০৬:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

একীভূত হওয়ার তালিকায় আরও যেসব ব্যাংক

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৩০:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
  • / ৫০২৮ বার দেখা হয়েছে

দেশের দুর্বল বা খারাপ ব্যাংকগুলোকে সবল বা ভালো ব্যাংকের সাথে একীভূত (মার্জ) করার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে আরো শক্তিশালি কারার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের একীভূতকরণের ঘোষণার পর এবার তালিকায় এসেছে সরকারি-বেসরকারি আরও ডজনখানেকের নাম। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ করেই সুশাসন ফেরানো যাবে না এই খাতে। ব্যবস্থা নিতে হবে দায়ী পরিচালকদের বিরুদ্ধেও।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সম্প্রতি ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, যার নয়টি ইতিমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক; এর মধ্যে তিনটি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।

এসব ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের মাত্রা, মূলধনের পর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত ও প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা স‌ঞ্চি‌তির পরিমাণ- এই চারটি দিক বিবেচনায় নি‌য়ে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এবার একীভূতকরণের তালিকায় এসেছে সরকারি-বেসরকারি আরও ডজনখানেকের নাম।

ব্যাংকগুলো হলো- বেসরকারি ন্যাশনাল, এবি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার মধ্যে রয়েছে বেসিক, বিডিবিএল এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনো এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অস্পষ্ট রয়েছে বহু বিষয়। এমন অবস্থায় গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে দ্রুত উদ্যোগের দাবি সাবেক ব্যাংকারদের।

এবিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট আরফান আলী বলেন, নতুন এনটিটিতে শেয়ার মানি যদি ইনজেক্ট করতে হয়, তাহলে কারা করবে সেটা নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া যে ব্যাংক বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সেটা কয়টা শেয়ার পাবে তা নির্ধারিত হবে। আশা করি, বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধরনের গাইডলাইন দিয়ে এগিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন: ‘দূর্বল ব্যাংক মার্জারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ’

সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে সেগুলোকে পর্যবেক্ষণ করবে তারা। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অবশ্য দেশের আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে এমনটা হলে হবে না। শুরু থেকে তারা যদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতো, তাহলে হয়তো এই সমস্যা হতো না।

একীভূত হওয়ার উদ্যোগ শুরুর পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায়, ব্যাংক পরিচালকদের ভবিষ্যৎ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিষ্ঠান দুর্বল হওয়ার পেছনে বড় দায় রয়েছে তাদের। তাই আইনের আওতায় এতে শাস্তির বিধানও চান তারা। আরফান আলী বলেন, একটা ব্যাংক চালু করে তারা চালাতে পারেনি। এটাও বড় ব্যর্থতা ও গ্লানি। এসব জাতির সামনে চলে এসেছে। যারা অতি উৎসাহী হয়ে ব্যাংক চালাতে যাচ্ছেন, কিন্তু গভর্ন্যান্স মানছেন না। তাদের জন্যেই তো এই দুরবস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথমেই খেয়াল রাখতে দুর্বল হওয়া ব্যাংকের কোনো পরিচালকই যাতে একীভূত হওয়ার পর সদস্য না হতে পারে। এছাড়া যাদের কারণে ব্যাংক ধুঁকছে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, ব্যাংকের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে। তারা ভয় পাবে।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেরা আলোচনা করে একীভূত হওয়ার সুযোগ পাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এই সময়ে ব্যর্থ হলে পরে মার্চে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

x
English Version

একীভূত হওয়ার তালিকায় আরও যেসব ব্যাংক

আপডেট: ১১:৩০:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

দেশের দুর্বল বা খারাপ ব্যাংকগুলোকে সবল বা ভালো ব্যাংকের সাথে একীভূত (মার্জ) করার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে আরো শক্তিশালি কারার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের একীভূতকরণের ঘোষণার পর এবার তালিকায় এসেছে সরকারি-বেসরকারি আরও ডজনখানেকের নাম। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ করেই সুশাসন ফেরানো যাবে না এই খাতে। ব্যবস্থা নিতে হবে দায়ী পরিচালকদের বিরুদ্ধেও।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সম্প্রতি ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, যার নয়টি ইতিমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক; এর মধ্যে তিনটি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।

এসব ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের মাত্রা, মূলধনের পর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত ও প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা স‌ঞ্চি‌তির পরিমাণ- এই চারটি দিক বিবেচনায় নি‌য়ে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এবার একীভূতকরণের তালিকায় এসেছে সরকারি-বেসরকারি আরও ডজনখানেকের নাম।

ব্যাংকগুলো হলো- বেসরকারি ন্যাশনাল, এবি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার মধ্যে রয়েছে বেসিক, বিডিবিএল এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনো এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অস্পষ্ট রয়েছে বহু বিষয়। এমন অবস্থায় গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে দ্রুত উদ্যোগের দাবি সাবেক ব্যাংকারদের।

এবিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট আরফান আলী বলেন, নতুন এনটিটিতে শেয়ার মানি যদি ইনজেক্ট করতে হয়, তাহলে কারা করবে সেটা নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া যে ব্যাংক বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সেটা কয়টা শেয়ার পাবে তা নির্ধারিত হবে। আশা করি, বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধরনের গাইডলাইন দিয়ে এগিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন: ‘দূর্বল ব্যাংক মার্জারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ’

সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে সেগুলোকে পর্যবেক্ষণ করবে তারা। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অবশ্য দেশের আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে এমনটা হলে হবে না। শুরু থেকে তারা যদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতো, তাহলে হয়তো এই সমস্যা হতো না।

একীভূত হওয়ার উদ্যোগ শুরুর পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায়, ব্যাংক পরিচালকদের ভবিষ্যৎ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিষ্ঠান দুর্বল হওয়ার পেছনে বড় দায় রয়েছে তাদের। তাই আইনের আওতায় এতে শাস্তির বিধানও চান তারা। আরফান আলী বলেন, একটা ব্যাংক চালু করে তারা চালাতে পারেনি। এটাও বড় ব্যর্থতা ও গ্লানি। এসব জাতির সামনে চলে এসেছে। যারা অতি উৎসাহী হয়ে ব্যাংক চালাতে যাচ্ছেন, কিন্তু গভর্ন্যান্স মানছেন না। তাদের জন্যেই তো এই দুরবস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথমেই খেয়াল রাখতে দুর্বল হওয়া ব্যাংকের কোনো পরিচালকই যাতে একীভূত হওয়ার পর সদস্য না হতে পারে। এছাড়া যাদের কারণে ব্যাংক ধুঁকছে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, ব্যাংকের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে। তারা ভয় পাবে।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেরা আলোচনা করে একীভূত হওয়ার সুযোগ পাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এই সময়ে ব্যর্থ হলে পরে মার্চে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঢাকা/এসএম