০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

১০ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৯:২৬:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মে ২০২১
  • / ৪১৭৯ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনার ধাক্কায় আমদানি-রফতানি কমে যাওয়াসহ স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহে স্থবিরতা নেমে আসে। এতে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে ধস দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীও চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আহরণে ঘাটতি রয়েছে ৪০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে রাজস্ব আহরণের এমন বাস্তবতা মেনে নিয়ে আগামী বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নতুন করে না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী বাজেটেও এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এতে প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছেন। তবে করোনাকালে এ বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকেও বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এনবিআরের সর্বশেষ রাজস্ব আদায়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা কাটছাঁট করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার কোটি কমিয়ে ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জুলাই-২০ থেকে এপ্রিল-২১ পর্যন্ত অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ লাখ ৩৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।

আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ সময়ে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৪০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।

সূত্র আরও জানায়, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এনবিআরের রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত অর্থাৎ বছরের প্রথম ১০ মাসে আয়কর ও ভ্রমণ করের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে ৫৯ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পরও আয়করে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। আমদানি-রফতানি খাতে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমদানি-রফতানি খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৭৫ হাজার ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ভ্যাট আদায়ে ১০ মাসে লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পরও ঘাটতি ১১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে ওপর থেকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, মাঝপথে তা সংশোধন, এরপর কত আয় হলো আর ঘাটতি হলো এসব হিসাব করা মোটেই প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ গত পাঁচ-সাত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে অর্জনের কোনো সম্পর্ক থাকে না। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেই রাজস্ব বাড়ে না। উপর থেকে এনবিআরকে একটা লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেয়া হয়। এরপর অর্থবছরের সাত-আট মাস পর প্রকৃতপক্ষে যে হারে রাজস্ব আহরণ হয়, তার কাছাকাছি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এনবিআর। যাতে বছর শেষে তারা বলতে পারে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। কারণ করোনার অভিঘাত মোকাবেলা করে অর্থনীতিকে ঠিক করতে পারলেই রাজস্ব আহরণ বাড়বে। রাজস্ব বাড়াতে এনবিআর যেসব অটোমেশন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে করোনা সংকটের মধ্যেই ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়। করোনা সংকট না কাটায় আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকারে এতটা উল্লম্ফন ঘটাতে রাজি নন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাই চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৩৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হচ্ছে।

এর মধ্যে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। তবে বাড়ানো হচ্ছে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। চলতি অর্থবছরে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে তা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা করা হচ্ছে। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। তবে এবারের বাজেট ঘাটতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। প্রথমবারের মতো ঘাটতি জিডিপির সাড়ে ৬ শতাংশ ধরা হচ্ছে। ঘাটতির পরিমাণ ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। এছাড়া এনবিআর-বহির্ভূত কর ও কর ব্যতীত সরকারের প্রাপ্তি থেকে রাজস্বের বাকি ৫৯ হাজার কোটি টাকা আসবে।

এদিকে, আগামী বাজেট প্রণয়‌নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এনবিআরের আয়কর থেকে শুরু করে ভ্যাট ও কাস্টমসের ট্যারিফ কেমন হবে তা এরই মধ্যে নির্ধারণ করেছে এনবিআর। করোনাকালে মানুষের আয় কমে গেছে, কমেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেট সাজানো হয়েছে। এতে স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে দেশীয় শিল্প সুরক্ষায়। নতুন করে করহার বাড়ানোর চিন্তা এনবিআরের না থাকলেও করের আওতা বাড়াতে মরিয়া এনবিআর। এ-সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তিও এরই মধ্যে সই হয়েছে। আর রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে অটোমেশনে জোর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে ভ্যাট আদায় বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভ্যাটদাতাদের আগ্রহী করতে লটারি পদ্ধতিও চলমান রেখেছে এনবিআর।

আগামী বাজেটে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ১২ মে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এ সময় এনবিআর সদস্য (করনীতি) মো. আলমগীর হোসেন, ভ্যাট নীতির সদস্য ও শুল্কনীতির সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনবিআরের প্রস্তুতকৃত বাজেটে সম্মতি দেয়ার পাশাপাশি বেশকিছু দিক-নির্দেশনাও দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আগামী বাজেটে নতুন করে কোনো ধরনের ট্যাক্স আরোপ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি করোনা মহামারী প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মানুষ যেন টিকে থাকতে পারে এমন বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রাজস্ব আহরণে এমন কৌশল অবলম্বন করতে বলেন, যেন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, আমরা বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। একই সঙ্গে আগামীতে রাজস্ব বাড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে আমরা সক্ষম হব।

জানা গেছে, রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মাঠ অফিসগুলোয় পরিদর্শন বাড়ানো হবে। অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানো হবে। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তীকরণ ও মামলা থেকে রাজস্ব আদায়ে করদাতাদের বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি অবিতর্কিত বকেয়া কর আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া উেস কর কর্তন মনিটরিং, রিটার্ন দাখিলকারী করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি রিটার্ন পরীক্ষাকরণ ও জরিপ কার্যক্রম চালানো হবে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

১০ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি

আপডেট: ০৯:২৬:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনার ধাক্কায় আমদানি-রফতানি কমে যাওয়াসহ স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহে স্থবিরতা নেমে আসে। এতে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে ধস দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীও চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আহরণে ঘাটতি রয়েছে ৪০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে রাজস্ব আহরণের এমন বাস্তবতা মেনে নিয়ে আগামী বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নতুন করে না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী বাজেটেও এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এতে প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছেন। তবে করোনাকালে এ বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকেও বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এনবিআরের সর্বশেষ রাজস্ব আদায়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা কাটছাঁট করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার কোটি কমিয়ে ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জুলাই-২০ থেকে এপ্রিল-২১ পর্যন্ত অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ লাখ ৩৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।

আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ সময়ে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৪০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।

সূত্র আরও জানায়, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এনবিআরের রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত অর্থাৎ বছরের প্রথম ১০ মাসে আয়কর ও ভ্রমণ করের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে ৫৯ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পরও আয়করে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। আমদানি-রফতানি খাতে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমদানি-রফতানি খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৭৫ হাজার ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ভ্যাট আদায়ে ১০ মাসে লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পরও ঘাটতি ১১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে ওপর থেকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, মাঝপথে তা সংশোধন, এরপর কত আয় হলো আর ঘাটতি হলো এসব হিসাব করা মোটেই প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ গত পাঁচ-সাত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে অর্জনের কোনো সম্পর্ক থাকে না। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেই রাজস্ব বাড়ে না। উপর থেকে এনবিআরকে একটা লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেয়া হয়। এরপর অর্থবছরের সাত-আট মাস পর প্রকৃতপক্ষে যে হারে রাজস্ব আহরণ হয়, তার কাছাকাছি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এনবিআর। যাতে বছর শেষে তারা বলতে পারে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। কারণ করোনার অভিঘাত মোকাবেলা করে অর্থনীতিকে ঠিক করতে পারলেই রাজস্ব আহরণ বাড়বে। রাজস্ব বাড়াতে এনবিআর যেসব অটোমেশন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে করোনা সংকটের মধ্যেই ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়। করোনা সংকট না কাটায় আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকারে এতটা উল্লম্ফন ঘটাতে রাজি নন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাই চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৩৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হচ্ছে।

এর মধ্যে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। তবে বাড়ানো হচ্ছে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। চলতি অর্থবছরে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে তা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা করা হচ্ছে। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। তবে এবারের বাজেট ঘাটতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। প্রথমবারের মতো ঘাটতি জিডিপির সাড়ে ৬ শতাংশ ধরা হচ্ছে। ঘাটতির পরিমাণ ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। এছাড়া এনবিআর-বহির্ভূত কর ও কর ব্যতীত সরকারের প্রাপ্তি থেকে রাজস্বের বাকি ৫৯ হাজার কোটি টাকা আসবে।

এদিকে, আগামী বাজেট প্রণয়‌নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এনবিআরের আয়কর থেকে শুরু করে ভ্যাট ও কাস্টমসের ট্যারিফ কেমন হবে তা এরই মধ্যে নির্ধারণ করেছে এনবিআর। করোনাকালে মানুষের আয় কমে গেছে, কমেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেট সাজানো হয়েছে। এতে স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে দেশীয় শিল্প সুরক্ষায়। নতুন করে করহার বাড়ানোর চিন্তা এনবিআরের না থাকলেও করের আওতা বাড়াতে মরিয়া এনবিআর। এ-সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তিও এরই মধ্যে সই হয়েছে। আর রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে অটোমেশনে জোর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে ভ্যাট আদায় বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভ্যাটদাতাদের আগ্রহী করতে লটারি পদ্ধতিও চলমান রেখেছে এনবিআর।

আগামী বাজেটে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ১২ মে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এ সময় এনবিআর সদস্য (করনীতি) মো. আলমগীর হোসেন, ভ্যাট নীতির সদস্য ও শুল্কনীতির সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনবিআরের প্রস্তুতকৃত বাজেটে সম্মতি দেয়ার পাশাপাশি বেশকিছু দিক-নির্দেশনাও দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আগামী বাজেটে নতুন করে কোনো ধরনের ট্যাক্স আরোপ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি করোনা মহামারী প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মানুষ যেন টিকে থাকতে পারে এমন বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রাজস্ব আহরণে এমন কৌশল অবলম্বন করতে বলেন, যেন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, আমরা বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। একই সঙ্গে আগামীতে রাজস্ব বাড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে আমরা সক্ষম হব।

জানা গেছে, রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মাঠ অফিসগুলোয় পরিদর্শন বাড়ানো হবে। অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানো হবে। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তীকরণ ও মামলা থেকে রাজস্ব আদায়ে করদাতাদের বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি অবিতর্কিত বকেয়া কর আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া উেস কর কর্তন মনিটরিং, রিটার্ন দাখিলকারী করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি রিটার্ন পরীক্ষাকরণ ও জরিপ কার্যক্রম চালানো হবে।

ঢাকা/এসএ