০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত হয়ে রাস্তায় সন্তান প্রসব!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:০২:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জুলাই ২০২২
  • / ৪০৯৫ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে এবং শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ঘুরে শেষ পর্যন্ত রাস্তায় সন্তান প্রসব করলেন দরিদ্র এক নারী। এ ঘটনায় নবজাতকের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত হলেও প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বরগুনা পৌর শহরের পশু হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ওই প্রসূতি নারীর নাম রীমা বেগম (১৯)। তিনি বরগুনা সদরের ফুলঝুড়ি এলাকার দরিদ্র রিকশাচালক মো. ইব্রাহীমের স্ত্রী।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে বরগুনা সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হন রীমা। ওই দিনই সন্ধ্যার পর তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় রাত পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে বসেই কাতরাচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পরে বরগুনা সদর হাসপাতালে ওই সময়ে দায়িত্বরত ডাক্তার-নার্সরা তার স্বজনদের বলেন, এখানে প্রসূতির কোনো চিকিৎসা হবে না। আপনারা বরগুনা পৌরসভার বটতলা এলাকার আল রাজি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যান। তাৎক্ষণিক তাকে আল রাজি ক্লিনিকে নিয়ে যায় স্বজনরা।

আল রাজি ক্লিনিকে ডাক্তার না থাকায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে পশু হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত শেফা ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু শেফা ক্লিনিকেও ডাক্তার ছিলো না। পরে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার সহযোগিতায় রীমাকে অন্য আরেকটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নামানো হয়। আর সেখানেই একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তান প্রসব করে রীমা। পরে প্রসূতি ও নবজাতকে নিয়ে শেফা ক্লিনিকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাকে তাৎক্ষণিক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ নেতা আবু হানিফ দোলন বলে, ‘গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে আল রাজি ক্লিনিকের সামনে দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। এমন সময় ক্লিনিকের ভেতরে দুই নারীর আহাজারি দেখে তাদের কাছে গেলে পুরো বিষয়টি জানতে পারি। আমি ওই প্রসূতিকে শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। দুর্ভাগ্যবশত সেখানেও ডাক্তার ছিলো না। পরে ডক্টরস কেয়ার নামে আরেকটি ক্লিনিকে ফোন করে জানতে পারি সেখানে ডাক্তার আছে। তখন রীমাকে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই বাচ্চা প্রসব করে সে।’

রীমা বেগমের শাশুড়ি জানায়, রীমা প্রসব বেদনায় ছটফট করছিল। এমন সময় হাসপাতাল থেকে জানায় তার অবস্থা গুরুতর, হাসপাতালে তার চিকিৎসা হবে না। অন্য ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলছে তারা। তিনি বলে, ‘আল রাজি ক্লিনিকে যাই আমরা। কিন্তু সেখানেও ডাক্তার ছিল না। আমরা অসহায়ের মতো ছটফট করতে থাকি। একদিকে আমরা গরিব, অন্যদিকে রীমার অবস্থা খুবই খারাপ। শেফা হাসপাতালে গিয়েও ডাক্তার পাইনি। পরে অন্য একটি হাসপাতালে যাওয়ার পথে রাস্তায়ই রীমা বাচ্চা প্রসব করে।’

শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল আলম লিমা বলে, ‘আমি ডিউটি শেষে বাসায় গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ খবর পাই যে পশু হাসপাতাল সড়কে এক নারী সন্তান প্রসব করেছে এবং তাকে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই নারীকে দেখতে যাই। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার অবস্থা গুরুতর, তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। তবে সদ্যপ্রসূত নবজাতক সুস্থ আছে। ‘

কী কারণে দরিদ্র রিকশাচালকের স্ত্রীকে হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে ক্লিনিকে পাঠানো হলো―এমন প্রশ্ন করলে বরগুনা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক সোহরাব হোসেন বলে, ‘হাসপাতালের সে সময় ডিউটিরত নার্সরা আরএমও এবং আমাকে জানায়নি। কেন রোগীর সঙ্গে এমন করা হলো তা আমরা খতিয়ে দেখছি। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত হয়ে রাস্তায় সন্তান প্রসব!

আপডেট: ০৩:০২:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জুলাই ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে এবং শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ঘুরে শেষ পর্যন্ত রাস্তায় সন্তান প্রসব করলেন দরিদ্র এক নারী। এ ঘটনায় নবজাতকের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত হলেও প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বরগুনা পৌর শহরের পশু হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ওই প্রসূতি নারীর নাম রীমা বেগম (১৯)। তিনি বরগুনা সদরের ফুলঝুড়ি এলাকার দরিদ্র রিকশাচালক মো. ইব্রাহীমের স্ত্রী।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে বরগুনা সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হন রীমা। ওই দিনই সন্ধ্যার পর তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় রাত পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে বসেই কাতরাচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পরে বরগুনা সদর হাসপাতালে ওই সময়ে দায়িত্বরত ডাক্তার-নার্সরা তার স্বজনদের বলেন, এখানে প্রসূতির কোনো চিকিৎসা হবে না। আপনারা বরগুনা পৌরসভার বটতলা এলাকার আল রাজি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যান। তাৎক্ষণিক তাকে আল রাজি ক্লিনিকে নিয়ে যায় স্বজনরা।

আল রাজি ক্লিনিকে ডাক্তার না থাকায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে পশু হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত শেফা ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু শেফা ক্লিনিকেও ডাক্তার ছিলো না। পরে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার সহযোগিতায় রীমাকে অন্য আরেকটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নামানো হয়। আর সেখানেই একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তান প্রসব করে রীমা। পরে প্রসূতি ও নবজাতকে নিয়ে শেফা ক্লিনিকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাকে তাৎক্ষণিক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ নেতা আবু হানিফ দোলন বলে, ‘গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে আল রাজি ক্লিনিকের সামনে দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। এমন সময় ক্লিনিকের ভেতরে দুই নারীর আহাজারি দেখে তাদের কাছে গেলে পুরো বিষয়টি জানতে পারি। আমি ওই প্রসূতিকে শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। দুর্ভাগ্যবশত সেখানেও ডাক্তার ছিলো না। পরে ডক্টরস কেয়ার নামে আরেকটি ক্লিনিকে ফোন করে জানতে পারি সেখানে ডাক্তার আছে। তখন রীমাকে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই বাচ্চা প্রসব করে সে।’

রীমা বেগমের শাশুড়ি জানায়, রীমা প্রসব বেদনায় ছটফট করছিল। এমন সময় হাসপাতাল থেকে জানায় তার অবস্থা গুরুতর, হাসপাতালে তার চিকিৎসা হবে না। অন্য ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলছে তারা। তিনি বলে, ‘আল রাজি ক্লিনিকে যাই আমরা। কিন্তু সেখানেও ডাক্তার ছিল না। আমরা অসহায়ের মতো ছটফট করতে থাকি। একদিকে আমরা গরিব, অন্যদিকে রীমার অবস্থা খুবই খারাপ। শেফা হাসপাতালে গিয়েও ডাক্তার পাইনি। পরে অন্য একটি হাসপাতালে যাওয়ার পথে রাস্তায়ই রীমা বাচ্চা প্রসব করে।’

শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল আলম লিমা বলে, ‘আমি ডিউটি শেষে বাসায় গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ খবর পাই যে পশু হাসপাতাল সড়কে এক নারী সন্তান প্রসব করেছে এবং তাকে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই নারীকে দেখতে যাই। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার অবস্থা গুরুতর, তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। তবে সদ্যপ্রসূত নবজাতক সুস্থ আছে। ‘

কী কারণে দরিদ্র রিকশাচালকের স্ত্রীকে হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে ক্লিনিকে পাঠানো হলো―এমন প্রশ্ন করলে বরগুনা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক সোহরাব হোসেন বলে, ‘হাসপাতালের সে সময় ডিউটিরত নার্সরা আরএমও এবং আমাকে জানায়নি। কেন রোগীর সঙ্গে এমন করা হলো তা আমরা খতিয়ে দেখছি। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকা/এসএ