বিনিয়োগ সামান্য বাড়ালেও অধিকাংশ শেয়ারেই প্রাতিষ্ঠানিকদের অনাগ্রহ!
- আপডেট: ০৪:২৩:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩
- / ১০৭৮২ বার দেখা হয়েছে
বলা হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। তাহলে বাজার ভালো থাকবে। বাজারে অস্থিরতা কমে যাবে। তবে আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের প্রেক্ষাপটে বিষয় তার উল্টো। বর্তমান সময়ের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লোকসান কাটানো কিংবা অধিক মুনাফার আশায় ডে-ট্রেডিংয়ে ঝুঁকছেন। পরিণতিতে বাজার স্থিতিশীল হতে পারছে না।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
অপরদিকে বাজার অস্থিতিশীল থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও নতুন করে তেমন বিনিয়োগ করছেন না। যদিও সার্বিক হিসাবে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে শেয়ার ধারণের পরিমাণ খানিকটা বেড়েছে।
চলমান মন্দা পরিস্থিতিতে এটি আশার কথাও বটে। একই সময়ে বিদেশি ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টেও শেয়ার বেড়েছে। তবে তা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তুলনায় কম।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি শেষে তালিকাভুক্ত ৩৯০ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীর ধরন অনুযায়ী শেয়ার ধারণের হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনায় এ তথ্য মিলেছে। অবশ্য এখনও ১১ কোম্পানি ও ১০ মিউচুয়াল ফান্ড এ তথ্য প্রকাশ করেনি।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি শেষে তালিকাভুক্ত ৩৫৪ কোম্পানি এবং ৩৬ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মোট পরিশোধিত মূলধন ছিল ৯০ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের হিসাবে মোট শেয়ার ছিল ৯ হাজার ৩৪ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ১ হাজার ৮৬৩ কোটি, যা মোট শেয়ারের ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
গত জানুয়ারি শেষে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মোট পরিশোধিত মূলধন ছিল ৯০ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা বা মোট ৯ হাজার ৬০ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ১ হাজার ৮৬০ কোটি ২০ লাখ বা মোটের ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, জানুয়ারির তুলনায় ১৫২ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমবেশি বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১১৬টি থেকে। একই সময়ে ১১৮ শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়েছে এবং কমেছে ১৫০টি থেকে। অর্থাৎ বেশিরভাগ শেয়ার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিক্রি করা শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কিনেছেন। অবশ্য টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ খুব বেশি নয়। তা ছাড়া কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে শেয়ার কেনা হয়েছে, তাও পরিষ্কার নয়।
গত মাসে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বেড়েছে সর্বাধিক ৫ দশমিক ১৩ শতাংশীয় পয়েন্ট। জানুয়ারি শেষে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ছিল মোটের ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারি শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। গত এক মাসে শেয়ারটির দর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছিল। ৮৫ থেকে ১২৪ টাকায় ওঠার পর এখন শেয়ারটির দর পড়তির দিকে। সর্বশেষ ডিএসইতে শেয়ারটি ৯০ টাকার কমে কেনাবেচা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ভয়াল ২৫ মার্চে যেভাবে কাটিয়েছিলেন জাতির পিতা
প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বৃদ্ধির দিক থেকে এর পরের অবস্থানে ছিল এডিএন টেলিকম। দর ওঠানামায় এ কোম্পানির ক্ষেত্রেও একই ধারা দেখা গেছে। জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি শেষে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ৪ দশমিক ৭০ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত এক মাসে এর দর ১১৩ থেকে ১৭২ টাকায় উঠে সর্বশেষ ১৫২ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
আরও যেসব শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, সেগুলোর অন্যতম হলো– মুন্নু এগ্রো মেশিনারিজ, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, সিলভা ফার্মা, এএফসি এগ্রো, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, বিডি ফাইন্যান্স, এইচআরটেক্স , ই-জেনারেশন, বিডি অটোকার এবং ইসলামী ব্যাংক।
বিপরীতে জেমিনি সি ফুড থেকে সর্বাধিক ৮ দশমিক ৬২ শতাংশীয় পয়েন্ট শেয়ার কমেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে। গত জানুয়ারি শেষে যা ছিল ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি শেষে তা ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশে নেমেছে। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে এমন কোম্পানির মধ্যে রয়েছে– আমরা নেটওয়ার্কস, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, ফাইন ফুডস, জেনেক্স ইনফোসিস, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফরচুন সুজ, এপেক্স ফুটওয়্যার, আমরা টেকনোলজিস, বসুন্ধরা পেপার ইত্যাদি।
ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে শেয়ার ছিল ১৮২ কোটি ৮০ লাখ, যা গত জানুয়ারির তুলনায় ৪০ লাখ বেশি। একই সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে শেয়ার ২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭০ লাখ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৮৩৫ কোটি ৯০ লাখে উন্নীত হয়েছে। গুটিকয় কোম্পানি ছাড়া বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের শেয়ার ধারণের হারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই।
সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারে প্রত্যাশিত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ না আশার মূল কারণ ডিভিডেন্ড ইল্ড কম। এছাড়া প্রাইস আর্নিংস রেশিও (পিই রেশিও) কেমন রয়েছে সেটিও দেখতে হবে। পিই রেশিও কম থাকা মানে হচ্ছে বর্তমানে বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে ডিভিডেন্ড ছাড়াও আকর্ষণীয় হারে মূলধনি মুনাফা আসবে। বর্তমানে অনেক ভালো ও মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম যথেষ্ট কম। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নেই। এখানে মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই বিনিয়োগ করে। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের ইল্ড পুঁজিবাজারের তুলনায় বেশি হওয়ার কারণে বেশি রিটার্নের আশায় তারা এখানে বিনিয়োগ করতেই পারে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এমনভাবে বিনিয়োগ করা উচিত, যাতে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পরিচালন খাতে ভালো অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে বিনিয়োগের বিপরীতের উল্লেখযোগ্য হারে রিটার্ন না এলে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন লোকসানে পড়ার আশঙ্কা থাকে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁঁকির পরিমাণ বেশি থাকে বলে এখান থেকে বেশি রিটার্ন প্রত্যাশা করাটাই স্বাভাবিক। যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকির তুলনায় রিটার্ন অনেক কম। এ কারণে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অস্থিতিশীল শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের চেয়ে বন্ডের মতো নিরাপদ বিনিয়োগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ঢাকা/এইচআর