০১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফারদিন হত্যা: ঘাতকরা চিহ্নিত

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০২:৪৬:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪১৯০ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের হত্যা রহস্যের জট খুলে যাচ্ছে। ডেমরা-রূপগঞ্জ সংলগ্ন চনপাড়া বস্তির একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত বলে তথ্য পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চনপাড়ায় এক নারীর বাসাসংলগ্ন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। তাঁর বাসাটি বস্তির ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি সেই ওয়ার্ডের মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। মাদক স্পটে গিয়ে ফাঁদে পড়েন ফারদিন। এরপর তাঁকে জিম্মি করা হয়েছিল। গোয়েন্দারা আরেকটি নতুন আলামত পেয়েছেন। ফারদিনের সঙ্গে আরও এক তরুণও ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তাঁর নাম পলাশ বলে জানা গেছে। একটি সূত্র বলছে- তাঁর বাড়ি রামপুরায়। পলাশও হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওই দিনের পর থেকে পলাশের খোঁজ মিলছে না। তবে এসব নিশ্চিত হওয়ার জন্য একাধিক সংস্থা গতকাল বিশদ অনুসন্ধান শুরু করেছে।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ফারদিনের ঘটনায় চনপাড়ার মাদকের চক্রে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের সঙ্গে চনপাড়ার ওই নারীর সখ্য দীর্ঘদিনের। র‌্যাবের অপারেশনে নিহত রাশেদুল ইসলাম শাহিন ওরফে সিটি শাহিনের বাসার কাছাকাছি থেকে ওই নারী এলাকায় মাদক কারবার করে থাকে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

প্রযুক্তিগত তদন্তে আরও কিছু নতুন তথ্য মিলেছে। সেখানে দেখা যায়, ফারদিন তাঁর মোবাইল সেটে দুটি অপারেটরের সিমকার্ড ব্যবহার করতেন। গ্রামীণের সিমকার্ড ৪ নভেম্বর বিকেল ৪টার পর থেকে আর সচল ছিল না। ১১টার দিকে তাঁর রবির সিমকার্ড বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পৌনে ২টা পর্যন্ত তিনি মেসেঞ্জারে এক বান্ধবীর সঙ্গে চ্যাটিং করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই রাতে ফারদিনের পাশাপাশি এমন কেউ ছিলেন যাঁর ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে চ্যাটিং করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যা: বান্ধবী বুশরা গ্রেপ্তার

পুলিশের অন্তত দু’জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফারদিনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বুশরার সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে কোনো তথ্য তাঁরা পাননি। ৪ নভেম্বর রাত সোয়া ১০টার দিকে বুশরাকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় নামিয়ে দিয়েছেন ফারদিন। এরপর বুশরা তাঁর বাসায় চলে যান। ওই রাতে তিনি আর বের হননি। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্তে বুশরার সঙ্গে অন্য কারও সন্দেহজনক ফোনালাপ বা মেসেঞ্জারে চ্যাটিং পাওয়া যায়নি। মামলা দায়ের করার আগে কয়েক দফায় ফারদিনের বাবাকে বুশরার ভূমিকার ব্যাপারে বোঝানো হয়েছিল। তবে ফারদিনের বাবা তাঁকে আসামি করার ব্যাপারে অটল ছিলেন।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তিগত তদন্তে তাঁরা জানতে পারেন, ঘটনার রাতে ফারদিন কেরানীগঞ্জ, জনসন রোড, এরপর ডেমরা এবং রূপগঞ্জ-সংলগ্ন চনপাড়ায় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, মোটরসাইকেলে এসব জায়গায় যেতে পারেন তিনি। আর সেই মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন পলাশ।

এসব ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পেয়েই পুলিশ, র‌্যাব ও নৌপুলিশ চনপাড়ায় অভিযান চালিয়েছে। ঘটনার রাতের বিবরণ দিয়ে বস্তির একাধিক বাসিন্দা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান, তাঁরা ঘটনাস্থলে তুমুল হট্টগোল ও হৈচৈয়ের শব্দ শুনেছেন। ওই জায়গাটি নবকিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে।

সেখানে কয়েকজনকে বসে মাদক সেবন করতেও দেখা গেছে। এরপরই বস্তিসংলগ্ন শীতলক্ষ্যার ৫ নম্বর অফিসঘাট এলাকায় তাদের চলে যেতে দেখেন।

আরও পড়ুন: ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

৪ এপ্রিল সেখানে ফারদিনের যাতায়াতের সূত্র পাওয়া গেলেও তাঁর পরিবার ও সহপাঠীদের ভাষ্য- ‘ফারদিনকে কখনও তাঁরা সিগারেট খেতেও দেখেননি’। তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্তে বের করার চেষ্টা চলছে, চনপাড়া এলাকায় কতবার ফারদিনের যাতায়াত ছিল। এ দিকে সর্বশেষ গতকাল শুক্রবারও সেখানে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে তারা মুখ খোলেনি। ফারদিনের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ বিন নূর তাজিম বলেন, ‘তাঁর ভাইয়ের মাদকের সঙ্গে সংশ্নিষ্টতার প্রশ্নই আসে না। মাদক কেন, সিগারেট খেতেও কখনও দেখা যায়নি তাঁকে। চনপাড়ায় কেন গিয়েছিলেন, এটা পুলিশ তদন্ত করে বের করুক। কেউ তাঁকে অপহরণও করতে পারে।’ ফারদিনের বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘নারীদের প্রতি ফারদিনের শ্রদ্ধা ছিল অনুকরণীয়। তাঁর সঙ্গে নারীঘটিত কোনো ঝামেলা থাকার কথা নয়।’

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা এবং রহস্য উন্মোচনে নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারাই জড়িত থাকুক তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় র‌্যাব ছায়াতদন্ত করছে। বুয়েট ছাত্রের নিহতের ঘটনায় সার্বিক বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

ফারদিন হত্যা: ঘাতকরা চিহ্নিত

আপডেট: ০২:৪৬:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের হত্যা রহস্যের জট খুলে যাচ্ছে। ডেমরা-রূপগঞ্জ সংলগ্ন চনপাড়া বস্তির একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত বলে তথ্য পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চনপাড়ায় এক নারীর বাসাসংলগ্ন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। তাঁর বাসাটি বস্তির ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি সেই ওয়ার্ডের মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। মাদক স্পটে গিয়ে ফাঁদে পড়েন ফারদিন। এরপর তাঁকে জিম্মি করা হয়েছিল। গোয়েন্দারা আরেকটি নতুন আলামত পেয়েছেন। ফারদিনের সঙ্গে আরও এক তরুণও ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তাঁর নাম পলাশ বলে জানা গেছে। একটি সূত্র বলছে- তাঁর বাড়ি রামপুরায়। পলাশও হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওই দিনের পর থেকে পলাশের খোঁজ মিলছে না। তবে এসব নিশ্চিত হওয়ার জন্য একাধিক সংস্থা গতকাল বিশদ অনুসন্ধান শুরু করেছে।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ফারদিনের ঘটনায় চনপাড়ার মাদকের চক্রে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের সঙ্গে চনপাড়ার ওই নারীর সখ্য দীর্ঘদিনের। র‌্যাবের অপারেশনে নিহত রাশেদুল ইসলাম শাহিন ওরফে সিটি শাহিনের বাসার কাছাকাছি থেকে ওই নারী এলাকায় মাদক কারবার করে থাকে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

প্রযুক্তিগত তদন্তে আরও কিছু নতুন তথ্য মিলেছে। সেখানে দেখা যায়, ফারদিন তাঁর মোবাইল সেটে দুটি অপারেটরের সিমকার্ড ব্যবহার করতেন। গ্রামীণের সিমকার্ড ৪ নভেম্বর বিকেল ৪টার পর থেকে আর সচল ছিল না। ১১টার দিকে তাঁর রবির সিমকার্ড বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পৌনে ২টা পর্যন্ত তিনি মেসেঞ্জারে এক বান্ধবীর সঙ্গে চ্যাটিং করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই রাতে ফারদিনের পাশাপাশি এমন কেউ ছিলেন যাঁর ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে চ্যাটিং করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যা: বান্ধবী বুশরা গ্রেপ্তার

পুলিশের অন্তত দু’জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফারদিনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বুশরার সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে কোনো তথ্য তাঁরা পাননি। ৪ নভেম্বর রাত সোয়া ১০টার দিকে বুশরাকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় নামিয়ে দিয়েছেন ফারদিন। এরপর বুশরা তাঁর বাসায় চলে যান। ওই রাতে তিনি আর বের হননি। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্তে বুশরার সঙ্গে অন্য কারও সন্দেহজনক ফোনালাপ বা মেসেঞ্জারে চ্যাটিং পাওয়া যায়নি। মামলা দায়ের করার আগে কয়েক দফায় ফারদিনের বাবাকে বুশরার ভূমিকার ব্যাপারে বোঝানো হয়েছিল। তবে ফারদিনের বাবা তাঁকে আসামি করার ব্যাপারে অটল ছিলেন।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তিগত তদন্তে তাঁরা জানতে পারেন, ঘটনার রাতে ফারদিন কেরানীগঞ্জ, জনসন রোড, এরপর ডেমরা এবং রূপগঞ্জ-সংলগ্ন চনপাড়ায় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, মোটরসাইকেলে এসব জায়গায় যেতে পারেন তিনি। আর সেই মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন পলাশ।

এসব ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পেয়েই পুলিশ, র‌্যাব ও নৌপুলিশ চনপাড়ায় অভিযান চালিয়েছে। ঘটনার রাতের বিবরণ দিয়ে বস্তির একাধিক বাসিন্দা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান, তাঁরা ঘটনাস্থলে তুমুল হট্টগোল ও হৈচৈয়ের শব্দ শুনেছেন। ওই জায়গাটি নবকিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে।

সেখানে কয়েকজনকে বসে মাদক সেবন করতেও দেখা গেছে। এরপরই বস্তিসংলগ্ন শীতলক্ষ্যার ৫ নম্বর অফিসঘাট এলাকায় তাদের চলে যেতে দেখেন।

আরও পড়ুন: ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

৪ এপ্রিল সেখানে ফারদিনের যাতায়াতের সূত্র পাওয়া গেলেও তাঁর পরিবার ও সহপাঠীদের ভাষ্য- ‘ফারদিনকে কখনও তাঁরা সিগারেট খেতেও দেখেননি’। তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্তে বের করার চেষ্টা চলছে, চনপাড়া এলাকায় কতবার ফারদিনের যাতায়াত ছিল। এ দিকে সর্বশেষ গতকাল শুক্রবারও সেখানে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে তারা মুখ খোলেনি। ফারদিনের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ বিন নূর তাজিম বলেন, ‘তাঁর ভাইয়ের মাদকের সঙ্গে সংশ্নিষ্টতার প্রশ্নই আসে না। মাদক কেন, সিগারেট খেতেও কখনও দেখা যায়নি তাঁকে। চনপাড়ায় কেন গিয়েছিলেন, এটা পুলিশ তদন্ত করে বের করুক। কেউ তাঁকে অপহরণও করতে পারে।’ ফারদিনের বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘নারীদের প্রতি ফারদিনের শ্রদ্ধা ছিল অনুকরণীয়। তাঁর সঙ্গে নারীঘটিত কোনো ঝামেলা থাকার কথা নয়।’

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা এবং রহস্য উন্মোচনে নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারাই জড়িত থাকুক তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় র‌্যাব ছায়াতদন্ত করছে। বুয়েট ছাত্রের নিহতের ঘটনায় সার্বিক বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা/এসএ