০৫:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পুঁজিবাজারের ১০ কোম্পানির নারী নির্বাহীর অভাবনীয় সফলতা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৩১:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ৪১৬৫ বার দেখা হয়েছে

বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯-এর ধাক্কায় দেশে টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে স্থবির ছিল সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ সময় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বাঘা বাঘা প্রধান নির্বাহীরও (সিইও) গলদ্ঘর্ম অবস্থা হয়েছে। তবে করোনার এ কঠিন সময়ে ভালোভাবেই ব্যবসা সামলেছেন বেশ কয়েকজন নারী সিইও।

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বর্তমানে ১০টি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী নারী। অবশ্য কোম্পানিগুলোর পর্ষদে নারী সদস্যদের সংখ্যা আরো বেশি। নারী সিইওর নেতৃত্বে পরিচালিত এসব কোম্পানি কভিডকালে কেমন ব্যবসা করেছে তা জানতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকাশিত বার্ষিক ও প্রান্তিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছে বণিক বার্তা। এতে দেখা গেছে, ১০টির মধ্যে চারটি কোম্পানি কভিড সংকটের মধ্যেও আগের বছরের তুলনায় ভালো ব্যবসা করেছে। বাকি ছয়টির মধ্যে একটির ব্যবসা কমেছে সামান্য। এছাড়া করোনার আঘাতে পাঁচটি কোম্পানির ব্যবসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমলেও এরই মধ্যে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চারে সমর্থ হয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর সিইও। সব মিলিয়ে করোনার ধাক্কা ভালোই সামলাচ্ছেন নারী সিইওরা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী চৌধুরী। চলতি বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে বার্জার। যদিও গত বছরের একই সময়ে ৭৫৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যবসা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। করোনার কারণে ব্যবসা কমলেও নিত্যনতুন কৌশল গ্রহণ করে সংকট মোকাবেলা করে চলেছেন কোম্পানিটির এমডি।

করোনার ধাক্কা কীভাবে সামলাচ্ছেন জানতে চাইলে রূপালী চৌধুরী বলেন, কভিড-১৯-এর অভিজ্ঞতা আমাদের সবার জন্য একেবারেই নতুন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পড়তে হয়নি। সাধারণ ছুটির সময়ে আমাদের ব্যবসা একেবারেই হয়নি। জুন থেকে ধীরে ধীরে কিছু ব্যবসা করতে থাকি। সংকট মোকাবেলায় আমাদের নিত্যনতুন কৌশল গ্রহণ করতে হয়েছে। যেমন করোনার এ সময়ে আমরা তালিকাভুক্ত ২০ হাজার রঙ মিস্ত্রিকে আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছি। তাদের স্যানিটাইজারসামগ্রীও দেয়া হয়েছে। এমনকি কারো বাড়ি রঙ করার আগে সেটি জীবাণুমুক্ত করে তারপর রঙ করার উদ্যোগও নিতে হয়েছে। পাশাপাশি এ সময়ে আমাদের যেসব স্থায়ী খরচ ছিল সেগুলো যাতে মেটানো যায় সেই পরিকল্পনামাফিক ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হয়েছে। ব্যয় নিয়ন্ত্রণও করতে হয়েছে। তবে কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানো হয়নি।

কভিড পরিস্থিতিতে নারী সিইওদের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে ১০ জন নারী সিইও রয়েছেন, এটি ভালো দিক। এ সংখ্যা আরো বাড়া উচিত। তবে ব্যবস্থাপনা প্রধানের পারফরম্যান্স পর্যালোচনার ক্ষেত্রে আমি লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে আগ্রহী নই। পুরুষ কিংবা নারী যা-ই হোন না কেন নেতা হিসেবে একজন সিইওকে সংকটকালীন পরিস্থিতিতে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে নানা ধরনের কৌশল নির্ধারণ করতে হয়। তবে এটা ঠিক আমাদের দেশের সামাজিক বাস্তবতায় নারীদের অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় এবং এ কারণে তাদের মধ্যে ধৈর্য ও সহ্যক্ষমতাও বেশি থাকে, যেটি ব্যবসার সংকটকালীন সময়ে কাজে দেয়।

কভিডের মধ্যেও এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে ১১৪ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যবসা বেড়েছে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের। ২০১০ সাল থেকেই কোম্পানিটির পর্ষদে রয়েছেন জেরিন করিম। এ বছর তিনি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনি ওরিয়ন ইনফিউশন্সের পর্ষদে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৯-২০ হিসাব বছরে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ৭৬৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে, যেখানে আগের হিসাব বছরে ব্যবসা হয়েছিল ৮৭০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। করোনার মধ্যেও চলতি বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ৫৩৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যদিও আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৪২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

কভিডকালের ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে কোম্পানিটির ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে জেরিন করিম বলেন, এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই কভিডের কারণে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ সময়ে কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, সাপ্লাই চেইনে ধস, যথাসময়ে নগদ অর্থের প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, অতি সাবধানী গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোসহ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। দেশব্যাপী লকডাউনের আর্থসামাজিক প্রভাব পড়েছে কোম্পানির ব্যবসায়িক পারফরম্যান্সের ওপরও। তবে এ সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে আমার সব সহকর্মীর পরিপূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি। সময়োপযোগী কৌশল বাস্তবায়নের কারণে কোম্পানির অবস্থা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।

২০১৯-২০ হিসাব বছরে ১১৯ কোটি ৬ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে ফরচুন সুজ, যেখানে আগের বছর ব্যবসা হয়েছিল ১৫৪ কোটি টাকা। আর কারোনার সংক্রমণ শুরুর পর এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। যদিও আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৮৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। কভিডের কারণে কোম্পানিটির ব্যবসা কমেছে ৪২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অবশ্য এ চ্যালেঞ্জিং সময়েও কোম্পানিটি ফোর্বসের এশিয়া অঞ্চলের সেরা ২০০ কোম্পানির তালিকায় উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে ফরচুন সুজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোকসানা রহমান বলেন, কভিডের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ফেব্রুয়ারির দিকেই আমরা সতর্ক হয়ে যাই। কারখানায় সব ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করি। আমাদের কারখানায় থাকা নিজস্ব কাপড় ব্যবহার করে মাস্ক প্রস্তুত করা হয়, যা শ্রমিকরাসহ আমরা নিজেরাও ব্যবহার করি। কভিডের প্রভাব মোকাবেলা বলতে তিন মাস আমরা পণ্য শিপমেন্ট করতে পারিনি। তবে কভিডকালে বিকল্প বাজার যেমন ভারতে রফতানি শুরু করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখা গেছে। কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করিনি। কভিড প্রেক্ষাপটে উদ্যোক্তা নারী হোক বা পুরুষ সবাইকে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ আমাদের অনেক উপকারে এসেছে। প্যাকেজ থেকে ঋণ নিয়ে আমাদের দুটি কারখানার শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন পরিশোধ করেছি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরামিট সিমেন্ট ও আরামিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন রুকমিলা জামান। পাশাপাশি তিনি ইউনাটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালকের দায়িত্বেও রয়েছেন। কভিডের মধ্যেও এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে তার নেতৃত্বে আরামিট সিমেন্ট ও আরামিট লিমিটেডের ব্যবসা খুব একটা খারাপ যায়নি। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৯-২০ হিসাব বছরে আরামিট সিমেন্ট ১৯৩ কোটি ২১ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে, যেখানে আগের হিসাব বছরে ব্যবসা হয়েছিল ১৮৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অবশ্য এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটি ৭৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে। আগের বছর একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৯৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে কভিডের কারণে কোম্পানিটির ব্যবসা কমেছে ২৪ কোটি ১২ লাখ টাকা।

অন্যদিকে আরামিট লিমিটেড ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে, যেখানে আগের বছর ব্যবসা হয়েছিল ৪৪ কোটি টাকার। এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে। আগের বছরের এ সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ২৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কভিডের এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা সামান্য হলেও বেড়েছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি মুন্নু সিরামিকস ও মুন্ন এগ্রো অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন আফরোজা খান। দীর্ঘ ১০ বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৭ সালে গ্রুপটির চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যবসার হাল ধরেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি একই সঙ্গে গ্রুপটির চেয়ারম্যান ও এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। মুন্নু গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হারুনার রশীদ খান মুন্নুর মৃত্যুর পর তিনিই গ্রুপটির সার্বিক ব্যবসা দেখভাল করছেন। গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানি মুন্নু সিরামিকস ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ৬০ কোটি ২৪ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে। এর আগের বছর ব্যবসা হয়েছিল ১০৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর কভিডের মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ লাখ টাকা বেশি। মুন্নু গ্রুপের তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবসা ২০১৯-২০ হিসাব বছর শেষে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছিল ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কভিডের সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা কমেছে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

২০০৯ সাল থেকেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ল্যাম্পসের পর্ষদে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত লতিফুর রহমানের মেয়ে সিমিন রহমান। এ বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাছাড়া তিনি ট্রান্সকম গ্রুপেরও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৯-২০ হিসাব বছরে বিডি ল্যাম্পস ৯৪ কোটি ২ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে, যেখানে আগের হিসাব বছরে ব্যবসা হয়েছিল ১৫৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যদিও আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কভিডের প্রভাবে এ সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা কমেছে ২২ কোটি ৭ লাখ টাকা।

ওষুধ বিক্রি ও ধরন নিয়ে নিয়মিত জরিপ চালায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি ও ক্লিনিক্যাল গবেষণার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি ওষুধ বিক্রির বাজারে ৭০ শতাংশই করছে শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর জুনে শেষ হওয়া এক বছরে মোট বিক্রি বিবেচনায় অষ্টম অবস্থানের প্রতিষ্ঠান হলো এসকায়েফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। দেশে ওষুধ বিক্রির বাজারে প্রতিষ্ঠানটির অংশ ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। জুন শেষে এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। এক বছরে ওষুধ বিক্রি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বর্তমানে এসকায়েফের এমডি ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিমিন রহমান।

কভিডের মধ্যেও চলতি বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে সবচেয়ে বেশি ৪৭৩ কোটি ১১ লাখ টাকার ব্যবসা বেড়েছে সামিট পাওয়ারের। এ সময়ে কোম্পানিটির ১ হাজার ৮৫৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ১ হাজার ৩৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সামিট পাওয়ারের মূল প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে ২০১৬ সাল থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন আয়েশা আজিজ খান। তিনি সামিট গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার আজিজ খানের মেয়ে। গ্রুপটির বেশকিছু বিদ্যুৎ প্রকল্পের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। প্রথম প্রজন্মের দিকনির্দেশনায় গ্রুপটির ব্যবসায় সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে তার।

বীমা খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে ১৮৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করেছে। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় হয়েছিল ২১৫ কোটি ২ লাখ টাকা। কভিডের কারণে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় কমেছে ২৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটির এমডি ও সিইওর দায়িত্বে রয়েছেন ফারজানা চৌধুরী। তিনি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা নাসির এ চৌধুরীর মেয়ে। দেশের সাধারণ বীমা খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রীন ডেল্টার অগ্রযাত্রায় সিইও হিসেবে ফারজানা চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাম্বি ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি পদে দায়িত্ব পালন করছেন নওরীন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তিনি কোম্পানিটির চেয়ারম্যান আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের স্ত্রী। কোম্পানিটির সর্বশেষ বার্ষিক ও প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদন এখনো প্রস্তুত না হওয়ার কারণে এর আর্থিক পারফরম্যান্সের তথ্য পাওয়া যায়নি। সূত্র: বণিক বার্তা

শেয়ার করুন

x
English Version

পুঁজিবাজারের ১০ কোম্পানির নারী নির্বাহীর অভাবনীয় সফলতা

আপডেট: ১১:৩১:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২০

বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯-এর ধাক্কায় দেশে টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে স্থবির ছিল সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ সময় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বাঘা বাঘা প্রধান নির্বাহীরও (সিইও) গলদ্ঘর্ম অবস্থা হয়েছে। তবে করোনার এ কঠিন সময়ে ভালোভাবেই ব্যবসা সামলেছেন বেশ কয়েকজন নারী সিইও।

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বর্তমানে ১০টি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী নারী। অবশ্য কোম্পানিগুলোর পর্ষদে নারী সদস্যদের সংখ্যা আরো বেশি। নারী সিইওর নেতৃত্বে পরিচালিত এসব কোম্পানি কভিডকালে কেমন ব্যবসা করেছে তা জানতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকাশিত বার্ষিক ও প্রান্তিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছে বণিক বার্তা। এতে দেখা গেছে, ১০টির মধ্যে চারটি কোম্পানি কভিড সংকটের মধ্যেও আগের বছরের তুলনায় ভালো ব্যবসা করেছে। বাকি ছয়টির মধ্যে একটির ব্যবসা কমেছে সামান্য। এছাড়া করোনার আঘাতে পাঁচটি কোম্পানির ব্যবসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমলেও এরই মধ্যে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চারে সমর্থ হয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর সিইও। সব মিলিয়ে করোনার ধাক্কা ভালোই সামলাচ্ছেন নারী সিইওরা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী চৌধুরী। চলতি বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে বার্জার। যদিও গত বছরের একই সময়ে ৭৫৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যবসা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। করোনার কারণে ব্যবসা কমলেও নিত্যনতুন কৌশল গ্রহণ করে সংকট মোকাবেলা করে চলেছেন কোম্পানিটির এমডি।

করোনার ধাক্কা কীভাবে সামলাচ্ছেন জানতে চাইলে রূপালী চৌধুরী বলেন, কভিড-১৯-এর অভিজ্ঞতা আমাদের সবার জন্য একেবারেই নতুন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পড়তে হয়নি। সাধারণ ছুটির সময়ে আমাদের ব্যবসা একেবারেই হয়নি। জুন থেকে ধীরে ধীরে কিছু ব্যবসা করতে থাকি। সংকট মোকাবেলায় আমাদের নিত্যনতুন কৌশল গ্রহণ করতে হয়েছে। যেমন করোনার এ সময়ে আমরা তালিকাভুক্ত ২০ হাজার রঙ মিস্ত্রিকে আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছি। তাদের স্যানিটাইজারসামগ্রীও দেয়া হয়েছে। এমনকি কারো বাড়ি রঙ করার আগে সেটি জীবাণুমুক্ত করে তারপর রঙ করার উদ্যোগও নিতে হয়েছে। পাশাপাশি এ সময়ে আমাদের যেসব স্থায়ী খরচ ছিল সেগুলো যাতে মেটানো যায় সেই পরিকল্পনামাফিক ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হয়েছে। ব্যয় নিয়ন্ত্রণও করতে হয়েছে। তবে কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানো হয়নি।

কভিড পরিস্থিতিতে নারী সিইওদের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে ১০ জন নারী সিইও রয়েছেন, এটি ভালো দিক। এ সংখ্যা আরো বাড়া উচিত। তবে ব্যবস্থাপনা প্রধানের পারফরম্যান্স পর্যালোচনার ক্ষেত্রে আমি লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে আগ্রহী নই। পুরুষ কিংবা নারী যা-ই হোন না কেন নেতা হিসেবে একজন সিইওকে সংকটকালীন পরিস্থিতিতে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে নানা ধরনের কৌশল নির্ধারণ করতে হয়। তবে এটা ঠিক আমাদের দেশের সামাজিক বাস্তবতায় নারীদের অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় এবং এ কারণে তাদের মধ্যে ধৈর্য ও সহ্যক্ষমতাও বেশি থাকে, যেটি ব্যবসার সংকটকালীন সময়ে কাজে দেয়।

কভিডের মধ্যেও এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে ১১৪ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যবসা বেড়েছে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের। ২০১০ সাল থেকেই কোম্পানিটির পর্ষদে রয়েছেন জেরিন করিম। এ বছর তিনি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনি ওরিয়ন ইনফিউশন্সের পর্ষদে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৯-২০ হিসাব বছরে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ৭৬৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে, যেখানে আগের হিসাব বছরে ব্যবসা হয়েছিল ৮৭০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। করোনার মধ্যেও চলতি বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ৫৩৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যদিও আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৪২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

কভিডকালের ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে কোম্পানিটির ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে জেরিন করিম বলেন, এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই কভিডের কারণে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ সময়ে কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, সাপ্লাই চেইনে ধস, যথাসময়ে নগদ অর্থের প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, অতি সাবধানী গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোসহ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। দেশব্যাপী লকডাউনের আর্থসামাজিক প্রভাব পড়েছে কোম্পানির ব্যবসায়িক পারফরম্যান্সের ওপরও। তবে এ সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে আমার সব সহকর্মীর পরিপূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি। সময়োপযোগী কৌশল বাস্তবায়নের কারণে কোম্পানির অবস্থা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।

২০১৯-২০ হিসাব বছরে ১১৯ কোটি ৬ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে ফরচুন সুজ, যেখানে আগের বছর ব্যবসা হয়েছিল ১৫৪ কোটি টাকা। আর কারোনার সংক্রমণ শুরুর পর এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। যদিও আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৮৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। কভিডের কারণে কোম্পানিটির ব্যবসা কমেছে ৪২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অবশ্য এ চ্যালেঞ্জিং সময়েও কোম্পানিটি ফোর্বসের এশিয়া অঞ্চলের সেরা ২০০ কোম্পানির তালিকায় উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে ফরচুন সুজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোকসানা রহমান বলেন, কভিডের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ফেব্রুয়ারির দিকেই আমরা সতর্ক হয়ে যাই। কারখানায় সব ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করি। আমাদের কারখানায় থাকা নিজস্ব কাপড় ব্যবহার করে মাস্ক প্রস্তুত করা হয়, যা শ্রমিকরাসহ আমরা নিজেরাও ব্যবহার করি। কভিডের প্রভাব মোকাবেলা বলতে তিন মাস আমরা পণ্য শিপমেন্ট করতে পারিনি। তবে কভিডকালে বিকল্প বাজার যেমন ভারতে রফতানি শুরু করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখা গেছে। কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করিনি। কভিড প্রেক্ষাপটে উদ্যোক্তা নারী হোক বা পুরুষ সবাইকে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ আমাদের অনেক উপকারে এসেছে। প্যাকেজ থেকে ঋণ নিয়ে আমাদের দুটি কারখানার শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন পরিশোধ করেছি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরামিট সিমেন্ট ও আরামিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন রুকমিলা জামান। পাশাপাশি তিনি ইউনাটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালকের দায়িত্বেও রয়েছেন। কভিডের মধ্যেও এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে তার নেতৃত্বে আরামিট সিমেন্ট ও আরামিট লিমিটেডের ব্যবসা খুব একটা খারাপ যায়নি। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৯-২০ হিসাব বছরে আরামিট সিমেন্ট ১৯৩ কোটি ২১ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে, যেখানে আগের হিসাব বছরে ব্যবসা হয়েছিল ১৮৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অবশ্য এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটি ৭৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে। আগের বছর একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৯৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে কভিডের কারণে কোম্পানিটির ব্যবসা কমেছে ২৪ কোটি ১২ লাখ টাকা।

অন্যদিকে আরামিট লিমিটেড ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে, যেখানে আগের বছর ব্যবসা হয়েছিল ৪৪ কোটি টাকার। এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে। আগের বছরের এ সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ২৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কভিডের এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা সামান্য হলেও বেড়েছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি মুন্নু সিরামিকস ও মুন্ন এগ্রো অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন আফরোজা খান। দীর্ঘ ১০ বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৭ সালে গ্রুপটির চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যবসার হাল ধরেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি একই সঙ্গে গ্রুপটির চেয়ারম্যান ও এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। মুন্নু গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হারুনার রশীদ খান মুন্নুর মৃত্যুর পর তিনিই গ্রুপটির সার্বিক ব্যবসা দেখভাল করছেন। গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানি মুন্নু সিরামিকস ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ৬০ কোটি ২৪ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে। এর আগের বছর ব্যবসা হয়েছিল ১০৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর কভিডের মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ লাখ টাকা বেশি। মুন্নু গ্রুপের তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবসা ২০১৯-২০ হিসাব বছর শেষে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছিল ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কভিডের সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা কমেছে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

২০০৯ সাল থেকেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ল্যাম্পসের পর্ষদে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত লতিফুর রহমানের মেয়ে সিমিন রহমান। এ বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাছাড়া তিনি ট্রান্সকম গ্রুপেরও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৯-২০ হিসাব বছরে বিডি ল্যাম্পস ৯৪ কোটি ২ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে, যেখানে আগের হিসাব বছরে ব্যবসা হয়েছিল ১৫৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা হয়েছে ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যদিও আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কভিডের প্রভাবে এ সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা কমেছে ২২ কোটি ৭ লাখ টাকা।

ওষুধ বিক্রি ও ধরন নিয়ে নিয়মিত জরিপ চালায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি ও ক্লিনিক্যাল গবেষণার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি ওষুধ বিক্রির বাজারে ৭০ শতাংশই করছে শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর জুনে শেষ হওয়া এক বছরে মোট বিক্রি বিবেচনায় অষ্টম অবস্থানের প্রতিষ্ঠান হলো এসকায়েফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। দেশে ওষুধ বিক্রির বাজারে প্রতিষ্ঠানটির অংশ ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। জুন শেষে এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। এক বছরে ওষুধ বিক্রি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বর্তমানে এসকায়েফের এমডি ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিমিন রহমান।

কভিডের মধ্যেও চলতি বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে সবচেয়ে বেশি ৪৭৩ কোটি ১১ লাখ টাকার ব্যবসা বেড়েছে সামিট পাওয়ারের। এ সময়ে কোম্পানিটির ১ হাজার ৮৫৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ব্যবসা হয়েছিল ১ হাজার ৩৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সামিট পাওয়ারের মূল প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে ২০১৬ সাল থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন আয়েশা আজিজ খান। তিনি সামিট গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার আজিজ খানের মেয়ে। গ্রুপটির বেশকিছু বিদ্যুৎ প্রকল্পের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। প্রথম প্রজন্মের দিকনির্দেশনায় গ্রুপটির ব্যবসায় সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে তার।

বীমা খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে ১৮৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করেছে। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় হয়েছিল ২১৫ কোটি ২ লাখ টাকা। কভিডের কারণে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় কমেছে ২৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটির এমডি ও সিইওর দায়িত্বে রয়েছেন ফারজানা চৌধুরী। তিনি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা নাসির এ চৌধুরীর মেয়ে। দেশের সাধারণ বীমা খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রীন ডেল্টার অগ্রযাত্রায় সিইও হিসেবে ফারজানা চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাম্বি ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি পদে দায়িত্ব পালন করছেন নওরীন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তিনি কোম্পানিটির চেয়ারম্যান আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের স্ত্রী। কোম্পানিটির সর্বশেষ বার্ষিক ও প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদন এখনো প্রস্তুত না হওয়ার কারণে এর আর্থিক পারফরম্যান্সের তথ্য পাওয়া যায়নি। সূত্র: বণিক বার্তা