০৩:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

অর্থনীতির গতি বাড়াতে মরিয়া কুয়েত

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৩৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ৪১৩২ বার দেখা হয়েছে

করোনার দাপটে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা কুয়েতের অর্থনীতির। নানা উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির সরকার। প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতা না আসলেও বড় কোনো ব্যর্থতা নেই। এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হলো দেশটির জাতীয় নির্বাচন। অন্যদিকে কিছুদিন আগেই দেশটির আমির শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-সাবাহ ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন। এরপরই দেশটির মন্ত্রিসভা তার সৎভাই ৮৩ বছর বয়স্ক শেখ নওয়াফ আল-আহমেদকে নতুন আমির বলে ঘোষণা করে।

নতুন সরকার দ্রুত করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি উদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা। এরই মধ্যে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ষাটোর্ধ্ব স্নাতক ডিগ্রিবিহীন প্রবাসী শ্রমিকদের আকামা আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুয়েত। ফলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের প্রায় ৯৬ হাজার স্নাতক ডিগ্রিবিহীন শ্রমিককে দেশে ফিরতে হবে।

আনাদোলু নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, প্রতি চার বছর পর পর দেশটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দেশটির জনগণ নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে দেশ পরিচালনার জন্য সুযোগ করে দেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের কম আরব দেশে এ সুযোগ রয়েছে। এবারের নির্বাচনে ইলেক্টোরাল এলাকা থেকে ৫০ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতদের বেশিরভাগই প্রথমবার সংসদে যাচ্ছেন প্রতিনিধিত্ব করছেন। ফলে অনেক সাংসদ তাদের আসন হারিয়েছেন।

ফলে বর্তমানে নতুন আমির এবং নতুন সংসদ সদস্যরা কুয়েতে পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছেন। এতে করে নিয়ম অনুযায়ী দেশটির মন্ত্রিসভায়ও বড় পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই নতুন করে কুয়েত পররাষ্ট্র ও অর্থনীতি সাজানোর একটি সুযোগ পাবে। যা বর্তমান পরিস্থিতে দেশটির জন্য জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, কুয়েতে আমিরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তার উপর কোনো আইন চলে না। যদিও ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা অবাদে রাজপরিবারের এবং মন্ত্রিসভার সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া ও নির্বাচন দেবার ক্ষমতাও রয়েছে আমিরের হাতে। কুয়েতে নারীদের ভোটাধিকার এবং রাজনৈতিক পদে আসীন হবার পক্ষেও দাঁড়িয়েছেন। যদিও এবারের নির্বাচনে দেশটিতে কোনো নারী প্রর্থী ছিলেন না।

এদিকে করোনা মহামারীর কারণে তেলের দামে পতন হয়েছে বিশ্বজুড়ে। তাই তেল নির্ভর অর্থনীতির এই দেশটির অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। নির্বাচনী প্রচারণায় তাই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রেখেছিল অর্থনৈতিক দুরবস্থা। তবে দেশটির অর্থনৈতিক অবকাঠামো নিয়ে সমালোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারো কারো মতে পেট্রোডলারের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতিকে রূপান্তরের কোনো নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনা পেশ করতে পারছেন না রাজনীতিবিদরা। তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অর্থনীতিতে বৈচিত্র আনার জোর দাবি উঠাছে দেশটিতে।

মহামারির সঙ্গে কুয়েতে যোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাচ। রেকর্ড বাজেট ঘাটতির সামনে দাঁড়িয়ে আছে কুয়েতের অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস, চলতি বছরে উপসাগরীয় অর্থনীতিটি ৮ শতাংশ সংকুচিত হবে। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় পারস্য উপসাগরের তীরে, ইরাক এবং সৌদি আরবের মাঝখানে অবস্থিত ৬ হাজার ৮৮০ বর্গমাইলের দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। ব্রিটেন থেকে ১৯৬১ সালের ১৯ জুন স্বাধীনতা পাওয়া দেশটি বিশ্বের মুদ্রাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যবান এককের মালিক। এক কুয়েতি দিনার সাড়ে তিন ডলারের সমান। অন্যভাবে বললে কুয়েতের এক দিনার বাংলাদেশি টাকায় ২৭৯ টাকা। যেখানে এক মার্কিন ডলার বাংলাদেশি প্রায় ৮৫ টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য নিয়ে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন ও হাউমাচ ডটনেটের তথ্য অনুযায়ী কুয়েত বিশ্বের ৯ম ধনীদেশ।  পারচেইজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি) ডলারে মাথাপিছু জিডিপি ৬৭ হাজার ৯০০ ডলার। ১৯৩৪ সালে প্রথম মরুভূমির এই দেশে খনিজ তেল পাওয়া গিয়েছিল। সেই শুরু কুয়েতের উত্থান। বিশ্বের মোট তেলের ৬ শতাংশই কুয়েতের। কুয়েতের জিডিপির ৪০ শতাংশ আসে তেল থেকে, রপ্তানির ৯০ শতাংশই তেল। কুয়েতের জনসংখ্যা মাত্র ৪১ লাখ। এর ৩০ লাখই অভিবাসী। তেলের দাম কমে যাওয়ায় কুয়েত অবশ্য ২০১৫ সাল থেকেই বিপদে আছে।

শেয়ার করুন

x
English Version

অর্থনীতির গতি বাড়াতে মরিয়া কুয়েত

আপডেট: ১১:৩৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২০

করোনার দাপটে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা কুয়েতের অর্থনীতির। নানা উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির সরকার। প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতা না আসলেও বড় কোনো ব্যর্থতা নেই। এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হলো দেশটির জাতীয় নির্বাচন। অন্যদিকে কিছুদিন আগেই দেশটির আমির শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-সাবাহ ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন। এরপরই দেশটির মন্ত্রিসভা তার সৎভাই ৮৩ বছর বয়স্ক শেখ নওয়াফ আল-আহমেদকে নতুন আমির বলে ঘোষণা করে।

নতুন সরকার দ্রুত করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি উদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা। এরই মধ্যে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ষাটোর্ধ্ব স্নাতক ডিগ্রিবিহীন প্রবাসী শ্রমিকদের আকামা আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুয়েত। ফলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের প্রায় ৯৬ হাজার স্নাতক ডিগ্রিবিহীন শ্রমিককে দেশে ফিরতে হবে।

আনাদোলু নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, প্রতি চার বছর পর পর দেশটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দেশটির জনগণ নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে দেশ পরিচালনার জন্য সুযোগ করে দেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের কম আরব দেশে এ সুযোগ রয়েছে। এবারের নির্বাচনে ইলেক্টোরাল এলাকা থেকে ৫০ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতদের বেশিরভাগই প্রথমবার সংসদে যাচ্ছেন প্রতিনিধিত্ব করছেন। ফলে অনেক সাংসদ তাদের আসন হারিয়েছেন।

ফলে বর্তমানে নতুন আমির এবং নতুন সংসদ সদস্যরা কুয়েতে পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছেন। এতে করে নিয়ম অনুযায়ী দেশটির মন্ত্রিসভায়ও বড় পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই নতুন করে কুয়েত পররাষ্ট্র ও অর্থনীতি সাজানোর একটি সুযোগ পাবে। যা বর্তমান পরিস্থিতে দেশটির জন্য জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, কুয়েতে আমিরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তার উপর কোনো আইন চলে না। যদিও ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা অবাদে রাজপরিবারের এবং মন্ত্রিসভার সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া ও নির্বাচন দেবার ক্ষমতাও রয়েছে আমিরের হাতে। কুয়েতে নারীদের ভোটাধিকার এবং রাজনৈতিক পদে আসীন হবার পক্ষেও দাঁড়িয়েছেন। যদিও এবারের নির্বাচনে দেশটিতে কোনো নারী প্রর্থী ছিলেন না।

এদিকে করোনা মহামারীর কারণে তেলের দামে পতন হয়েছে বিশ্বজুড়ে। তাই তেল নির্ভর অর্থনীতির এই দেশটির অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। নির্বাচনী প্রচারণায় তাই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রেখেছিল অর্থনৈতিক দুরবস্থা। তবে দেশটির অর্থনৈতিক অবকাঠামো নিয়ে সমালোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারো কারো মতে পেট্রোডলারের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতিকে রূপান্তরের কোনো নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনা পেশ করতে পারছেন না রাজনীতিবিদরা। তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অর্থনীতিতে বৈচিত্র আনার জোর দাবি উঠাছে দেশটিতে।

মহামারির সঙ্গে কুয়েতে যোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাচ। রেকর্ড বাজেট ঘাটতির সামনে দাঁড়িয়ে আছে কুয়েতের অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস, চলতি বছরে উপসাগরীয় অর্থনীতিটি ৮ শতাংশ সংকুচিত হবে। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় পারস্য উপসাগরের তীরে, ইরাক এবং সৌদি আরবের মাঝখানে অবস্থিত ৬ হাজার ৮৮০ বর্গমাইলের দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। ব্রিটেন থেকে ১৯৬১ সালের ১৯ জুন স্বাধীনতা পাওয়া দেশটি বিশ্বের মুদ্রাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যবান এককের মালিক। এক কুয়েতি দিনার সাড়ে তিন ডলারের সমান। অন্যভাবে বললে কুয়েতের এক দিনার বাংলাদেশি টাকায় ২৭৯ টাকা। যেখানে এক মার্কিন ডলার বাংলাদেশি প্রায় ৮৫ টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য নিয়ে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন ও হাউমাচ ডটনেটের তথ্য অনুযায়ী কুয়েত বিশ্বের ৯ম ধনীদেশ।  পারচেইজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি) ডলারে মাথাপিছু জিডিপি ৬৭ হাজার ৯০০ ডলার। ১৯৩৪ সালে প্রথম মরুভূমির এই দেশে খনিজ তেল পাওয়া গিয়েছিল। সেই শুরু কুয়েতের উত্থান। বিশ্বের মোট তেলের ৬ শতাংশই কুয়েতের। কুয়েতের জিডিপির ৪০ শতাংশ আসে তেল থেকে, রপ্তানির ৯০ শতাংশই তেল। কুয়েতের জনসংখ্যা মাত্র ৪১ লাখ। এর ৩০ লাখই অভিবাসী। তেলের দাম কমে যাওয়ায় কুয়েত অবশ্য ২০১৫ সাল থেকেই বিপদে আছে।