০৯:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

অস্তিত্বহীন কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে ফিরিয়ে দেয়া হবে শেয়ারহোল্ডারদের অর্থ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:৫০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১
  • / ৪৯১০ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির অস্তিত্ব নেই, প্রয়োজনে সেসব কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য অর্থ ফেরত দেয়া হবে। কারণ এসব কোম্পানির কার্যালয় ও কার্যক্রম না থাকলেও রয়েছে সম্পদ, যা বিক্রি করে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এমন পরিকল্পনা রয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা এসব কোম্পানির বিষয়ে তারা সোচ্চার। সূত্র আরও জানায়, এসব কোম্পানির তালিকাচ্যুতির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। যেকোনো সময় এসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকাচ্যুত করা হবে। পাশাপাশি এখানে যেসব শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন, তাদের অর্থ ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করে কোম্পানিগুলোর পালিয়ে থাকার কোনো সুযোগই থাকবে না।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে আমরা অস্তিত্বহীন এসব কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার কথা ভাবছি। কারণ এখানে বিনিয়োগকারীদের অনেক অর্থ আটকে রয়েছে। কোম্পানিগুলো তাদের দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে রেখেছে। এসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজার থেকে চলে গেলে এর সুরাহা হবে।

তিনি বলেন, এসব কোম্পানির অস্তিত্ব না থাকলেও তাদের সম্পদ রয়েছে। প্রয়োজন হলে এসব সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের পাওনা মেটানো হবে। এছাড়া এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করারও সুযোগ রয়েছে। দরকার পড়লে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।

জানা যায়, স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও অর্থ ফেরত পাবেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশিরা অর্থ ফেরত পেলে তাদের বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে। ফলে তারা আবার এখানে বিনিয়োগ করতে চাইবেন। পক্ষান্তরে অর্থ ফেরত না পেলে কিছু প্রতারক প্রতিষ্ঠানের জন্য সার্বিক পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে খারাপ নজির স্থাপিত হবে।

নিয়মানুযায়ী আদালতের নির্দেশ অথবা স্বেচ্ছায় বন্ধ করে দেয়া প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা সম্পদ বিক্রি করে সেই অর্থ ফেরত নিতে পারবেন বিদেশিরা। দেশি বিনিয়োগকারীরাও কোনো প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হলে নিজস্ব মালিকানাধীন অংশ পাবেন। আদালত কোনো কোম্পানি বন্ধের নির্দেশ দিলে অর্থ নেয়ার জন্য সেই আদেশের কপিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে শেয়ারের সংখ্যা, অর্থের পরিমাণ ও অবসায়নের সনদসহ যাবতীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে।

অন্যদিকে কোনো কোম্পানি স্বেচ্ছায় বন্ধ করতে চাইলে সব ধরনের কাগজপত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে অবশ্যই সব ধরনের কাগজপত্র ও নিয়মনীতি যথাযথভাবে পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, শেয়ার সার্টিফিকেট বা পোর্টফোলিও, মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন, রিটার্ন অব অ্যালটমেন্ট, ইনস্ট্র–মেন্ট অব ট্রান্সফার শেয়ার, অডিটেড ব্যালান্সশিট, অবসায়কের সনদ, সিআইবি রিপোর্ট, কর সনদপত্র প্রভৃতি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা থাকার পরও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও নিয়মনীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের কিছু কোম্পানি নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পুঁজিবাজারে আসে। প্রথমত, তারা ট্যাক্স কম দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্লেসমেন্ট শেয়ার ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানির উন্নয়নে মনোযোগ হারায়। ফলে কোম্পানির ভগ্নদশা শুরু হয়। আর এক দায়ভার নিয়ে হয় বিনিয়োগকারীদের। ফলে অন্যান্য কোম্পানির প্রতিও তারা আস্থা হারান।

তিনি বলেন, আমি আগে বহুবার বলেছি, কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীসহ অন্যদের পাওয়া মিটিয়ে দিতে। এটা যদি হয় তা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্য নজির হয়ে থাকবে।

অন্যদিকে বিএসইসির এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে তারা বছরের পর বছর ভুগছেন। না পাচ্ছেন শেয়ার বিক্রি করতে, না পাচ্ছেন কোনো লভ্যাংশ।

এ প্রসঙ্গে মো. শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, এসব কোম্পানি যে প্রতারক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তা না হলে তারা আমাদের সঙ্গে যোগযোগ করতে পারতেন। কোম্পানির অবস্থা ভালো-মন্দ হতেই পারে। কিন্তু তা জানার অধিকার ওই কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের রয়েছে। তা না করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিজেদের আড়াল করে রেখেছেন। কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে আমাদের অর্থ ফেরত দিলে যেমন কোম্পানির উচিত শিক্ষা হবে, তেমনি পুঁজিবাজারে এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সূত্র: শেয়ার বিজ্

শেয়ার করুন

x
English Version

অস্তিত্বহীন কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে ফিরিয়ে দেয়া হবে শেয়ারহোল্ডারদের অর্থ

আপডেট: ০৮:৫০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির অস্তিত্ব নেই, প্রয়োজনে সেসব কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য অর্থ ফেরত দেয়া হবে। কারণ এসব কোম্পানির কার্যালয় ও কার্যক্রম না থাকলেও রয়েছে সম্পদ, যা বিক্রি করে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এমন পরিকল্পনা রয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা এসব কোম্পানির বিষয়ে তারা সোচ্চার। সূত্র আরও জানায়, এসব কোম্পানির তালিকাচ্যুতির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। যেকোনো সময় এসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকাচ্যুত করা হবে। পাশাপাশি এখানে যেসব শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন, তাদের অর্থ ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করে কোম্পানিগুলোর পালিয়ে থাকার কোনো সুযোগই থাকবে না।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে আমরা অস্তিত্বহীন এসব কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার কথা ভাবছি। কারণ এখানে বিনিয়োগকারীদের অনেক অর্থ আটকে রয়েছে। কোম্পানিগুলো তাদের দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে রেখেছে। এসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজার থেকে চলে গেলে এর সুরাহা হবে।

তিনি বলেন, এসব কোম্পানির অস্তিত্ব না থাকলেও তাদের সম্পদ রয়েছে। প্রয়োজন হলে এসব সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের পাওনা মেটানো হবে। এছাড়া এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করারও সুযোগ রয়েছে। দরকার পড়লে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।

জানা যায়, স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও অর্থ ফেরত পাবেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশিরা অর্থ ফেরত পেলে তাদের বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে। ফলে তারা আবার এখানে বিনিয়োগ করতে চাইবেন। পক্ষান্তরে অর্থ ফেরত না পেলে কিছু প্রতারক প্রতিষ্ঠানের জন্য সার্বিক পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে খারাপ নজির স্থাপিত হবে।

নিয়মানুযায়ী আদালতের নির্দেশ অথবা স্বেচ্ছায় বন্ধ করে দেয়া প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা সম্পদ বিক্রি করে সেই অর্থ ফেরত নিতে পারবেন বিদেশিরা। দেশি বিনিয়োগকারীরাও কোনো প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হলে নিজস্ব মালিকানাধীন অংশ পাবেন। আদালত কোনো কোম্পানি বন্ধের নির্দেশ দিলে অর্থ নেয়ার জন্য সেই আদেশের কপিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে শেয়ারের সংখ্যা, অর্থের পরিমাণ ও অবসায়নের সনদসহ যাবতীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে।

অন্যদিকে কোনো কোম্পানি স্বেচ্ছায় বন্ধ করতে চাইলে সব ধরনের কাগজপত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে অবশ্যই সব ধরনের কাগজপত্র ও নিয়মনীতি যথাযথভাবে পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, শেয়ার সার্টিফিকেট বা পোর্টফোলিও, মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন, রিটার্ন অব অ্যালটমেন্ট, ইনস্ট্র–মেন্ট অব ট্রান্সফার শেয়ার, অডিটেড ব্যালান্সশিট, অবসায়কের সনদ, সিআইবি রিপোর্ট, কর সনদপত্র প্রভৃতি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা থাকার পরও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও নিয়মনীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের কিছু কোম্পানি নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পুঁজিবাজারে আসে। প্রথমত, তারা ট্যাক্স কম দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্লেসমেন্ট শেয়ার ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানির উন্নয়নে মনোযোগ হারায়। ফলে কোম্পানির ভগ্নদশা শুরু হয়। আর এক দায়ভার নিয়ে হয় বিনিয়োগকারীদের। ফলে অন্যান্য কোম্পানির প্রতিও তারা আস্থা হারান।

তিনি বলেন, আমি আগে বহুবার বলেছি, কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীসহ অন্যদের পাওয়া মিটিয়ে দিতে। এটা যদি হয় তা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্য নজির হয়ে থাকবে।

অন্যদিকে বিএসইসির এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে তারা বছরের পর বছর ভুগছেন। না পাচ্ছেন শেয়ার বিক্রি করতে, না পাচ্ছেন কোনো লভ্যাংশ।

এ প্রসঙ্গে মো. শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, এসব কোম্পানি যে প্রতারক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তা না হলে তারা আমাদের সঙ্গে যোগযোগ করতে পারতেন। কোম্পানির অবস্থা ভালো-মন্দ হতেই পারে। কিন্তু তা জানার অধিকার ওই কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের রয়েছে। তা না করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিজেদের আড়াল করে রেখেছেন। কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে আমাদের অর্থ ফেরত দিলে যেমন কোম্পানির উচিত শিক্ষা হবে, তেমনি পুঁজিবাজারে এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সূত্র: শেয়ার বিজ্