১০:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জে দৈনিক লেনদেন ৭৫০ কোটি টাকা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৩৪:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪২০০ বার দেখা হয়েছে

নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের মতো হোম ডেলিভারিতে মিলছে যে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক শ্রেণির অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ। দেশে অবৈধ এ সব প্রতিষ্ঠানে গড় লেনদেন ৭৫ লাখ টাকা ধরলে দৈনিক ৭৫০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাজধানীর পাঁচ স্থানে একযোগে অভিযান চালায় সিআইডি। এর মধ্যে তিনটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ অফিস হচ্ছে- গুলশানের জেএমসিএইচ প্রাইভেট লিমিটেড, মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং উত্তরার আশকোনা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের তৈমুর মানি এক্সচেঞ্জ। বাকি দুটি ফেরারি প্রতিষ্ঠান। এ অভিযানে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তারসহ এক কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব 

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- আবু তালহা ওরফে তাহারত ইসলাম তোহা (৩২), আছাদুল শেখ (৩২), হাছান মোল্যা (১৯), আব্দুল কুদ্দুস (২৪), হাসনাত এ চৌধুরী (৪৬), শামসুল হুদা চৌধুরী ওরফে রিপন (৪০), সুমন মিয়া (৩০), তপন কুমার দাস (৪৫), আব্দুল কুদ্দুস (৩২), কামরুজ্জামান রাসেল (৩৭), মনিরুজ্জামান (৪০), নেওয়াজ বিশ্বাস, আবুল হাসনাত (৪০) ও শাহজাহান সরকার (৪৫)।

বুধবার দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছে যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান দিনে গড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় করে। মাসে ২২ বা ২৪ কর্ম দিবসে আরও কী পরিমাণ তারা ক্রয়বিক্রয় করছেন তার ধারণা করা যায়।

এ ব্যাপারে বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, গুলশান এলাকার কোনো কোনো অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানে দিনে লেনদেন হয় ১০ কোটি টাকাও। যেখানে কয়েক কোটি টাকার ডলার ক্রয়-বিক্রয় হয়।

তিনি বলেন, সে হিসেবে সারা বাংলাদেশের অবৈধ সব প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে গড় ৭৫ লাখ টাকা ধরলে দিনে আনুমানিক ৭৫০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়। যেখানে বাংলাদেশ সরকার কোনো প্রফিট পায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকেও থাকে না সঠিক তথ্য। এতে করে ডলার সংকট কিংবা পাচারের বিষয়টিও অস্পষ্ট থেকে যায়।

অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কেউ টাকা ও ডলারসহ বিদেশে মুদ্রা পাচার করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছি। কিন্তু তাদের কাজটা অনেকটা মানি লন্ডারিংয়ের মতো। তারা বিদেশি মুদ্রা মজুত রেখে প্রতারণা করে, কেউ কেউ পাচার করছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার করা মানি লন্ডারিং। আমরা তালিকা করছি। তদন্ত হচ্ছে। নেপথ্যে যতো বড় রাঘববোয়ালই থাক না কেন আস্তে আস্তে সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

কেন অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ বাড়ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, খুব অল্প সময়ে লাভবান হওয়া যায়, তাই অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সোর্স ও সিআইডির সোর্সের মাধ্যমে আমরা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযান করছি। মানিলন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু সিআইডি নয়, সব এজেন্সি মিলেই কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে আলাদা আইন আছে। সে অনুসারে কাজ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: সাড়ে ১১ হাজার বই চুরির মামলার তদন্তে ডিবি

অবৈধভাবে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্ঞাতসারেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না?- এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মাদ আলী মিয়া বলেন, দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে কোনো অবৈধ পথ বেছে নেওয়া উচিত হবে না কারো। বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য যেকোন ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা যদি হুন্ডি কিংবা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জড়ানোর তথ্য মেলে তবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের মানুষকে অনুরোধ করব, সরকার ঘোষিত এবং সংশ্লিষ্ট বৈধ ব্যাংক থেকে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে।

তিনি বলেন, আমাদের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা আছে। মনিটরিং আছে। প্রতিদিন কে কতো লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে, সেটাও নির্ধারিত। নির্ধারিত থাকে ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার রেটও। বৈদেশিক মুদ্রা আসার গতি বাড়াতে হলে, হুন্ডি ও মানি লন্ডারিং বন্ধ করতে হলে অবৈধ সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জে দৈনিক লেনদেন ৭৫০ কোটি টাকা

আপডেট: ১২:৩৪:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩

নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের মতো হোম ডেলিভারিতে মিলছে যে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক শ্রেণির অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ। দেশে অবৈধ এ সব প্রতিষ্ঠানে গড় লেনদেন ৭৫ লাখ টাকা ধরলে দৈনিক ৭৫০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাজধানীর পাঁচ স্থানে একযোগে অভিযান চালায় সিআইডি। এর মধ্যে তিনটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ অফিস হচ্ছে- গুলশানের জেএমসিএইচ প্রাইভেট লিমিটেড, মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং উত্তরার আশকোনা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের তৈমুর মানি এক্সচেঞ্জ। বাকি দুটি ফেরারি প্রতিষ্ঠান। এ অভিযানে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তারসহ এক কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব 

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- আবু তালহা ওরফে তাহারত ইসলাম তোহা (৩২), আছাদুল শেখ (৩২), হাছান মোল্যা (১৯), আব্দুল কুদ্দুস (২৪), হাসনাত এ চৌধুরী (৪৬), শামসুল হুদা চৌধুরী ওরফে রিপন (৪০), সুমন মিয়া (৩০), তপন কুমার দাস (৪৫), আব্দুল কুদ্দুস (৩২), কামরুজ্জামান রাসেল (৩৭), মনিরুজ্জামান (৪০), নেওয়াজ বিশ্বাস, আবুল হাসনাত (৪০) ও শাহজাহান সরকার (৪৫)।

বুধবার দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছে যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান দিনে গড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় করে। মাসে ২২ বা ২৪ কর্ম দিবসে আরও কী পরিমাণ তারা ক্রয়বিক্রয় করছেন তার ধারণা করা যায়।

এ ব্যাপারে বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, গুলশান এলাকার কোনো কোনো অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানে দিনে লেনদেন হয় ১০ কোটি টাকাও। যেখানে কয়েক কোটি টাকার ডলার ক্রয়-বিক্রয় হয়।

তিনি বলেন, সে হিসেবে সারা বাংলাদেশের অবৈধ সব প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে গড় ৭৫ লাখ টাকা ধরলে দিনে আনুমানিক ৭৫০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়। যেখানে বাংলাদেশ সরকার কোনো প্রফিট পায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকেও থাকে না সঠিক তথ্য। এতে করে ডলার সংকট কিংবা পাচারের বিষয়টিও অস্পষ্ট থেকে যায়।

অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কেউ টাকা ও ডলারসহ বিদেশে মুদ্রা পাচার করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছি। কিন্তু তাদের কাজটা অনেকটা মানি লন্ডারিংয়ের মতো। তারা বিদেশি মুদ্রা মজুত রেখে প্রতারণা করে, কেউ কেউ পাচার করছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার করা মানি লন্ডারিং। আমরা তালিকা করছি। তদন্ত হচ্ছে। নেপথ্যে যতো বড় রাঘববোয়ালই থাক না কেন আস্তে আস্তে সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

কেন অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ বাড়ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, খুব অল্প সময়ে লাভবান হওয়া যায়, তাই অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সোর্স ও সিআইডির সোর্সের মাধ্যমে আমরা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযান করছি। মানিলন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু সিআইডি নয়, সব এজেন্সি মিলেই কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে আলাদা আইন আছে। সে অনুসারে কাজ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: সাড়ে ১১ হাজার বই চুরির মামলার তদন্তে ডিবি

অবৈধভাবে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্ঞাতসারেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না?- এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মাদ আলী মিয়া বলেন, দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে কোনো অবৈধ পথ বেছে নেওয়া উচিত হবে না কারো। বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য যেকোন ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা যদি হুন্ডি কিংবা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জড়ানোর তথ্য মেলে তবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের মানুষকে অনুরোধ করব, সরকার ঘোষিত এবং সংশ্লিষ্ট বৈধ ব্যাংক থেকে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে।

তিনি বলেন, আমাদের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা আছে। মনিটরিং আছে। প্রতিদিন কে কতো লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে, সেটাও নির্ধারিত। নির্ধারিত থাকে ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার রেটও। বৈদেশিক মুদ্রা আসার গতি বাড়াতে হলে, হুন্ডি ও মানি লন্ডারিং বন্ধ করতে হলে অবৈধ সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।

ঢাকা/এসএ