০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফল নিয়ে অসন্তোষ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:০৯:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১
  • / ৪১৩৫ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ফল গত ২০ জুলাই প্রকাশ করা হয়েছে। এবার গড় পাসের হার ৭২ শতাংশ। সোমবার (২৬ জুলাই) এ সমন্বিত ফলাফল (CGPA) প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সারাদেশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তাদের অভিযোগ, সশরীরে পরীক্ষায় অংশ নিলেও ফলাফলে অনেককে অনুপস্থিত দেখিয়ে ফেল করানো হয়েছে। দায়সারাভাবে খাতা মূল্যায়ন করায় ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফেল করেছেন অনেকে। ফল নিয়ে অসন্তোষে থাকা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। আন্দোলনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছেন তারা। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার মধ্যে প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভাইভা নেওয়া হয়েছে। এখানে কাউকে অনুপস্থিত দেখাতে পারে। তবে এটা সংশোধনের সুযোগ আছে। করোনার অজুহাতে অনেকেই পাস চাচ্ছেন। এটা তো সম্ভব না। চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পরীক্ষা দিয়েছিলেন মো. ফরহাদ। রেজাল্ট শিটে দেখা গেছে তিনি ‘ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে ফেল করেছেন। এই পরীক্ষার্থীর দাবি কোনোভাবেই তার ফেল করার কথা না। 

একই কলেজের আফরিন সুলতানা জানান, তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড’ বিষয়ে ফেল করেছেন। অথচ তিনি এ বিষয়ে খুব ভাল পরীক্ষা দিয়েছেন। চাঁদপুরের পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন উম্মে হাবিবা। সবগুলো বিষয়ে ভালো জিপিএ পেলেও ‘রিসার্চ মেথোডোলজি’ বিষয়ে ফেল করেছেন তিনি। 

সব পরীক্ষায় অংশ নিলেও ‘ওয়েস্টার্ন লিটারেরি থিওরি’ বিষয়ের পরীক্ষায় অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে মুহাম্মদ আলী আনছারকে। তিনি গভ. সিটি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। 

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এদিকে, কোনো কোনো শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন গণহারে ফেল করানোর। তেজগাঁও কলেজ থেকে পরীক্ষা অংশ নেন শাহাদাত হোসাইন। ফলাফলে দেখা গেছে, ‘অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার’ বিষয়ে তাকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। শাহাদাত অভিযোগ করেন, তার কলেজে অনেক শিক্ষার্থীকে গণহারে এই বিষয়ে এফ গ্রেড দেওয়া হয়েছে। খাতা দেখায় অসঙ্গতির কারণেই এমন ফলাফল বলে দাবি তার।

টাঙ্গাইলের সখিপুর রেসিডেন্সিয়াল মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থী সোনিয়া আকতার রিমা জানান, তাকেও ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে ফেল দেখানো হয়েছে। অথচ খুব ভালো পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ইমরান আলী। ফলাফলে তাকে ‘পপুলেশন অ্যান্ড হেলথ ইকোনমিকস্’ বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। ইমরান বলেন, আমার শিক্ষাজীবনে অকৃতকার্য হওয়ার রেকর্ড নাই। খাতা দেখায় অসঙ্গতি না থাকলে পাস করতাম।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা শুরু হয়। করোনার কারণে দফায় দফায় পরিবর্তন করা হয় পরীক্ষাসূচির। এরপর চলতি বছরের জুনে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই পরীক্ষা শেষ হয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, জুনে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করার পর তাড়াহুড়া করে ফল প্রকাশের কারণেই নানা অসঙ্গতির সৃষ্টি হয়েছে। 

ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীরা বলছেন, পরীক্ষা শুরুর পর করোনা হানা দেওয়ায় শুধু চতুর্থ বর্ষেই প্রায় আড়াই বছর কেটে যাচ্ছে। এরমধ্যে খাতা দেখায় অসঙ্গতির ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা ফেল করলে আরেক বছর পিছিয়ে যাবে। এছাড়া পুনঃমূল্যায়নের আবেদন, ফরম পূরণ ছাড়াও বিভিন্ন খাতে অনেক টাকাও খরচ হবে তাদের। সবমিলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের। তাই পুরো ফল খতিয়ে দেখার আবেদন করেছেন তারা।

জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, কলেজের শিক্ষকরাই খাতা মূল্যায়ন করেন। শুধু ফল প্রকাশের দায়িত্ব থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিংয়ে কোথাও ভুল হতে পারে, যেটা খুব সামান্য। এমনটি হলে সংশোধন করা হবে। শিক্ষার্থীরা যদি মনে করেন যথাযথ ফল পাননি, সেক্ষেত্রে তার পুনঃমূল্যায়নের আবেদনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনেকে করোনার দোহাই দিয়ে পাস চাইছেন, তা সম্ভব নয়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কেউ ফেল করবে কেউ পাস করবে এটাই স্বাভাবিক।

উপাচার্য বলেন, কেউ পরীক্ষায় অংশ নিলে তার তো রেকর্ড রয়েছেই। তাছাড়া মৌখিক পরীক্ষা জুম প্লাটফর্মে নেওয়া হয়েছে। তাই কে কে পরীক্ষা দিয়েছেন সেই রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। পরীক্ষায় উপস্থিত থেকেও কাউকে অনুপস্থিত দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পেলে ফল সংশোধন করা হবে।

ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন ২৯ জুলাই থেকে

২০১৯ সালের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলের উত্তরপত্র পুন:নিরীক্ষণের জন্য আগামী ২৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টা থেকে ২১ আগস্ট (শনিবার) রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। 

২২ আগস্ট (রোববার) বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যাবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (www.nu.ac.bd) এ বিষয়ে তথ্য জানা যাবে। 

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফল নিয়ে অসন্তোষ

আপডেট: ০১:০৯:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ফল গত ২০ জুলাই প্রকাশ করা হয়েছে। এবার গড় পাসের হার ৭২ শতাংশ। সোমবার (২৬ জুলাই) এ সমন্বিত ফলাফল (CGPA) প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সারাদেশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তাদের অভিযোগ, সশরীরে পরীক্ষায় অংশ নিলেও ফলাফলে অনেককে অনুপস্থিত দেখিয়ে ফেল করানো হয়েছে। দায়সারাভাবে খাতা মূল্যায়ন করায় ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফেল করেছেন অনেকে। ফল নিয়ে অসন্তোষে থাকা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। আন্দোলনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছেন তারা। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার মধ্যে প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভাইভা নেওয়া হয়েছে। এখানে কাউকে অনুপস্থিত দেখাতে পারে। তবে এটা সংশোধনের সুযোগ আছে। করোনার অজুহাতে অনেকেই পাস চাচ্ছেন। এটা তো সম্ভব না। চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পরীক্ষা দিয়েছিলেন মো. ফরহাদ। রেজাল্ট শিটে দেখা গেছে তিনি ‘ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে ফেল করেছেন। এই পরীক্ষার্থীর দাবি কোনোভাবেই তার ফেল করার কথা না। 

একই কলেজের আফরিন সুলতানা জানান, তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড’ বিষয়ে ফেল করেছেন। অথচ তিনি এ বিষয়ে খুব ভাল পরীক্ষা দিয়েছেন। চাঁদপুরের পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন উম্মে হাবিবা। সবগুলো বিষয়ে ভালো জিপিএ পেলেও ‘রিসার্চ মেথোডোলজি’ বিষয়ে ফেল করেছেন তিনি। 

সব পরীক্ষায় অংশ নিলেও ‘ওয়েস্টার্ন লিটারেরি থিওরি’ বিষয়ের পরীক্ষায় অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে মুহাম্মদ আলী আনছারকে। তিনি গভ. সিটি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। 

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এদিকে, কোনো কোনো শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন গণহারে ফেল করানোর। তেজগাঁও কলেজ থেকে পরীক্ষা অংশ নেন শাহাদাত হোসাইন। ফলাফলে দেখা গেছে, ‘অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার’ বিষয়ে তাকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। শাহাদাত অভিযোগ করেন, তার কলেজে অনেক শিক্ষার্থীকে গণহারে এই বিষয়ে এফ গ্রেড দেওয়া হয়েছে। খাতা দেখায় অসঙ্গতির কারণেই এমন ফলাফল বলে দাবি তার।

টাঙ্গাইলের সখিপুর রেসিডেন্সিয়াল মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থী সোনিয়া আকতার রিমা জানান, তাকেও ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে ফেল দেখানো হয়েছে। অথচ খুব ভালো পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ইমরান আলী। ফলাফলে তাকে ‘পপুলেশন অ্যান্ড হেলথ ইকোনমিকস্’ বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। ইমরান বলেন, আমার শিক্ষাজীবনে অকৃতকার্য হওয়ার রেকর্ড নাই। খাতা দেখায় অসঙ্গতি না থাকলে পাস করতাম।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা শুরু হয়। করোনার কারণে দফায় দফায় পরিবর্তন করা হয় পরীক্ষাসূচির। এরপর চলতি বছরের জুনে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই পরীক্ষা শেষ হয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, জুনে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করার পর তাড়াহুড়া করে ফল প্রকাশের কারণেই নানা অসঙ্গতির সৃষ্টি হয়েছে। 

ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীরা বলছেন, পরীক্ষা শুরুর পর করোনা হানা দেওয়ায় শুধু চতুর্থ বর্ষেই প্রায় আড়াই বছর কেটে যাচ্ছে। এরমধ্যে খাতা দেখায় অসঙ্গতির ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা ফেল করলে আরেক বছর পিছিয়ে যাবে। এছাড়া পুনঃমূল্যায়নের আবেদন, ফরম পূরণ ছাড়াও বিভিন্ন খাতে অনেক টাকাও খরচ হবে তাদের। সবমিলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের। তাই পুরো ফল খতিয়ে দেখার আবেদন করেছেন তারা।

জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, কলেজের শিক্ষকরাই খাতা মূল্যায়ন করেন। শুধু ফল প্রকাশের দায়িত্ব থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিংয়ে কোথাও ভুল হতে পারে, যেটা খুব সামান্য। এমনটি হলে সংশোধন করা হবে। শিক্ষার্থীরা যদি মনে করেন যথাযথ ফল পাননি, সেক্ষেত্রে তার পুনঃমূল্যায়নের আবেদনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনেকে করোনার দোহাই দিয়ে পাস চাইছেন, তা সম্ভব নয়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কেউ ফেল করবে কেউ পাস করবে এটাই স্বাভাবিক।

উপাচার্য বলেন, কেউ পরীক্ষায় অংশ নিলে তার তো রেকর্ড রয়েছেই। তাছাড়া মৌখিক পরীক্ষা জুম প্লাটফর্মে নেওয়া হয়েছে। তাই কে কে পরীক্ষা দিয়েছেন সেই রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। পরীক্ষায় উপস্থিত থেকেও কাউকে অনুপস্থিত দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পেলে ফল সংশোধন করা হবে।

ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন ২৯ জুলাই থেকে

২০১৯ সালের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলের উত্তরপত্র পুন:নিরীক্ষণের জন্য আগামী ২৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টা থেকে ২১ আগস্ট (শনিবার) রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। 

২২ আগস্ট (রোববার) বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যাবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (www.nu.ac.bd) এ বিষয়ে তথ্য জানা যাবে। 

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: