০২:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বছরজুড়ে নতুন কমিশনের ২৫ উদ্যোগ ও শেয়ারবাজারের ইউটার্ণ!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:১০:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মে ২০২১
  • / ৪২২০ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: হাটি হাটি পা পা করে এক বছর পার করলো অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বধীন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন এই কমিশনের উদ্যোগী কর্মকাণ্ড ও কর্ম তৎপরতায় এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে গতি ফিরে এসেছে। একইসঙ্গে হারোনো আস্থা ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে নতুন কমিশন তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে বর্তমান কমিশনের আমলেই দেশের শেয়ারবাজার সারা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

শেয়ারবাজারের আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রায় দেড়শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে নতুন কমিশন। তবে করোনা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতি ও বিভিন্ন পারিপার্শিক কারণে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে নতুন কমিশনকে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বোচ্চ সহযোগীতায় শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করে কমিশন।

এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নে গত এক বছরে নতুন কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর মধ্যে- করোনা পরিস্থিতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে শেয়ারবাজার খোলা রাখা, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হারের ব্যবধান ১৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসা কোম্পানির শেয়ার আনুপাতিক সমবন্টন, আইপিও প্রক্রিয়া সহজীকরণ, স্বচ্ছতা নিশ্চিতে একাধিক আইপিও বাতিল, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ও এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না থাকা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, জেড ক্যাটাগরি ও ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটের (ওটিসি) কোম্পানির জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার ও সার্কিট ব্রেকার আরোপ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ, লভ্যাংশ না দেওয়া ও নামমাত্র লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, সকল তফসিলি ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ, বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশে ও দেশের অভ্যন্তরে ব্রোকার হাউজের শাখা হিসেবে ডিজিটাল বুথ স্থাপনের উদ্যোগ, শেয়ারবাজারের ব্র্যান্ডিং ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন দেশে রোড শো আয়োজন, বিএসইসিসহ স্টক এক্সচেঞ্জদ্বয়কে ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ, বন্ড মার্কেট শক্তিশালীকরণ, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) শক্তিশালীকরণ, ব্রোকারেজ হাউজের সংখ্যা বাড়াতে নতুন ট্রেক ইস্যুকরণ, করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালি এজিএম বা ইজিএম বা পর্ষদ সভা করার উদ্যোগ, স্মল ক্যাপ বোর্ডে নতুন কোম্পানির অনুমোদন, বাজার মধ্যস্থতাকারীদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ এবং শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে বিভিন্ন আইন সংস্কার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া উল্লেখযোগ্য।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে গত বছরে ১৭ মে বিএসইসি তথা শেয়ারবাজারের হাল ধরেন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে বিএসইসিতে কাজ যোগদান করেন সাবেক শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন্স সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এছাড়া তৎকালীন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন খোন্দকার কামালুজ্জামান।

গত এক বছরের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন কমিশনের গত এক বছরের মেয়াদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সকল সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন বেড়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মে) লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করছে ৫ হাজার ৮২৯ পয়েন্টে। আর গত বছরের ১৭ মে ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজার ৬০ পয়েন্টে। এই হিসেবে জানাচ্ছে এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ১ হাজার ৭৬৯ পয়েন্ট বা ৪৩ শতাংশ।

এ সময় শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস অবস্থান করছে ১ হাজার ২৮১ পয়েন্টে। গত বছরের ১৭ মে ডিএসইএস সূচক ছিল ৯৫১ পয়েন্টে। এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৩৩০ পয়েন্ট বা ৩৫ শতাংশ।

একই সঙ্গে ব্ল চিপ নামে খ্যাত সূচক ডিএস৩০ অবস্থান করছে ২ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে। আর গত বছরের ১৭ মে ডিএস৩০ সূচক ছিল ১ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে। এক বছরের ব্যবধানে ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ৮২৯ পয়েন্ট বা ৬১ শতাংশ।

মঙ্গলবার (১৮ মে) ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। আর গত বছরের ১৭ মে লেনদেন ছিল ১৪৩ কোটি টাকা। এই দুই সময়ের বিয়োগফল জানাচ্ছে এক বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বা ১১০২ শতাংশ।

১৮ মে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। গত বছরের ১৭ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এই হিসেবও বাজার মূলধনের উন্নতির কথাই জানাচ্ছে। এই সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা বা ৫৬ শতাংশ।

গত এক বছরের বিএসইসির ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘নতুন এ কমিশন কাজে যোগদানের পর থেকে যথেষ্ট ভালো কাজ করেছে। তারা যথেষ্ট উদ্যোগী ও তৎপর। কিছু কিছু বিষয় কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও, তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিলো। বিশেষ করে তারা পাবলিক ইস্যু রুলসে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) সমবন্টন সংক্রান্ত যে বিধান পরিবর্তন করেছে, যা শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। এছাড়া দুর্বল ও অনুৎপাদনশীল তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে নতুন কমিশন। এটা কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তাছাড়া করোনাকালে লকডাউনের মধ্যেও শেয়ারবাজার খোলা রাখেছে কমিশন। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।’

আবু আহমেদ জানান, ‘ইতিমধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হারের ব্যবধান ১৫ শতাংশ রাখার ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠিয়েছে কমিশন। এ বিষয়টি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিশন যেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে জোরালো ভাবে আলোচনা করে। নতুন কমিশনের আমলে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, রবি আজিয়াটা ও এনআরবিসি ব্যাংক- এ তিনটি ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। করপোরেট কর প্রদানে ছাড় দিলে শেয়ারবাজারে আরো ভালো কোম্পানি আসবে।’

বিএসইসির কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এক কথায় এক্সিলেন্ট। শেয়ারবাজারকে ভালো রাখার জন্য কমিশন গত এক বছরে তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কাজে যোগদানের শুরু থেকেই তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এ কমিশন সেই পরীক্ষায় সফলও হয়েছে। আগামী দিনে শেয়ারবাজারকে নিয়ে তাদের যে লক্ষ্য আছে, তা অবশ্যই সফল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই হিসাবে কমিশনের গত এক বছরের সার্বিক কার্যক্রমকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’

বিএসইসির কার্যক্রম সম্পর্কে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শেয়ারবাজারকে গতিশীল ও বেগবান করার জন্য যা যা করণীয় দরকার ছিল, নতুন এ কমিশন গত এক বছরে সেসব কিছুই করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজার তার হারানো গতি ফিরে পেয়েছে। কমিশনের কাছে এটাই প্রত্যাশা, তাদের মেয়াদ পর্যন্ত গতিশীল এ কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এ কমিশনের সর্বত মঙ্গল কামনা করছি।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, ‘বিএসইসির চেয়ারম্যান ও নতুন কমিশনদের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে শেয়ারবাজার ঘুরে দাড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও স্বস্তি ফিরেছে। একইসঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে দেশি ও বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলে বর্তমান কমিশনের হাত ধরেই দেশের শেয়ারবাজার বিশ্বমানে পরিণত হবে।’

ঢাকা/জেএইচ

শেয়ার করুন

x
English Version

বছরজুড়ে নতুন কমিশনের ২৫ উদ্যোগ ও শেয়ারবাজারের ইউটার্ণ!

আপডেট: ০১:১০:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: হাটি হাটি পা পা করে এক বছর পার করলো অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বধীন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন এই কমিশনের উদ্যোগী কর্মকাণ্ড ও কর্ম তৎপরতায় এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে গতি ফিরে এসেছে। একইসঙ্গে হারোনো আস্থা ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে নতুন কমিশন তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে বর্তমান কমিশনের আমলেই দেশের শেয়ারবাজার সারা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

শেয়ারবাজারের আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রায় দেড়শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে নতুন কমিশন। তবে করোনা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতি ও বিভিন্ন পারিপার্শিক কারণে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে নতুন কমিশনকে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বোচ্চ সহযোগীতায় শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করে কমিশন।

এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নে গত এক বছরে নতুন কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর মধ্যে- করোনা পরিস্থিতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে শেয়ারবাজার খোলা রাখা, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হারের ব্যবধান ১৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসা কোম্পানির শেয়ার আনুপাতিক সমবন্টন, আইপিও প্রক্রিয়া সহজীকরণ, স্বচ্ছতা নিশ্চিতে একাধিক আইপিও বাতিল, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ও এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না থাকা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, জেড ক্যাটাগরি ও ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটের (ওটিসি) কোম্পানির জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার ও সার্কিট ব্রেকার আরোপ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ, লভ্যাংশ না দেওয়া ও নামমাত্র লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, সকল তফসিলি ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ, বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশে ও দেশের অভ্যন্তরে ব্রোকার হাউজের শাখা হিসেবে ডিজিটাল বুথ স্থাপনের উদ্যোগ, শেয়ারবাজারের ব্র্যান্ডিং ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন দেশে রোড শো আয়োজন, বিএসইসিসহ স্টক এক্সচেঞ্জদ্বয়কে ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ, বন্ড মার্কেট শক্তিশালীকরণ, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) শক্তিশালীকরণ, ব্রোকারেজ হাউজের সংখ্যা বাড়াতে নতুন ট্রেক ইস্যুকরণ, করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালি এজিএম বা ইজিএম বা পর্ষদ সভা করার উদ্যোগ, স্মল ক্যাপ বোর্ডে নতুন কোম্পানির অনুমোদন, বাজার মধ্যস্থতাকারীদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ এবং শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে বিভিন্ন আইন সংস্কার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া উল্লেখযোগ্য।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে গত বছরে ১৭ মে বিএসইসি তথা শেয়ারবাজারের হাল ধরেন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে বিএসইসিতে কাজ যোগদান করেন সাবেক শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন্স সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এছাড়া তৎকালীন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন খোন্দকার কামালুজ্জামান।

গত এক বছরের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন কমিশনের গত এক বছরের মেয়াদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সকল সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন বেড়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মে) লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করছে ৫ হাজার ৮২৯ পয়েন্টে। আর গত বছরের ১৭ মে ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজার ৬০ পয়েন্টে। এই হিসেবে জানাচ্ছে এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ১ হাজার ৭৬৯ পয়েন্ট বা ৪৩ শতাংশ।

এ সময় শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস অবস্থান করছে ১ হাজার ২৮১ পয়েন্টে। গত বছরের ১৭ মে ডিএসইএস সূচক ছিল ৯৫১ পয়েন্টে। এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৩৩০ পয়েন্ট বা ৩৫ শতাংশ।

একই সঙ্গে ব্ল চিপ নামে খ্যাত সূচক ডিএস৩০ অবস্থান করছে ২ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে। আর গত বছরের ১৭ মে ডিএস৩০ সূচক ছিল ১ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে। এক বছরের ব্যবধানে ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ৮২৯ পয়েন্ট বা ৬১ শতাংশ।

মঙ্গলবার (১৮ মে) ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। আর গত বছরের ১৭ মে লেনদেন ছিল ১৪৩ কোটি টাকা। এই দুই সময়ের বিয়োগফল জানাচ্ছে এক বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বা ১১০২ শতাংশ।

১৮ মে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। গত বছরের ১৭ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এই হিসেবও বাজার মূলধনের উন্নতির কথাই জানাচ্ছে। এই সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা বা ৫৬ শতাংশ।

গত এক বছরের বিএসইসির ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘নতুন এ কমিশন কাজে যোগদানের পর থেকে যথেষ্ট ভালো কাজ করেছে। তারা যথেষ্ট উদ্যোগী ও তৎপর। কিছু কিছু বিষয় কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও, তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিলো। বিশেষ করে তারা পাবলিক ইস্যু রুলসে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) সমবন্টন সংক্রান্ত যে বিধান পরিবর্তন করেছে, যা শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। এছাড়া দুর্বল ও অনুৎপাদনশীল তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে নতুন কমিশন। এটা কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তাছাড়া করোনাকালে লকডাউনের মধ্যেও শেয়ারবাজার খোলা রাখেছে কমিশন। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।’

আবু আহমেদ জানান, ‘ইতিমধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হারের ব্যবধান ১৫ শতাংশ রাখার ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠিয়েছে কমিশন। এ বিষয়টি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিশন যেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে জোরালো ভাবে আলোচনা করে। নতুন কমিশনের আমলে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, রবি আজিয়াটা ও এনআরবিসি ব্যাংক- এ তিনটি ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। করপোরেট কর প্রদানে ছাড় দিলে শেয়ারবাজারে আরো ভালো কোম্পানি আসবে।’

বিএসইসির কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এক কথায় এক্সিলেন্ট। শেয়ারবাজারকে ভালো রাখার জন্য কমিশন গত এক বছরে তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কাজে যোগদানের শুরু থেকেই তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এ কমিশন সেই পরীক্ষায় সফলও হয়েছে। আগামী দিনে শেয়ারবাজারকে নিয়ে তাদের যে লক্ষ্য আছে, তা অবশ্যই সফল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই হিসাবে কমিশনের গত এক বছরের সার্বিক কার্যক্রমকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’

বিএসইসির কার্যক্রম সম্পর্কে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শেয়ারবাজারকে গতিশীল ও বেগবান করার জন্য যা যা করণীয় দরকার ছিল, নতুন এ কমিশন গত এক বছরে সেসব কিছুই করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজার তার হারানো গতি ফিরে পেয়েছে। কমিশনের কাছে এটাই প্রত্যাশা, তাদের মেয়াদ পর্যন্ত গতিশীল এ কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এ কমিশনের সর্বত মঙ্গল কামনা করছি।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, ‘বিএসইসির চেয়ারম্যান ও নতুন কমিশনদের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে শেয়ারবাজার ঘুরে দাড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও স্বস্তি ফিরেছে। একইসঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে দেশি ও বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলে বর্তমান কমিশনের হাত ধরেই দেশের শেয়ারবাজার বিশ্বমানে পরিণত হবে।’

ঢাকা/জেএইচ