মূলধন সংকটে ১১ ব্যাংক
- আপডেট: ১২:৪৬:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১
- / ৪২০৪ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: মহামারিতে বিশেষ সুবিধা এবং নানা ছাড়ের পরও মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ১১টি ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি, বিশেষায়িত দুটি ও বেসরকারি চারটি ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের মার্চ শেষে মূলধন সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বেসরকারি খাতের এবি, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ও পদ্মা ব্যাংক। এছাড়াও রয়েছে বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিয়ে ঋণ দেয়। ঋণ খারাপ হয়ে পড়লে সে অনুপাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আবার খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ ন্যূনতম মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এ শর্ত পূরণে ডিসেম্বর শেষে ব্যর্থ হয়েছে উপরোক্ত ১১টি ব্যাংক।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে ব্যাংকিং খাত ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এটিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছে। এতে করে দেশি ও বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এ সংকট উত্তরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, খেলাপিরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিলেও ঋণ পরিশোধ করছে না। আর ঋণ আদায় না হলে ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতি পূরণ করবে কীভাবে। এটি ব্যাংক খাতের জন্য খারাপ দিক।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
তিনি বলেন, বেশিরভাগ সরকারি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এর মূল কারণ তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা ইচ্ছেমতো ব্যাংক চালাচ্ছে। যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে। এটি চলতেই থাকবে, যদি না কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন না হয়। এজন্য সবার আগে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। কারণ সরকারি ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক প্রভাবে পরিচালিত হয়। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকও মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। ঋণ আদায়ে এসব ব্যাংকের টার্গেট নির্ধারণ করে দিতে হবে জানিয়ে মির্জ্জা আজিজুল বলেন, একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে তারা সংশোধন না হলে পর্ষদ পরিবর্তন করতে দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিভিন্ন সুবিধার পরও রাষ্ট্রীয় মালিকানার ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটি এখন মূলধন সংকটে আছে। মার্চ মাস শেষে এসব ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি রয়েছে সোনালীর। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি তিন হাজার ৬৯৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়া অগ্রণীর দুই হাজার ৯২১ কোটি ৯২ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের এক হাজার ৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, রূপালীর ৭৬১ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ৪১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি ১১ হাজার ২২৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ঘাটতি এক হাজার ৫১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের। এর ঘাটতি এক হাজার ৬৩১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এক হাজার ৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স) ৩৮২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং এবি ব্যাংক ১০২ কোটি মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি তৈরি হলে বাজেট থেকে তার জোগান দিতে হয়। জনগণের করের টাকায় বিভিন্ন সময় মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলোতে অর্থ জোগান দেয় সরকার। তবে করের টাকায় মূলধন জোগানের বরাবরই বিরোধিতা করে থাকেন অর্থনীতিবিদরা। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে এ অর্থ দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জোগান দেওয়া অর্থ ও মুনাফার একটি অংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। কোনো ব্যাংক মূলধনে ঘাটতি রেখে তার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বিবেচনায় গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন রাখার কথা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। তবে আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ ব্যাংক খাতে মূলধন রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এতে করে সার্বিক উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৬ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা টাকা বা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যা ছিল ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত মার্চ পর্যন্ত ৬০ ব্যাংকের মধ্যে ৪৬টির মূলধন সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি ছিল। ঘাটতিতে থাকা ১১ ব্যাংকসহ ১৪ ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের পরিমাণ এর কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কোনো ব্যাংক ন্যুনতম মূলধন বজায় রাখার পর যদি আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়হারে মূলধন রাখতে না পারে, সেই ব্যাংক কোনো নগদ লভ্যাংশ কিংবা বোনাস দিতে পারবে না। তবে কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিয়ে বোনাস শেয়ার ইস্যু করা যায়।
ঢাকা/এনইউ
আরও পড়ুন:
- দেশে ভ্যাকসিনের কোনো সংকট হবে না: কাদের
- যশোরে বাড়ছে করোনা, আক্রান্তের হার ৪২ শতাংশ
- বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্ত কমেছে, বেড়েছে মৃত্যু
- যমুনা ব্যাংকের উদ্যোক্তার শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা
- শুল্ক সুবিধা পাবে শেয়ারবাজারের চামড়াজাত শিল্পের কোম্পানিগুলো
- বিকেলে আসছে ৫ কোম্পানির ইপিএস
- কানাডায় ট্রাক চালিয়ে মুসলিম পরিবারকে হত্যা
- বিয়ের প্রস্তাব আসতে পারে কুম্ভতে, বৃষে দাম্পত্য শান্তিময়
- ৮ জুন: ইতিহাসে আজকের এই দিনে
- সোনালী আঁশের আয় বেড়েছে
- আগামীকাল ৪ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ডের নিলাম
- ডিভিডেন্ড ঘোষনা করেছে অ্যাম্বি ফার্মা
- পদ্মা সেতুর কাজ বাকি সাড়ে ৬ শতাংশ
- ১৫ হাজার টাকা বেতনে প্রিমিয়ার ব্যাংকে চাকরি
- সেভ দ্য চিলড্রেনে চাকরির সুযোগ