ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদের দুর্নীতি: নথিপত্র তলবে দুদকের চিঠি
- আপডেট: ০৭:৫৯:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুন ২০২২
- / ৪১২২ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে নথিপত্র তলব করে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যেসব অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নামে-বেনামে জনগণের আমানতকৃত অর্থ লুটপাটসহ ঘুসের বিনিময়ে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ দেয়া ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ খরচ করা। অনুসন্ধানের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে চার ধরনের তথ্য তলব করেছে দুদক।
গত ৭ জুন ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, এর আগেও এ বিষয়ে রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সম্পূর্ণ রেকর্ডপত্র সরবরাহ না করায় দুদকের অনুসন্ধান কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
দুদক সূত্রে জানা গিয়েছে, এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে।
নথিপত্র তলব করে পাঠানো চিঠিতে দুদক বলেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার, পরিচালক পর্ষদ ও সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নামে-বেনামে জনগণের আমানতকৃত অর্থ লুটপাটসহ ঘুসের বিনিময়ে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ দেয়া ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৩০ লাখ ডলার খরচ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানেই ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে দুদক যেসব কাগজপত্র চেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক নিমতলী শাখায় মেসার্স ইপসু ট্রেডিংয়ের চলতি হিসাব খোলার আবেদন, ছবিসহ নমুনা স্বাক্ষর কার্ড, কেওয়াইসি ফরম এবং শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত টিপি ও চলতি হিসাব বিবরণী। ঢাকার কারওয়ান বাজারে ন্যাশনাল ব্যাংকের এনবিএল টাওয়ারে বিনিয়োগ ও নির্মাণসংক্রান্ত এবং চট্টগ্রামের এনবিএল টাওয়ার নির্মাণসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র। এসব রেকর্ডপত্রের মধ্যে রয়েছে প্রাক্কলন, টেন্ডার, ঠিকাদার নির্বাচন, কার্যাদেশ, কাজ সম্পাদন হওয়াসংক্রান্ত প্রত্যয়ন, বিল প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি।
এছাড়া যৌথ বিনিয়োগ হয়ে থাকলে তার চুক্তিপত্র ও ঋণ দেয়াসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র। যার মধ্যে রয়েছে প্রাক্কলন, টেন্ডার, ঠিকাদার নির্বাচন, কার্যাদেশ, কাজ সম্পাদনসংক্রান্ত প্রত্যয়ন ও বিল প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট নথি। রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার, জন হক সিকদার, মমতাজুল হক, মনিকা সিকদার খান, নাসিম হক সিকদার ও সৈয়দ কামরুল ইসলামের নামে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব রেকর্ডপত্রও চেয়েছে দুদক। এসব রেকর্ডের শুরু থেকে সবশেষ হিসাব বিবরণী ও টিপিসহ অন্যান্য কাগজপত্রও দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, এ-সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে বলা হয়েছে।
এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপককেও চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। সেখানে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদের সদস্যদের নামে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ড-সংক্রান্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে করা তদন্তসংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের পর্ষদ প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী মনোয়ারা সিকদারকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের একাধিক অভিযোগ নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে দুদক বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধান করেছে। তবে তার কোনোটিই মামলা পর্যন্ত গড়ায়নি। এর মধ্যে অনুসন্ধান পর্যায়ে নতুন নতুন অভিযোগও যোগ হয়েছে।
ঢাকা/টিএ