০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

যে রোগের কারণে শিশুর লিখতে সমস্যা হয়

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:২৮:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অক্টোবর ২০২১
  • / ৪১৪৩ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: শিশুরা যেন হাতে লেখতেই চায় না। চার বা পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে বা মেয়ের সবকিছু একদম স্বাভাবিক তবে যখন তাকে কিছু লিখতে বলা হচ্ছে তখনই জড়তা এসে ঘিরে ধরছে।

পেনসিল ধরতে সমস্যা হয়, অক্ষরগুলো কেমন যেন উল্টোপাল্টা মনে হয়, বানানও ভুল হচ্ছে। অথচ কিন্তু সে অন্যান্য পড়া মুখস্থ বলতে পারছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের সমস্যাকে বলা হয় ডিসগ্রাফিয়া, এটি একটি নিউরোলজিকাল ডিসঅর্ডার। এমন রোগীদের ইনস্ট্রাকশন শুনে সেই আকৃতি ভেবে লিখতে গেলে সমস্যা হয় ।

ডিসগ্রাফিয়ায় শিশুর হাতের লেখার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশে ও হাতের সূক্ষ্ম কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। শিশু আকৃতিগত পার্থক্য করতে পারে না। অক্ষর লেখার জায়গাটি কোথায় ও কতটুকু জায়গাজুড়ে হবে তা ঠিক করতে পারে না।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এমন শিশুর বাম থেকে ডানে শব্দগুলোকে লিখতে সমস্যা হয়। অক্ষরগুলো একদিকে না লিখে বিভিন্ন দিকে লেখে তারা। লাইন ও মার্জিন মেনে লিখতে সমস্যা হয়। দেখে দেখে লিখতে গেলেও সময় বেশি লাগে। অনেক শিশুই লিখতে গিয়ে b আর d, p আর q এর মধ্যে গুলিয়ে ফেলে। সহজ বানানও ভুল করে তারা। এটি যে শুধু শিশুদের হয় তা নয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কোনো দুর্ঘটনার কারণে মাথায় গুরুতর আঘাত লাগলে ও এই সমস্যা দেখা যেতে পারে।

সাধারণত ডিসগ্রাফিয়া দুই ধরনের হয়- ব্রেন ইনজুরির কারণে অ্যাকোয়ার্ড ডিসগ্রাফিয়া ও জন্মগত হলে তাকে বলা হয় ডেভেলপমেন্টাল ডিসগ্রাফিয়া।

এ রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ শিশুটির বাবা মা ও শিক্ষকের কাছে প্রথম পরিলক্ষিত হয়। ডিসগ্রাফিয়া আক্রান্তদের ছোটখাটো জিনিস যেমন পেনসিল ধরতে সমস্যা হয়। এরা হয়তো তা খুব জোরে ধরে বা অদ্ভুতভাবে ধরে। অক্ষর ও সংখ্যার আকার সঠিকভাবে দিতে সমস্যা হয়।

এ রোগ থেকে নিরাময় পেতে কি করতে হবে:-

আজকাল পেনসিলের গ্রিপ কিনতে পাওয়া যায়, যাতে ওরা সহজে পেনসিল ধরতে পারে।

ফাইন মোটর স্কিল ডেভেলপ করার জন্য ওদের পুঁতি দিয়ে মালা করতে দেয়া যেতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের পেনসিল আর কলম কিনে শিশুকে ব্যবহার করতে দিন, যাতে জানা যায় ও কোনটা দিয়ে সব থেকে বেশি ভালভাবে লিখতে পারছে।

এমন পৃষ্ঠা ব্যবহার করুন যাতে দুটো সারির মধ্যে ব্যবধান বেশি আছে। এতে শিশু অনায়াসে সারি ধরে লিখতে পারে।

ছবি, অলঙ্করণ ও ধ্বনিতত্বের সাহায্যে অক্ষর এবং শব্দের সঙ্গে শিশুর পরিচয় করানোর চেষ্টা করুন যাতে সে অক্ষর ও শব্দ চিনে লিখতে শেখে।

বিশেষ ধরনের প্রযুক্তি ও শব্দের দ্বারা সক্রিয় হওয়া সফ্টওয়ার (শব্দ আর অক্ষর বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া) ব্যবহার করুন, যা লেখার ক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করে।

শিশুটিকে স্কুলে পরীক্ষার সময় সাধারণের চেয়ে বেশি সময় দিতে হবে।

টেপ রেকর্ডারের সাহায্যে স্কুলের পড়া রেকর্ড করে রাখুন। বাড়িতে সেটি চালিয়ে শুনে শুনে লেখার অভ্যাস করতে বলুন শিশুকে।

কম্পিউটার দেওয়া যেতে পারে। কারণ টাইপ করতে তাদের সমস্যা হয় না। সঙ্গে থাকতে হবে অডিও ইনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থা।
লেখার বদলে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

কোনো জিনিস শেখানোর জন্য অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্য নিতে অভ্যস্ত করান। স্পর্শ, গন্ধ, দৃষ্টি, শ্রবণ এগুলো কাজে লাগাতে হবে।

ডিসগ্রাফিয়ার সন্দেহ হলে অভিজ্ঞ এডুকেশনাল বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। যেহেতু এই রোগের কোনো স্থায়ী সমাধান নেই, তাই নানা কৌশলের মাধ্যমে যতটা সম্ভব এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে হয়। এজন্য দরকার বাবা-মা ও শিক্ষকদের ধৈর্য ও শিশুটির যত্ন। তাহলেই এ রকম জড়তা থেকে শিশুরা উঠে আসতে সক্ষম হবে।

শেয়ার করুন

x
English Version

যে রোগের কারণে শিশুর লিখতে সমস্যা হয়

আপডেট: ০৩:২৮:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অক্টোবর ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: শিশুরা যেন হাতে লেখতেই চায় না। চার বা পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে বা মেয়ের সবকিছু একদম স্বাভাবিক তবে যখন তাকে কিছু লিখতে বলা হচ্ছে তখনই জড়তা এসে ঘিরে ধরছে।

পেনসিল ধরতে সমস্যা হয়, অক্ষরগুলো কেমন যেন উল্টোপাল্টা মনে হয়, বানানও ভুল হচ্ছে। অথচ কিন্তু সে অন্যান্য পড়া মুখস্থ বলতে পারছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের সমস্যাকে বলা হয় ডিসগ্রাফিয়া, এটি একটি নিউরোলজিকাল ডিসঅর্ডার। এমন রোগীদের ইনস্ট্রাকশন শুনে সেই আকৃতি ভেবে লিখতে গেলে সমস্যা হয় ।

ডিসগ্রাফিয়ায় শিশুর হাতের লেখার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশে ও হাতের সূক্ষ্ম কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। শিশু আকৃতিগত পার্থক্য করতে পারে না। অক্ষর লেখার জায়গাটি কোথায় ও কতটুকু জায়গাজুড়ে হবে তা ঠিক করতে পারে না।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এমন শিশুর বাম থেকে ডানে শব্দগুলোকে লিখতে সমস্যা হয়। অক্ষরগুলো একদিকে না লিখে বিভিন্ন দিকে লেখে তারা। লাইন ও মার্জিন মেনে লিখতে সমস্যা হয়। দেখে দেখে লিখতে গেলেও সময় বেশি লাগে। অনেক শিশুই লিখতে গিয়ে b আর d, p আর q এর মধ্যে গুলিয়ে ফেলে। সহজ বানানও ভুল করে তারা। এটি যে শুধু শিশুদের হয় তা নয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কোনো দুর্ঘটনার কারণে মাথায় গুরুতর আঘাত লাগলে ও এই সমস্যা দেখা যেতে পারে।

সাধারণত ডিসগ্রাফিয়া দুই ধরনের হয়- ব্রেন ইনজুরির কারণে অ্যাকোয়ার্ড ডিসগ্রাফিয়া ও জন্মগত হলে তাকে বলা হয় ডেভেলপমেন্টাল ডিসগ্রাফিয়া।

এ রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ শিশুটির বাবা মা ও শিক্ষকের কাছে প্রথম পরিলক্ষিত হয়। ডিসগ্রাফিয়া আক্রান্তদের ছোটখাটো জিনিস যেমন পেনসিল ধরতে সমস্যা হয়। এরা হয়তো তা খুব জোরে ধরে বা অদ্ভুতভাবে ধরে। অক্ষর ও সংখ্যার আকার সঠিকভাবে দিতে সমস্যা হয়।

এ রোগ থেকে নিরাময় পেতে কি করতে হবে:-

আজকাল পেনসিলের গ্রিপ কিনতে পাওয়া যায়, যাতে ওরা সহজে পেনসিল ধরতে পারে।

ফাইন মোটর স্কিল ডেভেলপ করার জন্য ওদের পুঁতি দিয়ে মালা করতে দেয়া যেতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের পেনসিল আর কলম কিনে শিশুকে ব্যবহার করতে দিন, যাতে জানা যায় ও কোনটা দিয়ে সব থেকে বেশি ভালভাবে লিখতে পারছে।

এমন পৃষ্ঠা ব্যবহার করুন যাতে দুটো সারির মধ্যে ব্যবধান বেশি আছে। এতে শিশু অনায়াসে সারি ধরে লিখতে পারে।

ছবি, অলঙ্করণ ও ধ্বনিতত্বের সাহায্যে অক্ষর এবং শব্দের সঙ্গে শিশুর পরিচয় করানোর চেষ্টা করুন যাতে সে অক্ষর ও শব্দ চিনে লিখতে শেখে।

বিশেষ ধরনের প্রযুক্তি ও শব্দের দ্বারা সক্রিয় হওয়া সফ্টওয়ার (শব্দ আর অক্ষর বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া) ব্যবহার করুন, যা লেখার ক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করে।

শিশুটিকে স্কুলে পরীক্ষার সময় সাধারণের চেয়ে বেশি সময় দিতে হবে।

টেপ রেকর্ডারের সাহায্যে স্কুলের পড়া রেকর্ড করে রাখুন। বাড়িতে সেটি চালিয়ে শুনে শুনে লেখার অভ্যাস করতে বলুন শিশুকে।

কম্পিউটার দেওয়া যেতে পারে। কারণ টাইপ করতে তাদের সমস্যা হয় না। সঙ্গে থাকতে হবে অডিও ইনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থা।
লেখার বদলে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

কোনো জিনিস শেখানোর জন্য অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্য নিতে অভ্যস্ত করান। স্পর্শ, গন্ধ, দৃষ্টি, শ্রবণ এগুলো কাজে লাগাতে হবে।

ডিসগ্রাফিয়ার সন্দেহ হলে অভিজ্ঞ এডুকেশনাল বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। যেহেতু এই রোগের কোনো স্থায়ী সমাধান নেই, তাই নানা কৌশলের মাধ্যমে যতটা সম্ভব এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে হয়। এজন্য দরকার বাবা-মা ও শিক্ষকদের ধৈর্য ও শিশুটির যত্ন। তাহলেই এ রকম জড়তা থেকে শিশুরা উঠে আসতে সক্ষম হবে।