০৫:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কখনো মাঠ, কখনো যুদ্ধ, অচেনা পথে তাদের ছুটে চলার গল্প

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৪৬ বার দেখা হয়েছে

দরজায় কড়া নেড়েছে উত্তাল মার্চ। ২৬ মার্চের সূর্যোদয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী।

বারুদের গন্ধ ভেসে বেড়ায় বাতাসে। কান পাতলে শোনা যায় আর্তনাদ। নির্মমভাবে আহত কেউ কাঁদছেন একটু চিকিৎসার আশায়, অথবা ঘোঙাচ্ছেন একটু ‘পানি’, ‘পানি’ করে। শুনছে না কেউ। পালাচ্ছে, ছুঁটছে নিরাপদ দূরত্বে। তখন একদল মেতে ওঠেছে যুদ্ধের নেশায়, ফুটবল পায়ে যুদ্ধ। ভাবনার শুরুটা সাইদুর রহমান প্যাটেলের মাথা থেকে। তিনি পরে বলেছেন, ‘বিছানায় এ-পাশ, ও পাশ করতে করতেই’ আসে সেই ভাবনা। এরপর সামনে আসে অনেক অনেক চ্যালেঞ্জ।

একে একে উতরাতে থাকল সব। প্যাটেলের সঙ্গী তখন আরও তিনজন, মহসিন, লুত্ফর রহমান ও মুজিবর রহমান ভুঁইয়া। তারা সবাই রাজনীতি বুঝেন, বুঝেন না খেলা। মৃদু আপত্তি তাই ভেসে আসে, গণহত্যার সময়ে ফুটবলটাকে মনে হয় ‘পাগলামো আর ছেলে মানুষী’। 

তাদের বুঝানো হয় একে একে। তারা বুঝেন। প্যাটেলকে সঙ্গে নিয়ে চলে যান চার নেতার একজন কামরুজ্জামানের কাছে। ৮ নম্বর থিয়েটার রোড, কলকাতা। সেখানে শুরু হয় স্বপ্ন বোনার প্রথম ধাপ। কামরুজ্জামান সব শুনে খুশি হন ভীষণ, নিজস্ব ক্ষমতাবলে তুলে দেন আটশ টাকা। খুশি হন আরেক সেনানী তাজউদ্দিন আহমেদও।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জন্য বরাদ্দ হয় চৌদ্দ হাজার টাকা। আগে-পরে চ্যালেঞ্জ থাকে অনেক। খেলোয়াড় যোগাড় করতে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। কেউ ক্যাম্পে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের, কেউ ছিলেন নিজের বাসায়। সব ছেঁড়েছুঁড়ে ঠিকানা হয় কলকাতার কারনানি ম্যানশনের ১৭ নম্বর ফ্ল্যাট।

এটা নিয়েও অনেক দ্বিধাদ্বন্দ ছিল, থাকার জায়গায় খরচ হবে কেমন। সবকিছু কাটিয়ে ওই বাসায় ফ্রিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে থাকতে দিয়েছিলেন আগে কুমিল্লার বাসিন্দা ও পরে কলকাতার ব্যবসায়ী আকবর আলী। পার্ক সার্কাসের ভেতরে এক মাঠে পাওয়া গিয়েছিল অনুশীলনের অনুমতি। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন ৪০জন।

নিশ্চয়ই সবার আলাদা আলাদা গল্প আছে। তার মধ্যে কাজী সালাউদ্দিনের গল্পটা বলা যাক। তার বাবা প্রতি রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত রেডিও শুনেন। সেখানেই সালাউদ্দিন শুনতে পান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা। রক্তে তার ফুটবল, শরীরজুড়ে যুদ্ধের নেশা। সুযোগটা মিস করেন কীভাবে!

ভয়ে ভয়ে গিয় বললেন তার মাকে, ছেলের এমন ‘পাগলামি কথাবার্তা’ শুনে মুখ ঘুরিয়ে ফেললেন মা, কথাবার্তা বন্ধ করে দিলেন। বাবা বললেন, ‘তোর কাছে যদি এটা ঠিক মনে হয়, তাহলে এটাই কর’। সালাউদ্দিন করলেন সেটাই। বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে কুমিল্লা হয়ে চলে গেলেন কলকাতায়।

টাকা আসল, এলো খেলোয়াড়ও। শুরু হলো মূল লড়াই। ততদিনে যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে বাংলাদেশে। মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। তাকে আনা হয়েছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নেতৃত্ব দিতে। ক্যাম্পে শেষ পর্যন্ত কতজন ছিলেন, সংশয় আছে সেটা নিয়েও।

অনেকে যুদ্ধে চলে এসেছিলেন, অনেকে পড়েছিলেন ইনজুরিতে। তবে প্রাথমিকভাবে রাখা হয়েছিল ৩০ জনকে। সব প্রস্তুতি শেষ করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল খেলতে নামল তাদের প্রথম ম্যাচে।

২৫ জুলাই, ১৯৭১। কৃষ্ণনগর স্টেডিয়াম।

নদীয়ায়, তাদেরই বিপক্ষে। কিন্তু সামনে হাজির হলো অন্য বিপত্তি। বাংলাদেশকে তখনো স্বীকৃতি দেয়নি ভারত। তাই বাজানো যাবে না জাতীয় সংগীত, উড়ানো যাবে না বাংলাদেশের পতাকা। জাকারিয়া পিন্টুরা সেটা মানছেন না।

নদীয়ার তখনকার জেলা প্রশাসক পড়লেন মহা ঝামেলায়। কী করবেন, বুঝে উঠতে পারলেন না। এর ভেতরেই গ্যালারি থেকে ভেসে আসল তীব্র শ্লেষ। শুরু হলো ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের চিৎকার। সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পুরো মেহেরপুরই যেন সেদিন চলে গিয়েছিল নদীয়ার ওই স্টেডিয়ামে’।

নদীয়ার ডিসি তখন সাহসী হলেন ভীষণ, তিনি বললেন, ‘আমাদের পুরো দেশ আপনাদের স্বাধীনতার সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। আমি তো সামান্য এক ডিসি। অনেক বছর চাকরি করেছি, এবার না হয় বাংলাদেশের জন্য চাকরিটা গেলই। তবু আমি অনুমতি দিলাম।’

প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে উড়ল বাংলাদেশের পতাকা, নদীয়ার ডিসি ডিকে ঘোষ ও জাকারিয়া পিন্টু দুজনে মিলে উড়ালেন সেটা। শুরু হলো ফুটবল পায়ে মুক্তির যুদ্ধ। সত্যিই চাকরিটা থাকেনি ডিকে ঘোষের, পরে অবশ্য সেটাই তাকে জাতীয় হিরো বানিয়েছে।

জাকারিয়া পিন্টুরা ঘুরতে থাকলেন ভারতের বিভিন্ন শহরে। খেললেন, তহবিল সংগ্রহ করলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। কত টাকা? তখনকার সময়ের ১৬ লাখ। এখন হলে হতো প্রায় কোটি। সবটাই গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে। তার চেয়েও বেশি লাভ যেটা হয়েছিল, দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। চারপাশে রব উঠেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার।

বহু বছর পর, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী যখন দাঁড়িয়ে দোরগোড়াতে। আজকের, পহেলা মার্চের সূর্যের সঙ্গে যখন আঁকিবুঁকি কাটছে, ভেদ করতে চাইছে সমস্ত ছায়ার দুর্বোধ্যতা। তখন কেউ পরপাড়ে ওই দলের, কেউ হয়তো তার বাসায়।

ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া চোখ, শক্তি কমে আসা পা দুটোর সঙ্গে একটা স্ক্র্যাচে ভর করে। খুঁজে ফিরছেন তাদের সেই পুরনো স্মৃতি। ভারতজুড়ে ঘুরে বেরিয়ে ১২ ম্যাচ জয়ের তৃপ্তি। আক্ষেপে কি পুড়ছেন তারাও?

এই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরপূর্তী, তবুও তাদের কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছেন যারা, তাদের স্বীকৃতিতে কিইবা আসে-যায়! তবুও দেশের বাইরে বাংলাদেশের পতাকা প্রথমবারের মতো উড়ালেন যারা, দিকে দিকে ছড়িয়ে দিলেন স্বাধীনতার স্পৃহা।

জনমত গড়লেন, টাকা তুললেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। কেউ কেউ মাঠ থেকে চলে এলেন সম্মুখ যুদ্ধে। তাদের একটু স্বীকৃতি দেওয়া তো এই রাষ্ট্রেরই দায়!

সেটা পান কিংবা না পান। কোনো এক কাক ডাকা ভোরের সঙ্গে যখন, এই দেশের স্বাধীনতা পা দেবে শতবর্ষে। তখনো ঠিক দুপুরের তপ্ত সূর্যের আলোর মতো উজ্জ্বল্য ছড়াবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের’ অবদান। জাকারিয়া পিন্টুরা নিশ্চয়ই তখনো হাসবেন, গর্বে আরও উঁচু হয়ে উঠবে মাথা গত পঞ্চাশ বছরের মতো!

তথ্যসূত্র : ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ইতিহাস বিকৃতকারীরা রাজাকারের চেয়েও অধম’ সাইদুর রহমান প্যাটেলের সাক্ষাৎকার, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন \’বড় ফুটবলার হবি তুই\’ জাকারিয়া পিন্টু সাক্ষাৎকার, ‘ফুটবল পায়ে মুক্তির যুদ্ধ’ নোমান মোহাম্মদ, উইকিপিডিয়া, ডুকমেন্টরি ‘মুক্তির জন্য ফুটবল’।

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

কখনো মাঠ, কখনো যুদ্ধ, অচেনা পথে তাদের ছুটে চলার গল্প

আপডেট: ০৭:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ মার্চ ২০২১

দরজায় কড়া নেড়েছে উত্তাল মার্চ। ২৬ মার্চের সূর্যোদয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী।

বারুদের গন্ধ ভেসে বেড়ায় বাতাসে। কান পাতলে শোনা যায় আর্তনাদ। নির্মমভাবে আহত কেউ কাঁদছেন একটু চিকিৎসার আশায়, অথবা ঘোঙাচ্ছেন একটু ‘পানি’, ‘পানি’ করে। শুনছে না কেউ। পালাচ্ছে, ছুঁটছে নিরাপদ দূরত্বে। তখন একদল মেতে ওঠেছে যুদ্ধের নেশায়, ফুটবল পায়ে যুদ্ধ। ভাবনার শুরুটা সাইদুর রহমান প্যাটেলের মাথা থেকে। তিনি পরে বলেছেন, ‘বিছানায় এ-পাশ, ও পাশ করতে করতেই’ আসে সেই ভাবনা। এরপর সামনে আসে অনেক অনেক চ্যালেঞ্জ।

একে একে উতরাতে থাকল সব। প্যাটেলের সঙ্গী তখন আরও তিনজন, মহসিন, লুত্ফর রহমান ও মুজিবর রহমান ভুঁইয়া। তারা সবাই রাজনীতি বুঝেন, বুঝেন না খেলা। মৃদু আপত্তি তাই ভেসে আসে, গণহত্যার সময়ে ফুটবলটাকে মনে হয় ‘পাগলামো আর ছেলে মানুষী’। 

তাদের বুঝানো হয় একে একে। তারা বুঝেন। প্যাটেলকে সঙ্গে নিয়ে চলে যান চার নেতার একজন কামরুজ্জামানের কাছে। ৮ নম্বর থিয়েটার রোড, কলকাতা। সেখানে শুরু হয় স্বপ্ন বোনার প্রথম ধাপ। কামরুজ্জামান সব শুনে খুশি হন ভীষণ, নিজস্ব ক্ষমতাবলে তুলে দেন আটশ টাকা। খুশি হন আরেক সেনানী তাজউদ্দিন আহমেদও।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জন্য বরাদ্দ হয় চৌদ্দ হাজার টাকা। আগে-পরে চ্যালেঞ্জ থাকে অনেক। খেলোয়াড় যোগাড় করতে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। কেউ ক্যাম্পে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের, কেউ ছিলেন নিজের বাসায়। সব ছেঁড়েছুঁড়ে ঠিকানা হয় কলকাতার কারনানি ম্যানশনের ১৭ নম্বর ফ্ল্যাট।

এটা নিয়েও অনেক দ্বিধাদ্বন্দ ছিল, থাকার জায়গায় খরচ হবে কেমন। সবকিছু কাটিয়ে ওই বাসায় ফ্রিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে থাকতে দিয়েছিলেন আগে কুমিল্লার বাসিন্দা ও পরে কলকাতার ব্যবসায়ী আকবর আলী। পার্ক সার্কাসের ভেতরে এক মাঠে পাওয়া গিয়েছিল অনুশীলনের অনুমতি। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন ৪০জন।

নিশ্চয়ই সবার আলাদা আলাদা গল্প আছে। তার মধ্যে কাজী সালাউদ্দিনের গল্পটা বলা যাক। তার বাবা প্রতি রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত রেডিও শুনেন। সেখানেই সালাউদ্দিন শুনতে পান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা। রক্তে তার ফুটবল, শরীরজুড়ে যুদ্ধের নেশা। সুযোগটা মিস করেন কীভাবে!

ভয়ে ভয়ে গিয় বললেন তার মাকে, ছেলের এমন ‘পাগলামি কথাবার্তা’ শুনে মুখ ঘুরিয়ে ফেললেন মা, কথাবার্তা বন্ধ করে দিলেন। বাবা বললেন, ‘তোর কাছে যদি এটা ঠিক মনে হয়, তাহলে এটাই কর’। সালাউদ্দিন করলেন সেটাই। বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে কুমিল্লা হয়ে চলে গেলেন কলকাতায়।

টাকা আসল, এলো খেলোয়াড়ও। শুরু হলো মূল লড়াই। ততদিনে যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে বাংলাদেশে। মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। তাকে আনা হয়েছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নেতৃত্ব দিতে। ক্যাম্পে শেষ পর্যন্ত কতজন ছিলেন, সংশয় আছে সেটা নিয়েও।

অনেকে যুদ্ধে চলে এসেছিলেন, অনেকে পড়েছিলেন ইনজুরিতে। তবে প্রাথমিকভাবে রাখা হয়েছিল ৩০ জনকে। সব প্রস্তুতি শেষ করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল খেলতে নামল তাদের প্রথম ম্যাচে।

২৫ জুলাই, ১৯৭১। কৃষ্ণনগর স্টেডিয়াম।

নদীয়ায়, তাদেরই বিপক্ষে। কিন্তু সামনে হাজির হলো অন্য বিপত্তি। বাংলাদেশকে তখনো স্বীকৃতি দেয়নি ভারত। তাই বাজানো যাবে না জাতীয় সংগীত, উড়ানো যাবে না বাংলাদেশের পতাকা। জাকারিয়া পিন্টুরা সেটা মানছেন না।

নদীয়ার তখনকার জেলা প্রশাসক পড়লেন মহা ঝামেলায়। কী করবেন, বুঝে উঠতে পারলেন না। এর ভেতরেই গ্যালারি থেকে ভেসে আসল তীব্র শ্লেষ। শুরু হলো ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের চিৎকার। সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পুরো মেহেরপুরই যেন সেদিন চলে গিয়েছিল নদীয়ার ওই স্টেডিয়ামে’।

নদীয়ার ডিসি তখন সাহসী হলেন ভীষণ, তিনি বললেন, ‘আমাদের পুরো দেশ আপনাদের স্বাধীনতার সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। আমি তো সামান্য এক ডিসি। অনেক বছর চাকরি করেছি, এবার না হয় বাংলাদেশের জন্য চাকরিটা গেলই। তবু আমি অনুমতি দিলাম।’

প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে উড়ল বাংলাদেশের পতাকা, নদীয়ার ডিসি ডিকে ঘোষ ও জাকারিয়া পিন্টু দুজনে মিলে উড়ালেন সেটা। শুরু হলো ফুটবল পায়ে মুক্তির যুদ্ধ। সত্যিই চাকরিটা থাকেনি ডিকে ঘোষের, পরে অবশ্য সেটাই তাকে জাতীয় হিরো বানিয়েছে।

জাকারিয়া পিন্টুরা ঘুরতে থাকলেন ভারতের বিভিন্ন শহরে। খেললেন, তহবিল সংগ্রহ করলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। কত টাকা? তখনকার সময়ের ১৬ লাখ। এখন হলে হতো প্রায় কোটি। সবটাই গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে। তার চেয়েও বেশি লাভ যেটা হয়েছিল, দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। চারপাশে রব উঠেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার।

বহু বছর পর, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী যখন দাঁড়িয়ে দোরগোড়াতে। আজকের, পহেলা মার্চের সূর্যের সঙ্গে যখন আঁকিবুঁকি কাটছে, ভেদ করতে চাইছে সমস্ত ছায়ার দুর্বোধ্যতা। তখন কেউ পরপাড়ে ওই দলের, কেউ হয়তো তার বাসায়।

ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া চোখ, শক্তি কমে আসা পা দুটোর সঙ্গে একটা স্ক্র্যাচে ভর করে। খুঁজে ফিরছেন তাদের সেই পুরনো স্মৃতি। ভারতজুড়ে ঘুরে বেরিয়ে ১২ ম্যাচ জয়ের তৃপ্তি। আক্ষেপে কি পুড়ছেন তারাও?

এই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরপূর্তী, তবুও তাদের কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছেন যারা, তাদের স্বীকৃতিতে কিইবা আসে-যায়! তবুও দেশের বাইরে বাংলাদেশের পতাকা প্রথমবারের মতো উড়ালেন যারা, দিকে দিকে ছড়িয়ে দিলেন স্বাধীনতার স্পৃহা।

জনমত গড়লেন, টাকা তুললেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। কেউ কেউ মাঠ থেকে চলে এলেন সম্মুখ যুদ্ধে। তাদের একটু স্বীকৃতি দেওয়া তো এই রাষ্ট্রেরই দায়!

সেটা পান কিংবা না পান। কোনো এক কাক ডাকা ভোরের সঙ্গে যখন, এই দেশের স্বাধীনতা পা দেবে শতবর্ষে। তখনো ঠিক দুপুরের তপ্ত সূর্যের আলোর মতো উজ্জ্বল্য ছড়াবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের’ অবদান। জাকারিয়া পিন্টুরা নিশ্চয়ই তখনো হাসবেন, গর্বে আরও উঁচু হয়ে উঠবে মাথা গত পঞ্চাশ বছরের মতো!

তথ্যসূত্র : ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ইতিহাস বিকৃতকারীরা রাজাকারের চেয়েও অধম’ সাইদুর রহমান প্যাটেলের সাক্ষাৎকার, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন \’বড় ফুটবলার হবি তুই\’ জাকারিয়া পিন্টু সাক্ষাৎকার, ‘ফুটবল পায়ে মুক্তির যুদ্ধ’ নোমান মোহাম্মদ, উইকিপিডিয়া, ডুকমেন্টরি ‘মুক্তির জন্য ফুটবল’।

আরও পড়ুন: