শেখ হাসিনার দোসরদের ব্যাংক লুট নিয়ে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

- আপডেট: ১২:২৯:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
- / ১০৩৯৫ বার দেখা হয়েছে
দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার লুট করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর ধনকুবেররা। তাদের এসব কাজে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ অক্টোবর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এবারের ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তর দেন দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয়- ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের মতে, শেখ হাসিনার সাবেক প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত টাইকুনদের (প্রভাবশালী ব্যবসায়ী) বিরুদ্ধে তার শাসনামলে ব্যাংকিং খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অভিযোগটি করেছেন। এটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা বলা হচ্ছে। আপনি কীভাবে এই অর্থ পুনরুদ্ধার করতে এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দায়ীদেরকে দায়বদ্ধ রাখতে সাহায্য করতে পারেন?
এ ব্যাপারে জবাব দিতে অনীহা প্রকাশ করে মিলার বলেন, ‘আপনার প্রশ্নের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলি, সেই প্রতিবেদনের সত্যতার বিষয়ে যেমন আমি বলতে পারি না; তেমনি এর প্রভাব কী হতে পারে সেটাও আমারা জানা নেই।’
এদিকে ব্যাংক লুট ছাড়াও ওই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে ২৫২ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
ব্রিফিংয়ে এক প্রতিবেদনের বরাতে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে ২৫২ জন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরকে চূড়ান্ত নিয়োগ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ওই ব্যাচের সব হিন্দু অফিসারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় বৈষম্যের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কি না?
জবাবে মিলার বলেন, আমি সেই প্রতিবেদনটি দেখিনি। তবে স্পষ্টতই আমরা বিশ্বাস করি, আমরা বাংলাদেশে বা বিশ্বে যে কোনো প্রক্রিয়ায় যে কোনো ধর্মীয় বৈষম্যের বিরোধিতা করব।
আরও পড়ুন: আ.লীগসহ ১১টি দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চেয়ে করা রিট প্রত্যাহার
প্রশ্নকর্তা আবারও মিলারকে জিজ্ঞাসা করেন, বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈষম্যহীন নিয়োগের চর্চা সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কীভাবে কাজ করছে?
এতে মিলার বলেন, আমি যা বলেছি তাতে যোগ করার কিছু নেই।
এরপর কথিত বৈষম্যের এই ধরনের ঘটনা কি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে কি না তাও জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে মিলার বলেন, আপনি আমাকে এমন একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে অনুমানমূলক মন্তব্য করতে বলছেন যা আমি দেখিনি এবং আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করছি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্টে গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হন আহসান এইচ মনসুর। সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালকরা নেতৃস্থানীয় ব্যাংকগুলোকে জোরপূর্বক দখলে সহায়তা করেছিলেন।
মনসুর বলেন, ব্যাংক দখলের পরপর আনুমানিক ১৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ দেওয়া এবং আমদানি চালান স্ফীত করার মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যে কোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটিই সবচেয়ে বড়, সর্বোচ্চ ব্যাংক লুটপাট। এভাবে এমন পরিসরে কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি। এর পেছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। এ ছাড়া গোয়েন্দারা (ব্যাংকের সাবেক সিইওদের) মাথায় বন্দুক না রাখলে এটি ঘটতে পারে না।
অপরদিকে ট্রেনিংয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি থেকে ২৫২ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।
২২ অক্টোবর সকাল থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সারদা পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাসুদুর রহমান ভুঞা।
তিনি জানান, সারদায় মোট ৮২৩ জন প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআই ছিলেন। এর মধ্যে ট্রেনিংয়ে শৃঙ্খলাজনিত কারণে ২৫২ প্রশিক্ষণার্থীকে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এসএইচ