ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যে ভ্যাটের প্রস্তাব, গৃহস্থালি পণ্যের দাম বাড়ছে

- আপডেট: ০৩:৫৯:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / ১০২৯১ বার দেখা হয়েছে
ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, রাইস কুকারসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক্স পণ্যে ‘অতিরিক্ত সুরক্ষা’ সুবিধা কমিয়ে আনছে সরকার। আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসব পণ্যে ধাপে ধাপে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব থাকছে। ফলে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, আর সেটার প্রভাব পড়বে বাজারমূল্যে। দাম বাড়লে অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তার পক্ষে প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্য কেনা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
আজ সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিতে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট।
তিনি জানান,আগামী পাঁচ বছরে তিন ধাপে ভ্যাট আরোপের পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রনসহ অন্যান্য ছোট ইলেকট্রনিক্স পণ্যের স্থানীয় উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে। ২০২৭ সাল থেকে তা হবে সাড়ে ৭ শতাংশ এবং ২০৩০ সাল থেকে তা বেড়ে হবে ১০ শতাংশ। তবে স্বস্তির দিক হচ্ছে— এসব পণ্যের উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম করসহ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি বহাল থাকবে।
এদিকে, ফ্রিজ, ফ্রিজার, এসি ও কম্প্রেসরের উৎপাদন পর্যায়ে এতদিন যে-সব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছিল, সেই সুযোগও বন্ধ হতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের একটি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এসব পণ্যের উৎপাদনে ব্যাপক ছাড় ছিল। এবার বাজেটে সে সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের উৎপাদনেও খরচ বাড়বে এবং সেটির পরিণতিতে বাজারে দামও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ফ্রিজ, এসি ও কম্প্রেসরের উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ওপরেও এবার থেকে ভ্যাট (আগাম করসহ) দিতে হবে। তবে বিদ্যমান বিনিয়োগ সুরক্ষায় ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কিছু ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হবে। মোবাইল ফোন খাতেও আসছে নতুন চাপ। দেশে উৎপাদিত ও সংযোজিত মোবাইল ফোনে বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি থাকলেও নতুন বাজেটে তা বাড়িয়ে ২ থেকে ২.৫ শতাংশ করা হতে পারে। এতে দেশীয় উৎপাদনের মোবাইল ফোনের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
এ ছাড়া, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আয়রন বা স্টিলের এলপিজি সিলিন্ডারে বিদ্যমান সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকছে। এটি কার্যকর হতে পারে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বাজেটে দুঃসংবাদ
স্থানীয়ভাবে লিফট উৎপাদনেও আসছে নতুন ভ্যাট কাঠামো। আগামী অর্থবছর থেকে লিফট উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে, যা পরবর্তী সময়ে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত ধাপে ধাপে সাড়ে ৭ শতাংশ এবং ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। তবে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত লিফটের যন্ত্রাংশ ও উপকরণ আমদানিতে আগাম করসহ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি থাকবে।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আয়ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা। বাজেট উপস্থাপন করা হলেও সংসদ না থাকার কারণে কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট বিষয়ে সাধারণ জনগণের মতামত নেবে এবং সেগুলো বিবেচনায় রেখে বাজেট চূড়ান্ত করা হবে।
চূড়ান্তকরণের পর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সভার সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে অনুমোদন মিললে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে ১ জুলাই থেকে বাজেট কার্যকর করবেন।
ঢাকা/এসএইচ