১১:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

তাজমহলের তালাবন্ধ ঘরগুলোতে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:০০:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ মে ২০২২
  • / ৪১৬৯ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: তাজমহলের তালাবদ্ধ ঘরগুলোতে সত্যিই কি কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? ভারতের একটি হাইকোর্টের বিচারকরা তা মনে করেননি। সে কারণেই তারা ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির একজন স্থানীয় পর্যায়ের নেতার আনা একটি অবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

রাজেশ সিং তার আবেদনে দাবি করেন, তাজমহলের ২০টিরও বেশি ‘স্থায়ীভাবে তালাবদ্ধ’ কক্ষগুলো খুলে দেওয়া হোক যাতে ‘এই সৌধের প্রকৃত ইতিহাস’ বেরিয়ে আসে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সিং খুব পরিষ্কারভাবেই আদালতকে বলেন, তিনি দেখতে চান তাজমহলের ভেতরের তালা দেওয়া ঘরগুলোতে হিন্দু দেবতা শিবের একটি মন্দির রয়েছে বলে যে ‘দাবি ঐতিহাসিকরা এবং ভক্তরা করেন’, তা যথার্থ কি না।

আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে অসামান্য সুন্দর এই সৌধটি তৈরি হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীতে। মোগল সম্রাট শাহজাহান তার মৃত স্ত্রী মমতাজের স্মৃতি ধরে রাখতে তাজমহল তৈরি করেছিলেন।

ইট, লাল রঙের পাথর এবং সাদা মার্বেলের তৈরি এই সৌধটি জুড়ে সূক্ষ্ম কারুকার্য আর শিল্পকলা সারা পৃথিবীর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। তাজমহল শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের মধ্যেই পর্যটনের অন্যতম প্রধান একটি আকর্ষণ।

কিন্তু তাজমহল নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসে সন্তুষ্ট নন বিজেপির রাজেশ সিং। ‘বন্ধ দরজাগুলোর ওপাশে কী আছে তা আমাদের জানা উচিত’, আদালতে বলেন তিনি।

তালা দেওয়া যে কক্ষগুলোর কথা সিং তুলছেন সেগুলোর অধিকাংশই সৌধের ভূগর্ভস্থ অংশে অবস্থিত এবং তাজমহলের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন এমন অনেক মানুষের মতে, ভূগর্ভস্থ ওই ঘরগুলোর ভেতর আদৌ কোনো রহস্য নেই।

মোগল স্থাপত্যের একজন শীর্ষ বিশেষজ্ঞ এবা কোচ, যিনি তাজমহলের ওপর গবেষণাধর্মী একটি বই লিখেছেন, তার গবেষণার সময় ওই সমস্ত কক্ষ এবং ভেতরের সমস্ত প্যাসেজ বা পথের ভেতর ঢুকে খুঁটিয়ে দেখেছেন এবং ছবি তুলেছেন।

তিনি লিখেছেন, তাজমহলের নিচে ভূগর্ভস্থ ওই কক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছিল ‘তাহখানা’র অংশ হিসেবে। মোগলরা গরমের মাসগুলোতে শরীর শীতল রাখতে এমন ভূগর্ভস্থ কক্ষ তৈরি করত।

সৌধের নিচে নদীমুখী একটি চত্বরে সারিবদ্ধ বেশ কয়েকটি কক্ষ রয়েছে। কোচ নদীর সমান্তরাল এ রকম ১৫টি কক্ষের কথা লিখেছেন। সরু একটি করিডর দিয়ে ওই চত্বরে যাওয়া যায়।

এগুলোর মধ্যে সাতটি কক্ষ বেশ বড়, যেগুলোর প্রতিটির দুই দেয়ালে বর্ধিত অংশ রয়েছে। ছয়টি কক্ষ চার দেয়ালের এবং দুটি কক্ষে দেয়ালের সংখ্যা আটটি করে।

বড় আকৃতির কক্ষগুলোর সামনে রয়েছে কারুকার্যখচিত খিলান বা তোরণ, যেগুলোর ভেতর দিয়ে যমুনা দেখা যায়।

ঘরগুলোর সাদা চুনকাম করা দেয়ালের নিচে মিজ কোচ ‘রঙিন কারুকার্যের’ নমুনা দেখেছেন।

‘এটা নিশ্চিত যে সম্রাট যখন এই সৌধে আসতেন তখন এসব প্রশস্ত, সুন্দর এবং শীতল কক্ষগুলো ছিল তার, সহযোগীদের এবং তার নারীদের আদর্শ বিশ্রামের জায়গা’, লিখেছেন কোচ, যিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান আর্টস বিভাগের একজন অধ্যাপক।

এ ধরনের ভূগর্ভস্থ গ্যালারি মোগল স্থাপত্যের অংশ ছিল। পাকিস্তানের লাহোরে মোগলদের একটি দুর্গে জলাধারের সমান্তরাল এমন সার দেওয়া ভূগর্ভস্থ কক্ষ রয়েছে।

সম্রাট শাহজাহান অনেক সময় যমুনা নদী দিয়ে নৌকায় করে তাজমহলে আসতেন। অনেক সিঁড়িবাঁধা একটি ঘাটে নেমে তাজমহলে ঢুকতেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি।

শেয়ার করুন

x
English Version

তাজমহলের তালাবন্ধ ঘরগুলোতে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে

আপডেট: ০৫:০০:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ মে ২০২২

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: তাজমহলের তালাবদ্ধ ঘরগুলোতে সত্যিই কি কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? ভারতের একটি হাইকোর্টের বিচারকরা তা মনে করেননি। সে কারণেই তারা ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির একজন স্থানীয় পর্যায়ের নেতার আনা একটি অবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

রাজেশ সিং তার আবেদনে দাবি করেন, তাজমহলের ২০টিরও বেশি ‘স্থায়ীভাবে তালাবদ্ধ’ কক্ষগুলো খুলে দেওয়া হোক যাতে ‘এই সৌধের প্রকৃত ইতিহাস’ বেরিয়ে আসে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সিং খুব পরিষ্কারভাবেই আদালতকে বলেন, তিনি দেখতে চান তাজমহলের ভেতরের তালা দেওয়া ঘরগুলোতে হিন্দু দেবতা শিবের একটি মন্দির রয়েছে বলে যে ‘দাবি ঐতিহাসিকরা এবং ভক্তরা করেন’, তা যথার্থ কি না।

আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে অসামান্য সুন্দর এই সৌধটি তৈরি হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীতে। মোগল সম্রাট শাহজাহান তার মৃত স্ত্রী মমতাজের স্মৃতি ধরে রাখতে তাজমহল তৈরি করেছিলেন।

ইট, লাল রঙের পাথর এবং সাদা মার্বেলের তৈরি এই সৌধটি জুড়ে সূক্ষ্ম কারুকার্য আর শিল্পকলা সারা পৃথিবীর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। তাজমহল শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের মধ্যেই পর্যটনের অন্যতম প্রধান একটি আকর্ষণ।

কিন্তু তাজমহল নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসে সন্তুষ্ট নন বিজেপির রাজেশ সিং। ‘বন্ধ দরজাগুলোর ওপাশে কী আছে তা আমাদের জানা উচিত’, আদালতে বলেন তিনি।

তালা দেওয়া যে কক্ষগুলোর কথা সিং তুলছেন সেগুলোর অধিকাংশই সৌধের ভূগর্ভস্থ অংশে অবস্থিত এবং তাজমহলের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন এমন অনেক মানুষের মতে, ভূগর্ভস্থ ওই ঘরগুলোর ভেতর আদৌ কোনো রহস্য নেই।

মোগল স্থাপত্যের একজন শীর্ষ বিশেষজ্ঞ এবা কোচ, যিনি তাজমহলের ওপর গবেষণাধর্মী একটি বই লিখেছেন, তার গবেষণার সময় ওই সমস্ত কক্ষ এবং ভেতরের সমস্ত প্যাসেজ বা পথের ভেতর ঢুকে খুঁটিয়ে দেখেছেন এবং ছবি তুলেছেন।

তিনি লিখেছেন, তাজমহলের নিচে ভূগর্ভস্থ ওই কক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছিল ‘তাহখানা’র অংশ হিসেবে। মোগলরা গরমের মাসগুলোতে শরীর শীতল রাখতে এমন ভূগর্ভস্থ কক্ষ তৈরি করত।

সৌধের নিচে নদীমুখী একটি চত্বরে সারিবদ্ধ বেশ কয়েকটি কক্ষ রয়েছে। কোচ নদীর সমান্তরাল এ রকম ১৫টি কক্ষের কথা লিখেছেন। সরু একটি করিডর দিয়ে ওই চত্বরে যাওয়া যায়।

এগুলোর মধ্যে সাতটি কক্ষ বেশ বড়, যেগুলোর প্রতিটির দুই দেয়ালে বর্ধিত অংশ রয়েছে। ছয়টি কক্ষ চার দেয়ালের এবং দুটি কক্ষে দেয়ালের সংখ্যা আটটি করে।

বড় আকৃতির কক্ষগুলোর সামনে রয়েছে কারুকার্যখচিত খিলান বা তোরণ, যেগুলোর ভেতর দিয়ে যমুনা দেখা যায়।

ঘরগুলোর সাদা চুনকাম করা দেয়ালের নিচে মিজ কোচ ‘রঙিন কারুকার্যের’ নমুনা দেখেছেন।

‘এটা নিশ্চিত যে সম্রাট যখন এই সৌধে আসতেন তখন এসব প্রশস্ত, সুন্দর এবং শীতল কক্ষগুলো ছিল তার, সহযোগীদের এবং তার নারীদের আদর্শ বিশ্রামের জায়গা’, লিখেছেন কোচ, যিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান আর্টস বিভাগের একজন অধ্যাপক।

এ ধরনের ভূগর্ভস্থ গ্যালারি মোগল স্থাপত্যের অংশ ছিল। পাকিস্তানের লাহোরে মোগলদের একটি দুর্গে জলাধারের সমান্তরাল এমন সার দেওয়া ভূগর্ভস্থ কক্ষ রয়েছে।

সম্রাট শাহজাহান অনেক সময় যমুনা নদী দিয়ে নৌকায় করে তাজমহলে আসতেন। অনেক সিঁড়িবাঁধা একটি ঘাটে নেমে তাজমহলে ঢুকতেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি।