০৩:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

গুজবে দর বেড়েছে ইমাম বাটনের

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:১১:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২
  • / ৪২৬৭ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভূক্ত কোম্পানি ইমাম বাটনের উৎপাদন শুরু হয়েছে, এমন গুজব বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটির উৎপাদন শুরুর খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় ছয় কাযদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে ইমাম বাটনের উৎপাদন। কবে নাগাদ উৎপাদন শুরু করবে তারও কোন তথ্য জানায়নি কোম্পানিটি। তবুও একটি চক্র বাজারে গুজব ছড়িয়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়িয়ে নিজেদের ফায়দা লুটছে বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কোম্পানিটির শেয়ার দরে এমন অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে গত ১ মার্চ চিঠি দিয়েছে ডিএসই। চিঠির উত্তরে কোম্পানিটি জানিয়েছে, কোন অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ০৭ এপ্রিল ইমাম বাটনেরর শেয়ার ৪১ টাকা ৬০ পয়সায় ক্লোজিং হয়েছে। গত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২৪ টাকা থেকে কোম্পানিটির শেয়ার বড় লাফ দিয়েছে। দুই মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা বা ৭৪ শতাংশ।

একটি শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা শেয়ারনিউজকে বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোম্পানিটির উৎপাদন পুনরায় শুরু করার বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। এটি প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। তাছাড়া কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কম হওয়ায় শেয়ারটি নিয়ে কারসাজি করা খুবই সহজ হয়।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কারসাজিকারিদের ফাঁদে পড়ে বড় লাভের আশায় এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এটি চলমান কারসাজিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ইমাম বাটনের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি সেক্রেটারি অরবিন্দ নাগ বলেছেন, কোম্পানিটি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। রি-লঞ্চের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিদেশ থেকে কোম্পানিটি পরিচালনা করেছেন। বোর্ডের উৎপাদন পুনরায় শুরু করার কোন পরিকল্পনা নেই।

বাটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী ইমাম । তিনি চট্টগ্রাম ভিত্তিক ইমাম গ্রুপের মালিক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৮০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা ৫৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান।

এর আগে ২ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে মুলতুবি থাকা আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদ আলীকে দেশ ত্যাগ করতে বাধা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল।

২২ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে তিনি হঠাৎ ঘোষণা করেন যে তিনি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানিটির ৬৫০০০ শেয়ার কিনবেন। খবরটি প্রকাশের পর, ইমাম বাটনের শেয়ারের দাম সেদিন ৭.৪৫% বেড়েছে। কিন্তু ডিএসইর মতে, তিনি তার ঘোষণাকৃত সেই শেয়ার কিনেননি।

মোহাম্মদ আলী এক সময় ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। এই পদ ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সক্ষম হন। পরে এনসিসি ব্যাংকের মালিকানায় তার শেয়ার ২ শতাংশের কমে যাওয়ায় তাকে বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এদিকে, ইমাম বাটন ২০১১ সাল থেকে লোকসানে রয়েছে। ডিএসইতে প্রতিষ্ঠানটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করে। কারণ কোম্পানিটি ২০১১ সালে থেকেই তার শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কোম্পানিটি ৩১ মার্চ ২০২০ সাল থেকে কোনো আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি।

ইমাম বাটন ১৯৯৬ সালে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির কারখানাটি চট্টগ্রাম শহরের ফৌজদারহাট এলাকায় অবস্থিত।

কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বর্তমানে স্পন্সর এবং পরিচালকদের ৩০.০৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯.০১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৬০.৯১ শতাংশ,শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

x
English Version

গুজবে দর বেড়েছে ইমাম বাটনের

আপডেট: ০৬:১১:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভূক্ত কোম্পানি ইমাম বাটনের উৎপাদন শুরু হয়েছে, এমন গুজব বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটির উৎপাদন শুরুর খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় ছয় কাযদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে ইমাম বাটনের উৎপাদন। কবে নাগাদ উৎপাদন শুরু করবে তারও কোন তথ্য জানায়নি কোম্পানিটি। তবুও একটি চক্র বাজারে গুজব ছড়িয়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়িয়ে নিজেদের ফায়দা লুটছে বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কোম্পানিটির শেয়ার দরে এমন অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে গত ১ মার্চ চিঠি দিয়েছে ডিএসই। চিঠির উত্তরে কোম্পানিটি জানিয়েছে, কোন অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ০৭ এপ্রিল ইমাম বাটনেরর শেয়ার ৪১ টাকা ৬০ পয়সায় ক্লোজিং হয়েছে। গত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২৪ টাকা থেকে কোম্পানিটির শেয়ার বড় লাফ দিয়েছে। দুই মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা বা ৭৪ শতাংশ।

একটি শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা শেয়ারনিউজকে বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোম্পানিটির উৎপাদন পুনরায় শুরু করার বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। এটি প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। তাছাড়া কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কম হওয়ায় শেয়ারটি নিয়ে কারসাজি করা খুবই সহজ হয়।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কারসাজিকারিদের ফাঁদে পড়ে বড় লাভের আশায় এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এটি চলমান কারসাজিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ইমাম বাটনের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি সেক্রেটারি অরবিন্দ নাগ বলেছেন, কোম্পানিটি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। রি-লঞ্চের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিদেশ থেকে কোম্পানিটি পরিচালনা করেছেন। বোর্ডের উৎপাদন পুনরায় শুরু করার কোন পরিকল্পনা নেই।

বাটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী ইমাম । তিনি চট্টগ্রাম ভিত্তিক ইমাম গ্রুপের মালিক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৮০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা ৫৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান।

এর আগে ২ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে মুলতুবি থাকা আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদ আলীকে দেশ ত্যাগ করতে বাধা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল।

২২ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে তিনি হঠাৎ ঘোষণা করেন যে তিনি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানিটির ৬৫০০০ শেয়ার কিনবেন। খবরটি প্রকাশের পর, ইমাম বাটনের শেয়ারের দাম সেদিন ৭.৪৫% বেড়েছে। কিন্তু ডিএসইর মতে, তিনি তার ঘোষণাকৃত সেই শেয়ার কিনেননি।

মোহাম্মদ আলী এক সময় ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। এই পদ ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সক্ষম হন। পরে এনসিসি ব্যাংকের মালিকানায় তার শেয়ার ২ শতাংশের কমে যাওয়ায় তাকে বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এদিকে, ইমাম বাটন ২০১১ সাল থেকে লোকসানে রয়েছে। ডিএসইতে প্রতিষ্ঠানটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করে। কারণ কোম্পানিটি ২০১১ সালে থেকেই তার শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কোম্পানিটি ৩১ মার্চ ২০২০ সাল থেকে কোনো আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি।

ইমাম বাটন ১৯৯৬ সালে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির কারখানাটি চট্টগ্রাম শহরের ফৌজদারহাট এলাকায় অবস্থিত।

কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বর্তমানে স্পন্সর এবং পরিচালকদের ৩০.০৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯.০১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৬০.৯১ শতাংশ,শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/টিএ