০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে অর্থ প্রদানে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংক

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:২৪:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ৪২৪৩ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন অর্থ প্রদানে নারাজ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার দেশের আর্থিক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিএসইসি গঠিত ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ প্রদানের বিষয়ে আপত্তি তোলে। তবে এই বিষয়ে সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ভালো সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করছে বিএসইসি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএসইসির অনেক রেগুলেশন কোম্পানি আইন ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। ফলে ওই জায়গায় বিএসইসির আইন পরিপালন করতে পারবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ এদের প্রধান রেগুলেটর হলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিযোগ বিএসইসির রেগুলেশন অনুযায়ী পুঞ্জিভূত লোকসানি প্রতিষ্ঠান বর্তমান বছরের আয় দিয়ে লভ্যাংশ দিতে পারবে। কিন্তু ব্যাংক কোম্পনি আইন অনুযায়ী তারা লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এটাই তারা বাস্তবায়ন করতে চায়।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নকে সামনে রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কমিশন। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর শিবলী কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিশেষ ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এই ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবন্ঠিত লভ্যাংশ দিতে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের ভাষায় এটি গ্রাহকদের আমানত। ফলে গ্রাহকদের আমানত রক্ষায় তারা বদ্ধ পরিকর। বিষয়টি চলতি বছরের ১৬ জুন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজকে (বিএপিএলসি) চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিএসইসি বলছে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা প্রয়োজন। ফলে বিএসইসির আইনকে বাস্তবায়ন করার জন্য সকল রেগুলেটরদের সহযোগিতা চায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (ইডরা) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন জানান, সকলের সুবিধার্থে বীমা কোম্পানির সকল পরিচালকদের একটি ডাটা বেইজ করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো তাদের প্রয়োজনে এটি ব্যাবহার করতে পারবে।

বৈঠকে অংশ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ চারজন ডেপুটি গভর্নর, বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (ইডরা) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন, এনজিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্র্যাডিট রেগুলেটরি অথরিটি(এমআরএ) প্রতিনিধি, বিটিআরসি প্রতিনিধি, সমবায় অধিদফতরের প্রতিনিধি, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্টস্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসসহ (আরজেএসসি) প্রতিনিধিসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান ও তাদের প্রতিনিধিরা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা এগিয়ে নিতে রেগুলেটরগুলো নিয়মিত সমন্বয় সভা করে থাকে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলো যার যার নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির অনেকগুলো বিষয়ে আলাপ হয়েছে। বিভিন্ন আইন ও রেগুলেশনের বিষয় উঠে এসেছে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সকলের সমন্বয়ে আমরা দেশের আর্থিক খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমরা একটি ফান্ড গঠন করতে চাই। এই ফান্ডের টাকা আসবে অবণ্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার। আশা করছি এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা যাবে।

এদিকে, ইতোমধ্যে বিশেষ ফান্ডের জন্য পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখায় এই হিসাব খোলা হয়েছে। এই হিসাবে অনেকই অভন্ঠিত লভ্যাংশ জমা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান, স্টক ব্রোকার এবং স্টেক ডিলার। এই জন্য ইস্যু করা চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির সকল অবণ্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার এই তহবিলে স্থানান্তর করতে হবে। তিন বছরের হিসাব হবে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের দিন বা রেকর্ড ডেট থেকে। এক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ বা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা থাকায় কোনো সুদ অর্জিত হলে, তাও এ তহবিলে দিতে হবে।

তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্নিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

তহবিল থেকে বাজারের তারল্যপ্রবাহ এবং গভীরতা বাড়াতে শেয়ার কেনাবেচা বা ধার প্রদান বা ধার গ্রহণ করা হবে। শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে তহবিলের কোনো লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি।

নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে অবন্টিত লভ্যাংশের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। সেখানে প্রতিষ্ঠান তিনটিকে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য চেয়ে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে ডিএসই কোম্পানিগুলোকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিষ্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ৭ দিন সময় বাড়িয়েছে বিএসইসি। এর পর ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. কাউসার আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

এর পর বিএসইসির নিয়মিত ৭৭২তম কমিশন সভায় ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’’ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। এর আগে আইনটি করার জন্য জনমত যাচাই করা হয়েছে। পরে গত ২৭ জুন গেজেট প্রকাশ করে সরকার। গতকাল ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ফান্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন।

স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত ১৩০ কোম্পানির কাছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি নগদ লভ্যাংশ পড়ে ছিল। এর মধ্যে ২০ থেকে ১০০ কোটি টাকা ছিল ২০টির অধিক কোম্পানিতে। এ হিসাবে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনের কাছে সর্বাধিক ১৯০ কোটি টাকার অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু গত ৩১ মার্চ সমাপ্ত এ কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমানে গ্রামীণফোনের কাছে অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশ রয়েছে ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নভেম্বরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইসিবির কাছে ১১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা অবণ্টিত লভ্যাংশ ছিল। সূত্র: সানবিডি

শেয়ার করুন

x
English Version

স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে অর্থ প্রদানে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংক

আপডেট: ০১:২৪:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন অর্থ প্রদানে নারাজ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার দেশের আর্থিক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিএসইসি গঠিত ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ প্রদানের বিষয়ে আপত্তি তোলে। তবে এই বিষয়ে সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ভালো সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করছে বিএসইসি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএসইসির অনেক রেগুলেশন কোম্পানি আইন ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। ফলে ওই জায়গায় বিএসইসির আইন পরিপালন করতে পারবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ এদের প্রধান রেগুলেটর হলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিযোগ বিএসইসির রেগুলেশন অনুযায়ী পুঞ্জিভূত লোকসানি প্রতিষ্ঠান বর্তমান বছরের আয় দিয়ে লভ্যাংশ দিতে পারবে। কিন্তু ব্যাংক কোম্পনি আইন অনুযায়ী তারা লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এটাই তারা বাস্তবায়ন করতে চায়।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নকে সামনে রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কমিশন। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর শিবলী কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিশেষ ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এই ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবন্ঠিত লভ্যাংশ দিতে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের ভাষায় এটি গ্রাহকদের আমানত। ফলে গ্রাহকদের আমানত রক্ষায় তারা বদ্ধ পরিকর। বিষয়টি চলতি বছরের ১৬ জুন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজকে (বিএপিএলসি) চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিএসইসি বলছে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা প্রয়োজন। ফলে বিএসইসির আইনকে বাস্তবায়ন করার জন্য সকল রেগুলেটরদের সহযোগিতা চায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (ইডরা) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন জানান, সকলের সুবিধার্থে বীমা কোম্পানির সকল পরিচালকদের একটি ডাটা বেইজ করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো তাদের প্রয়োজনে এটি ব্যাবহার করতে পারবে।

বৈঠকে অংশ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ চারজন ডেপুটি গভর্নর, বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (ইডরা) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন, এনজিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্র্যাডিট রেগুলেটরি অথরিটি(এমআরএ) প্রতিনিধি, বিটিআরসি প্রতিনিধি, সমবায় অধিদফতরের প্রতিনিধি, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্টস্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসসহ (আরজেএসসি) প্রতিনিধিসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান ও তাদের প্রতিনিধিরা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা এগিয়ে নিতে রেগুলেটরগুলো নিয়মিত সমন্বয় সভা করে থাকে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলো যার যার নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির অনেকগুলো বিষয়ে আলাপ হয়েছে। বিভিন্ন আইন ও রেগুলেশনের বিষয় উঠে এসেছে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সকলের সমন্বয়ে আমরা দেশের আর্থিক খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমরা একটি ফান্ড গঠন করতে চাই। এই ফান্ডের টাকা আসবে অবণ্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার। আশা করছি এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা যাবে।

এদিকে, ইতোমধ্যে বিশেষ ফান্ডের জন্য পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখায় এই হিসাব খোলা হয়েছে। এই হিসাবে অনেকই অভন্ঠিত লভ্যাংশ জমা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান, স্টক ব্রোকার এবং স্টেক ডিলার। এই জন্য ইস্যু করা চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির সকল অবণ্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার এই তহবিলে স্থানান্তর করতে হবে। তিন বছরের হিসাব হবে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের দিন বা রেকর্ড ডেট থেকে। এক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ বা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা থাকায় কোনো সুদ অর্জিত হলে, তাও এ তহবিলে দিতে হবে।

তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্নিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

তহবিল থেকে বাজারের তারল্যপ্রবাহ এবং গভীরতা বাড়াতে শেয়ার কেনাবেচা বা ধার প্রদান বা ধার গ্রহণ করা হবে। শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে তহবিলের কোনো লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি।

নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে অবন্টিত লভ্যাংশের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। সেখানে প্রতিষ্ঠান তিনটিকে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য চেয়ে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে ডিএসই কোম্পানিগুলোকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিষ্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ৭ দিন সময় বাড়িয়েছে বিএসইসি। এর পর ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. কাউসার আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

এর পর বিএসইসির নিয়মিত ৭৭২তম কমিশন সভায় ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’’ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। এর আগে আইনটি করার জন্য জনমত যাচাই করা হয়েছে। পরে গত ২৭ জুন গেজেট প্রকাশ করে সরকার। গতকাল ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ফান্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন।

স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত ১৩০ কোম্পানির কাছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি নগদ লভ্যাংশ পড়ে ছিল। এর মধ্যে ২০ থেকে ১০০ কোটি টাকা ছিল ২০টির অধিক কোম্পানিতে। এ হিসাবে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনের কাছে সর্বাধিক ১৯০ কোটি টাকার অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু গত ৩১ মার্চ সমাপ্ত এ কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমানে গ্রামীণফোনের কাছে অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশ রয়েছে ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নভেম্বরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইসিবির কাছে ১১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা অবণ্টিত লভ্যাংশ ছিল। সূত্র: সানবিডি