০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুরের বিরুদ্ধে মামলা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:৪০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২
  • / ৪১৫৩ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাত এবং এ সংক্রান্ত তথ্য ডাটাবেজ থেকে মুছে ফেলার অভিযোগে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

গত ২৪ মার্চ আইডিআরএর অফিস সহকারী এমদাদুল হক ডিএমপির গুলশান থানায় মামলাটির আবেদন করেন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে গত মঙ্গলবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি নথিভুক্ত হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক ওয়ালিয়ার রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ একটি মামলা দায়ের করেছে। নিয়ম মেনে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

মনজুরুর ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন তার মেয়ে ডেল্টা লাইফের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমান, ছেলে বোর্ড পরিচালক জিয়াদ রহমান, কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইটি ইনচার্জ কাজী এহতেশাম ফয়সাল, সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মো. মহসিন রেজা, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) মিল্টন বেপারী, জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পল্লব ভৌমিক এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আসাদুজ্জামান মল্লিক।

আইডিআরএর একটি সূত্র বলছে, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের যেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে, ডাটাবেজ থেকে তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলার ক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

সংস্থাটি বলছে, অডিট কার্যক্রম ব্যহত করা এবং অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি আড়াল করার উদ্দেশেই পরিকল্পিতভাবে এসব তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলার এজাহারে আইডিআরএ উল্লেখ করেছে, আসামিরা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অবস্থায় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চলমান নিরীক্ষা কার্যক্রম ব্যহত করার এবং অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি আড়াল করতে কোম্পানির ভিপি এবং আইটি ইনচার্জ কাজী এহতেশাম ফয়সাল এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মো. মহসিন রেজা ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলেন।

মনজুরুর রহমানসহ বাকি আসামিদের নির্দেশে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তারা এমন অপরাধ সংঘটিত করেন। পাশাপাশি কোম্পানির প্রশাসক এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আইটি বিভাগের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ধারণ, স্থানান্তর, হ্যাকিং এবং কম্পিউটার সিস্টেমে অবৈধ নজরদারি করেন। এমনকি প্রয়োজনমতো তথ্য বিন্যাস, বাতিল ও পরিবর্তন করেছেন।

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর নির্দেশে পরিচালিত অডিটে ২৫টি এবং ২২টি অডিট আপত্তি প্রকাশিত হয়।

পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষ কোম্পানি পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করেন। বর্তমানে আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ও একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের মাধ্যমে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের নিরীক্ষা কার্যক্রম চলছে।

এর অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ২৭ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কোম্পানির ভিপি এবং আইটি ইনচার্জ কাজী এহতেশাম ফয়সাল, এভিপি শেখ মো. মহসিন রেজার কাছে গণ-গ্রামীণ বীমা বিভাগের ডাটাবেজের তথ্য চেয়ে চাহিদাপত্র দেয়া হয়।

কিন্তু সে সময় মনজুরুর রহমানসহ অন্য আসামিদের নির্দেশ ও সহায়তায় তথ্য প্রদান না করে নিরীক্ষা কার্যক্রম ব্যহতের উদ্দেশে তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলার পাশাপাশি পরিবর্তনও করেছে।

ডাটাবেজ থেকে তথ্য মুছে ফেলার মৌখিক অভিযোগ পেয়ে গত ৪ নভেম্বর ডেল্টা লাইফের কার্যালয় পরিদর্শনে যায় আইডিআরএ। পরিদর্শন শেষে সংস্থাটি জানায়, এই সময় তারা শেখ মো. মহসিন রেজার কম্পিউটার থেকে ডাটা মুছে ফেলা এবং পরিবর্তনের প্রাথমিক আলামত পায়। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলা এবং পরিবর্তনের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণে পেশাদার অডিট ফার্ম একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গত ৩০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী রিপোর্টে ডাটাবেজ থেকে তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলার মাধ্যমে কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেমের ডাটাবেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সত্যতা পায়। পরবর্তী সময়ে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত একনাবিনের রিপোর্টের ১৩৪ থেকে ১৪৮ পৃষ্ঠায় অর্থাৎ ১৫টি পৃষ্ঠায় ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে তথ্য মুছে ফেলা ও পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়।

নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, সে সময় অডিট ট্রেইল লগ চালু না থাকার কারণে কোনো কোনো তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

একনাবিনের বরাত দিয়ে আইডিআরএ জানায়, ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর অডিট প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ডেল্টা লাইফের অডিট ট্রেইল লগটি চালু ছিল না। ডাটা মুছে ফেলার বিষয়ে অভিযোগের পর আইটি বিভাগের ভিপি কাজী এহতেশাম ফয়সাল গত ১১ নভেম্বর তার স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে জানান, তারা অডিট ট্রেইল লগটি চালু করেছেন। অর্থাৎ আগে থেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্নীতি এবং অনিয়ম গোপন করার উদ্দেশে ডাটাবেজ থেকে তথ্য মুছে ফেলতে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রেইল লগটি বন্ধ করা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন সংশ্লিষ্টরা।

আইডিআরএ আরও জানায়, শেখ মো. মহসিন রেজা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বীকার করেছেন, কালেকশন টেবিল আপডেট হচ্ছিল। মানি রিসিট ও প্রিমিয়াম রিসিট এন্ট্রি করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেম সফটওয়্যার কালেকশন টেবিলটি আপডেট করে নেয়। অডিট কার্যক্রম ব্যহত করার উদ্দেশেই অন্যায়ভাবে মানি রিসিট ও প্রিমিয়াম রিসিট পরিবর্তন করা হয়েছিল। ফলে কালেকশন টেবিল আপডেট হয়েছিল।

তথ্য মুছে ফেলার বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য এভিপি জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া এবং ইও নুর আলমের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির গত ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত রিপোর্টেও তথ্য মুছে ফেলার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। মনজুরুর রহমানসহ এসব আসামির বিরুদ্ধে গত ২৩ জানুয়ারির স্মারক অনুযায়ী ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএ কর্তৃক বরখাস্তকৃত ডেল্টা লাইফের পর্ষদ সদস্য জিয়াদ রহমান বলেন, ‘মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মনজুরুর রহমানকে। অথচ তিনি চার বছর ধরে কোম্পানির পর্ষদে নেই। আমাদের পর্ষদ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে দেড় বছর হলো। তাহেলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে আমরা কীভাবে ডাটা ডিলিট করেছি। যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, সে সময় কোম্পানি আইডিআরএর নিয়োগ করা প্রশাসকের মাধ্যমে চলছিল।’

তিনি বলেন, ‘তাছাড়া সিসিটিভির রেকর্ড পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে যে কেউ ডাটা ডিলিট করেনি। ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পাশাপাশি দুদকও এই বিষয়ে তদন্ত করছে।’

‘সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিমা কোম্পানিতে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের আইনবহির্ভূত বিনিয়োগের বিষয়টি তদন্তের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একটি কমিটি গঠন করেছে। এসব কারণে আমাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন’—যোগ করেন জিয়াদ রহমান।

উল্লেখ্য, পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে আইডিআরএ কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করে কোম্পানিটির পর্ষদ। পাশাপাশি কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করা হয়, যা বর্তমানে দুদক অনুসন্ধান করে দেখছে। অন্যদিকে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেও কোম্পানিটির পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা করা হয়েছে।

এর আগে ডেলটা লাইফের ২৫ লাখ গ্রাহকের আমানত লোপাট করার অভিযোগ উঠে মনজুরুর রহমানের বিরুদ্ধে। যা থেকে ১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা লোপাটের প্রাথমিক তথ্য- প্রমাণও পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মনজুরুর রহমান বর্তমানে বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

x
English Version

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুরের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট: ০৭:৪০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাত এবং এ সংক্রান্ত তথ্য ডাটাবেজ থেকে মুছে ফেলার অভিযোগে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

গত ২৪ মার্চ আইডিআরএর অফিস সহকারী এমদাদুল হক ডিএমপির গুলশান থানায় মামলাটির আবেদন করেন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে গত মঙ্গলবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি নথিভুক্ত হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক ওয়ালিয়ার রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ একটি মামলা দায়ের করেছে। নিয়ম মেনে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

মনজুরুর ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন তার মেয়ে ডেল্টা লাইফের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমান, ছেলে বোর্ড পরিচালক জিয়াদ রহমান, কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইটি ইনচার্জ কাজী এহতেশাম ফয়সাল, সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মো. মহসিন রেজা, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) মিল্টন বেপারী, জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পল্লব ভৌমিক এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আসাদুজ্জামান মল্লিক।

আইডিআরএর একটি সূত্র বলছে, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের যেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে, ডাটাবেজ থেকে তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলার ক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

সংস্থাটি বলছে, অডিট কার্যক্রম ব্যহত করা এবং অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি আড়াল করার উদ্দেশেই পরিকল্পিতভাবে এসব তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলার এজাহারে আইডিআরএ উল্লেখ করেছে, আসামিরা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অবস্থায় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চলমান নিরীক্ষা কার্যক্রম ব্যহত করার এবং অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি আড়াল করতে কোম্পানির ভিপি এবং আইটি ইনচার্জ কাজী এহতেশাম ফয়সাল এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মো. মহসিন রেজা ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলেন।

মনজুরুর রহমানসহ বাকি আসামিদের নির্দেশে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তারা এমন অপরাধ সংঘটিত করেন। পাশাপাশি কোম্পানির প্রশাসক এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আইটি বিভাগের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ধারণ, স্থানান্তর, হ্যাকিং এবং কম্পিউটার সিস্টেমে অবৈধ নজরদারি করেন। এমনকি প্রয়োজনমতো তথ্য বিন্যাস, বাতিল ও পরিবর্তন করেছেন।

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর নির্দেশে পরিচালিত অডিটে ২৫টি এবং ২২টি অডিট আপত্তি প্রকাশিত হয়।

পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষ কোম্পানি পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করেন। বর্তমানে আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ও একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের মাধ্যমে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের নিরীক্ষা কার্যক্রম চলছে।

এর অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ২৭ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কোম্পানির ভিপি এবং আইটি ইনচার্জ কাজী এহতেশাম ফয়সাল, এভিপি শেখ মো. মহসিন রেজার কাছে গণ-গ্রামীণ বীমা বিভাগের ডাটাবেজের তথ্য চেয়ে চাহিদাপত্র দেয়া হয়।

কিন্তু সে সময় মনজুরুর রহমানসহ অন্য আসামিদের নির্দেশ ও সহায়তায় তথ্য প্রদান না করে নিরীক্ষা কার্যক্রম ব্যহতের উদ্দেশে তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলার পাশাপাশি পরিবর্তনও করেছে।

ডাটাবেজ থেকে তথ্য মুছে ফেলার মৌখিক অভিযোগ পেয়ে গত ৪ নভেম্বর ডেল্টা লাইফের কার্যালয় পরিদর্শনে যায় আইডিআরএ। পরিদর্শন শেষে সংস্থাটি জানায়, এই সময় তারা শেখ মো. মহসিন রেজার কম্পিউটার থেকে ডাটা মুছে ফেলা এবং পরিবর্তনের প্রাথমিক আলামত পায়। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলা এবং পরিবর্তনের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণে পেশাদার অডিট ফার্ম একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গত ৩০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী রিপোর্টে ডাটাবেজ থেকে তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলার মাধ্যমে কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেমের ডাটাবেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সত্যতা পায়। পরবর্তী সময়ে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত একনাবিনের রিপোর্টের ১৩৪ থেকে ১৪৮ পৃষ্ঠায় অর্থাৎ ১৫টি পৃষ্ঠায় ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে তথ্য মুছে ফেলা ও পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়।

নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, সে সময় অডিট ট্রেইল লগ চালু না থাকার কারণে কোনো কোনো তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

একনাবিনের বরাত দিয়ে আইডিআরএ জানায়, ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর অডিট প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ডেল্টা লাইফের অডিট ট্রেইল লগটি চালু ছিল না। ডাটা মুছে ফেলার বিষয়ে অভিযোগের পর আইটি বিভাগের ভিপি কাজী এহতেশাম ফয়সাল গত ১১ নভেম্বর তার স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে জানান, তারা অডিট ট্রেইল লগটি চালু করেছেন। অর্থাৎ আগে থেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্নীতি এবং অনিয়ম গোপন করার উদ্দেশে ডাটাবেজ থেকে তথ্য মুছে ফেলতে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রেইল লগটি বন্ধ করা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন সংশ্লিষ্টরা।

আইডিআরএ আরও জানায়, শেখ মো. মহসিন রেজা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বীকার করেছেন, কালেকশন টেবিল আপডেট হচ্ছিল। মানি রিসিট ও প্রিমিয়াম রিসিট এন্ট্রি করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেম সফটওয়্যার কালেকশন টেবিলটি আপডেট করে নেয়। অডিট কার্যক্রম ব্যহত করার উদ্দেশেই অন্যায়ভাবে মানি রিসিট ও প্রিমিয়াম রিসিট পরিবর্তন করা হয়েছিল। ফলে কালেকশন টেবিল আপডেট হয়েছিল।

তথ্য মুছে ফেলার বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য এভিপি জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া এবং ইও নুর আলমের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির গত ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত রিপোর্টেও তথ্য মুছে ফেলার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। মনজুরুর রহমানসহ এসব আসামির বিরুদ্ধে গত ২৩ জানুয়ারির স্মারক অনুযায়ী ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএ কর্তৃক বরখাস্তকৃত ডেল্টা লাইফের পর্ষদ সদস্য জিয়াদ রহমান বলেন, ‘মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মনজুরুর রহমানকে। অথচ তিনি চার বছর ধরে কোম্পানির পর্ষদে নেই। আমাদের পর্ষদ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে দেড় বছর হলো। তাহেলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে আমরা কীভাবে ডাটা ডিলিট করেছি। যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, সে সময় কোম্পানি আইডিআরএর নিয়োগ করা প্রশাসকের মাধ্যমে চলছিল।’

তিনি বলেন, ‘তাছাড়া সিসিটিভির রেকর্ড পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে যে কেউ ডাটা ডিলিট করেনি। ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পাশাপাশি দুদকও এই বিষয়ে তদন্ত করছে।’

‘সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিমা কোম্পানিতে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের আইনবহির্ভূত বিনিয়োগের বিষয়টি তদন্তের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একটি কমিটি গঠন করেছে। এসব কারণে আমাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন’—যোগ করেন জিয়াদ রহমান।

উল্লেখ্য, পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে আইডিআরএ কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করে কোম্পানিটির পর্ষদ। পাশাপাশি কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করা হয়, যা বর্তমানে দুদক অনুসন্ধান করে দেখছে। অন্যদিকে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেও কোম্পানিটির পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা করা হয়েছে।

এর আগে ডেলটা লাইফের ২৫ লাখ গ্রাহকের আমানত লোপাট করার অভিযোগ উঠে মনজুরুর রহমানের বিরুদ্ধে। যা থেকে ১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা লোপাটের প্রাথমিক তথ্য- প্রমাণও পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মনজুরুর রহমান বর্তমানে বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন।

ঢাকা/টিএ