০২:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

১ হাজার ৩৩৮ কোটি বিক্রি আড়াল করে একমি’র ভ্যাট ফাঁকি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:২৮:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ মে ২০১৮
  • / ৪৫০৮ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মূসক বা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোম্পানি প্রায় এক হাজার ৩৩৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রয়ের আড়ালে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ বিপুল পরিমাণ মূসক ফাঁকি দিয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক্মির এ মূসক ফাঁকি উদ্ঘাটন ও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অপরিশোধিত মূসক পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দাবিনামা জারি ও কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
যদিও ফাঁকির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয় তথ্য অন্যত্র সরিয়ে ফেলার মাধ্যম কোটি কোটি টাকার মূসক ফাঁকি দিয়ে আসছে। সঠিক বিক্রির তথ্য পেলে এ ফাঁকির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বিক্রয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে মূসক চালান প্রদান না করা ও বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মূসক ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পায় এনবিআর। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে নির্দেশ দেয় এনবিআর। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই কল্যাণপুরে এক্মি ল্যাবরেটরিজের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায় মূসক গোয়েন্দা। মূসক গোয়েন্দা সদস্যরা এক্মির দাখিলপত্র ও কম্পিউটারের সফটওয়্যার থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের বিক্রির তথ্য নেয়।
এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকৃত বিক্রয় প্রায় ৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে প্রদর্শন করেছে প্রায় ৫১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। মূসক ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এক মাসে প্রায় ১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা কম বিক্রয় দেখিয়েছে। যার মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি ৪৩ লাখ টাকার মূসক সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ফাঁকি দিয়েছে। এক মাসে বিপুল পরিমাণ মূসক ফাঁকির আলামত পেয়ে মূসক কর্মকর্তারাদের সন্দেহ বেড়ে যায়। পরে ২০১২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটারের সফটওয়্যারে থাকা বিক্রয় তথ্য ও মূসক দলিলাদি দিতে বলা হয়। মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত বিক্রির তথ্য ও দলিলাদি জব্দ করে নিয়ে আসে।
জব্দ করা কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে দাখিলপত্রে যে বিক্রয় তথ্য দেখিয়েছে কম্পিউটারের সফটওয়্যারে সংরক্ষিত প্রকৃত বিক্রিমূল্য অনেক বেশি। এতে প্রমাণ হয়, প্রতিষ্ঠানটি বিশাল অঙ্কের মূসক ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিক্রির তথ্য অন্যত্র সংরক্ষণ করে। দাখিলপত্র ও বিক্রয় হিসেবে সঠিকভাবে তা লিপিবদ্ধ করেনি। প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর এভাবে মূসক ফাঁকি দিয়ে আসছে।
কম্পিউটার সফটওয়্যার হতে প্রাপ্ত বিক্রির তথ্য দাখিলপত্রে প্রদর্শন করা বিক্রিমূল্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মূসকসহ প্রায় এক হাজার ৩৩৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। কিন্তু দাখিলপত্রে এক হাজার ১৮৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রদর্শন করেছে। দাখিলপত্রে প্রায় ১৪৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা কম প্রদর্শন করেছে। যার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের পরিমাণ প্রায় ১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এ ভ্যাট পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। সফটওয়্যারের বাইরে যেসব বিক্রির তথ্য অন্যত্র সংরক্ষণ করা হয় তা পাওয়া গেলে ফাঁকির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে ধারণা করছেন মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
মূসক আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩৭ (৩) অনুযায়ী মাসিক দুই শতাংশ হারে অপরিশোধিত মূসক প্রায় ২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সুদসহ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত প্রায় ৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকার মূসক ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকিকৃত মূসক আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলা করে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর (মূসক) শাখায় ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। মূসক গোয়েন্দা মামলা করে ব্যবস্থা নিতে এলটিইউতে পাঠায়। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির দাখিলপত্র সঠিকভাবে পর্যালোচনা, মূসক চালান নিশ্চিত ও ভ্যাট আদায়ে নজরদারি বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, এলটিইউ মামলা পর্যালোচনা করে চলতি মাসে মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা-৫৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী একমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর প্রাথমিক দাবিনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। নোটিসে বলা হয়, দাবিনামা জারির ১৫ দিনের মধ্যে অপরিশোধিত মূসক কেন পরিশোধ করা হবে না তার কারণ ব্যাখ্যা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে চাইলে জানাতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নোটিসের জবাব না দিলে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ও দলিলাদি বিবেচনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পরিদর্শনে জব্দ করা দলিলাদি পর্যালোচনা ও যাচাই করে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলা করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর-এর একজন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বকেয়া মূসক পরিশোধে প্রাথমিক দাবিনামা জারি ও কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। লিখিতভাবে জানাতে বা ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। জবাব না দিলে মূসক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান সিনহা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। কেন ভ্যাট ফাঁকির মামলা হবে? না জেনে তো কিছু বলতে পারব না।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। ওষুধ-রসায়ন খাতের এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি। আর পরিশোধিত মূলধন ২১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৪০ দশমিক ১২ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দুই দশমিক ৯৬ শতাংশ বিনিয়োগকারী ও ২৮ দশমিক ২৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী। বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির ৫৩০ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ও ৩০২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে।-সূত্র-শেয়ারবিজ্

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x
English Version

১ হাজার ৩৩৮ কোটি বিক্রি আড়াল করে একমি’র ভ্যাট ফাঁকি

আপডেট: ০৮:২৮:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ মে ২০১৮

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মূসক বা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোম্পানি প্রায় এক হাজার ৩৩৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রয়ের আড়ালে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ বিপুল পরিমাণ মূসক ফাঁকি দিয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক্মির এ মূসক ফাঁকি উদ্ঘাটন ও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অপরিশোধিত মূসক পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দাবিনামা জারি ও কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
যদিও ফাঁকির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয় তথ্য অন্যত্র সরিয়ে ফেলার মাধ্যম কোটি কোটি টাকার মূসক ফাঁকি দিয়ে আসছে। সঠিক বিক্রির তথ্য পেলে এ ফাঁকির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বিক্রয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে মূসক চালান প্রদান না করা ও বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মূসক ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পায় এনবিআর। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে নির্দেশ দেয় এনবিআর। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই কল্যাণপুরে এক্মি ল্যাবরেটরিজের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায় মূসক গোয়েন্দা। মূসক গোয়েন্দা সদস্যরা এক্মির দাখিলপত্র ও কম্পিউটারের সফটওয়্যার থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের বিক্রির তথ্য নেয়।
এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকৃত বিক্রয় প্রায় ৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে প্রদর্শন করেছে প্রায় ৫১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। মূসক ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এক মাসে প্রায় ১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা কম বিক্রয় দেখিয়েছে। যার মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি ৪৩ লাখ টাকার মূসক সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ফাঁকি দিয়েছে। এক মাসে বিপুল পরিমাণ মূসক ফাঁকির আলামত পেয়ে মূসক কর্মকর্তারাদের সন্দেহ বেড়ে যায়। পরে ২০১২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটারের সফটওয়্যারে থাকা বিক্রয় তথ্য ও মূসক দলিলাদি দিতে বলা হয়। মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত বিক্রির তথ্য ও দলিলাদি জব্দ করে নিয়ে আসে।
জব্দ করা কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে দাখিলপত্রে যে বিক্রয় তথ্য দেখিয়েছে কম্পিউটারের সফটওয়্যারে সংরক্ষিত প্রকৃত বিক্রিমূল্য অনেক বেশি। এতে প্রমাণ হয়, প্রতিষ্ঠানটি বিশাল অঙ্কের মূসক ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিক্রির তথ্য অন্যত্র সংরক্ষণ করে। দাখিলপত্র ও বিক্রয় হিসেবে সঠিকভাবে তা লিপিবদ্ধ করেনি। প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর এভাবে মূসক ফাঁকি দিয়ে আসছে।
কম্পিউটার সফটওয়্যার হতে প্রাপ্ত বিক্রির তথ্য দাখিলপত্রে প্রদর্শন করা বিক্রিমূল্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মূসকসহ প্রায় এক হাজার ৩৩৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। কিন্তু দাখিলপত্রে এক হাজার ১৮৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রদর্শন করেছে। দাখিলপত্রে প্রায় ১৪৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা কম প্রদর্শন করেছে। যার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের পরিমাণ প্রায় ১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এ ভ্যাট পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। সফটওয়্যারের বাইরে যেসব বিক্রির তথ্য অন্যত্র সংরক্ষণ করা হয় তা পাওয়া গেলে ফাঁকির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে ধারণা করছেন মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
মূসক আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩৭ (৩) অনুযায়ী মাসিক দুই শতাংশ হারে অপরিশোধিত মূসক প্রায় ২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সুদসহ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত প্রায় ৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকার মূসক ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকিকৃত মূসক আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলা করে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর (মূসক) শাখায় ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। মূসক গোয়েন্দা মামলা করে ব্যবস্থা নিতে এলটিইউতে পাঠায়। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির দাখিলপত্র সঠিকভাবে পর্যালোচনা, মূসক চালান নিশ্চিত ও ভ্যাট আদায়ে নজরদারি বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, এলটিইউ মামলা পর্যালোচনা করে চলতি মাসে মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা-৫৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী একমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর প্রাথমিক দাবিনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। নোটিসে বলা হয়, দাবিনামা জারির ১৫ দিনের মধ্যে অপরিশোধিত মূসক কেন পরিশোধ করা হবে না তার কারণ ব্যাখ্যা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে চাইলে জানাতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নোটিসের জবাব না দিলে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ও দলিলাদি বিবেচনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পরিদর্শনে জব্দ করা দলিলাদি পর্যালোচনা ও যাচাই করে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলা করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর-এর একজন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বকেয়া মূসক পরিশোধে প্রাথমিক দাবিনামা জারি ও কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। লিখিতভাবে জানাতে বা ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। জবাব না দিলে মূসক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান সিনহা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। কেন ভ্যাট ফাঁকির মামলা হবে? না জেনে তো কিছু বলতে পারব না।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। ওষুধ-রসায়ন খাতের এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি। আর পরিশোধিত মূলধন ২১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৪০ দশমিক ১২ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দুই দশমিক ৯৬ শতাংশ বিনিয়োগকারী ও ২৮ দশমিক ২৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী। বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির ৫৩০ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ও ৩০২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে।-সূত্র-শেয়ারবিজ্