০৭:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

নতুন মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে: ঢাকা চেম্বার

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৩৩:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪১৯১ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত ২০২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্বের মুদ্রানীতির ওপর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেছেন, মুদ্রানীতির কঠোর বাস্তবায়নই বেসরকারি ও আর্থিক খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘২০২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের জন্য সরকারি ঋণের প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭.৭ শতাংশ,যা গত ২০২২ অর্থবছরের জুন-ডিসেম্বর মেয়াদে ছিল ২৬.৬ শতাংশ। সরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতে নতুন ঋণ প্রবাহ ও বিনিয়োগকে সংকুচিত করতে পারে। সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে সরকারকে সুশাসন নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং পাশাপাশি সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে হবে। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারকে অপরিহার্য প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

ব্যারিস্টার সাত্তার মনে করেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে ঋণের সুদের হারের সীমা শিথিলকরণের প্রস্তাব এবং সঞ্চয়ের ওপর সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করার ফলে ব্যাংকিং খাতে সঞ্চয় ও তারল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ ক্রমান্বয়ে বাজারভিত্তিক এবং একক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার চালু করার প্রত্যাশাতে ব্যারিস্টার সাত্তার স্বস্তি প্রকাশ করেন। বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে এলসির মাধ্যমে আমদানি ব্যয় মেটানোর পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি জোরদার করার সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানান। এছাড়া, যে সব এলসির মূল্য ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি, সেগুলোকে তদন্তপূর্বক শোধ করা গেলে তা অর্থপাচার রোধে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। তবে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ডিসিসিআই সভাপতি প্রস্তাব করেন যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি মার্জিনের শর্তাবলি শিথিল করতে হবে এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি মার্জিনের শর্তাবলি শিথিল করলে তা স্থানীয় ও রফতানিমুখী শিল্পের উৎপাদনকে তরান্বিত করবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিতে সিএমএসএমই সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। কৃষি, সিএমএসএমই এবং আমদানি বিকল্প শিল্প খাত যেন সহজ শর্তে ঋণগ্রহণ পূর্বক বিনিয়োগ করতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করাকে ডিসিসিআই সভাপতি স্বাগত জানিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত সিএমএসএমইর দ্রুত পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করবে।

তবে ব্যারিস্টার সাত্তারের প্রত্যাশা ছিল যে, নন-পারফর্মিং লোন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও কিছু গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কারণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নন-পারফর্মিং লোন কমানো ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। কিভাবে নান-পারফর্মিং লোন কার্যকর ভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও সুনিদিষ্ট এবং স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে তা মুদ্রানীতির জন্য সহায়ক হতো। যেহেতু ক্রমবর্ধমান নন-পারফর্মিং লোন বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ এবং প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে, সে কারণে তিনি নন-পারফর্মিং লোনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষভাবে বিবেচেনা করার উপর তাগিদ দেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যাসগত ঋণ খেলাপি হওয়ার নিদিষ্ট কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারে এবং তা পুনঃরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মামলাগুলোর ব্যাকলগ কমাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করতে পারে। এর পাশাপাশি, তিনি কার্যকরভাবে এডিআর পদ্ধতি চালু করতে বিদ্যমান আইনগুলোর দ্রুত সংস্কারের প্রস্তাব করেন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব আইএমএফের বোর্ডে উঠছে ৩০ জানুয়ারি

বৃহৎ ও খেলাপি ঋণ কমানোর স্বার্থে প্রতিনিয়ত নজরদারির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘স্পেশাল মনিটরিং সেল’ গঠন করার সিদ্ধান্তকে ব্যারিস্টার সাত্তার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করেন। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দানের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার, স্থানীয় ব্যাংক কর্তৃক ফি গ্রহণ না করা এবং উত্তোলনপূর্ব অনুমোদন না রাখার ব্যবস্থাকে তিনি স্বাগত জানান।

সর্বোপরি, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশ কিছু ইতিবাচক দিক-নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে একটি সময়োপযোগী বাস্তবায়ন কৌশল মুদ্রাবাজার ও অর্থনীতির মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারে বলে ব্যারিস্টার সাত্তার আশা প্রকাশ করেন।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

নতুন মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে: ঢাকা চেম্বার

আপডেট: ০৪:৩৩:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত ২০২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্বের মুদ্রানীতির ওপর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেছেন, মুদ্রানীতির কঠোর বাস্তবায়নই বেসরকারি ও আর্থিক খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘২০২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের জন্য সরকারি ঋণের প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭.৭ শতাংশ,যা গত ২০২২ অর্থবছরের জুন-ডিসেম্বর মেয়াদে ছিল ২৬.৬ শতাংশ। সরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতে নতুন ঋণ প্রবাহ ও বিনিয়োগকে সংকুচিত করতে পারে। সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে সরকারকে সুশাসন নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং পাশাপাশি সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে হবে। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারকে অপরিহার্য প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

ব্যারিস্টার সাত্তার মনে করেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে ঋণের সুদের হারের সীমা শিথিলকরণের প্রস্তাব এবং সঞ্চয়ের ওপর সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করার ফলে ব্যাংকিং খাতে সঞ্চয় ও তারল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ ক্রমান্বয়ে বাজারভিত্তিক এবং একক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার চালু করার প্রত্যাশাতে ব্যারিস্টার সাত্তার স্বস্তি প্রকাশ করেন। বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে এলসির মাধ্যমে আমদানি ব্যয় মেটানোর পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি জোরদার করার সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানান। এছাড়া, যে সব এলসির মূল্য ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি, সেগুলোকে তদন্তপূর্বক শোধ করা গেলে তা অর্থপাচার রোধে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। তবে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ডিসিসিআই সভাপতি প্রস্তাব করেন যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি মার্জিনের শর্তাবলি শিথিল করতে হবে এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি মার্জিনের শর্তাবলি শিথিল করলে তা স্থানীয় ও রফতানিমুখী শিল্পের উৎপাদনকে তরান্বিত করবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিতে সিএমএসএমই সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। কৃষি, সিএমএসএমই এবং আমদানি বিকল্প শিল্প খাত যেন সহজ শর্তে ঋণগ্রহণ পূর্বক বিনিয়োগ করতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করাকে ডিসিসিআই সভাপতি স্বাগত জানিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত সিএমএসএমইর দ্রুত পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করবে।

তবে ব্যারিস্টার সাত্তারের প্রত্যাশা ছিল যে, নন-পারফর্মিং লোন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও কিছু গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কারণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নন-পারফর্মিং লোন কমানো ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। কিভাবে নান-পারফর্মিং লোন কার্যকর ভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও সুনিদিষ্ট এবং স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে তা মুদ্রানীতির জন্য সহায়ক হতো। যেহেতু ক্রমবর্ধমান নন-পারফর্মিং লোন বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ এবং প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে, সে কারণে তিনি নন-পারফর্মিং লোনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষভাবে বিবেচেনা করার উপর তাগিদ দেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যাসগত ঋণ খেলাপি হওয়ার নিদিষ্ট কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারে এবং তা পুনঃরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মামলাগুলোর ব্যাকলগ কমাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করতে পারে। এর পাশাপাশি, তিনি কার্যকরভাবে এডিআর পদ্ধতি চালু করতে বিদ্যমান আইনগুলোর দ্রুত সংস্কারের প্রস্তাব করেন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব আইএমএফের বোর্ডে উঠছে ৩০ জানুয়ারি

বৃহৎ ও খেলাপি ঋণ কমানোর স্বার্থে প্রতিনিয়ত নজরদারির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘স্পেশাল মনিটরিং সেল’ গঠন করার সিদ্ধান্তকে ব্যারিস্টার সাত্তার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করেন। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দানের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার, স্থানীয় ব্যাংক কর্তৃক ফি গ্রহণ না করা এবং উত্তোলনপূর্ব অনুমোদন না রাখার ব্যবস্থাকে তিনি স্বাগত জানান।

সর্বোপরি, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশ কিছু ইতিবাচক দিক-নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে একটি সময়োপযোগী বাস্তবায়ন কৌশল মুদ্রাবাজার ও অর্থনীতির মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারে বলে ব্যারিস্টার সাত্তার আশা প্রকাশ করেন।

ঢাকা/এসএ