০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

অ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ার দর উলম্ফনের নেপথ্যে ‘গুজব’!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:৪৩:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ অগাস্ট ২০২১
  • / ৪২৯৬ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ব্যবসায়িক ও আর্থিক অবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই নাজুক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের। ঋণের দায়ে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা মৃতপ্রায়। এ অবস্থায় দীন মোহাম্মদের প্রয়াণের পর তার উত্তরাধিকাররা দেনা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজনে কোম্পানিটি বিক্রি করে দেয়ার ব্যাপারেও মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।

এতে পুঁজিবাজারে গুঞ্জন উঠে যে ইস্পাত খাতের বড় গ্রুপগুলো অ্যাপোলো ইস্পাত কিনে নিচ্ছে। আর এ গুঞ্জনের ওপর ভর ছয় মাস ধরেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী। যদিও শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত কোম্পানিগুলো রুগ্ণ অ্যাপোলো ইস্পাতকে কিনছে না বলে নিশ্চিত করেছে।

দীন মোহাম্মদ ও মো. আনসার আলীর উদ্যোগে অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড যাত্রা করে ১৯৯৪ সালে। সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম কুড়ালেও অ্যাপোলো ইস্পাতের ব্যর্থতার কারণে দীন মোহাম্মদকে বেশ ভুগতে হয়েছে। কোম্পানিটিকে টেনে তুলতে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ ঢেলেও সফল হননি তিনি। উল্টো দিন দিন ঋণের দায় আরো বেড়েছে। এ বছরের ২৬ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাত ১টায় রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দীন মোহাম্মদ। তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা অ্যাপোলো ইস্পাতের ঋণের বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে বড় কোনো শিল্প গ্রুপের কাছে কোম্পানিটিকে বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি তারা বেশ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর কাছে অ্যাপোলো ইস্পাতকে কিনে নেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। যদিও সেটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। তবে এরই মধ্যে এ খবর চাউড় হয়ে যায় পুঁজিবাজারে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে অ্যাপোলো ইস্পাতকে কিনে নিতে চাইছে আবুল খায়ের, বিএসআরএম ও জিপিএইচ ইস্পাতের মতো দেশের ইস্পাত খাতের বড় গ্রুপগুলো। আর এ গুজবকে কেন্দ্র করে এ বছরের এপ্রিল থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, অ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ারদর এ বছরের ৪ এপ্রিল থেকে লাগামহীনভাবে বাড়ছে। গত ৪ এপ্রিল শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ৫ টাকা ১০ পয়সা। এর পর থেকেই শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ১৪ টাকা ৭০ পয়সা। সে হিসাবে এ সময়ে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ।

অন্যদিকে লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির মোট ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর পর থেকে শেয়ারটির লেনদেনের পরিমাণও বাড়তে থাকে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় গত ৬ জুলাই। সেদিন কোম্পানিটির মোট ৩ কোটি ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮টি শেয়ার লেনদেন হয়। আর সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির মোট ২ কোটি ৫১ লাখ ১১ হাজার ৩৭৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

অ্যাপোলো ইস্পাতকে কিনে নেয়ার বিষয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা হয় জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম ও আবুল খায়ের গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন যে কোম্পানিটি কেনার বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ কিংবা উদ্যোগ নেই। এ বিষয়ে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অ্যাপোলো ইস্পাতকে কেনার বিষয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা এ ধরনের কোনো কিছু ভাবছি না।

জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক শেখর রঞ্জন কর বলেন, অ্যাপোলো ইস্পাতের কারখানা যে এলাকায় অবস্থিত সেখানে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমাদের কার্যক্রম চট্টগ্রামভিত্তিক। ফলে কোম্পানিটিকে বিএসআরএম কিনে নিচ্ছে এমন খবর সঠিক নয়।

আবুল খায়ের গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অ্যাপোলো ইস্পাত কেনার কোনো আগ্রহ আমাদের নেই। এ বিষয়ে কোম্পানিটির সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনাও হয়নি।

২০১৩ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাপোলো ইস্পাত বাজারে রানী মার্কা নামে ঢেউটিন বাজারজাত করে। কোম্পানিটির প্রথম সিজিএল ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। দ্বিতীয় সিজিএল ইউনিট উৎপাদনে যায় ২০০২ সালে আর ২০০৫ সালে শুরু হয় সিআরএম ইউনিটের উৎপাদন। সূত্র: বনিকবার্তা 

শেয়ার করুন

x
English Version

অ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ার দর উলম্ফনের নেপথ্যে ‘গুজব’!

আপডেট: ০৮:৪৩:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ অগাস্ট ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ব্যবসায়িক ও আর্থিক অবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই নাজুক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের। ঋণের দায়ে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা মৃতপ্রায়। এ অবস্থায় দীন মোহাম্মদের প্রয়াণের পর তার উত্তরাধিকাররা দেনা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজনে কোম্পানিটি বিক্রি করে দেয়ার ব্যাপারেও মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।

এতে পুঁজিবাজারে গুঞ্জন উঠে যে ইস্পাত খাতের বড় গ্রুপগুলো অ্যাপোলো ইস্পাত কিনে নিচ্ছে। আর এ গুঞ্জনের ওপর ভর ছয় মাস ধরেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী। যদিও শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত কোম্পানিগুলো রুগ্ণ অ্যাপোলো ইস্পাতকে কিনছে না বলে নিশ্চিত করেছে।

দীন মোহাম্মদ ও মো. আনসার আলীর উদ্যোগে অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড যাত্রা করে ১৯৯৪ সালে। সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম কুড়ালেও অ্যাপোলো ইস্পাতের ব্যর্থতার কারণে দীন মোহাম্মদকে বেশ ভুগতে হয়েছে। কোম্পানিটিকে টেনে তুলতে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ ঢেলেও সফল হননি তিনি। উল্টো দিন দিন ঋণের দায় আরো বেড়েছে। এ বছরের ২৬ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাত ১টায় রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দীন মোহাম্মদ। তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা অ্যাপোলো ইস্পাতের ঋণের বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে বড় কোনো শিল্প গ্রুপের কাছে কোম্পানিটিকে বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি তারা বেশ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর কাছে অ্যাপোলো ইস্পাতকে কিনে নেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। যদিও সেটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। তবে এরই মধ্যে এ খবর চাউড় হয়ে যায় পুঁজিবাজারে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে অ্যাপোলো ইস্পাতকে কিনে নিতে চাইছে আবুল খায়ের, বিএসআরএম ও জিপিএইচ ইস্পাতের মতো দেশের ইস্পাত খাতের বড় গ্রুপগুলো। আর এ গুজবকে কেন্দ্র করে এ বছরের এপ্রিল থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, অ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ারদর এ বছরের ৪ এপ্রিল থেকে লাগামহীনভাবে বাড়ছে। গত ৪ এপ্রিল শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ৫ টাকা ১০ পয়সা। এর পর থেকেই শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ১৪ টাকা ৭০ পয়সা। সে হিসাবে এ সময়ে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ।

অন্যদিকে লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির মোট ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর পর থেকে শেয়ারটির লেনদেনের পরিমাণও বাড়তে থাকে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় গত ৬ জুলাই। সেদিন কোম্পানিটির মোট ৩ কোটি ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮টি শেয়ার লেনদেন হয়। আর সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির মোট ২ কোটি ৫১ লাখ ১১ হাজার ৩৭৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

অ্যাপোলো ইস্পাতকে কিনে নেয়ার বিষয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা হয় জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম ও আবুল খায়ের গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন যে কোম্পানিটি কেনার বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ কিংবা উদ্যোগ নেই। এ বিষয়ে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অ্যাপোলো ইস্পাতকে কেনার বিষয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা এ ধরনের কোনো কিছু ভাবছি না।

জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক শেখর রঞ্জন কর বলেন, অ্যাপোলো ইস্পাতের কারখানা যে এলাকায় অবস্থিত সেখানে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমাদের কার্যক্রম চট্টগ্রামভিত্তিক। ফলে কোম্পানিটিকে বিএসআরএম কিনে নিচ্ছে এমন খবর সঠিক নয়।

আবুল খায়ের গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অ্যাপোলো ইস্পাত কেনার কোনো আগ্রহ আমাদের নেই। এ বিষয়ে কোম্পানিটির সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনাও হয়নি।

২০১৩ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাপোলো ইস্পাত বাজারে রানী মার্কা নামে ঢেউটিন বাজারজাত করে। কোম্পানিটির প্রথম সিজিএল ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। দ্বিতীয় সিজিএল ইউনিট উৎপাদনে যায় ২০০২ সালে আর ২০০৫ সালে শুরু হয় সিআরএম ইউনিটের উৎপাদন। সূত্র: বনিকবার্তা