মেয়াদে ভালো করবে, সেটি অ্যানালাইসিস করে বের করতে হবে, এবং সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়াও কোম্পানির বোর্ড কারা রয়েছে, তাদের অতিতের ব্যাক গ্রাউন্ড কেমন, গত কয়ে বছর কি পরিমাণ ডিভিডেন্ড দিয়েছে, কোম্পানির ব্যবসায়িক পলিসি কেমন, ইত্যাদি দেখে, বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে।

বিজনেস জার্নাল: বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতেন।

মো. সায়েদুর রহমান: বিনিযোগকারীদের উদ্দেশ্যে নতুন করে কিছু বলবো না। আগেও যা বলেছি, সেটি হলো জেনে, বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। ইমোশনালী বা আবেগপ্রবণ হয়ে বিনিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে তাদের।

বিজনেস জার্নাল: পাঠক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বিজনেস জার্নালকে সময় দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।

মো. সাইয়েদুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

বিনিয়োগের পূর্বে শেয়ারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা জরুরি: সায়েদুর রহমান

আপডেট: ০১:২৮:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডার স্কাইলাইন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বর্তমানে শীর্ষ ব্রোকার্স হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরামের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজারের নানা বিষয় নিয়ে তাঁর মতামত তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিজনেস জার্নালের স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিজনেস জার্নাল: পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

মো. সায়েদুর রহমান: সরকার পতনের পর প্রথম চারদিন পুঁজিবাজার কিছুটা ভালো অবস্থায় গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবারও আগের মতো পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। সূচক ভালো অবস্থায় নেই। লেনদেন ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকায় আটকে আছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা ভালো নেই। বাজার মধ্যস্থতাকারীরাও ভালো অবস্থায় নেই। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজার বর্তমানে ডাউন ট্রেন্ডে আছে।

তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে, যার নেতবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে। যদিও এখন কিছুটা কমেছে এসব অস্থিরতা। ডলারের রেট আনস্ট্যাবল (অস্থিতিশীল) পর্যায়ে ছিল। সেটিও স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) হতে শুরু করেছে। সুদের হার কমতে শুরু করেছে। আশা করি আগামী দিনে পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।

বিজনেস জার্নাল: সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে আস্থার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

মো. সায়েদুর রহমান: আস্থা শব্দটি আপেক্ষিক শব্দ। এটা প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তার বহি:প্রকাশ। পুঁজিবাজার ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ঝুঁকি নিয়ে কেউ লাভবান হন, আবার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন কোনো বিনিয়োগকারী দেখেন যে, বাজারে বিনিয়োগ করলে ক্যাপিটাল গেইন অথবা ডিভিডেন্ড পাওয়ার সম্ভাবনা সন্দেহজনক, তখনই তাদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। তবে এই সংকটকে অনেক বড় পরিসরে দেখার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যখন মনে করবে তারা লাভোবান হবেন, তখন তারা বিনিয়োগ করবেন। যখন মনে করবেন লাভোবান হবেন না, তখন বিনিয়োগ করবেন না। আমরা প্রত্যাশা করি, বিনিয়োগকারীরা ইমোশোনালি (আবেগপ্রবণ) বিনিয়োগ করবেন না। জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করবেন।

বিজনেস জার্নাল: বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থা কেমন? ইদানিং শোনা যাচ্ছে বেশ কিছু সিকিউরিটিজ হাউজে কর্মী ছাটাই হচ্ছে, এর কারণ কী?

মো. সায়েদুর রহমান: দেখুন, আমি মনে করি প্রত্যেকদিন পুঁজিবাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার যদি টার্নওভার (লেনদেন) হতো, তাহলে স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক, সিকিউরিটিজ হাউজ ও বিনিয়োগকারীসহ সকলেই মোটামুটি ভালো অবস্থায় থাকতো। কিন্তু বর্তমানে যে-পরিমাণ টার্নওভার হচ্ছে, তা দিয়ে কেউই ভালো অবস্থায় নেই। গত ৭-৮ মাস ধরে সিকিউরিটিজ হাউজসহ প্রায় সবাই লোকসানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, একটা প্রতিষ্ঠান তার অপারেটিং কস্ট কমানোর জন্য কর্মী ছাটাই করতেই পারে। এটা একেবারেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

বিজনেস জার্নাল: নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এই বাজারে প্রবেশের উপযুক্ত সময় কখন? তাদের কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

মো. সায়েদুর রহমান: সারাবছর জুড়েই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে তাকে ভালো মানের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। যে শেয়ারটি লুক্রেটিভ, সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। শুধু মৌল ভিত্তির শেয়ার দেখলেই হবে না, শেয়ারটির প্রিভিয়াস (পূর্বের) রেকর্ড দেখে বিনিয়োগ করতে হবে। বাজার যখন খুব ভালো থাকে, তখনও কেউ কেউ লোকসান করেন। আবার বাজার যখন খুব খারাপ থাকে, তখনও কেউ কেউ লাভোবান হন। বিনিয়োগকারীদের ইনডেক্স দেখে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। শেয়ারের দাম দেখে বিনিয়োগ করা উচিত। যারা বড় বিনিয়োগকারী তারা ইনডেক্স দেখে বিনিয়োগ করতে পারে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির পারফর্মেন্স দেখতে হবে। গত তিন থেকে চার বছরের ডিভিডেন্ডের রেকর্ডটা দেখতে হবে। ব্যবসায়িক স্ট্রেনথ দেখতে হবে। আবার কোনো কোম্পানি বেশি ডিভিডেন্ড দিলেই যে, সে কোম্পানি ভালো হবে, তা বলা যাবে না। কারণ অনেক সময় কোনো কোনো কোম্পানি তার রিটার্ন আর্নিংস থেকে সিগনিফিকেন্ট ডিভিডেন্ড দেয়, এই ডিভিডেন্ড দেওয়ার ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে। প্রফিট বা মুনাফা থেকে কোনো কোম্পানি কি পরিমাণ ডিভিডেন্ড দেয়, সেটি মূল কথা। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও তা বিনিয়োগকারীদের দেয় না। এর ফলে রেগুলেটরি বডি সেই কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে পাঠায়। এতে করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। কারণ ‘জেড’ গ্রুপে যাওয়ার ফলে, সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যায়। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কমে যায়। রেগুলেটরি বডির উচিত, যেসমস্ত কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও তা দেয় না, সেগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা। ‘জেড’ গ্রুপে না পাঠিয়ে তাদের ম্যানেজমেন্টকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

আরও পড়ুন: এখনই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়: মিনহাজ মান্নান ইমন

বিজনেস জার্নাল: দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বর্তমান বাজারে কী সম্ভাবনা রয়েছে? বিনিয়োগকারীরা কীভাবে একটি স্থায়ী কৌশল তৈরি করতে পারে?

মো. সায়েদুর রহমান: দীর্ঘ মেয়াদের জন্য মৌল ভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। এতো খারাপ অবস্থার মধ্যেও কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ারের প্রাইস (দাম) প্রায় একই অবস্থায় রয়েছে। আবার অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত এতো খারাপ অবস্থার মধ্যেও যে-সমস্ত শেয়ারের দাম প্রায় একই অবস্থায় রয়েছে বা মোটামুটি ভালো অবস্থায় রয়েছে, ডিভিডেন্ড ঠিকভাবে দিয়ে যাচ্ছে, সেসমস্ত শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা।

বিনিয়োগে স্থায়ী কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, কোন কোম্পানির পণ্য দীর্ঘ মেয়াদে ভালো করবে, সেটি অ্যানালাইসিস করে বের করতে হবে, এবং সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়াও কোম্পানির বোর্ড কারা রয়েছে, তাদের অতিতের ব্যাক গ্রাউন্ড কেমন, গত কয়ে বছর কি পরিমাণ ডিভিডেন্ড দিয়েছে, কোম্পানির ব্যবসায়িক পলিসি কেমন, ইত্যাদি দেখে, বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে।

বিজনেস জার্নাল: বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতেন।

মো. সায়েদুর রহমান: বিনিযোগকারীদের উদ্দেশ্যে নতুন করে কিছু বলবো না। আগেও যা বলেছি, সেটি হলো জেনে, বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। ইমোশনালী বা আবেগপ্রবণ হয়ে বিনিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে তাদের।

বিজনেস জার্নাল: পাঠক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বিজনেস জার্নালকে সময় দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।

মো. সাইয়েদুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

ঢাকা/টিএ