০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিনিয়োগকারীদের গলা কেটে ফায়দা লুটছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:৫৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২
  • / ৪২৬৬ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনার সম্পূর্ণ দায় বিনিয়োগকারীর। এক্ষেত্রে ঋণদাতা মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের কোনো দায় নেই। এ কারণে নিজস্ব পোর্টফলিওতে বিনিয়োগের চেয়ে ঋণ বিতরণে আগ্রহ বাড়ছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর। এভাবে বিনিয়োগকারীদের গলা কেটে মুনাফা লুটছে মার্চেন্ট ব্যাংক। অন্যদিকে ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

কিন্তু মূলধনের কতটুকু মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে, এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। ফলে মূলধনের অর্থ নিজেদের পোর্টফলিওর চেয়ে মার্জিন ঋণ দিতেই আগ্রহী হয়ে উঠছে তারা।

জানা গেছে, ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করলেও শেয়ারের দর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে গেলে গ্রাহকের অনুমোদন ছাড়াই বিক্রির ক্ষমতা রাখে মার্চেন্ট ব্যাংক। এভাবে ঝুঁকির দায়ে অংশীদার না হলেও মুনাফার পুরোটা নিতে পারে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ঋণের অর্থে শেয়ার কিনলে বিনিয়োগকারীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়, কিন্তু যথাযথভাবে বিশ্লেষণ না করে শেয়ারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। শেয়ারে বিনিয়োগের বিপরীতে লাভ-লোকসান যা হোক, কোনো অবস্থাতেই মার্চেন্ট ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারের বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার।

বাংলাদেশের পুঁজিাবাজারে বর্তমানে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টির মালিকানা হচ্ছে ব্যাংকের। সাবসিডিয়ারি হওয়ার কারণে এর পোর্টফলিওর তথ্য ব্যাংককে জানাতে হয়। পুঁজিবাজারে থাকা ৩৫টি মার্চেন্ট ব্যাংকের পোর্টফলিও ও মার্জিন ঋণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ ৩৫টি মার্চেন্ট ব্যাংকের পুঁজিবাজারে পোর্টফলিও বিনিয়োগের পরিমাণ হচ্ছে তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তাদের বিনিয়োগ সীমা হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। কিন্তু তাদের মার্জিন ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এভাবে নিজস্ব পোর্টফলিওতে বিনিয়োগের চেয়ে তিনগুণ বেশি মার্জিন ঋণ দিয়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নীতিমালায় মার্চেন্ট ব্যাংককে বলা হয় মার্কেট ইন্টারমেডিয়টারি বা মার্কেট মেকার। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবলের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০ অনুযায়ী, ‘পোর্টফলিও ম্যানেজার ইক্যুইটি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে চাইলে বিনিয়োগের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ তার হইবে।’

বিএসইসির দেয়া বিধিমালার ৩৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা আছে, ‘প্রত্যেক মার্চেন্ট ব্যাংকার (পোর্টফলিও ম্যানেজার), উহার মাক্কেলকে মার্জিন ঋণ প্রদান করতে পারবে।’ সেখানে উল্লেখ থাকা শর্তে বলা হয়েছে, ‘মার্জিন ঋণ হিসাব পরিচালনার ঝুঁকি একান্তই গ্রাহকের। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পূর্বনির্ধারিত কোনো আয় প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকিতে পারিবে না।’

আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘মার্জিন ঋণ হিসাবের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ইক্যুইটি কত হইবে, তা মার্চেন্ট ব্যাংকার (পোর্টফলিও ম্যানেজার ) নির্ধারণ করিবে।’ আর মার্জিন লোন বা ঋণ দেয়ার বিষয়ে বিধিমালায় উল্লেখ করা আছে, ‘মার্চেন্ট ব্যাংকার (পোর্টফলিও ম্যানেজার) কমিশন কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত হারে মার্জিন প্রদান করিবে।’ এখানে বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে বিএসইসি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মার্জিন ঋণ ও ইক্যুইটি অনুপাত বজায় রাখার জন্য ন্যূনতম মার্জিন প্রয়োগ-সংক্রান্ত নিজস্ব পদ্ধতি নির্ধারণ করিবে যাহাতে বাধ্যতামূলক বিক্রয় এড়ানো যায়।’

ন্যূনতম মার্জিন ঋণ নিশ্চিতে নিজস্ব মার্জিন গাইডলাইন প্রস্তুত ও মেনে চলতে হবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে। সেখানে ন্যূনতম মার্জিন প্রয়োগ, বাধ্যতামূলক বিক্রয়, ক্রয়ক্ষমতা পদ্ধতি, আন্ডার মার্জিন হিসাবের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তহবিল ও সিকিউরিটি প্রত্যাহার পদ্ধতি উল্লেখ থাকবে। এ ক্ষেত্রে নিজের ও গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মার্চেন্ট ব্যাংক পোর্টফলিও বহুমুখীকরণ করতে নীজস্ব নীতি গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু এসব নিশ্চিত না করেই তারা ঋণ দিচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংক তার নিজস্ব সিদ্ধান্তে বিনিয়োগ করতে পারবে। তার সোর্স অব ফান্ড কোথা থেকে, কত হবে, ঋণ করে আনবে কি না, এটা তার বিষয়। তার অর্থ পোর্টফলিওতে কত অংশ বা কতটুকু ইক্যুইটি বা ঋণ দেবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া নেই। এটি তাদের বিষয়; এটা নির্দিষ্ট করে দেয়াও ঠিক হবে না।’

মূলত নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য বাজারে আনা, পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা ও আন্ডাররাইটিং করাই মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান কাজ। এর সঙ্গে করপোরেট পরামর্শ ও মার্জিন দেয়ার কাজটিও তারা করছেন। বাজারকে সহায়তা করাও তাদের কাজ। কিন্তু সেটি না করে ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এতে ঝুঁকিতে চলে যাচ্ছে বাজার ও বিনিয়োগকারীরা।

বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো গ্রাহককে ১ অনুপাত দশমিক ৮ শতাংশে মার্জিন দেয়ার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিএসইসি। অর্থাৎ ১০০ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা ঋণ নিতে পারবে একজন বিনিয়োগকারী। ঋণের বিপরীতে শেয়ার বা প্রয়োজনীয় জামানত রাখতে হবে মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের।

মার্জিন ঋণ থাকা বিও হিসাবের শেয়ার যেকোনো সময় বিক্রি (ফোর্স সেল) করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান। এতে শেয়ারের বাজার মূল্য ঝুঁকির জায়গায় গেলেই ঋণের অর্থ তুলে নিতে শুরু করে মার্চেন্ট ব্যাংক। এভাবে ঋণদাতা নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও ঝুঁকিতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। শুধু ঋণের অর্থ পরিশোধ নয়, এর সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের দিতে হয় সার্ভিস চার্জ ও সুদ।

বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলে, ‘এ বিষয়ে আমরা কোনো গ্রাহককে বাধ্য করছি না। আমরা মার্জিন ঋণকে উৎসাহিত করি না, মার্জিন ঋণকে নিরুৎসাহিত করি। এতে রিস্ক থাকে। কিন্তু আমি যদি মার্জিন ঋণ না দিই তাহলে গ্রাহক আসবে না, বড় আকারের পোর্টফলিওগুলো আসবে না। যারা মার্জিন ঋণ বেশি দিতে পারে, তাদের কাছেই গ্রাহকরা যাচ্ছেন।’

নিজস্ব পোর্টফলিওতে বিনিয়োগের চেয়ে মার্জিন ঋণে বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এমন বিষয়ে মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘মার্জিন ঋণ মার্চেন্ট ব্যাংকের চেয়ে ব্রোকারেজ হাউস বেশি দিচ্ছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের কয়েকগুণ বেশি ঋণ দিচ্ছে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান। বড় বড় ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের হিউজ পরিমাণ মার্জিন ঋণ রয়েছে। প্রতিদিন শীর্ষ ট্রেডার দেখলেই বোঝা যায়।’

মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার ক্রয়কারী এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘মার্জিন ঋণ নিয়ে এখন ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এক বছর ধরে বিনিয়োগের কোনো লাভ দেখছি না। প্রতিনিয়ত মূলধন কমছে।’ মার্জিন ঋণের প্রতি আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত তাদের উৎসাহেই ঝুঁকি নিয়েছিলাম। কিন্তু পোর্টফলিওতে শেয়ার ক্রয়ের সময়ে তাদের বিচক্ষণ পরামর্শ পাইনি। দুর্বল শেয়ারও কেনা হয়েছে। এতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’- সূত্র: শেয়ার বিজ

শেয়ার করুন

x
English Version

বিনিয়োগকারীদের গলা কেটে ফায়দা লুটছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো

আপডেট: ০১:৫৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনার সম্পূর্ণ দায় বিনিয়োগকারীর। এক্ষেত্রে ঋণদাতা মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের কোনো দায় নেই। এ কারণে নিজস্ব পোর্টফলিওতে বিনিয়োগের চেয়ে ঋণ বিতরণে আগ্রহ বাড়ছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর। এভাবে বিনিয়োগকারীদের গলা কেটে মুনাফা লুটছে মার্চেন্ট ব্যাংক। অন্যদিকে ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

কিন্তু মূলধনের কতটুকু মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে, এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। ফলে মূলধনের অর্থ নিজেদের পোর্টফলিওর চেয়ে মার্জিন ঋণ দিতেই আগ্রহী হয়ে উঠছে তারা।

জানা গেছে, ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করলেও শেয়ারের দর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে গেলে গ্রাহকের অনুমোদন ছাড়াই বিক্রির ক্ষমতা রাখে মার্চেন্ট ব্যাংক। এভাবে ঝুঁকির দায়ে অংশীদার না হলেও মুনাফার পুরোটা নিতে পারে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ঋণের অর্থে শেয়ার কিনলে বিনিয়োগকারীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়, কিন্তু যথাযথভাবে বিশ্লেষণ না করে শেয়ারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। শেয়ারে বিনিয়োগের বিপরীতে লাভ-লোকসান যা হোক, কোনো অবস্থাতেই মার্চেন্ট ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারের বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার।

বাংলাদেশের পুঁজিাবাজারে বর্তমানে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টির মালিকানা হচ্ছে ব্যাংকের। সাবসিডিয়ারি হওয়ার কারণে এর পোর্টফলিওর তথ্য ব্যাংককে জানাতে হয়। পুঁজিবাজারে থাকা ৩৫টি মার্চেন্ট ব্যাংকের পোর্টফলিও ও মার্জিন ঋণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ ৩৫টি মার্চেন্ট ব্যাংকের পুঁজিবাজারে পোর্টফলিও বিনিয়োগের পরিমাণ হচ্ছে তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তাদের বিনিয়োগ সীমা হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। কিন্তু তাদের মার্জিন ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এভাবে নিজস্ব পোর্টফলিওতে বিনিয়োগের চেয়ে তিনগুণ বেশি মার্জিন ঋণ দিয়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নীতিমালায় মার্চেন্ট ব্যাংককে বলা হয় মার্কেট ইন্টারমেডিয়টারি বা মার্কেট মেকার। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবলের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০ অনুযায়ী, ‘পোর্টফলিও ম্যানেজার ইক্যুইটি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে চাইলে বিনিয়োগের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ তার হইবে।’

বিএসইসির দেয়া বিধিমালার ৩৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা আছে, ‘প্রত্যেক মার্চেন্ট ব্যাংকার (পোর্টফলিও ম্যানেজার), উহার মাক্কেলকে মার্জিন ঋণ প্রদান করতে পারবে।’ সেখানে উল্লেখ থাকা শর্তে বলা হয়েছে, ‘মার্জিন ঋণ হিসাব পরিচালনার ঝুঁকি একান্তই গ্রাহকের। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পূর্বনির্ধারিত কোনো আয় প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকিতে পারিবে না।’

আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘মার্জিন ঋণ হিসাবের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ইক্যুইটি কত হইবে, তা মার্চেন্ট ব্যাংকার (পোর্টফলিও ম্যানেজার ) নির্ধারণ করিবে।’ আর মার্জিন লোন বা ঋণ দেয়ার বিষয়ে বিধিমালায় উল্লেখ করা আছে, ‘মার্চেন্ট ব্যাংকার (পোর্টফলিও ম্যানেজার) কমিশন কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত হারে মার্জিন প্রদান করিবে।’ এখানে বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে বিএসইসি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মার্জিন ঋণ ও ইক্যুইটি অনুপাত বজায় রাখার জন্য ন্যূনতম মার্জিন প্রয়োগ-সংক্রান্ত নিজস্ব পদ্ধতি নির্ধারণ করিবে যাহাতে বাধ্যতামূলক বিক্রয় এড়ানো যায়।’

ন্যূনতম মার্জিন ঋণ নিশ্চিতে নিজস্ব মার্জিন গাইডলাইন প্রস্তুত ও মেনে চলতে হবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে। সেখানে ন্যূনতম মার্জিন প্রয়োগ, বাধ্যতামূলক বিক্রয়, ক্রয়ক্ষমতা পদ্ধতি, আন্ডার মার্জিন হিসাবের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তহবিল ও সিকিউরিটি প্রত্যাহার পদ্ধতি উল্লেখ থাকবে। এ ক্ষেত্রে নিজের ও গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মার্চেন্ট ব্যাংক পোর্টফলিও বহুমুখীকরণ করতে নীজস্ব নীতি গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু এসব নিশ্চিত না করেই তারা ঋণ দিচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংক তার নিজস্ব সিদ্ধান্তে বিনিয়োগ করতে পারবে। তার সোর্স অব ফান্ড কোথা থেকে, কত হবে, ঋণ করে আনবে কি না, এটা তার বিষয়। তার অর্থ পোর্টফলিওতে কত অংশ বা কতটুকু ইক্যুইটি বা ঋণ দেবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া নেই। এটি তাদের বিষয়; এটা নির্দিষ্ট করে দেয়াও ঠিক হবে না।’

মূলত নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য বাজারে আনা, পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা ও আন্ডাররাইটিং করাই মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান কাজ। এর সঙ্গে করপোরেট পরামর্শ ও মার্জিন দেয়ার কাজটিও তারা করছেন। বাজারকে সহায়তা করাও তাদের কাজ। কিন্তু সেটি না করে ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এতে ঝুঁকিতে চলে যাচ্ছে বাজার ও বিনিয়োগকারীরা।

বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো গ্রাহককে ১ অনুপাত দশমিক ৮ শতাংশে মার্জিন দেয়ার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিএসইসি। অর্থাৎ ১০০ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা ঋণ নিতে পারবে একজন বিনিয়োগকারী। ঋণের বিপরীতে শেয়ার বা প্রয়োজনীয় জামানত রাখতে হবে মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের।

মার্জিন ঋণ থাকা বিও হিসাবের শেয়ার যেকোনো সময় বিক্রি (ফোর্স সেল) করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান। এতে শেয়ারের বাজার মূল্য ঝুঁকির জায়গায় গেলেই ঋণের অর্থ তুলে নিতে শুরু করে মার্চেন্ট ব্যাংক। এভাবে ঋণদাতা নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও ঝুঁকিতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। শুধু ঋণের অর্থ পরিশোধ নয়, এর সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের দিতে হয় সার্ভিস চার্জ ও সুদ।

বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলে, ‘এ বিষয়ে আমরা কোনো গ্রাহককে বাধ্য করছি না। আমরা মার্জিন ঋণকে উৎসাহিত করি না, মার্জিন ঋণকে নিরুৎসাহিত করি। এতে রিস্ক থাকে। কিন্তু আমি যদি মার্জিন ঋণ না দিই তাহলে গ্রাহক আসবে না, বড় আকারের পোর্টফলিওগুলো আসবে না। যারা মার্জিন ঋণ বেশি দিতে পারে, তাদের কাছেই গ্রাহকরা যাচ্ছেন।’

নিজস্ব পোর্টফলিওতে বিনিয়োগের চেয়ে মার্জিন ঋণে বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এমন বিষয়ে মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘মার্জিন ঋণ মার্চেন্ট ব্যাংকের চেয়ে ব্রোকারেজ হাউস বেশি দিচ্ছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের কয়েকগুণ বেশি ঋণ দিচ্ছে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান। বড় বড় ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের হিউজ পরিমাণ মার্জিন ঋণ রয়েছে। প্রতিদিন শীর্ষ ট্রেডার দেখলেই বোঝা যায়।’

মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার ক্রয়কারী এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘মার্জিন ঋণ নিয়ে এখন ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এক বছর ধরে বিনিয়োগের কোনো লাভ দেখছি না। প্রতিনিয়ত মূলধন কমছে।’ মার্জিন ঋণের প্রতি আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত তাদের উৎসাহেই ঝুঁকি নিয়েছিলাম। কিন্তু পোর্টফলিওতে শেয়ার ক্রয়ের সময়ে তাদের বিচক্ষণ পরামর্শ পাইনি। দুর্বল শেয়ারও কেনা হয়েছে। এতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’- সূত্র: শেয়ার বিজ